ভারতবিরোধী কথা বলার অভিযোগে বাংলাদেশের একজন নাগরিকের ভিসা বাতিল করে দেশে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন থেকে তাঁকে দেশে পাঠানো হয়। ওই ব্যক্তির নাম মো. আজাদুর রহমান। তাঁর বাড়ি মাগুরা জেলায়।

কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ ব্লকের পুলিশ কর্মকর্তা আশীষ পি সুব্বা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, কেন ওই ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজাদুর রহমানের ছেলে দার্জিলিংয়ের কার্সিয়াংয়ে পড়াশোনা করে। পরীক্ষা শেষে ছেলেকে নিয়ে দেশে ফেরার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। অভিবাসন চেকপোস্ট এলাকার ট্যাক্সিস্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ভাড়া করতে গিয়ে গাড়িচালকের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান তিনি। সেখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত।

প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে ভারতের পত্রিকা উত্তরবঙ্গ সংবাদ জানিয়েছে, ‘আজাদুর বেশ কয়েকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি ভারত সম্পর্কে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। মুহূর্তেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চালকদের কেউই ওই ব্যক্তিকে গাড়িতে নিতে চাননি। এই সময় অনেকে ওই ঘটনা ফেসবুকে লাইভ করা শুরু করেন। আজাদুর হেঁটে চ্যাংড়াবান্ধা ভিআইপি মোড়ে উপস্থিত হলে বাসিন্দারা তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁরা ততক্ষণে ঘটনার বিষয়ে অবগত হয়ে গিয়েছিলেন।’ তবে আজাদুর ভারত নিয়ে ঠিক কী বলেছিলেন, তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

অভিবাসন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় মেখলিগঞ্জ থানা–পুলিশ আজাদুরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাঁকে চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়।

উত্তরবঙ্গ সংবাদ আরও জানিয়েছে, আজাদুর উত্তেজিত জনতার সামনে নিজের ভুল স্বীকার করেন। তবে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।

চ্যাংড়াবান্ধা আন্তর্জাতিক অভিবাসন দপ্তরের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কলকাতা এফআরআরওর সঙ্গে কথা বলে আজাদুরের ভিসা বাতিল করে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আজ দ র

এছাড়াও পড়ুন:

লম্বা ছুটি, সড়ক ভালো ভয় শুধু বিশৃঙ্খলায়

ছুটি টানা ৯ দিন। সড়ক-মহাসড়কের ৭৫ শতাংশের অবস্থা ভালো। তবু বিশৃঙ্খলার কারণে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির ভয় থেকেই যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর পুলিশ পুরোপুরি সক্রিয় না থাকার সুযোগে সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানো লাখো ব্যাটারিচালিত রিকশায় যানজটের শঙ্কা রয়েছে। সড়ক দখল করে বসা বাজারও ভোগান্তির কারণ হতে পারে। শিল্পকারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তোষ, গত কয়েক মাসে কারণে-অকারণে সড়ক বন্ধ করে আন্দোলনের নজিরও ঈদযাত্রায় ভীতি কাজ করছে। 

ঢাকা ছাড়তেই যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়তে পারেন গাবতলী, সায়েদবাদ, টঙ্গী এবং হানিফ ফ্লাইওভারে। গাবতলী, সায়েদবাদ ও টঙ্গী এলাকায় দেখা গেছে, ঢাকার প্রবেশপথে হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। এতে বাসের গতি আটকে যাচ্ছে। গত বছরের দুই ঈদেই ভুগিয়েছে হানিফ ফ্লাইওভার। এ ফ্লাইওভার হয়ে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে ভোগান্তিতে পড়েন। এবারও একই শঙ্কা রয়েছে। 

শিল্পকারখানা ছুটির পর শনিবার যাত্রীর ঢল ধরতে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ঢাকার লোকাল বাস মহাসড়কে নামলে গাজীপুরের চন্দ্রা ও চৌরাস্তা এলাকায় এবারও অচলাবস্থা হতে পারে। এতে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়তে পারেন। এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ চার লেনে উন্নীত হলেও সেতুতে গাড়ি বিকল হয়ে এবারও ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক গত ২২ মার্চ খুললেও সিরাজগঞ্জে ইন্টারচেঞ্জের নির্মাণ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগ পিছু ছাড়বে না।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং আশুগঞ্জ-সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আখাউড়া মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকায় নরসিংদী ও আশুগঞ্জ এলাকায় দুর্ভোগে পড়তে হবে সিলেটের যাত্রীদের। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সমকালকে বলেন, ঈদযাত্রায় ফিটনেসহীন গাড়ি চলতে পারবে না। ধরা পড়া মাত্র কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকার লোকাল গাড়ি ঈদে মহাসড়কে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে, বিকল হয়ে যানজট সৃষ্টি করে। রুট পারমিট লঙ্ঘন করে কোনো গাড়ি মহাসড়কে গেলে নিবন্ধন বাতিল করে দেওয়া হবে। যেসব প্রস্তুতি রয়েছে, তাতে ঈদযাত্রা আগের চেয়ে ভালো হবে। 

দেখা সাপেক্ষে সোমবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। শুক্রবার থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ঈদের ছুটি। গতকাল বুধবার ছিল স্বাধীনতা দিবসের ছুটি। মাঝে শুধু এক দিন আজ বৃহস্পতিবার সরকারি অফিস-আদালত খোলা। এবারের রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি থাকায় অনেকেই আগেভাগে বাড়ি চলে গেছেন। গতকাল বাস-ট্রেনে ভিড় দেখা যায়নি। মহাসড়কে বড় ধরনের যানজটের খবরও পাওয়া যায়নি। 

উত্তরবঙ্গের পথে তবু ভয়
প্রতিবছরই শেষ কর্মদিবসে অচল হয়ে পড়ে চন্দ্রা এলাকা। গত বছর ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছিল নবীনগর থেকে চন্দ্রা হয়ে যমুনা সেতুতে পৌঁছাতে। হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন মিয়া সমকালকে বলেন, এবারও বিশেষ মনোযোগ রয়েছে চন্দ্রা নিয়ে। এলেঙ্গা-যমুনা সেতু সড়কে যদি চাপ বাড়ে, তাহলে ঢাকামুখী গাড়ি ভূঞাপুর দিয়ে বাইপাস করা হবে। এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়কের প্রকল্প পরিচালক ড. ওয়ালিউর রহমান বলেন, চার লেন চালু হওয়ায় সড়ক নিয়ে এবার ভয় নেই। গত বছর ঈদের আগের দিন যমুনা সেতুতে ৫৪টি গাড়ি বিকল হয়েছিল। এতে ১৫-১৬ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজট হয়। 

বিশৃঙ্খলার ভয়
ঈদের আগে বেতন-ভাতার দাবিতে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় আন্দোলন চলছে। রোজার মধ্যে একাধিকবার সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন হয় গাজীপুরে। আবার মহাসড়ক দাপিয়ে ব্যাটারি রিকশাসহ অবৈধ যানবাহন চললেও পুলিশ ঠেকাতে পারছে না। এতেই সবচেয়ে ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশপ্রধান সমকালকে বলেন, নৈরাজ্য হলে মোকাবিলা করব। কোথাও সড়ক বন্ধ হলে হাইওয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

১৫৫ স্থানে যানজটের শঙ্কা
সভায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) জানায়, সারাদেশে ১৫৫ স্থানকে তীব্র যানজটপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৪৮, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে ৫২, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৬, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৪১ এবং ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কের আট স্থানকে যানজটপূর্ণ বলা হয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু সড়কে স্বস্তির ঈদযাত্রা
  • লম্বা ছুটি, সড়ক ভালো ভয় শুধু বিশৃঙ্খলায়