এবার ঈদুল ফিতরে লম্বা ছুটি পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা। তাই আগেভাগে বাড়ির পথ ধরছেন বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রামে বসবাস করা লোকজন। তবে এখনো সড়কপথে ঈদযাত্রা পুরোদমে জমে ওঠেনি। নগরের আন্তজেলা বাস কাউন্টারগুলোতে এবার অগ্রিম টিকিট কেনার ভিড় নেই। কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পুরোনো অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা। ঈদে ‘আবদার’ করে টাকা বাড়তি নিচ্ছেন বলে স্বীকারও করেছেন বাসমালিক ও কাউন্টারের কর্মীরা।

বাসমালিক ও কাউন্টারের কর্মীরা বলছেন, যাওয়ার সময় ভর্তি করা যাত্রী নিয়ে গেলেও ফেরার সময় খালি আসতে হয়। তাই ৫০ থেকে ১০০ টাকা ঈদ উপলক্ষে চেয়ে নেওয়া হয়। এর বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। এবার বন্ধ বেশি হওয়ায় আগেভাগে অনেকে শহর ছেড়েছেন। আগামী দু-তিন দিনে চাপ বাড়বে। অনেকে অনলাইনে কেটে ফেলেন টিকিট। কাউন্টারে তাই ভিড় কম থাকে।

চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়া থেকে ঢাকা, কক্সবাজার, রংপুর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলার বাস ছেড়ে যায়। এ ছাড়া নগরের কদমতলী এলাকা থেকে নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলার বাস ছাড়ে। শহরের প্রবেশদ্বার এ কে খান এলাকা থেকে কমবেশি সব জেলার বাস কাউন্টার রয়েছে। মূলত এই তিন এলাকাতেই যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়।

আজ বুধবার সকালে এই তিন এলাকা ঘুরে যাত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। বিকেলের দিকে যাত্রীদের চাপ থাকে বলে জানিয়েছেন কাউন্টারের বিক্রয়কর্মীরা। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বেড়েছে। কিছু কাউন্টারের ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি চাওয়া হচ্ছে। বেশি বেড়েছে উত্তরবঙ্গের বাসগুলোর ভাড়া।

রংপুর-রাজশাহীর ভাড়া বেড়েছে

নগরের ষোলশহর এলাকায় একটি কারখানায় চাকরি করেন ফজলুল কাদের। বছরে দুই ঈদে পরিবার নিয়ে রংপুর যান তিনি। সব মিলিয়ে প্রতিবছর চার থেকে পাঁচবার বাড়িতে যাওয়া হয় তাঁর। আজ নগরের এ কে খান এলাকায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই টিকিট কেটেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে আছেন স্ত্রী ও এক ছেলে।

ফজলুল কাদের বলেন, স্বাভাবিকের তুলনায় ৩০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছেন তিনি। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম থেকে রংপুরের ভাড়া ১ হাজার ৩০০ টাকা (নন এসি)। তবে এখন ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তা–ও বলছে টিকিট নেই। অথচ কাউন্টারে যাত্রী নেই।

একই রুটের আরেক যাত্রী সালাউদ্দিন বলেন, কাউন্টারে গেলে বলে টিকিট নেই। কিন্তু বাড়তি দাম দিলে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। ১০০ বাড়তি মানা যায়, কিন্তু ২০০-৩০০ টাকা তো সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। যাত্রীদের জিম্মি করে প্রতি ঈদেই বাড়তি টাকা নেওয়া হয়।

কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, রংপুর ছাড়াও রাজশাহী, বগুড়া,পাবনা, নাটোরসহ উত্তরবঙ্গের ভাড়া বেড়েছে। রাজশাহী রুটে নন এসি বাসের ১ হাজার ৩০০ টাকার ভাড়াও এখন বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করা হচ্ছে। যাত্রীদের আশঙ্কা ঈদের আগমুহূর্তে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত দাম চাইতে পারে কাউন্টারগুলো। গত বছর এ সময়ে দাম বাড়িয়েছিল তাঁরা।

শ্যামলী পরিবহনের বিক্রয়কর্মী মোহাম্মদ নাসির বলেন, উত্তরবঙ্গে ভাড়া বেড়েছে। ভর্তি গেলেও আসার সময় বাস খালি আসতে হয়। তাই ৫০-১০০ টাকা বাড়তি ‘আবদার’ করে নেওয়া হচ্ছে। এর অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে না। ঈদ উপলক্ষে এটুকুই ভাড়া বেড়েছে।

‘বাড়তি নেওয়ার সুযোগ নেই’

ঈদযাত্রায় বাসভাড়া বাড়তি নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো। আন্তজেলা বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে একই বক্তব্য জানানো হলেও ৫০-১০০ টাকা বাড়তি নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তাঁরা। ঈদযাত্রায় বাড়তি বাসভাড়ার বিষয়টির প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে জরিমানাও করা হয়েছে চারটি প্রতিষ্ঠানকে।

গত মঙ্গলবার সকালে নগরের এ কে খান ও অলংকার মোড় এলাকার বাস কাউন্টারগুলোতে অভিযান চালায় সংস্থাটি। এ সময় নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দাম নেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধে সাবিনা এন্টারপ্রাইজ, সোনিয়া এন্টারপ্রাইজ, জি এস ট্রাভেলস ও তিশা প্লাটিনাম এন্টারপ্রাইজকে ৪৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে উপপরিচালক (চট্টগ্রাম) মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘অভিযানে আমরা বাড়তি মূল্যে টিকিট বিক্রি হতে দেখেছি। ঈদে যাত্রীদের যাতে ভোগান্তি না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। বাড়তি মূল্যের অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

