সাঈদ হোসেন চৌধুরীর দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার প্রকাশক ও মুদ্রাকর হিসেবে প্রদত্ত ঘোষণাপত্র বাতিল আদেশ কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার প্রকাশক মুদ্রাকর হিসেবে শফিক রেহমানকে দেওয়া ঘোষণাপত্র কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না কারণ দর্শানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রুলে ঢাকা জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য রেসপন্ডেন্টদের এর জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি রাজিক আল জলিল এবং বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদির হাইকোর্ট বেঞ্চ সাঈদ হোসেন চৌধুরীর দায়ের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ মার্চ এই মর্মে রুল জারি করেন।

প্রকাশের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে পত্রিকাটির সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ মার্চ জাতীয় এই দৈনিকের ডিক্লেয়ারেশন বাতিল করে সরকার।

অফিস আদেশ অনুযায়ী, দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকাটি প্রকাশের জন্য যে অনুমোদিত প্রেস রয়েছে সেখান থেকে ছাপা হচ্ছে না, কিন্তু প্রিন্টার্স লাইনে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে মর্মে শফিক রেহমান অভিযোগ জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার পর এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পত্রিকাটি মুদ্রণের ডিক্লেয়ারেশন বা ঘোষণাপত্র বাতিল করা হয়।

আদেশ অনুযায়ী, দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকা প্রকাশে ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন, ১৯৭৩ এর ১০ ধারার লঙ্ঘন হয়েছে। এ কারণে ‘দৈনিক যায়যায়দিন’ পত্রিকার প্রকাশক ও মুদ্রাকর সাঈদ হোসেন চৌধুরীর নামে যে ঘোষণাপত্র ছিল তা বাতিল করা হয়।

এর এক সপ্তাহ পর ১৮ মার্চ পত্রিকার ডিক্লেয়ারেশন ফিরে পান শফিক রেহমান।

ঢাকা/মামুন/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ভাসমান স্কুলের উদ্ভাবক রেজোয়ান পেলেন ‘ইয়েল বিশ্ব ফেলোশিপ’

ভাসমান স্কুলের উদ্ভাবক স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান ২০২৫ সালের “ইয়েল বিশ্ব ফেলো” হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি এ লিডারশিপ ফেলোশিপ প্রদান করে, যা বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ ফেলোশিপ প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম।

এবছর বিশ্বের ৪ হাজার ২০০ জনের অধিক মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে থেকে নেতৃত্ব প্রদানকারী ১৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি “ইয়েল বিশ্ব ফেলো” হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা শাসনব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন, ব্যবসা, গণমাধ্যম, আইন, প্রযুক্তি, ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এদের মধ্যে মাত্র ৩ জন অলাভজনক সংস্থায় (এনজিও) কাজ করেন।

রেজোয়ান ছাড়াও ২০২৫ সালের ফেলোদের মধ্যে রয়েছেন সুইডেনের পরিবেশবান্ধব ব্যবসার প্রবক্তা ম্যাথিয়াস উইকস্ট্রম, জর্জিয়ার সাবেক সংসদ ভাইস-স্পিকার ও গণতন্ত্র বিশেষজ্ঞ তামার চুগোশভিলি, নাইজেরিয়ার বিশ্ববিখ্যাত সংগীতশিল্পী বুকোলা এলেমিদে (আসা), মিশরীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মারিয়াম এল মারাকেশি, এবং প্যারাগুয়ের শীর্ষস্থানীয় বিচার বিভাগীয় ব্যক্তিত্ব ভিভিয়ান নুনেজ।

“ইয়েল বিশ্ব ফেলো” প্রোগ্রাম হলো চার মাসের একটি পূর্ণকালীন রেসিডেনসিয়াল প্রোগ্রাম, যা ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টার থেকে পরিচালিত এবং জ্যাকসন স্কুল অব গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স-এ অবস্থিত।

