গ্যলারিতে আইপিএল দেখার অভিজ্ঞতা: অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়
Published: 26th, March 2025 GMT
: ‘স্যার গিফটগুলো কালেক্ট করবেন।’
: গিফট?
: হ্যাঁ, ওই বুথ থেকে।
ইডেন গার্ডেনসের চার নম্বরের গেট দিয়ে প্রবেশ পথে আচমকা ভলেন্টিয়ারের সঙ্গে এমন কথোপকথনো উৎসুক হয়ে উঠলাম। ভারতের নামী সাংবাদিক রূপক বসু আমার ও আমার সঙ্গী আরিফুল ইসলাম রনির জন্য দুইটা আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচের টিকিট দিয়েছেন। পরিবার নিয়ে মধ্য প্রদ্বেশে ঘুরতে গেলেও আমাদের আগ্রহের প্রেক্ষিতে দুইটা টিকিট বন্দোবস্ত ঠিকই করেছেন। এজন্য ধন্যবাদ দিতে গিয়ে শুনতে হয়েছে, ‘‘এ আবার ধন্যবাদ। তোমার যা, আমারও তা।’’
জানিয়ে রাখা ভালো, আইপিএলের ১৮তম আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও ম্যাচ হয়েছে ২২ মার্চ ইডেন গার্ডেনসে। ক্লাব হাউজের টিকিট পাওয়ায় মনে মনে ভাবছিলাম, হয়তো টিকিট দামি হওয়াতে গিফট আছে। কিন্তু নির্দিষ্ট বুথে যাওয়ার পর তো চোখ ছানাবড়া।
আরো পড়ুন:
টি-টেন ক্রিকেটের আনন্দে মাতলেন সাবেক ক্রিকেটাররা
বড় জয়ের আগেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা, ঝুলে আছে ব্রাজিল
একটি টি শার্ট, একটি আইপিএলের ক্যাটালগ চশমা ও হাতের লাইটিং রিস্টব্যান্ড। আজকাল কোল্ড প্লে’র কনসার্টে যেগুলো দিয়ে থাকে আলোর ঝলকানি দেখানোর জন্য। ইডেনের ধারণক্ষমতা সংস্কারের পর কিছুটা কমেছে। তা-ও ৮৫ হাজার প্লাস। এর আগে লাখ ছুঁয়ে যেত। এবার সেই ৮৫ হাজার প্লাস দর্শকের জন্য আয়োজকরা সেই গিফটের ব্যবস্থা করেছে।
মানে, সাধারণ গ্যালারির টিকিট হোক বা ভিভিআইপি, আইপিএলের জার্সি, চশমা আর রিস্টব্যান্ড পাবেনই। পাশ থেকে আমার সঙ্গীর বেশ সরল উক্তি, ‘‘এঁরা এক ম্যাচেই যা করলো তা দিয়ে গোটা বিপিএলের অপারেশন্স কস্ট মিটিয়ে দেয়া যাবে।’’
২০০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া আইপিএলের বয়স এখন আঠারো। যৌবনে পা রাখায় এবার জৌলুসটাও বেশি। ভাগ্যের জোরে, ব্যাট-বলে মিলে যাওয়ায় আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচটা দেখার সুযোগ হলো বাংলাদেশের দুই ক্রীড়া সাংবাদিকদের। গ্যালারিতে প্রবেশের পথেই যেই মুগ্ধতা ছড়াল, আসন গ্রহণের পর তা ছাড়িয়ে গেল সবকিছুকে।
প্রতিটি আসনে একটি করে স্বাগতিক দলের পতাকা। টিভির পর্দায় দেখা যায়— দশর্করা কলকাতা, চেন্নাই কিংবা বেঙ্গালুরু, পাঞ্জাবের পতাকা উড়িয়ে যাচ্ছেন। অনেকটা ম্যাক্সিকান ওয়েব অনুভব আসে। আয়োজক এবং স্বাগতিক দলের পক্ষ থেকে ওই পতাকা রাখা থাকে গ্যালারিতে। কেন? সেই উত্তরটা একটু পর দিচ্ছি।
রাতভর জার্নি করে গেদে হয়ে কলকাতা পৌঁছানোর পর আমাদের শরীরে ক্লান্তি ভর করেছিল। কিন্ত শহরে যখন আইপিএলের বিন বাজছে তখন সেখানে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শরিক না হওয়াটা বোকামি। তাইতো তড়িৎ গতিতে হাতের দুয়েকটি কাজ সেরে বেরিয়ে পরা ইডেন গার্ডেনসের উদ্দেশ্যে।
শহরের মার্কোস স্ট্রিট স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশিদের দখলে থাকে। এখন ভিসা জটিলতার কারণে মার্কোস স্ট্রিটে বাংলাদেশি খুঁজে পাওয়া কঠিন। চিকিৎসা ভিসায় তা-ও দুয়েকটি পরিবারকে পাওয়া যায়। এছাড়া পিনপতন নিরাবতাই থাকে।
হোটেল থেকে উবার করে ইডেনের দিকে এগুতেই আইপিএলের উত্তাপ টের পাওয়া গেল। বড় রাস্তার ধারে কলকাতা ও বেঙ্গালুরুর জার্সিতে সেলফি তুলছে একদল কিশোর। কথার লড়াই তো চলছেই। কিন্তু ওই স্মৃতিটুকু না রাখলে কি হয়।
ইডেনের অনেক আগেই গাড়ি থেকে নামতে হয়। এরপর লম্বা ওয়াক ওয়ে। পিপিলিকার মতো মানুষ ছুটছে বিরাট কোহলি, আজিঙ্কা রাহানেদের ম্যাচ দেখতে। সঙ্গে বাড়তি পাওয়া সুরের যাদুকর শ্রেয়া ঘোষাল, বলিউড বাদশা শাহরুখ খান ও অভিনেত্রী দিশা পাটনির পারফরম্যান্স।
মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের টুর্নামেন্ট। আয়োজকরাও যেন এক্কেবারে পেশাদার। দর্শকরা পকেটের পয়সা খরচ করে মাঠে ঢুকছে। তাদেরকেও ফিরিয়ে দিতে হবে তেমন কিছু। আইপিএল নিজেদেরকে এমন ব্র্যান্ডই বানিয়েছে। যেখানে ইনভেস্ট করলেই লাভ।
বলিউড আর ক্রিকেট ভারতে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। দুইটোই আনন্দ বাড়িয়ে দেয়। উদ্বোধনীতে ড্রোন শো, কেক কাটিং ফেস্টিভাল আর বিরাট কোহলি ও শাহরুখের নৃত্য বার্তা দেয়, এটা সাকসেসফুল শো। ওহ, আইপিএলের ব্র্যান্ডিং এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যেখানে শাহরুখ খানকেও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বানিয়ে দেয়।
হরেক রঙের লেজারের আলোর ঝলকানি। তার কিছুক্ষণ পর ঊর্ধ্ব গগনে একের পর এক আতশবাজি। সেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে চারপাশে ছড়াচ্ছিল আলোকচ্ছটা। কত যে তার রং, কত যে তার খেলা। আকাশ যেন নানান রঙের খেলায় মেতে ওঠলো। আলোকরশ্মি ছড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হল আইপিএল ২০২৫।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাঝেই, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ধন সিং থাপা এবং সুবেদার জোগিন্দর সিং সাহানান স্ট্যান্ডের পেছন দিয়ে উড়তে থাকে ড্রোন। জ্বলন্ত সেই ড্রোনকে মনে হচ্ছিল ঝিঝিপোকারা মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। মাঝ আকাশে এসে ড্রোনগুলো আঁকল আইপিএলের চেনা লোগো। এরপর ১৮তম আইপিএলের কেক। শেষে আবার আইপিএল ১৮।
একটু পরপরই আয়োজকরা চোখ ধাঁধিয়ে দেন। মুগ্ধতা ছড়ানো কোনো একটি অ্যাক্রোবেটিক শো করে উপস্থিত সকলের করতালি আদায় করে নেয়। আনন্দের এই ফুলঝুরি ছুটতে ছুটতে উদ্বোধনী হয়ে যায় আইপিএলের এবারের আসরের। এরপর শুধু ২২ গজের লড়াই।
দর্শকরা আইপিএলের প্রাণ। খেলাটাকে বাঁচিয়েও রেখেছেন দর্শকরা। সেই দর্শকদের উন্মাদনা দিতে, একাত্মতা করতে ডিজের সঙ্গে ওরা রেখেছিল এক ঝাঁঝালো কণ্ঠের শো স্টপার। যার কণ্ঠে ঝরছিল আগুন। একটু পরপরই নানা স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন গ্যালারি। কখনো তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘চিয়ার্স ফর কেকে আর।’’ আবার কখনো বলেন, ‘‘উই ওয়ান্ট সিক্সার।’’ কখনো পতাকা তুলে দর্শকদের আনন্দে ভাসান। ওই যে পতাকার কথা বলেছিলাম, তার কণ্ঠের তালে তালে দর্শকরা ডানে-বামে পাতাকা নাড়তে থাকেন। কখনো ধীর গতিতে, কখনো খুব জোরে।
আরেকটি বিষয় খুব গভীরভাবে বুঝতে পারলাম, এখানে আইপিএলের খোঁজখবর বাড়ির সকলেই রাখে। আমার ঠিক পাশেই মাকে সঙ্গে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন এক তরুণ। তরুণের গায়ে বেঙ্গালুরুর জার্সি। মায়ের গায়ে কলকাতার। মা আবার বিরাট কোহলির ভক্ত। খুব করে তিনি চাইছেন, কোহলি রান করুক। কিন্তু কলকাতা যেন জিতে যায়। আর ছেলের চাওয়া, বিরাটের সেঞ্চুরি ও বেঙ্গালুরুর জয়।
শুধু ওই পরিবারটিই নয়, আশেপাশে যাদেরকেই দেখছিলাম প্রতিটি বল মূল্যায়ন করছিলেন। প্রতিটি শটে ডুবে যাচ্ছিলেন। আউট হওয়ার পর ব্যাটিং অর্ডারে কে আসবেন, শেষ ওভারগুলোতে কে করতে পারেন সেগুলো তাদের মুখে মুখে ঘুরছে। শুধু তা-ই নয়, অনান্য দলগুলোর খোঁজও তারা রেখেছেন। তাতে বুঝে যাই যে, আইপিএলের এই সাম্রাজ্যে প্রত্যেকে অংশীদার।
