চেয়ার দখল করে চাকরি হারালেন প্রকৌশলী, ২ কর্মকর্তা বরখাস্ত
Published: 26th, March 2025 GMT
অফিস আদেশ ছাড়াই নির্বাহী পরিচালকের (ইডি) চেয়ার দখলের দুদিন পরই চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরের চিঠি পেয়েছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান। মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এক অফিস আদেশে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেন।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জোর করে চেয়ার দখলের ঘটনায় এক নির্বাহী প্রকোশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছে আরও ৬-৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, জাহাঙ্গীর আলম খানের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং যেহেতু সরকার জনস্বার্থে তাঁকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা প্রয়োজন মর্মে বিবেচনা করে, সেহেতু সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮–এর ধারা ৪৫ ও সরকারি চাকরি (সংশোধন) আইন, ২০১৩–এর উপধারা ২ (গ)–তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাঁকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও এই অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম খান বিএমডিএর সেচ শাখার প্রধান ছিলেন। গত ২৩ মার্চ কোনো অফিস আদেশ ছাড়াই তিনি বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালকের (ইডি) দায়িত্ব নেন। সে সময় ইডি পদে ছিলেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম, যাকে জোর করে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। প্রশাসনিক এই পদে সাধারণত বিএমডিএর বাইরের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। গত বছরের জুলাইয়ে শফিকুল ইসলামকে ইডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে ২৩ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে শফিকুল ইসলামকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়। কিন্তু তিনি বিএমডিএতেই অবস্থান করছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন।
গত রোববার দুপুরে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানসহ কয়েকজন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে চেয়ার ছেড়ে দেওয়ার চাপ দেন। এক পর্যায়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে চেয়ার থেকে ওঠানোর চেষ্টা করেন। তখন শফিকুল ইসলাম বাধ্য হয়ে দায়িত্ব ছাড়তে সম্মত হন এবং একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেন, যেখানে উল্লেখ করা হয় যে তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং জাহাঙ্গীর আলম খান দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
অন্য দুই জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীকে উপেক্ষা করে জাহাঙ্গীর আলম খান ইডির চেয়ার দখল করেন। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসার পর মঙ্গলবার তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এ দিকে অভিযুক্ত কিছু কর্মকর্তা ও বহিরাগত মিলে জাহাঙ্গীর আলম খানের অবসরের আদেশ বাতিল চেয়ে মানববন্ধন করেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, বিএমডিএর ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিডিওসহ এসেছে। এভাবে জোর করে চেয়ারে বসা অবিবেচনাপ্রসূত। এখানে সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন হয়েছে। এটি চরম অন্যায়। এই দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারে না। এ রকম অন্যায় যেখানেই হবে আমরা ব্যবস্থা নেব।
বিএমডিএ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরক বলেন, সরকারি পদে থাকা একজন কর্মকর্তাকে জোর করে বের করে দেওয়া অনৈতিক। বাধ্যতামূলক অবসরের সিদ্ধান্ত যথাযথ এবং এটি বিএমডিএর জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বরখ স ত জ হ ঙ গ র আলম খ ন চ য় র দখল কর মকর ত ব এমড এ ক অবসর জ র কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে সাবেক সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা
ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এক কোচিং সেন্টার মালিকের কাছ থেকে চার কোটি টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে সিআইডির সাবেক প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
গতকাল মঙ্গলবার যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. জোবায়দুর রহমান বাদী হয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ওই নালিশি মামলা করেন।
জোবায়দুর রহমানের আইনজীবী মো. নিহার হোসেন ফারুক ওই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে পল্টন থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। জোবায়দুর রহমান মেডিকেল ভর্তি কোচিং প্রতিষ্ঠান ‘মেডিকো’র মালিক।
মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী ছাড়াও আসামি হিসেবে আরও তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা, উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান ও এসআই আতিকুর রহমান। অভিযুক্ত পরের তিনজন সিআইডিতে চাকরি করলেও তারা এখন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিবরণে বলা হয়, জোবায়দুর রহমান সপরিবারে রাজধানীর শান্তিনগরের চামেলিবাগে থাকেন। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট সাদা পোশাকে সিআইডি কর্মকর্তা জুয়েল চাকমার সঙ্গে আরও সাত-আটজন পুলিশ তাঁর ফ্ল্যাটে যায়। এ সময় তারা জোবায়দুর রহমানকে তুলে মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যায় এবং তাঁর বাসার বিভিন্ন মালামাল লুট করে। তাঁকে ২৯ ঘণ্টা আটকে রাখা হলেও তাঁর বিষয়ে পরিবারকে জানায়নি সিআইডি।
মামলার আরজিতে বলা হয়, সিআইডি কার্যালয়ে জোবায়দুরের দুই চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। পরে ওই ছবি তাঁর স্ত্রী ও পরিবারকে পাঠানো হয়। তৎকালীন সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার নির্দেশে জোবায়দুরের কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দেওয়া না হলে তাঁকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার ও তাঁর স্ত্রীকে মানিলন্ডারিংয়ে মামলায় আসামি করার হুমকি দেওয়া হয়।
জোবায়দুরের পরিবার গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রি করে সিআইডির এসআই মেহেদী হাসানের গাড়িচালক সবুজের কাছে দফায় দফায় চার কোটি টাকা পরিশোধ করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এসআই আতিকুর রহমান টাকা দেওয়ার স্থান ও সময় জানিয়ে তা তদারকি করতেন। টাকা নেওয়া–সংক্রান্ত একাধিক অডিও রেকর্ড জোবায়দুরের কাছে আছে। তাঁর ব্যাংক হিসাব ৬ মাসের বেশি সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
জোবায়দুরকে রিমান্ডে নিয়ে পেটালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে ৪৩ দিন কারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাঁকে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগী জোবায়দুর রহমান রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী ও এজাহারভুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এরপর শারীরিক নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করেছে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়েছে।
আজ বুধবার এ ব্যাপারে জানতে সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
মোহাম্মদ আলী মিয়া ২০২২ সালের আগস্টে সিআইডি প্রধান হন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট মোহাম্মদ আলীকে সিআইডি থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর গত ২২ আগস্ট তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। মোহাম্মদ আলী মিয়ার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় আটটি হত্যা মামলা রয়েছে।
আরও পড়ুনসিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু দুদকের২৩ মার্চ ২০২৫