চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে মুসলিম জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। তাই চব্বিশের স্বাধীনতার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি বলে দাবি করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।

বুধবার (২৬ মার্চ) বাদ মাগরিব স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলায়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে আয়োজিত এক দোয়া মাহফিলে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ এ দাবি করেন।

দোয়া মাহফিলে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় নেতৃবৃন্দ বলেন, উপমহাদেশের মানুষ ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তির জন্য ১৯০ বছর ধরে সংগ্রাম করার পর ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট প্রথম মুসলমানরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের নামে স্বাধীনতা অর্জন করে। সেই স্বাধীনতার উপর ভিত্তি করেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে আমরা ফের স্বাধীনতা অর্জন করি।

আরো পড়ুন:

ঢাবিতে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে ছাত্রদল নেতার ইফতার বিতরণ

নববর্ষের শোভাযাত্রায় থাকবে না আবু সাঈদের ভাস্কর্য

তারা বলেন, বারবার গণতান্ত্রিক পথচলা ব্যহত হওয়ায় আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করেনি। যার ভয়ংকর পরিণতি স্বরূপ স্বাধীন দেশে নির্বিচার জুলাই গণহত্যা হয়। কিন্তু অসম সাহসী ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। তাই চব্বিশের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে।

নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, গণশত্রুরা ২৪ এর গুরুত্বকে ম্লান করতে ৭১ এর ইস্যু টেনে জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু জনগণ জানে ২৪ এর স্বাধীনতা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।

আলোচনা শেষে শাহী বাংলার সুলতান, দরবেশ, পীর, ফরায়েজি ও বাঁশের কেল্লা আন্দোলনের শহীদ, পাকিস্তান আন্দোলনের নেতাকর্মী এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব, সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান, কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তামিম আনোয়ার, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক বোরহান উদ্দিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহকারী সদস্য সচিব আন্দালিভ ইয়াসিন প্রমুখ।

দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের সিনিয়র খাদেম আবদুল মালেক।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র স ব ধ নত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বয়ান বদলালেই ইতিহাস বদলায় না

ইতিহাস সৃষ্টির কাজ খুব সহজ নয়। কোনোকালেই তা সহজ ছিল না। ইচ্ছা করলেই ইতিহাস সৃষ্টি করা যায় না; ইতিহাসের নিয়মেই ইতিহাস জন্ম নেয়। সেই অর্থে বলা চলে, ইতিহাস স্বয়ম্ভু। তবে এও সত্য, মানুষই ইতিহাস সৃষ্টি করে। যারা সেটি করেন, তাদের আবার ইতিহাসই সৃষ্টি করে। এই উপমহাদেশের যেসব মনীষীর নাম আমরা শ্রদ্ধাভরে উচ্চারণ করি; যাদের মনে করি ইতিহাসের স্রষ্টা, তাদেরকে ইতিহাসই সৃষ্টি করেছে। নেতাজি সুভাষ বোস, মহাত্মা গান্ধী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান– তারা সবাই ইতিহাসের সৃষ্টি। একই সঙ্গে ইতিহাসের স্রষ্টা।
ইতিহাসের আরেকটি সত্য হলো, ইতিহাস বদলায় না। তবে এর বয়ান বা ন্যারেটিভ বদলায়। বয়ান বদলালেই ইতিহাস বদলায় না; ইতিহাস ইতিহাসের জায়গাতেই থেকে যায়। যেমন নবাব সিরাজউদ্দৌলার কথাই ধরা যাক। প্রায় দেড়শ বছর এ দেশের মানুষ জেনে আসছিল– সিরাজ ১৭৫৬ সালে ১৫ ফুট বাই ১৮ ফুট একটি কামরায় ১৪৬ জন ইংরেজকে বন্দি করে রেখেছিলেন। আলো-বাতাসের অভাবে এক রাতেই তাদের ১২৩ জন মারা যায়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী, পরে সেনাপতি জন জেফানিয়াহ হলওয়েল অন্তত এমনটিই তাঁর ‘ইন্ডিয়া ফ্যাক্টস’ গ্রন্থে লিখে গিয়েছেন। প্রথমদিকে মানুষ তা বিশ্বাসও করেছে। কেউ একবারও প্রশ্ন তোলেনি– এত ছোট্ট একটি কামরায় এত সংখ্যক মানুষের স্থান সংকুলান হয়েছিল কেমন করে। এমনটিই চলে আসছিল ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত। গবেষক ও ইতিহাসবিদ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ওই সালে প্রকাশিত তাঁর ‘সিরাজদ্দৌলা’ গ্রন্থে যুক্তিতর্ক দিয়ে প্রমাণ করেন– এটি ছিল সাজানো বয়ান। তখনই মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে– বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হেয় এবং নির্দয়, উদ্ধত ও স্বেচ্ছাচারী প্রতিপন্ন করার জন্যই  হলওয়েল বর্ণিত কাহিনিটি রচনা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে হলওয়েল বিবৃত অন্ধকূপ কাহিনির অসত্যতা সর্বজনীনভাবে প্রতিপন্ন হয়েছে। এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, ইতিহাসের বয়ান সবসময় সত্য তুলে ধরে– এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।
এটিও সত্য, যখন যে ক্ষমতায় থাকে, অর্থাৎ শাসকগোষ্ঠী তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সময়ে সময়ে ইতিহাসের নতুন নতুন বয়ান সৃষ্টি করে। উদ্দেশ্য খুবই সাধারণ; মানুষকে বিভ্রান্ত করা। যেমন হলওয়েল করেছিলেন। এই উপমহাদেশে বিশেষ করে আমাদের দেশেও সময়ে সময়ে ইতিহাসের নতুন নতুন বয়ান আবিষ্কার থেমে থাকেনি। অনেক সময় নতুন বয়ান দিয়ে পুরোনো বয়ানকে ঢেকে দেওয়া, কখনও বা পুরোনোটাকে একেবারেই মুছে দেওয়ার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ আবার একটি দিয়ে আরেকটিকে প্রতিস্থাপনও করতে চান।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, ৫৪ বছর হয়ে গেল। দুঃখজনক হলেও এই অল্প সময়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা রকমের বয়ান চালু হয়ে গেছে। বিশেষ করে ২০২৪-এর আগস্ট অভ্যুত্থানের পর অনেকেই ২০২৪-কে ১৯৭১-এর সঙ্গে তুলনা করতে সচেষ্ট। এটি করতে গিয়ে ’৭১-এর তাবৎ অর্জনকে পর্যন্ত অস্বীকার করতে চাইছেন; তৈরি করছেন ’৭১-এর নতুন বয়ান। এর সবই যে বিশেষ উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে– তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য এ কথা স্বীকার করতেই হবে, বাংলাদেশে আগামী দিনে ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে আবশ্যিকভাবেই ২০২৪-এর কথা আসবে। একই সঙ্গে আসবে ১৯৯০-এর গণআন্দোলনের কথা; আসবে ১৯৭৫-এর কথা। অনিবার্যভাবে সবার আগে আসবে  ১৯৭১-এর কথা। এসবের প্রতিটিরই যেমন আছে ইতিহাসের নিজস্ব বয়ান, তেমনি আছে সমসাময়িক রাজনৈতিক বয়ান।  অনেকেই ইতিহাসের রিসেট বাটনের কথা বলেন। আসলে ইতিহাস কোনো কম্পিউটার সফটওয়্যার নয় যে. ইচ্ছা করলেই তাকে রিসেট করা যাবে।

আরও একটি কথা মনে রাখা দরকার, ইতিহাসে কোনো ঘটনাই একটি আরেকটির সমান্তরাল নয়। ফরাসি বিপ্লবের সঙ্গে অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে মেলানো যাবে না। মেলানো যাবে না চীন বিপ্লবের সঙ্গে কিউবান বিপ্লবকে। একইভাবে ১৯৭১-এর সঙ্গে ২০২৪-কেও মেলানো যাবে না। ইতিহাসের প্রতিটি ঘটনাই আপন স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল কিংবা কালিমালিপ্ত। ২০২৪-এর আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর থেকে অনেককেই বলতে শোনা যায়, আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। তারা ভুলে যান– স্বাধীনতার কোনো দ্বিতীয় হয় না। তারা ভুলে যান রেজিম পরিবর্তন মানে স্বাধীনতা নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ এসেছিল আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ পথ বেয়ে। এটিকে শুধু পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরের সংগ্রাম বললেও ভুল হবে। তারও অনেক আগে থেকেই এর যাত্রা শুরু। হাজার বছর ধরেই বাঙালি জাতিসত্তা আঁকুপাঁকু করছিল নিজের পরিচয় ফিরে পাওয়ার। কিন্তু পথ পাচ্ছিল না। শুধু পথই নয়, পথ দেখানোর মানুষও। এই সময়ে অনেকেই ইতিহাসের মঞ্চে এসেছেন। আবার হারিয়েও গেছেন। ইতিহাসও অনেক বাঁক ঘুরেছে। কিন্তু সঠিক গন্তব্য কেউ দেখাতে পারেননি। না, এটি তাদের ব্যর্থতা নয়। সময় হয়নি, তাই তারা পারেননি। একাত্তর আমাদের সেই সময় এনে দিয়েছিল। তাই একাত্তরকে ভুলে যাওয়ার কোনো সুযোগই নেই।

বলছিলাম, সময়ে সময়ে ইতিহাসের বয়ান বদলায়। আসলে বদলায় না; বদলানো হয়। ক’দিন আগে দেখলাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রধান বলেছেন, একাত্তরে নাকি তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। কথাটা সরাসরি বলেননি; একটু ঘুরিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর কেটে গেলেও যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম, তা আজও পূরণ হয়নি।’ এও যে মুক্তিযুদ্ধের এক নতুন বয়ান তৈরির প্রয়াস– তা না বুঝতে পারার কোনো কারণ নেই। এ কথা সবাই জানেন, একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবেই কাজ করেছিল। তাদের তত্ত্বাবধানেই গড়ে উঠেছিল রাজাকার-আলবদর বাহিনী, যারা ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ হরণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। এদের অনেকেই একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের পরপরই পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করেছিল। তারপরও যখন তারা বলে, তারা স্বাধীনতা এনেছিল, তখন একে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। আসলে জামায়াতের এই বয়ান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিছু নয়।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এএইচএম কামারুজ্জামান, মনসুর আলীসহ চার শতাধিক রাজনৈতিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে তাদের সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যারা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করলেন, রাতারাতি তারা হয়ে গেলেন সহযোগী! হাস্যকর শোনালেও এমন সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। আসলে এসবই মুক্তিযুদ্ধের নতুন বয়ান তৈরির প্রয়াস– যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ যা ছিল জনযুদ্ধ, সেই সত্যই অস্বীকারের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সত্য এটাই– বয়ান বদলালেই ইতিহাস বদলায় না; ইতিহাস কখনোই বদলানো যায় না– হোক সেটা ’৭১ কিংবা ’২৪।

মোশতাক আহমেদ: অবসরপ্রাপ্ত পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার, জাতিসংঘ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনের তারিখ নিয়ে টালবাহানা চলছে: রিজভী
  • ঘু‌ষের টাকায় আমেরিকায় বা‌ড়িসহ অঢেল সম্প‌দের মা‌লিক খোকন
  • হামলায় পিঠাপিঠি তিন বোন একসঙ্গে নিহত, এক কবরে দাফন
  • বয়ান বদলালেই ইতিহাস বদলায় না