আন্তজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভাড়া চার্ট অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কেউ কেউ ঈদ উপলক্ষে ৫০-১০০ টাকা হয়তো নিচ্ছেন। তবে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বাড়তি ভাড়া না নিতে বলা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ৩০০ ট ক ১০০ ট ক ন এল ক নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

কড়া নাড়ছে ঈদ, চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ উপলক্ষে মার্কেট ও শপিংমলগুলো এখন জমজমাট। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন রাজধানীবাসী। ক্রেতা সমাগম বাড়ায় বিক্রেতারাও খুশি।

ঈদের আগে মার্কেট ও শপিংমলগুলোগুলোতে পোশাক, জুতা, অলঙ্কার ও কসমেটিকসসহ প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র কেনাকাটার ধুম লেগেছে। পছন্দের পণ্যটি কিনতে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলগুলোর বিভিন্ন দোকান ঘুরছেন ও দরদাম করছেন ক্রেতারা।

এদিকে, ফুটপাতে থাকা ছোট ছোট দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের অনেক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কেনাবেচা হচ্ছে জমজমাট।

আরো পড়ুন:

শেষ মুহূর্তে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা

শেষ সময়ে জমজমাট কুমিল্লায় ঈদবাজার

শনিবার (২৯ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর খিলগাঁও, মৌচাক, সিদ্ধেশ্বরী, শান্তিনগর, মগবাজার ও বায়তুল মোকাররম ও তার আশপাশের এলাকার কয়েকটি মার্কেট ও শপিংমলগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) শেষ অফিস করেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।এরই মধ্যে অনেকেই সেরে ফেলেছেন কেনাকাটা। যারা বাকি রয়েছে তারাও ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

শনিবার রাজধানীর খিলগাঁও, মৌচাক, শান্তিনগর, মগবাজার ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় সকাল থেকেই ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে শপিংমলের দোকানের চেয়ে ফুটপাত থেকে ক্রেতারা পছন্দের জিনিপত্র বেশি কিনতে দেখা গেছে।

সিদ্ধেশ্বরী আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের মায়িদা কালেকশনের কর্ণধার  রমজান আলী বলেন, “এবার ঈদে ভালো কেনাবেচা হচ্ছে। গতবারের তুলনায় এবার অনেক ভালো। ক্রেতারা সাচ্ছন্দে পোশাক কিনছেন। আর এক দিন বা দুই দিন হতে রয়েছে। আশা করা যায় এবার বেচাবিক্রি ভালো হবে।”

সিদ্ধেশ্বরী আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সে পাঞ্জাবি কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আনোয়ার বলেন, “এবার পাঞ্জাবির দাম তেমন বাড়েনি। অন্যান্য ঈদে পাঞ্জাবির দাম অনেক বাড়তি চাওয়া হয়। সে হিসেবে এবার পাঞ্জাবির দাম সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে। ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ভালো পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে।”

মৌচাক মার্কেটের গলিতে বাচ্চাদের পোশাক বিক্রেতা মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, “ঈদ উপলক্ষে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে।গত শুক্রবার ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় ছিল। সে অনুযায়ী ভালো কেনাবেচা হচ্ছে। সকাল বা দুপুরের চেয়ে রাতে মার্কেটে ক্রেতারা বেশি আসছেন।”

মেয়ের জন্য জামা কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, “এবার ঈদ ঢাকায় করব, তাই একটু দেরিতে কেনাকাটা করতে এসেছি। মেয়ের বয়স ৭ বছর। তার জন্য ৫৫০ টাকায় একটি ফ্রক কিনেছি।”

ফর্চুন শপিংমলের আলভি ফ্যাশনের বিক্রেতা সুমন বলেন, “এবার ঈদে পাকিস্তানি থ্রি পিস ভালো বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা পচ্ছন্দসই পণ্য বেছে বেছে কিনছেন। ঈদের আগে বেচাকেনা ভালো হবে আশা করছি।”

বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে জুতা কিনেছেন মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, “ঈদে নিজের জন্য জুতা কিনেছি।দাম বেশি চাইলেও দামাদামি করে কেনা লাগছে। দাম সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে।”

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এক টাকায় ১৮ পণ্যের ঈদ উপহার 
  • কড়া নাড়ছে ঈদ, চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা
  • ৯ দিনের ছুটিতে দেখুন এই ৯ সিনেমা-সিরিজ
  • ঈদযাত্রায় চাপ বেড়েছে আকাশপথেও, টিকিটের দাম দ্বিগুণ
  • ব্যাংককে অন্যান্য দেশের নেতার সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে: ভারতের পররাষ্ট্রসচিব
  • যমুনা নদীতে বারুণীর স্নানে পুণ্যার্থীর ঢল
  • বেরোবিতে হঠাৎ আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
  • ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু সড়কে স্বস্তির ঈদযাত্রা
  • লম্বা ছুটি, সড়ক ভালো ভয় শুধু বিশৃঙ্খলায়
  • সৌদি আরবে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত