শ্রমিক দলের নেতার মুক্তির দাবিতে মুরাদনগরে ৬ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট, দুর্ভোগ
Published: 26th, March 2025 GMT
সিএনজিচালিত অটোরিকশাস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি ও থানায় ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার শ্রমিক দলের নেতা আবুল কালামের মুক্তির দাবিতে কুমিল্লার মুরাদনগরে আজ অর্ধবেলা পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুমিল্লার জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ শাখার উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
ধর্মঘটের কারণে মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন পথে বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঈদের আগে হঠাৎ এমন পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। হাসিবুর রহমান নামের এক বাসযাত্রী বলেন, ‘সকালে জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা যাওয়ার জন্য কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এটা কেমন কথা। কোনো কিছু হলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায় করা হয়। পরে বাধ্য হয়ে সিএনজি অটোরিকশায় করে কুমিল্লা সেনানিবাসে এসে ঢাকার বাসে উঠেছি। ঈদের এমন সময় হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটের কারণে শত শত মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।’
গ্রেপ্তার আবুল কামাল স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি উপজেলার নবীপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোমবার ইফতারের আগে বাসস্ট্যান্ডে পরিবহনে চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রতিবাদ করেন মুরাদনগর উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী। এ ঘটনায় তাঁর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম। পরে আবুল কালামকে আটক করে মুরাদনগর থানা–পুলিশ। তাঁকে প্রধান আসামি করে চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগ এনে মামলা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু ফয়সাল। উবায়দুল সিদ্দিকী স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার চাচাতো ভাই।
এদিকে আবুল কালামকে ছাড়িয়ে আনতে গত সোমবার রাতে মুরাদনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানার নেতৃত্বে থানায় হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। থানায় হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের ওপর হামলাসহ কয়েকটি অভিযোগে মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক মো.
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে আজ ধর্মঘট ডাকে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড শাখা। ওই বাসস্ট্যান্ড এলাকার অন্তত পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধর্মঘটের কারণে কোম্পানীগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী তিশা ও গোমতী পরিবহন, চট্টগ্রামগামী প্রান্তিক ও হানিফ সুপার পরিবহন এবং বিআরটিসি বাস, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পথে চলাচলকারী রয়েল সুপার, ফারজানা, সুগন্ধা, ফারহানা ট্রান্সপোর্টের কোনো বাস ছয় ঘণ্টা চলাচল করেনি। এতে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বাস না পেয়ে অনেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে গন্তব্যে গেছেন অনেকে।
পরিবহনশ্রমিক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শ্রমিক মানুষ, আমরা পরিশ্রম করে সংসার চালাই। আমাদের শ্রমিকনেতার মুক্তি ও তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার চাই। তা না হলে আবারও ধর্মঘট হলে আমাদের সমস্যা হবে। এক দিন কাজ না করলে আমাদের পেটে ভাত জুটবে না।’
কুমিল্লা জেলা পরিবহনের শ্রমিক ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ শাখার সভাপতি হাজি ইদ্রিস জানান, কোম্পানীগঞ্জ বাজারের যানজট নিরসনে বাস মালিক সমিতি বিভিন্ন পয়েন্টে কিছু শ্রমিক নিয়োগ দেয়। এর খরচ বাস মালিক সমিতি বহন করে থাকে। এর দায়িত্বে থাকা লাইনম্যান ও শ্রমিক দলনেতা আবুল কালামকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে পুলিশে দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়দানকারীরা।
এ বিষয়ে বুধবার বিকেলে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কাউকে হয়রানি নয়, থানায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ছাড়া ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলায় আবুল কালামসহ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। থানায় মামলার ঘটনায় হওয়া পুলিশের মামলার প্রধান আসামি মাসুদ রানাসহ অন্যরা পলাতক। তাঁদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৮
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বড়কান্দা ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ৮ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, পরিস্থিতির সুযোগে লুটপাটও ঘটতে পারে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাকির হোসেন ও কাউছার সরকার সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ ঘটে। এতে ৮ জন আহত হন।
আহতদের কয়েকজনকে মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তিনজনকে ঢাকা পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রমজান মাসে পূর্ববিরোধের জেরে কাউছার সরকার গ্রুপের কাউছার হামলার শিকার হন। তাঁর হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়ার অভিযোগে শাজাহান সরকার (কাউছারের বাবা) বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় আটকরা বুধবার জামিনে মুক্তি পান। দুই দিন পর, শুক্রবার দুপুরে জাকির গ্রুপের লোকজন বাদী পক্ষের বাড়িতে হামলা চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়।
হরিপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা ও বড়কান্দা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাহফুজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, দুজনই বড়কান্দা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি প্রার্থী। সেই প্রতিযোগিতা থেকেই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। গত এক মাস আগে জাকিরের লোকজন কাউছারকে হাত-পায়ের রগ কেটে ফেলে, কুপিয়ে জখম করে। এই মামলায় জাকিরসহ তার লোকজন আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তাদের আটক করে জেলে প্রেরণ করলে ১১ দিন পর জামিনে এসে বাদী পক্ষের বাড়িতে হামলা চালায়। এরপর কাউসারের লোকজন ও সেখানে গেলে দুইপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে দুপক্ষের ৮ জন আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত একজনকে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে পাঠানো হয়।
এবিষয়ে জাকির হোসেনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি সমকালকে বলেন, আমরা ১১ দিন পর জামিন পেয়ে গতকাল রাতে বাড়িতে এসেছি। আজ সকালে শুনছি আমার চাচা ডালিমকে মারছে এরপর আমরা কয়েকজন ওইখানে খাল পার হয়ে যাই। সেখানে আমাদের লোকজনকে মারধর করে। আমার ৫ জন আহত হই। এদের মধ্যে একজন গুরুতর অবস্থায় আছেন।
তবে বাদীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন জাকির হোসেন।
মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষে আহত বেশ কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল সমকালকে জানান, সংঘর্ষের খবর পাওয়ার পর সাথে সাথে পুলিশ গেছে। পুরোনো বিরোধের জেরেই এ সংঘর্ষ হয়েছে। ৩-৪ জন আহত হয়েছে, এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এবিষয়ে লিখিতি অভিযোগ এখনো পাইনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।