মাঠের ক্রিকেটে আইপিএল বরাবরই সেরা। মাঠের বাইরের আয়োজনে তারা গোল্ডেন এ প্লাস। লম্বা সময় পেরিয়ে আইপিএল কেন ব্র্যান্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে তার একটা ঝলক বোঝা গেল ইডেন গার্ডেনসে। যেখানে, বলিউল-ক্রিকেট-দর্শক সমান্তরালে চলে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের সমানুপাতিক ও পরিপূরক। এই আয়োজন নিজের চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প এল র কলক ত আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
রংপুর মেডিকেলে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, ‘রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস’ চেয়ে শিক্ষার্থীদের বিবৃতি
রংপুর মেডিকেল কলেজে (রমেক) ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ‘রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের’ দাবি নিয়ে সরব হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ‘ক্যাম্পাস রাজনীতি’ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য ছাত্রদলের নেতারা বলছেন, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন নামে ইসলামী ছাত্রশিবির রাজনীতি করলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে তারা অন্যদের রাজনীতি করার সুযোগ দিতে চাচ্ছে না। তবে ইসলামী ছাত্রশিবির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে।
গত মঙ্গলবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে মো. আল মামুনকে সভাপতি ও শামছুদ্দোহা আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে রংপুর মেডিকেল কলেজে ছয় সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১১ আগস্ট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ ছয় দফা দাবি জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে পরদিন ক্যাম্পাসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করে কলেজ প্রশাসন। এরপর থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজে প্রকাশ্যে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিবৃতি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে গত বছরের ১২ আগস্ট রমেকের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান রাখা হয়। অথচ ছাত্রদল রংপুর মেডিকেল কলেজে কমিটি দেয়। কলেজ প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত অগ্রাহ্য করে কতিপয় শিক্ষার্থীর এমন নিন্দনীয় কাজের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছি এবং ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।’
ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে গুপ্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন সদ্য ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামছুদ্দোহা আলম। তিনি বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজের তখনকার অধ্যক্ষ ছিলেন স্বাচিপের নেতা। ছাত্রলীগ নেতা ও স্বাচিপের চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিতে তখন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এখন সাধারণ শিক্ষার্থীর নাম ব্যবহার করে ছাত্রশিবির গুপ্ত রাজনীতি করতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ চাইছে। যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও বিব্রত।
জানতে চাইলে রংপুর মহানগর ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজে ছাত্রশিবিরের কোনো কমিটি নেই। তারা কোনো গুপ্ত রাজনীতি করেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদলের কমিটি ঢাকা থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটি হওয়া আর কর্মকাণ্ড পরিচালনা এক নয়। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা না করলে কমিটি নিয়ে আপত্তি থাকার কথা নয়।