কেবল আনুষ্ঠানিক আয়োজনে সীমাবদ্ধ থাকলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখা যাবে না
Published: 26th, March 2025 GMT
একাত্তরের সেই কঠিন সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারীরা যে সাহসিকতা ও দেশপ্রেম দেখিয়েছেন, তা আজও অনন্য দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারী শহীদ হন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আয়োজন কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কোনায় ছিল উৎসবের ছোঁয়া, কিন্তু তার চেয়েও বড় ছিল শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে এক অনন্য গর্ব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে কেবল ইতিহাস বইতে আটকে নেই, সেটি উপলব্ধি করা গিয়েছিল ক্যাম্পাসের নানা আয়োজনে।
সেমিনারগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যে গভীর আলোচনা হয়, তাতে কেবল পুরোনো দিনের ঘটনাপ্রবাহ নয়, বরং বর্তমান প্রজন্মের দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কীভাবে ধারণ করা যায়, সে প্রসঙ্গও উঠে আসে। আলোচনা পর্বগুলোয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই নিজের ভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশ করেন, যা প্রমাণ করে, মুক্তচিন্তার চর্চা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কতটা গভীর।
আরও পড়ুনএকজন শামসুজ্জোহা আজও অনুপ্রেরণা২৩ মার্চ ২০২৫বিশেষ করে ক্লাব ও সংগঠনগুলোর ভূমিকা আমাকে মুগ্ধ করেছে। ইতিহাসচর্চা এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধরে রাখতে তারা যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে মনে হয়েছে, এ প্রজন্ম শুধুই অতীত স্মরণ করে না, বরং সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।
তবে শুধু আনুষ্ঠানিক আয়োজনে সীমাবদ্ধ থাকলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখা যাবে না। আমাদের প্রয়োজন প্রতিদিনের কথোপকথন ও কর্মে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে নানা সামাজিক ইস্যুতে নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরছে, তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই প্রতিফলন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার মনোভাব—এটাই তো প্রকৃত অর্থে মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশলের শিক্ষার্থী আকরামুল আহমেদ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জের আতঙ্ক শুটার রিয়াজ বাহিনী, গুলিবিদ্ধ পথচারীর মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দাবীকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে যুবদল নেতা শফিকুল ইসলামের বাড়িতে শুটার রিয়াজ ও তার বাহিনীর হামলার সময় করা গুলিতে আহত পথচারী জাফর আলীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার রাতে বিষয়টি রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৯ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত জাফর আলী পূর্ণ নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম শফিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জের চিহ্নিত সন্ত্রাসী শুটার রিয়াজ দীর্ঘদিন ধরে তার কাছে একটি গাড়ী কেনার জন্য ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন।
দাবি করা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ১ লা মার্চ শনিবার রাত ৯ টার দিকে রিয়াজের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তারাব পৌরসভার কর্ণগোপ এলাকায় শফিকুলের বাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় শফিকের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় জাফর আলী নামে এক পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়।
পরে আহত জাফর আলীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শফিকুল ইসলাম শফিক বাদী হয়ে রিয়াজসহ তার বাহিনীর সদস্যদের আসামী করে মামলা দায়ের করে।
২৯ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধনীন থাকা অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যার দিকে জাফর আলীর মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, রূপগঞ্জের সাধারণ মানুষের জন্য শুটার রিয়াজ এক আতঙ্কের নাম। রিয়াজ চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে এমন কোন অপকর্ম নেই যে সে না করে। এসকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য রিয়াজের রয়েছে নিজস্ব বাহিনী।
আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তাকে শেল্টার দিতো আওয়ামীলীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর বিএনপির স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতার শেল্টারে রিয়াজ ও তার বাহিনীর সদস্যরা আরো বেপরোয়া হয়ে পড়েছে।
এদিকে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটিলিয়ন (র্যাব) সূত্রমতে, রিয়াজের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী দল এলাকার বালু ভরাট ও মাটি কাটার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাক প্রতি নির্ধারিত হারে চাঁদা নিয়ে থাকে। চাঁদা না দিলে ত্রাস সৃষ্টির জন্য হামলা, আক্রমণ ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে।
নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অবৈধভাবে জমি দখলের জন্য সে ভাড়ায় তার দল নিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত। এছাড়া বাড়ি বা বিল্ডিং করার সময় চাঁদা না দিলে গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ভুলতা এলাকায় বাসেও ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।
তাছাড়াও সে উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে তাদেরকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সম্পৃক্ত করেছে। এসব অপকর্মের কারণে আগেও তারা গ্রেপ্তার হয়। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এ চক্রের ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছে।
শুটার রিয়াজ অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে তারই বড় ভাই আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী শওকতের হাত ধরে। তখন সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে শওকত নিহত হয়। এছাড়া তার আরেক ভাই রয়েছে মোহাম্মদ আলী। সে সন্ত্রাসী। পারিবারিকভাবেই সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসেবে পরিচিত তারা।
রিয়াজের কোনও রাজনৈতিক পরিচয় নেই। বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সে ভাড়ায় বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে আসছিল। অস্ত্র কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে রিয়াজের বিরুদ্ধে। হত্যাচেষ্টা, মাদকসহ দেড় ডজনের ও বেশী মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, কর্ণগোপ এলাকায় গুলিবর্ষণের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ জাফর আলী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত শুটার রিয়াজকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।