তুরস্কের ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলু। বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) তাঁকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিপক্ষে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দলীয়ভাবে নির্বাচিত করেছে। ২০২৮ সালে তুরস্কে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

বড় ধরনের কোনো অঘটন না ঘটলে ওই নির্বাচনে তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (এ কে পার্টি) নেতা ও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছেন ইমামোগলু। নির্বাচনের এখনো অনেক দেরি। তবে তার আগেই গত বুধবার গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। আর এই গ্রেপ্তার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে এই রাজনীতিককে।

ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পুরো তুরস্কে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। রাজধানী আঙ্কারা, ইজমির, ইস্তাম্বুলসহ বিভিন্ন শহরে সাত দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীদের অনেকেই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন।

একনজরে একরেম ইমামোগলুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে রাজনীতিতে তাঁর উত্থান, আলোচনায় আসা এবং প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পুরো যাত্রাপথ দেখে নেওয়া যাক।

ইমামোগলুর জন্ম ১৯৭০ সালের ৪ জুন তুরস্কের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের ত্রাবজোনে। তিনি পড়াশোনা করেছেন ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক আর মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

তুরস্কের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টিতে (সিএইচপি) ২০০৮ সালে যোগ দেন ইমামোগলু। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইস্তাম্বুলের বেলিকদুজু ডিস্ট্রিক্টের মেয়র ছিলেন।

এরপর ২০১৯ সালে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন ইমামোগলু। ক্ষমতাসীন এ কে পার্টি–সমর্থিত প্রার্থীকে ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। প্রাথমিকভাবে ভোটের ফলাফল বাতিল করা হয়েছিল; কিন্তু পুনর্গণনায় তিনিই জয়ী হন।

ওই নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের সময় নির্বাচন কাউন্সিলের সমালোচনা করায় ২০২২ সালে তাঁকে ২ বছর ৭ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি এর বিরুদ্ধে আপিল করেছেন, যা এখনো ঝুলে আছে।

আরও পড়ুনডিপ্লোমা ডিগ্রি বাতিলের পর এবার আটক ইস্তাম্বুলের মেয়র১৯ মার্চ ২০২৫

২০২৪ সালের নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হয়ে ইমামোগলু দ্বিতীয়বারের মতো ইস্তাম্বুলের মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলার তদন্ত চলছে।

গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় ‘অনিয়মের অভিযোগে’ ইমামোগলুর স্নাতক ডিগ্রি বাতিল করে। ডিগ্রি না থাকায় ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি ঝুঁকির মুখে পড়ে গেছে। কারণ, তুরস্কের আইনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে হলে অবশ্যই উচ্চতর ডিগ্রি থাকতে হবে।

পরদিন ১৯ মার্চ নিজ বাড়ি থেকে ইমামোগলুকে আটক করা হয়। পরে দুর্নীতি, কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) প্রতি সহযোগিতা এবং একটি অপরাধমূলক সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর পরই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা এখনো চলছে।

চলমান বিক্ষোভ দমনে কঠোর হয়েছে তুরস্কের পুলিশ। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকায়া সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে জানান, গত বুধবারের পর থেকে ‘বেআইনি’ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় ১ হাজার ৪১৮ জনকে আটক করা হয়েছে।

তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের মেয়র একরেম ইমামোগলুর সমর্থকদের বিক্ষোভ। ২৪ মার্চ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এরদ য় ন র ত রস ক র

এছাড়াও পড়ুন:

তুরস্কে বিক্ষোভ সরকার পতনের দাবিতে রূপ নিয়েছে, ব্যাপক ধড়পাকড় 

তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) চেয়ারম্যান ওজগুর ওজেল বলেছেন, আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অথবা ইস্তাম্বুলের কারাবন্দী মেয়র একরেম ইমামোগলুকে কারাগার থেকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ‌‌‘প্রতিটি শহরে’ বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে। 

তিনি বলেন, দেশব্যাপী বিক্ষোভের মধ্যে আগামী শনিবার ইস্তাম্বুলে একটি বিশাল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। এটি ২০২৮ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে ইমামোগলুকে দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট করার জন্য দলের প্রচারণার সূচনা করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যে শহরেই যাই, সেখানেই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে।’ ওজেল ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, একরেম ইমামোগলু এর মুক্তি দাবি এবং  দেশের জনগণের গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস বিক্ষোভকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।

