নন্দরানী-নীলমণিদের কাছে স্বাধীনতা মানে কাজের নিশ্চয়তা
Published: 26th, March 2025 GMT
ভোর ৫টা ৪০ মিনিট। দিনমজুর নন্দরানী দাঁড়িয়ে ছিলেন সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উল্টো দিকে সড়কে পাশে। কাজের জন্য গাইবান্ধা থেকে সাভারে এসেছেন তিনি। কথা বলার একপর্যায়ে নন্দরানী বলেন, ‘যা আয় করি; ঋণ শোধ করি, খাই। গরিব মানুষের কত জ্বালা, বুঝেন না? অন্য দেশ (অন্য জেলা) থিকা এখানে আইসা কাজ করি। কাজ না পাইলে চলুম কেমনে।’
নন্দরানীর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরও আট থেকে দশজন। তাঁদের সঙ্গে মাটি কাটার কোদাল, ঝুড়ি। সবাই যাবেন স্মৃতিসৌধসংলগ্ন পদচারী–সেতুর (ফুটওভার) নিচে। অনেকের কাছে এটি মানুষের শ্রম বেচাকেনার হাট হিসেবে পরিচিত। সেখান থেকে প্রয়োজন অনুসারে কেউ চুক্তি করে কাজে নিয়ে গেলেই আজকের জন্য আয়ের পথ খুলবে তাঁদের।
ওই শ্রমিকদের একজন নীলমণি। তিনিও এসেছেন গাইবান্ধা থেকে। নীলমণি বলেন, ‘চার বছর ধইরা কাজ করি। কেউ ১০ বছর, কেউ ২০ বছর ধইরা কাজ করে। এমনিতে দিনে ৬০০ টাকা হয়। ঈদ বাজারে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকাও পাওয়া যায়। এই দিয়া চলি।’
ওই শ্রমজীবীরা জানান, সাধারণত ছয়টার সময় পদচারী–সেতুর নিচে কাজ খোঁজার স্থানে যান তাঁরা। কোনো কোনো সময় সাতটা–আটটার দিকেও যান। কথার এক পর্যায়ে স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন কি না, জানতে চাওয়া হয় তাঁদের কাছে। তখন রওশন নামের একজন বলেন, ‘ফুল আপনেরা দিবেন। গরিব মাইনসের জন্য এটা না। যারা রাজনীতি করে তারা দিবো ফুল। আমাগো এক দিন বইয়া থাকলেই লস।’
একই এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্যাপ প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠানের ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক। ধামরাই উপজেলার সুতিপাড়া থেকে ম্যাক্সিতে করে নবীনগরে ক্যাপ তৈরির একটি কারখানার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন তাঁরা। ভোর পাঁচটার দিকে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রধান উপদেষ্টাসহ গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের নিরাপত্তার স্বার্থে আটকে দেওয়া হয় তাঁদের। গাড়ি থেকে নেমে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। সময় ভোর ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে পুলিশ সদস্যরা ওই শ্রমিকদের যেতে দিলে হেঁটে তাঁরা কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘মালিকের অনেক টাকা লস হইয়া যায়। এইটা তো আমাগোও দেখা লাগে। সারা বছর কর্ম কইরা খাই। সামনে শিপমেন্টও আছে। মালিক জোর করে নাই। আমরা যদি কাজে না যাইতাম, মালিক কিছুই কইত না। কাজ না থাকলে অবশ্যই স্মৃতিসৌধে যাইতাম।’
সকাল ৬টা ৪৬ মিনিট। ইতিমধ্যে স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে চলে গেছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। ওই সময়ে স্মৃতিসৌধের ফটকের পাশে পদচারী–সেতুর নিচে মাটি কাটার কোদাল, ঝুড়ি পাশে রেখে আজকের দিনের আয়ের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় নন্দরানী-নীলমণিদের।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পেনাল্টি পেতে ‘মাটিতে পড়ে অভিনয় করেছে এমবাপ্পে’
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে নাটকীয় এক মুহূর্তে পেনাল্টি দাবি করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তবে সেই দাবি নস্যাৎ হয়ে যাওয়ার পর কী ঘটেছিল মাঠে? ম্যাচ শেষে জানালেন আর্সেনালের মিডফিল্ডার ডেকলান রাইস নিজেই।
প্রথমার্ধে তখনো ৩-০ গোলে এগিয়ে আর্সেনাল। বুকোয়ো সাকার মিস করা পেনাল্টির ঠিক পরেই ডি-বক্সে রাইসের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে যান এমবাপ্পে। রেফারি সঙ্গে সঙ্গেই পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়ে রাইসকে একটি হলুদ কার্ড দেখান। তবে দীর্ঘ ভিএআর পর্যবেক্ষণের পর দুই সিদ্ধান্তই প্রত্যাহার করা হয়। পেনাল্টি বাতিলের সঙ্গে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন রাইসও।
ম্যাচ শেষে টিএন্ডটি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাইস বলেন, ‘আমি জানতাম ওটা পেনাল্টি নয়। ওর শরীরে আমার হাত ছিল, কিন্তু একজন মিডফিল্ডার হিসেবে এটা করতেই হয়। আমি সৎ একজন মানুষ, তাই সঙ্গে সঙ্গেই এমবাপ্পেকে বলেছিলাম, এটা কোনো পেনাল্টি ছিল না। ও নিজেই মাটিতে পড়ে অভিনয় করেছে। শেষ পর্যন্ত আমরা কাজটা ঠিকঠাক শেষ করেছি, এবং এটা ক্লাবের ইতিহাসে স্মরণীয় এক রাত।’
রাইসের এই সততাই হয়তো তাকে ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দিয়েছে। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ ব্যবধানে এগিয়ে সেমিফাইনালে পা রাখে আর্সেনাল, যেখানে তারা মুখোমুখি হবে ফরাসি জায়ান্ট পিএসজির। অন্যদিকে আরেক সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলান।