শিক্ষা-স্বাস্থ্যের সুষম উন্নয়ন হলে রাষ্ট্র কখনো পিছিয়ে থাকবে না
Published: 26th, March 2025 GMT
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারলে কোনো রাষ্ট্রই কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ও স্বাস্থ্য- এ দুটি খাতকে সঠিকভাবে অ্যাড্রেস না করে কখনোই একটি সুষম বিকশিত রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এ দুটি খাত কোনো গোষ্ঠীর জন্য নয়। এগুলো রাষ্ট্রের সম্পদ, জনগণের সম্পদ।’
বুধবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চীনের উদাহরণ টেনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘খেয়াল করে দেখেন, চীন এত বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি দেশ। তারা আজ অর্থনীতিতে এত উন্নয়ন করছে। সেটার পেছনেও দুটি বিষয়কে তারা গুরুত্ব দিয়েছে। একটি হলো শিক্ষা, আরেকটি স্বাস্থ্য।
বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘সুনাগরিক মানে কী? তাকে ফিজিক্যালি ফিট ও শিক্ষিত হবে। যদি এমন জনগোষ্ঠী পাওয়া যায় যে, শারীরিকভাবে সুস্থ, শিক্ষিত ও দক্ষ, তাহলে সে রাষ্ট্র কখনোই পিছিয়ে থাকতে পারে না। চীন এটার বড় প্রমাণ।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য এমন একটি প্রসঙ্গ যে, এটা কখনো আমার চয়েসের প্রসঙ্গ হতে পারে না। এটা একটা অধিকারের প্রসঙ্গ হওয়া উচিত। তদ্রূপ শিক্ষাও এমন একটি প্রসঙ্গ যেটা সার্বজনীন হওয়া উচিত। এটা অধিকারের প্রসঙ্গ হওয়া উচিত। এ বিষয়গুলোর স্বীকৃতি আমাদের সংবিধান রয়েছে। এখন কার্যকর করতে হবে। সত্যিই যদি আমরা বাংলাদেশকে সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, তাহলে এর কোনো বিকল্প নেই।
কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গ তুলে গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, কোটা নিয়ে আন্দোলনটা অনেকটা সংকীর্ণ আন্দোলন ছিল। সরকারি চাকরি কতগুলো পদে, কোটায় কতজন সুবিধা পাবে? কিন্তু এটা ঠিক যারা আন্দোলন করলেন, তাদের বাধ্য করা হলো বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে যাওয়ার জন্য। কারণ তারা সেই শাসনে অতিষ্ঠ ছিলেন, অসন্তুষ্ট ছিলেন। সেজন্যই যোগ দিলেন। তারা মনে করলেন, এ শাসনের পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে আমরা শান্তিপূর্ণ সুখী জীবনযাপন করতে পারবো।
অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় বলেন, যতক্ষণ না আমরা আমাদের বৈষম্য কমিয়ে আনতে না পারছি, যতক্ষণ না আমরা আমাদের আদর্শ; যেটা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে (প্রোক্লেমেশন) আছে, সংবিধানে রয়েছে; সবার জন্য মৌলিক চাহিদাগুলো অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা দেশে দীর্ঘদিনের জন্য শান্তি আশা করতে পারি না। আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হচ্ছে নিজের অবস্থান থেকে সেটার জন্য কাজ করে যাওয়া। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই সেটা প্রয়োজন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো.
ঢাকা/আসাদ/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রসঙ গ র জন য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রবাসীদের ঈদ: দূরদেশে স্মৃতিময় উৎসবের গল্প
দেশের ঈদ মানেই এক অন্যরকম আবেগ, ভালোবাসা আর উৎসবের আমেজ। পরিবার-পরিজনের সাথে আনন্দঘন মুহূর্ত, সবার একসাথে ঈদের নামাজ আদায়, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়ানো- সব মিলিয়ে এক অনন্য অনুভূতি। কিন্তু প্রবাসীদের ঈদ কিছুটা ভিন্ন। এখানে নেই সেই চিরচেনা ঈদের আমেজ, নেই প্রিয়জনদের সান্নিধ্য।
প্রবাসজীবনে ঈদের দিন শুরু হয় এক ধরনের একাকীত্বের মধ্য দিয়ে। অনেকেরই ঈদের দিন কর্মব্যস্ততার মধ্যে কেটে যায়। কাজের দায়িত্বের কারণে ঈদের সকালেই যেতে হয় ডিউটিতে। তবে কাজের ফাঁকে সহকর্মীদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়, প্রিয়জনদের সাথে ফোনে বা ভিডিও কলে কথা বলা হয়। এতে কিছুটা হলেও পরিবারের কাছে থাকার অনুভূতি আসে। কর্মস্থলে থাকা প্রবাসীরা একে অপরের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার চেষ্টা করেন। কিছু জায়গায় কর্মস্থলের পক্ষ থেকেও ঈদের বিশেষ আয়োজন করা হয়, যাতে সবাই মিলেমিশে উৎসবের আমেজ উপভোগ করতে পারেন।
অন্যদিকে, যাদের ছুটি থাকে, তারা হয়তো সারাদিন ঘরেই কাটান। কয়েকজন বন্ধু বা রুমমেট একসাথে বসে রান্নাবান্না করেন, ভালো কিছু খাবার তৈরি করেন। এরপর পরিবারের সাথে কথা বলে মনকে হালকা করেন। কেউ কেউ ঈদের নামাজ পড়ে কাছের বাংলাদেশি কমিউনিটির সাথে সময় কাটান। বিকেলের দিকে অনেকে কাছের পার্ক বা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যান, যেখানে অন্যান্য প্রবাসীরাও একত্রিত হয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
আত্মীয়-স্বজন ছাড়া ঈদ আসলে সম্পূর্ণ আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে না। দেশের ঈদ যেখানে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয়দের সাথে আনন্দ-উৎসবে কাটে, সেখানে প্রবাসীদের ঈদ কিছুটা নিঃসঙ্গতার ছোঁয়া বয়ে আনে। ফোনের পর্দায় ভেসে ওঠা পরিবারের হাসিমুখ দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলেও, কাছাকাছি থাকতে না পারার কষ্টটা থেকেই যায়।
অনেক সময় দেখা যায়, প্রবাসীরা ঈদের আগে ছুটি নেওয়ার আশায় থাকেন, যেন ঈদ দেশে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করতে পারেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ হয় না। কোম্পানির ভিসা জটিলতা, কাজের চাপ, ছুটির অনুমোদন না পাওয়া, কিংবা টিকিটের উচ্চমূল্য- এসব কারণে অনেকেরই দেশে ফেরা সম্ভব হয় না। ফলে তারা ঈদের সেই আনন্দ উপভোগ করতে পারেন না এবং এক ধরনের মানসিক কষ্ট নিয়েই ঈদ উদযাপন করতে হয়।
তবুও, প্রবাসীরা চেষ্টা করেন নিজেদের মতো করে ঈদের আনন্দ খুঁজে নিতে। দূরদেশে থেকেও সবাই চেষ্টা করেন দেশের ঈদের আবহ যেন কিছুটা হলেও ফিরে আসে সবার মাঝে। তাই ঈদের সকালে নাস্তা তৈরি করা হয়ে থাকে, ঠিক যেমনটা দেশে করা হতো। কয়েকজন মিলে পরিকল্পনা করেন, কে কোন খাবার তৈরি করবেন। কারও দায়িত্ব সেমাই রান্না করা, কেউ বানান পোলাও-মাংস। কেউ আবার পেঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ যাবতীয় কাটাকাটির কাজ করেন, কেউ মাংস প্রস্তুত করেন, আর ১-২ জন থাকেন রান্নার দায়িত্বে। পরে সবাই একসাথে খাওয়া-দাওয়া করেন।
দেশে পরিবারের সঙ্গে বসে খাওয়ার মতো আনন্দ না পেলেও, একে অপরের মাঝে আপনজনের ছোঁয়া খুঁজে পান। আমাদের এই ক্ষুদ্র আয়োজন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা একা নই। দূরদেশে থেকেও আমরা একে অপরের পাশে আছি, ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছি।
এইভাবেই প্রবাসের ঈদ হয়তো একটু ভিন্ন, কিন্তু ভালোবাসা আর ঐক্যের মাঝে দেশের ছোঁয়া ঠিকই অনুভব করা যায়। ঈদের দিনটি শেষ হয় একরাশ নস্টালজিয়া আর আগামী ঈদে পরিবারের সাথে থাকার আশা নিয়ে।
ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক!
ঢাকা/এস