ইয়েল ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টারের ডিরেক্টর এমা স্কাই বলেন, ভাসমান স্কুল শুধু বাংলাদেশের নয়, এখন সারা বিশ্বের আশা। কেননা রেজোয়ানের উদ্ভাবিত ভাসমান শিক্ষার টেকসই মডেল জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গত দুই দশকে তার নেতৃত্বে পরিচালিত উদ্যোগ দেখিয়েছে যে, জলবায়ু অভিযোজনে স্থানীয় উদ্ভাবন কেবল একটি দেশে নয়, বিশ্বজুড়ে প্রভাব ফেলতে পারে।

স্থপতি রেজোয়ান চলনবিলের এমন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন, যেখানে বন্যার কারণে প্রতিবছর স্কুল বন্ধ হয়ে যেত, মানুষের জীবিকা অনিশ্চিত হতো, আর সেইসঙ্গে মৌলিক সেবাগুলো বাধাগ্রস্ত হতো। কিন্তু তিনি এই সমস্যাকে কেবল সংকট হিসেবে দেখেননি, বরং এরই মাঝে একটি নতুন সমাধানের পথ খুঁজেছেন। তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা ২০০২ সালে বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুলের ধারণা বাস্তবায়ন করে। সৌরবিদ্যুৎ চালিত নৌকায় পরিচালিত এসব স্কুল বন্যার মধ্যেও শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করে।

শুধু শিক্ষা নয়, রেজোয়ান এর উদ্যোগ সম্প্রসারিত হয়েছে ভাসমান গ্রন্থাগার, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্লে গ্রাউন্ড ও ভাসমান কৃষি খামারের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সরকার তার উদ্ভাবন (ভাসমান স্কুল)-কে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (২০২৩-২০৫০)-তে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তার উদ্ভাবনী মডেল এখন পর্যন্ত এশিয়া ও আফ্রিকার আটটি দেশে সফলভাবে অনুসরণ করা হয়েছে।

বিশ্ব ফেলো হিসেবে রেজোয়ান ইয়েল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ফল সেমিস্টার (আগস্ট-ডিসেম্বর) এ লেকচার ও পরামর্শ দেবেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেবেন, গবেষণামূলক কাজ করবেন, এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাকে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরবেন।

রেজোয়ান বলেন, এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের সমস্ত সংগ্রামী মানুষদের জন্য যারা আমাদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করেছেন। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রেরণার কারণেই আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি যে, নতুন সমাধান বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকেই আসতে পারে। আশা করি, ইয়েল ইউনিভার্সিটির এই স্বীকৃতি জলবায়ু অভিযোজন ও শিক্ষার উন্নয়নের সিধুলাই ভাসমান স্কুল মডেলকে বৈশ্বিক পর্যায়ে আরো ব্যাপক আকারে বিস্তারের সুযোগ করে দিবে।

২০০২ সাল থেকে শুরু হওয়া মরিস আর. গ্রিনবার্গ বিশ্ব ফেলো প্রোগ্রাম ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এটি একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত, যা ভবিষ্যতের প্রভাবশালী নেতাদের স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। এই ফেলোশিপে অংশগ্রহণকারীদের অনেকে পরবর্তীতে হয়ে উঠেছেন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব—যেমন, রাশিয়ার দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা আলেক্সেই নাভালনি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান, আর্জেন্টিনার সাবেক অর্থ ও উৎপাদন মন্ত্রী মার্টিন লুস্তু এবং লিচেনস্টাইনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাটরিন এগেনবার্গার।

রেজোয়ানের “ভাসমান স্কুল” ধারণাকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা (ইউনিসেফ, ইউএনইপি, ও ইউএনডিপি) উদ্ভাবন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১৯ সালে, ব্রিটিশ বই ‘আর্থ হিরোস’ তাকে বিশ্বের ২০ জন “আর্থ হিরো”-এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। রেজোয়ান ও তার ভাসমান স্কুল এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