সন্‌জীদা খাতুনকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে সমবেত হয়েছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষ। বুধবার বেলা আড়াইটায় সন্‌জীদা খাতুনের কফিন শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। অশ্রু, গান, কবিতা ও ফুলে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সন্‌জীদা খাতুনের মরদেহ নেওয়া হয় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে হিমঘরে রাখা হবে তার মরদেহ।

ছায়ানটের সহসভাপতি মফিদুল হক বলেছেন, হাসপাতালের হিমঘরে থাকবে মরদেহ। পরে পরিবার থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শহীদ মিনারে সন্‌জীদা খাতুনের পুত্রবধূ ও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী লাইসা আহমদ লিসা বলেন, ‘তিনি আজকে বিদায় নিচ্ছেন। কিন্তু তার দেখানো পথ ও তার শক্তি যেন ধারণ করতে পারি। এগিয়ে যেতে পারি। যারা সমবেত হয়েছেন এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

বক্তব্য শেষে ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’ গেয়ে শোনান লিসা। গানটি গাইতে গিয়ে গলা ধরে আসে তার।

ছায়ানটে ‘মিনু আপা’ বলে পরিচিতি রয়েছে সন্‌জীদা খাতুনের। প্রিয় মিনু আপাকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করলেন আবৃত্তিকার ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, খুলনা থেকে ঢাকায় আসার পর থেকেই ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। সন্‌জীদা খাতুনের হাত ধরে ১৯৭৬ সালে রমনার অশ্বত্থতলায় নববর্ষ অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘তিনি বটবৃক্ষ ছিলেন, আমাদের ছায়া দিতেন। সেই ছায়াটা সরে গেল। ১৯৭১ সালে উনাকে কলকাতায় ধর্মতলা স্ট্রিটে দেখেছি। বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থার প্রধান সংগঠকদের একজন ছিলেন তিনি।’

এদিন সন্‌জীদা খাতুনের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচী, বাংলাদেশ নজরুল সংগীত সংস্থা, কণ্ঠশীলনসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন।

এর আগে ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সন্‌জীদা খাতুনকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সন্‌জীদা খাতুন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ ছুঁই ছুঁই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মরদ হ ছ য় নট

এছাড়াও পড়ুন:

ইফতার মাহফিলের প্যান্ডেলে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়া ও ইফতার মাহফিলের প্যান্ডেলে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাঁচবিবি পৌর শহরের দানেজপুর ডিগ্রি কলেজে মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পাঁচটি জীবিত গরু ও একটি জবাই করা গরুর মাংস, তেল, মসলা-চাল লুট করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আজ শনিবার পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. ডালিম হোসেন (৫৫), জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম হোসেন (৩৭), পাঁচবিবি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফয়সাল আপেলকে (৩৬) আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। পৌর শহরের দানেজপুর মহল্লার সোহেল রানা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তবে মামলার এজাহারে আসামিদের দলীয় পদবি উল্লেখ করা হয়নি। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাবেকুন নাহার শিখা বলেন, ‘আমার শিখা ট্রাস্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে শনিবার দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। এরই মধ্যে শুক্রবার রাতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডালিম হোসেনের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম হোসেন, উপজেলা ছাত্রদলের নেতা ফয়সালসহ বিপুলসংখ্যক লোকজন অস্ত্র নিয়ে দানেজপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠে গিয়ে দেখভালের দায়িত্বে থাকা ফারুক হোসেনকে মারধর করেন। এতে তিনি প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যান। এরপর ডালিম হোসেন ও তাঁর লোকজন ডেকোরেটের আসবাব ভাঙচুর করে তাতে আগুন দেন। সেখানে জবাই করতে আনা পাঁচটি গরু, একটি জবাই করা গরুর মাংস, তেল-মসলা লুট করে নিয়ে যান। খবর পেয়ে রাতেই থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে।’

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডালিম হোসেন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্র বিশাল হত্যা মামলার আসামি গোপনে ইফতার পার্টি করতে চেয়েছিলেন। এটি জানার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন মিছিল নিয়ে শুক্রবার রাতে ইফতার মাহফিলের আয়োজন পণ্ড করে দিয়েছেন। আমাকেসহ বিএনপির লোকজনদের আসামি করা হয়েছে। আমি ঘটনার সময় ছিলাম না।’

জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা শামীম হোসেন বলেন, পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাবেকুন নাহার শিখা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে একটি হত্যাসহ দুটি মামলার আসামি। তিনি ইফতার মাহফিলের নামে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পুনর্বাসন করছিলেন। ক্ষুব্ধ লোকজন শিখার ইফতার মাহফিল আয়োজন পণ্ড করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম বলেন, দোয়া ও ইফতার মাহফিল প্যান্ডেল হামলা-ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ ও ইফতারির পণ্য চুরির ঘটনায় থানা মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