তুরস্কে অব্যাহত বিক্ষোভে ব্যাপক ধড়পাড়ক চলছে। মঙ্গলবারও লাখ লাখ মানুষ রাজধানী আঙ্কারাসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন। এ সময় এএফপির আলোকচিত্রীসহ দেড় হাজারের বেশি মানুষকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভকারীদের হামলায় দেড় শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হন। সাংবাদিক আটকের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক সংস্থা। গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় এ বিক্ষোভে কার্যত চাপে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। 

বুধবার আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, শুরুতে ইস্তাম্বুলের মেয়র ইমামোগলুর মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ করলেও এখন তা সরকার পতনের দাবিতে রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা এরদোয়ানের পতন দাবি করছেন। রাশিয়ার সঙ্গে এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠতা এবং সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে দূরত্বের মধ্যে তুরস্কে এ সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। 

ইমামোগলুর সমর্থকরা মনে করেন, গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এরদোয়ান তাঁর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চাইছেন। সরকার বলছে, এতে তাদের কোনো হাত নেই। বিচার বিভাগ তার নিজ পথেই পরিচালিত হচ্ছে।

দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি ও প্রতারণার অভিযোগে গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি দেশটির আগামী নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। সমালোচকরা মনে করেন, ইমামোগলুর জনপ্রিয়তার কারণে গত ১৯ মার্চ তাঁকে গ্রেপ্তার করে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান প্রশাসন। গ্রেপ্তারের পর থেকে প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা ইমামোগলুর ছবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন ব্যবহার করছেন। 

দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত আট সাংবাদিক আটক হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির আলোকচিত্রী ইয়াসিন আকগুল এবং বুলেন্ট কিক। আটক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ বিক্ষোভে’ অংশ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। আকগুলের গ্রেপ্তারকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেছেন এএফপি চেয়ারম্যান ফেব্রিক ফ্রাইজ। সাংবাদিক গ্রেপ্তারের কঠোর সমালোচনা করেছে সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার। এ ছাড়া তুরস্কের সাংবাদিক ইউনিয়নও তাদের মুক্তি দাবি করেছে। 

বিক্ষোভে হাজির হয়েছেন ২৮ বছরের সিনার আইলারি। তিনি জানান, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের নন। নিরপেক্ষ দর্শক হিসেবেই এসেছেন। তিনি বলেন, আমি সিএইচপি নেতা ইমামোগলুকে সমর্থন করি না। তাঁকে ভোটও দিইনি। এটা মনে করি যে, যা হয়েছে, তা যে কোনো রাজনীতিকের জন্যই অন্যায্য। কারণ, এটা রাজনৈতিক মামলা। আইলারি বলেন, চার দিনের বিক্ষোভের পর আমার মনে হচ্ছে, বিক্ষোভের মধ্যে গতি কিছুটা মন্থর।

ইস্তাম্বুলে পরপর দুটি মেয়র নির্বাচনে জয়ী ইমামোগলুকে এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা হয়। এরদোয়ান ২০০৩ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন এবং ২০২৩ সালে দেশটির সাম্প্রতিকতম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ইমামোগলুর সমান্তরালে ১৯৯৯ সালে কারারুদ্ধ হওয়ার আগে ১৯৯০-এর দশকে এরদোয়ানও ইস্তাম্বুলের একজন জনপ্রিয় মেয়র ছিলেন। গ্রেপ্তারের আগের দিন ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় ইমামোগলুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বাতিল করে, যেখানে বলা হয়েছিল, এটি প্রতারণায় অর্জন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য একটি বৈধ ডিগ্রি থাকা পূর্বশর্ত। 

এদিকে বিক্ষোভকারীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের কোথাও জায়গা হবে না। রাজধানী আঙ্কারায় তরুণদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নিয়ে এরদোয়ান বলেন, দেশ খুবই নাজুক সময় পার করছে। তিনি সবাইকে ধৈর্য আর কাণ্ডজ্ঞান বিবেচনা করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, তাদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভকারীরা করুণ পরিণতির পথ বেছে নিয়েছেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী
  • তুরস্ক কেন অশান্ত হয়ে উঠল?
  • তুরস্কজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যে ইস্তাম্বুলের অন্তর্বর্তী মেয়র নির্বাচিত হলেন আসলান
  • বিসিবিতে বাড়ছে পাকিস্তানি কোচ
  • তুরস্কে বিক্ষোভ সরকার পতনের দাবিতে রূপ নিয়েছে, চাপে এরদোয়ান
  • তুরস্কে বিক্ষোভ সরকার পতনের দাবিতে রূপ নিয়েছে, ব্যাপক ধড়পাকড়