ভারতবিরোধী কথা বলার অভিযোগে এক বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে
Published: 26th, March 2025 GMT
ভারতবিরোধী কথা বলার অভিযোগে বাংলাদেশের একজন নাগরিকের ভিসা বাতিল করে দেশে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন থেকে তাঁকে দেশে পাঠানো হয়। ওই ব্যক্তির নাম মো. আজাদুর রহমান। তাঁর বাড়ি মাগুরা জেলায়।
কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ ব্লকের পুলিশ কর্মকর্তা আশীষ পি সুব্বা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, কেন ওই ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজাদুর রহমানের ছেলে দার্জিলিংয়ের কার্সিয়াংয়ে পড়াশোনা করে। পরীক্ষা শেষে ছেলেকে নিয়ে দেশে ফেরার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। অভিবাসন চেকপোস্ট এলাকার ট্যাক্সিস্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ভাড়া করতে গিয়ে গাড়িচালকের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান তিনি। সেখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত।
প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে ভারতের পত্রিকা উত্তরবঙ্গ সংবাদ জানিয়েছে, ‘আজাদুর বেশ কয়েকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি ভারত সম্পর্কে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। মুহূর্তেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চালকদের কেউই ওই ব্যক্তিকে গাড়িতে নিতে চাননি। এই সময় অনেকে ওই ঘটনা ফেসবুকে লাইভ করা শুরু করেন। আজাদুর হেঁটে চ্যাংড়াবান্ধা ভিআইপি মোড়ে উপস্থিত হলে বাসিন্দারা তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁরা ততক্ষণে ঘটনার বিষয়ে অবগত হয়ে গিয়েছিলেন।’ তবে আজাদুর ভারত নিয়ে ঠিক কী বলেছিলেন, তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
অভিবাসন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় মেখলিগঞ্জ থানা–পুলিশ আজাদুরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাঁকে চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ আরও জানিয়েছে, আজাদুর উত্তেজিত জনতার সামনে নিজের ভুল স্বীকার করেন। তবে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।
চ্যাংড়াবান্ধা আন্তর্জাতিক অভিবাসন দপ্তরের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কলকাতা এফআরআরওর সঙ্গে কথা বলে আজাদুরের ভিসা বাতিল করে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আজ দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের ১ম ধাপ ঢাকার বৈঠক
প্রায় ১৫ বছরের বিরতি শেষে ঢাকায় গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিলেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দুই পররাষ্ট্রসচিব। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের ৯ দিন আগে এ বৈঠক হলো। দুই পররাষ্ট্রসচিবের আলোচনাকে দেখা হচ্ছে দেড় দশকের স্থবির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের প্রথম ধাপ হিসেবে। কারণ, দুই পক্ষই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আলোচনার অন্য প্রক্রিয়াগুলো নিয়মিত রাখার ওপর জোর দিয়েছে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠক নিয়ে দুই পক্ষই আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছে। দুই পক্ষ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন ও পাকিস্তানের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ নেতৃত্ব দেন। ২৭ এপ্রিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের কথা রয়েছে।
সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বোঝাপড়া ও অভিন্ন স্বার্থে জোর দিয়েছে। আর পাকিস্তান সম্পর্ক এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে।
স্থবির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনে দুই পক্ষের একমতের বিষয়গুলো তাদের সংবাদ সম্মেলন আর বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিফলিত হলেও ব্যতিক্রমও আছে। বিশেষ করে একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যার জন্য দেশটির আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান—এই অমীমাংসিত ঐতিহাসিক তিনটি বিষয়ের সমাধানের প্রসঙ্গ ঊহ্য থেকেছে পাকিস্তানের বিজ্ঞপ্তিতে।
অথচ বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের মধ্য দিয়ে সম্পর্কটা যে জায়গায় এসেছে, তাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ককে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর আশু সুরাহা জরুরি। পাকিস্তান এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমাসহ তিন সমস্যার প্রসঙ্গ ঊহ্য রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের একাধিক সদস্য জানান, আলোচনা হলেও পাকিস্তান বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়গুলো বাদ দেওয়ার নীতি অনুসরণ করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পরও একাত্তরে গণহত্যার জন্য ক্ষমাসহ তিন সমস্যার কথা পাকিস্তানের বিজ্ঞপ্তিতে এড়িয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশের বিজ্ঞপ্তিতে প্রসঙ্গটি উল্লেখ ছিল। এবারের মতো ২০১০ সালেও পাকিস্তান অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছিল।
এর দুই বছর পর পাকিস্তানের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকায় এসেছিলেন। ৬ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরের সময় শেখ হাসিনার হাতে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র তুলে দেওয়ার পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। ওই সময় হিনা রাব্বানি অতীত ভুলে সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়াসহ তিন বিষয়ে সুরাহা চেয়েছে বাংলাদেশ১৭ এপ্রিল ২০২৫সাবেক কূটনীতিক এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঐতিহাসিক অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। সামনে রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হলে বাংলাদেশ জবাব আশা করতে পারে। যেহেতু বাংলাদেশের দাবি যৌক্তিক, পাকিস্তান আজ না হোক কাল আমাদের দাবি মানবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
এদিকে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন একটি প্রতিবেদন ছেপেছে, যার শিরোনাম ‘শীর্ষ কূটনীতিক ১৫ বছর পর ঢাকায় বরফ গলিয়েছেন’। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ বছর ধরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ‘শীতল যুদ্ধ’ বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। দুই পররাষ্ট্রসচিব তাঁদের বৈঠকে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে পেয়েছেন।
আরও পড়ুনবিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে : প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব৫ ঘণ্টা আগে