আপনি আগুনে ঘি ঢেলেছেন, বর্ষাকে রেসি
Published: 26th, March 2025 GMT
তারকা দম্পতি অনন্ত-বর্ষা জুটি বেঁধে বেশ কটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কয়েক দিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে সিনেমা ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন বর্ষা। সন্তানদের কথা চিন্তা করে অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান এই নায়িকা।
বর্ষা মনে করেন, সন্তানেরা বড় হলে নায়িকা হিসেবে তাদের মাকে কীভাবে নেবে, সেই চিন্তা থেকেই অভিনয় থেকে দূরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত।
নায়িকার এমন বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে অভিনেত্রীরা বর্ষার এমন মন্তব্য ভালোভাবে নিচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন হালেন ক্রেজ পরীমণি। দিয়েছেন ফেসবুক পোস্টও। এবার বর্ষার বক্তব্যের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিলেন চিত্রনায়িকা মৃদুলা আহমেদ রেসি।
আরো পড়ুন:
বড় পর্দায় আর এইচ সোহেলের অভিষেক
আটচল্লিশে থেমে গেল নায়কের জীবন
সন্তানদের সঙ্গে তোলা ছবি শেয়ার করে এ অভিনেত্রী লেখেন, “আমার এই ছোট্ট জীবনে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া, নাচের প্রতিযোগিতায় অসংখ্য পুরুস্কার’সহ গোল্ড মেডেল পাওয়া, ৫০টি সিনেমায় অভিনয় করে হয়তো সেরকম কোনো স্বীকৃতি পাইনি। তবে আমার সন্তানেরা যখন স্কুল থেকে এসে বলে, ‘মাম্মা আমাদের টিচাররা, আমাদের বন্ধুরা, আমাদের অনেক প্রশংসা করে। কারণ আমাদের মা একজন অভিনেত্রী। আমাদের মাকে ইচ্ছা করলে গুগুল, ইউটিউব ও উইকিপিডিয়াতে দেখা যায়।’ আমার সন্তানেরা আমাকে নিয়ে অনেক গর্বিত ফিল করে যে, আমি তাদের মা। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।”
এরপর বর্ষার প্রসঙ্গ টেনে রেসি লেখেন, “ম্যাডাম আপনি তো এমন কোনো অসামাজিক কাজ করেন নাই যে, ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে কি বলবে সে জন্য আপনার লজ্জিত হতে হবে। তাহলে আমি বলব, অভিনয়কে ভালোবেসে নয়, গাড়ি-বাড়ি সম্পত্তির জন্যই আপনি অভিনয়কে পুঁজি হিসেবে নিয়েছিলেন।”
কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে রেসি লেখেন, “আপনার বক্তব্য মতে, অভিনয় জগতের সমস্ত বড় বড় শিল্পীদের যাদের সন্তান আছে তাদেরও লজ্জা পাওয়া উচিত? তাহলে এতগুলো বছর কেন কাজ করেছেন? আপনার অভিনয় ছেড়ে দেয়ার অন্য কোনো কারণ দেখাতে পারতেন। এমনিতেই সাধারণ জনগণ আমাদেরকে কটু কথা বলতে ছাড়ে না। আপনি আবার আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন!”
সৎ নিয়তে নিজের কাজ করার কথা জানিয়ে রেসি বলেন, “আমরা যারা মুসলমান তারা সবাই নিজের ধর্মটাকে মনের ভিতর ধারণ করি। আমাদের যেখান থেকে অর্জন, যত পরিচিতি সেই জায়গাটাকে কোনোদিন অস্বীকার করতে পারব না। নিজের কাজকে, পেশাকে সৎ নিয়তে করা উচিত।”
করোনার পর পরিবার নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন রেসি। সেখানে পরিবারের সঙ্গে সময় পার করছেন। খুব সহসা দেশে ফিরছেন না এক সময়ের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ভাসমান স্কুলের উদ্ভাবক রেজোয়ান পেলেন ‘ইয়েল বিশ্ব ফেলোশিপ’
ভাসমান স্কুলের উদ্ভাবক স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান ২০২৫ সালের “ইয়েল বিশ্ব ফেলো” হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি এ লিডারশিপ ফেলোশিপ প্রদান করে, যা বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ ফেলোশিপ প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এবছর বিশ্বের ৪ হাজার ২০০ জনের অধিক মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে থেকে নেতৃত্ব প্রদানকারী ১৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি “ইয়েল বিশ্ব ফেলো” হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা শাসনব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন, ব্যবসা, গণমাধ্যম, আইন, প্রযুক্তি, ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এদের মধ্যে মাত্র ৩ জন অলাভজনক সংস্থায় (এনজিও) কাজ করেন।
রেজোয়ান ছাড়াও ২০২৫ সালের ফেলোদের মধ্যে রয়েছেন সুইডেনের পরিবেশবান্ধব ব্যবসার প্রবক্তা ম্যাথিয়াস উইকস্ট্রম, জর্জিয়ার সাবেক সংসদ ভাইস-স্পিকার ও গণতন্ত্র বিশেষজ্ঞ তামার চুগোশভিলি, নাইজেরিয়ার বিশ্ববিখ্যাত সংগীতশিল্পী বুকোলা এলেমিদে (আসা), মিশরীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মারিয়াম এল মারাকেশি, এবং প্যারাগুয়ের শীর্ষস্থানীয় বিচার বিভাগীয় ব্যক্তিত্ব ভিভিয়ান নুনেজ।
“ইয়েল বিশ্ব ফেলো” প্রোগ্রাম হলো চার মাসের একটি পূর্ণকালীন রেসিডেনসিয়াল প্রোগ্রাম, যা ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টার থেকে পরিচালিত এবং জ্যাকসন স্কুল অব গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স-এ অবস্থিত।
ইয়েল ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টারের ডিরেক্টর এমা স্কাই বলেন, ভাসমান স্কুল শুধু বাংলাদেশের নয়, এখন সারা বিশ্বের আশা। কেননা রেজোয়ানের উদ্ভাবিত ভাসমান শিক্ষার টেকসই মডেল জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গত দুই দশকে তার নেতৃত্বে পরিচালিত উদ্যোগ দেখিয়েছে যে, জলবায়ু অভিযোজনে স্থানীয় উদ্ভাবন কেবল একটি দেশে নয়, বিশ্বজুড়ে প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থপতি রেজোয়ান চলনবিলের এমন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন, যেখানে বন্যার কারণে প্রতিবছর স্কুল বন্ধ হয়ে যেত, মানুষের জীবিকা অনিশ্চিত হতো, আর সেইসঙ্গে মৌলিক সেবাগুলো বাধাগ্রস্ত হতো। কিন্তু তিনি এই সমস্যাকে কেবল সংকট হিসেবে দেখেননি, বরং এরই মাঝে একটি নতুন সমাধানের পথ খুঁজেছেন। তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা ২০০২ সালে বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুলের ধারণা বাস্তবায়ন করে। সৌরবিদ্যুৎ চালিত নৌকায় পরিচালিত এসব স্কুল বন্যার মধ্যেও শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করে।
শুধু শিক্ষা নয়, রেজোয়ান এর উদ্যোগ সম্প্রসারিত হয়েছে ভাসমান গ্রন্থাগার, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্লে গ্রাউন্ড ও ভাসমান কৃষি খামারের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সরকার তার উদ্ভাবন (ভাসমান স্কুল)-কে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (২০২৩-২০৫০)-তে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তার উদ্ভাবনী মডেল এখন পর্যন্ত এশিয়া ও আফ্রিকার আটটি দেশে সফলভাবে অনুসরণ করা হয়েছে।
বিশ্ব ফেলো হিসেবে রেজোয়ান ইয়েল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ফল সেমিস্টার (আগস্ট-ডিসেম্বর) এ লেকচার ও পরামর্শ দেবেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেবেন, গবেষণামূলক কাজ করবেন, এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাকে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরবেন।
রেজোয়ান বলেন, এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের সমস্ত সংগ্রামী মানুষদের জন্য যারা আমাদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করেছেন। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রেরণার কারণেই আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি যে, নতুন সমাধান বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকেই আসতে পারে। আশা করি, ইয়েল ইউনিভার্সিটির এই স্বীকৃতি জলবায়ু অভিযোজন ও শিক্ষার উন্নয়নের সিধুলাই ভাসমান স্কুল মডেলকে বৈশ্বিক পর্যায়ে আরো ব্যাপক আকারে বিস্তারের সুযোগ করে দিবে।
২০০২ সাল থেকে শুরু হওয়া মরিস আর. গ্রিনবার্গ বিশ্ব ফেলো প্রোগ্রাম ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এটি একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত, যা ভবিষ্যতের প্রভাবশালী নেতাদের স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। এই ফেলোশিপে অংশগ্রহণকারীদের অনেকে পরবর্তীতে হয়ে উঠেছেন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব—যেমন, রাশিয়ার দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা আলেক্সেই নাভালনি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান, আর্জেন্টিনার সাবেক অর্থ ও উৎপাদন মন্ত্রী মার্টিন লুস্তু এবং লিচেনস্টাইনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাটরিন এগেনবার্গার।
রেজোয়ানের “ভাসমান স্কুল” ধারণাকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা (ইউনিসেফ, ইউএনইপি, ও ইউএনডিপি) উদ্ভাবন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১৯ সালে, ব্রিটিশ বই ‘আর্থ হিরোস’ তাকে বিশ্বের ২০ জন “আর্থ হিরো”-এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। রেজোয়ান ও তার ভাসমান স্কুল এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।