জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলায় অনুষ্ঠানে ‘হট্টগোল’
Published: 26th, March 2025 GMT
পাবনায় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে মহান স্বাধীনতার ঘোষক বলায় হট্টগোল হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) পাবনা শিল্পকলা একাডেমিতে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাকসুদুর রহমান মাসুদ খন্দকারের বক্তব্যের সময় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাকসুদুর রহমান মাসুদ খন্দকার বক্তব্যের শুরুতে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে মহান স্বাধীনতার ঘোষক বলেন। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজন এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন এবং ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে বক্তব্য শেষ না করেই চলে আসেন মাসুদ খন্দকার। এ সময় অনুষ্ঠানে চরম হট্টগোল দেখা দেয়।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম ও পাবনার পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাকসুদুর রহমান মাসুদ খন্দকার বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পতিত সরকারের কিছু দোসর ও অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছিল। তারা অনুষ্ঠানটি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছিল। কিন্তু, তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে।’’
বিতর্কের বিষয়ে মুখ না খুললেও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘‘এ বিষয়ে ক্লিয়ার বলতে পারছি না। তবে বিএনপির কোনো একজন নেতা বক্তব্য দিচ্ছিলেন, সে সময় উপস্থিত কয়েকজন তাকে বলেন, আপনি এই বক্তব্য দিতে পারেন না। পরে অনুষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে শেষ হয়েছে।’’
ঢাকা/শাহীন/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন স ব ধ নত ব এনপ র র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
রীত-রসমের আখাড়া
রাজধানী ঢাকার বিশেষ এক অংশ পুরান ঢাকা। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য এর বিশেষ রীতি-রেওয়াজ। দিনে দিনে এসবে কিছু পরিবর্তন হয়তো এসেছে। কিন্তু ঐতিহ্যকে এখনও আঁকড়ে ধরে আছে এখানকার মানুষ। পুরান ঢাকার রোজা পালন, চানরাত এবং ঈদ নিয়ে সমকালের পাঠকের জন্য ঢাকাইয়া ভাষায় বিশেষ লেখা
ঢাকাইয়া সমাজ নানান কিসিমের রীত-রেওয়াজের আখাড়া। ঐ রহম ঢাকাইয়া গো মাইয়া বিয়া দেওনের বাদে পয়লা ঈদে বহুত রীত-রেওয়াজের নহর বএয়া যায়। রোজা থেকা লিয়া চান রাইত, জামাইয়ের আপনা এ্যাগানা সবতেরে ঈদের দাওয়াত দেওন লাগবোই। দুই দিক থেকাই চলতো রীত-রেওয়াজের নহর, মাগার বিয়ার বাদে করন-ধরন বেশির ভাগ একতরফা। দাঁড়িপাল্লার ভার বেশি মাইয়ার বাপের কান্ধে দিয়া যাইতো। এই রীত-রেওয়াজের খাই রহিস গরিব কার আওকাত কিমুন, ঐটা তলায়া দ্যাখনের জরুরত কেউ মনে করে না। মরো আর বাঁচো, রীত-রেওয়াজ নিভান লাগবো যেম্বেই পারো। নাইলে থাকে না নয়া সম্দিআনায়। নাইলে নয়া খেসি টিকবো কেম্বে। মাইয়ার বাপের বাড়ি বইলা কথা।
বিয়ার বাদে পয়লা রোজা বিয়ার বাদে মাইয়া পয়লা রোজা বাপের বাড়িতে করে।
রোজা আহনের লগে লগে মাইয়ার বাপের একদিকে নিগা থাকে, পয়লা জামাইরে ঘি-মুরগি পাঠান লাগবো, মাগার নামেই ঘি-মুরগি। ঐটার লগে তরে তরে কতো কিছু দেওন লাগবোযার, যার আওকাত মথন। ঘি এক কেজি থেকা লিয়া এক কাতি। মুরগি দুই হালি থেকা এক খাঁচি। ক্যালা দুই-চাইর ডরজন থেকা লিয়া এক ঘৌর। লগে আমের মোরব্বা, কুমড়ার মোরব্বা, দুধ, মলাই, চিনি, খোরমা খাজুর, পেস্তাবাদাম থেকা লিয়া তরে তরে হুকনা ফল। ঘি, মুরগির লগে জামাইয়ের ঈদের কাপড়লত্তা কিননের লেগা নগদ ট্যাকা পাঠায়া দিবো হৌড়ে জামাইবাড়িতে। আবার কেউ কেউ স্যুটের পাঁচ কাপড় বি পাঠায়, স্যুটের সিলাইয়ের ট্যাকা সুদ্দা।
আবার পাঠাও রোজা খোলাই
ভাজাপোড়া কয়েক কেজি থেকা মনে যায়া ঠেকবো। ফল ফলারি বেলাতি ফল পেটি পেটি, দেশি ফল চাঙ্গাড়ি ভরা। নানান পদের শরবত কয়েক গেলান। পোলাও-বিরানি, কাচ্চি, মোরগ-পোলাও পাঁচ-দশ কেজির বোল বা ছোট ড্যাগ ভইরা। আধোনা যাইবো, যার আওকাত আছে ওই তিন-চাইর কিসিমের পোলাও বি পাঠাইবো আধোনা ভইরা। যার আওকাত নাই ওই বোল বা ছোট ড্যাগ ভইরা পাঠাইবো এক পদের বিরানি। পারাটা, রুটির থাক থাকবোই। মুরগির রোস্ট একশ থেকা পাঁচ পিস বি অইতে পারে আওকাত মথন। খাস্সি ভুনা থেকা খাস্সির রান ভুনা, লগে হাঁস-কোয়েল যতো কিসিমের ভুনা আছে, নানান কিসিমের কোয়াব গোশত থেকা লিয়া মাছের কোয়াব তক ঠেকবো। গরু, খাস্সি, মুরগির রেজালা, পিঠা-পুলি, পায়েস একশ থেকা লিয়া যতো যাইবার পারে। আন্ডাআলা মাছ, গোশতের কোর্মা। ভিগা রুটি, শাহি টুকরা– কী না থাকে ঐ রোজা খোলাইয়ে। চকবাজারের থেকা লিয়া বাড়িতে বাওরচি দিয়া এইসব রোজা খোলাই তৈয়ার অহে। ঢাকাইয়ার এই রোজা খোলাইয়ে যে ট্যাকা খরচা অহে, ঐ ট্যাকা দিয়া একটা বিয়ার খরচা চইলা যাইবো। এ্যরবাদে তো আছেই দুই পক্ষের বাড়িতে রোজা খালাইয়ের দাওয়াত।
ঈদি
বিশ রোজার বাদে নয়া বউয়ের বাপের বাড়িতে পোলার বাড়ি থেকা ঈদি যাইবো। মাইয়ার কাপড়লত্তা বিলাসিতা তো আছেই, ঐটার লগে হালা-হালি, ময়-মুরব্বি সবতের লেগা ঈদের কাপড়লত্তা আর বিলাসিতা যাইবো মাইয়ার বাড়িতে। লগে বউয়ের ঈদের সালামি বি পাঠায়া দিতো মুরব্বি গো তরফ থেকা। ঐসমে মাইয়ার কাপড়লত্তার লগে সেওই, ঘি, মুরগি পোলাওয়ের চাইল, চিনি, নাইরল– এইসব যাইবো যার যিমুন আওকাত মথন। মাইয়ার বাপের বাড়ি থেকা পোলার ভাই-বইন, মা-বাপ ময়-মুরুব্বি
সবতের ঈদের কাপড়লত্তা যাইবো গা। ঈদের সালামি থেকা লিয়া কাপড়লত্তা সবকিছুই ঢাকাইয়ারা ঈদি কয়।
চান রাইত
ঈদের চান উঠনের সাইরেন বাইজা কাইলকা ঈদের এলান অহনের লগে লগে নয়া জামাই হৌড় বাড়িতে যাইবো ঐ বাড়ির ময়-মুরব্বি গো সালাম করবার আর জামাই সালাম করনের লগে লগে হৌড় বাড়ির সব ময়-মুরব্বি জামাইরে নগদ ট্যাকা সালামি দিবো।
ঈদের দিন
ঈদের জামাতের বাদে জামাই হৌড় বাড়িতে যাইবো খানাপিনা করবো। তামাম দিন ভর ঐখানে থাকবো। হালা-হালি ছোট গো সালামি দিবো। আর বিয়াল অইলে আপনা হালা-হালি থেকা লিয়া চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফোবাতো সব হালা-হালি লিয়া চকবাজারের মেলায় যাইবো নয়া দুলাভাই। ঐসমে হালা-হালি নয়া দুলাভাইয়ের জেব খালি কইরা এক্কেরে ফতুর কইরা ফালায়। ঈদের দিন মাইয়া গো বাড়ি থেকা জামাই বাড়িতে বাওরচি দিয়া আবার পোলাও, কোর্মা, কালিয়া, রেজালা, রোস্ট, মুরগি মোসাল্লাম, কোপ্তাকারি, চাপ, কোয়াব নানান পদের সেওই, জর্দা যে যতো পারে নিজের আওকাত দ্যাখায়। ঈদের বাদে কয়েক দিন দাওয়াত পানি দেওন লাগে নয়া জামাইয়ের বাড়ির সবতেরে।
এইসব রীত-রসম নিবাইবার যায়া যার আওকাত আছে অর খালি ট্যাকা খোঁচায় আর ঐটার ঝনঝনানির ঠ্যালায় এইসব ডালা পরবিতে যতো পারে খরচা করে; মাগার যার আওকাত নাই, ওই করজ-ধার করে নাইলে হাত পাইতা অইলে বি রেওয়াজ পালন করে।
অহন এইসব বহুত কইমা গেছে। বহুত পোলা-মাইয়া অগো মুরব্বি গো বাধা দ্যায় এইসব রীত-রসম বাদ দিবার। অহন সবতে শিক্ষিত অইছে। বেফাজুল খরচাপাতি কইবার চায় না। মাগার ঢাকাইয়া রীত-রেওয়াজে সব সময় শাহি ভাব বজায় থাকে।
আখতার জাহান: ঢাকাইয়া ভাষার লেখক