যশোরের একটি মুরগির খামারে শনাক্ত হয়েছে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু। ২০১৮ সালের পর গত ১২ মার্চ বাংলাদেশে এই ফ্লু শনাক্ত হলো। হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে খামারিদের মাঝে। শনাক্তের পর পরই বার্ড ফ্লু প্রতিরোধ এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার।

পোলট্রি খামারিদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশনা দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সীমান্ত এলাকায় নেওয়া হয়েছে সতর্কতা। কোনো মৃত বা সন্দেহজনক হাঁস-মুরগি বা পাখি পাওয়া গেলে নমুনা সংগ্রহ করে দ্রুত নিকটবর্তী ল্যাবে পরীক্ষা করে ফলাফল অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.

মো. আবু সুফিয়ান বলেছেন, গত ১২ মার্চ যশোরের সরকারি খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে। আমরা যে নমুনা পেয়েছি তা পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠাবো। তবে মৃদু আকারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি পোলট্রি খামারকে নির্দেশনা দিয়েছি। একই সঙ্গে পোলট্রি খামারিদের সংগঠনকেও আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি। যাতে তারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, ভ্যাকসিন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সীমান্ত এলাকায় আমাদের কার্যালয়গুলোকে সতর্ক করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষায়িত ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত আছে। বাংলাদেশে খামারে ২০০৭ সালে প্রথম এবং ২০১৮ সালে সর্বশেষ বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়। এবার আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের মতো না। বার্ড ফ্লু নিয়ে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝি বা প্রচারণা না ছড়ায়, সেদিকে যেন আমরা সতর্ক থাকি। খামারি বা ক্রেতার আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ক্রেতাসাধারণকে অনুরোধ করব, আতঙ্কিত হয়ে আপনারা হাঁস-মুরগি বা ডিম খাওয়া বন্ধ করবেন না।

গতকাল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, আমাকে মার্চের শুরুতে বার্ড ফ্লু শনাক্তের বিষয়টি জানানো হয়েছে। ফ্লুর বিস্তার যাতে বাড়তে না পারে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এই ফ্লু বিস্তার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যশোরের খামারটি পরিদর্শন করেছেন এবং ফ্লুটি কীভাবে বাংলাদেশে এসেছে, তার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ফ্লুর পরীক্ষাবিষয়ক টেকনিক্যাল বিষয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলতে পারবেন।

বার্ড ফ্লুয়ের প্রাদুর্ভাবে যশোরের খামারে তিন হাজার ৯৭৮টি মুরগির মধ্যে এক হাজার ৯০০টি মারা গেছে। ফ্লু যেন ছড়িয়ে না পরে, সেজন্য বাকি মুরগি মেরে ফেলা হয়। ২০০৭ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম বার্ড ফ্লু দেখা দেয়। সে বছর ১০ লাখেরও বেশি মুরগি এই ফ্লুয়ের কারণে মের ফেলা হয়। ২০০৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশে মানুষের শরীরে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ ধরা পড়ে।

দেশে মাংসের মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি জোগান দেয় পোলট্রি খাত। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, দেশে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার আছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও ডলার সংকটে বেড়ে গেছে প্রাণিজ খাদ্যের দাম। করোনার পর থেকে খরচ সামলাতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে ৬২ হাজার ৬৫৬টি খামার।  এবার বার্ড ফ্লু যেন দেশের খামারিদের আরেকটি মহামারিতে না ফেলে, এ জন্য ফ্লু বিস্তার রোধে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে পোল্ট্রিখাত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম রগ পর ক ষ ক ত হয় সরক র সতর ক

এছাড়াও পড়ুন:

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের করণীয়

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোম্পানির মৌল ভিত্তির পাশাপাশি দেশের সমসাময়িক অর্থনৈতিক অবস্থা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক ধারণা সূচকের বাইরে চলতি রাজনৈতিক অবস্থা, বিশেষত বিনিয়োগ পরবর্তীকালে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, ওই পরিবর্তন অর্থনীতিতে কোনো পরিবর্তনের সূচনা করবে কিনা–সে বিষয়ে ধারণা নেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রাজনৈতিক হালচাল ও অর্থনীতি
গত আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় পরিবর্তন এসেছে। অর্থনীতির যে ভঙ্গুর দশা সৃষ্টি হয়েছিল বিগত সরকারের আমলে, তা কাটিয়ে ওঠার লক্ষণও স্পষ্ট।
অর্থনীতিতে ইতিবাচক ধারা সৃষ্টির নেপথ্যে বড় ভূমিকা রাখছে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি। প্রথমত, বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ বা সীমিত হওয়ায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকার প্রায় পুরোটা দেশে আসছে। অন্যদিকে রপ্তানির আড়ালে পাচার কিছুটা বন্ধ হওয়ায় রপ্তানি আয়ও কিছুটা বেড়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন থেমেছে। আবার মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করেছিল, যা এরই মধ্যে কমার পথে।
গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির বাইরে এ মুহূর্তে রাজনীতির মাঠে বিরোধী পক্ষ সক্রিয় নেই। তারপরও রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক অঙ্গনের এমন অস্থিরতা দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট করছে। পরবর্তী সরকার ব্যবস্থা বা ধরন কেমন হবে– তার স্পষ্ট ধারণা না নিয়ে কোনো ব্যবসায়ী নতুন করে ব্যবসা পরিকল্পনা করছেন না। ফলে বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

বিনিয়োগ কমার প্রভাব শেয়ারবাজারে
ব্যবসায় বিনিয়োগ না হলে স্বভাবতই অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য কমে, শ্লথ হয় প্রবৃদ্ধি চাকা। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে। বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি না হলে বিনিয়োগ থেকে বেশি মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা কমে। ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা আগাম সতর্ক হয়ে বিনিয়োগ কমিয়ে দেন। এর প্রভাব পড়ে শেয়ারদরে। গত কয়েক মাসের শেয়ারবাজারে নেতিবাচক ধারা সে অবস্থারই প্রতিফলন বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাংক সুদহার বাড়িয়ে দেওয়ার প্রভাবও আছে শেয়ারবাজারে। নিরাপদ বিনিয়োগে অপেক্ষাকৃত ভালো মুনাফা পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকায় বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নিয়েছেন বা নতুন করে শেয়ারে লগ্নি করেননি। এর প্রভাবও আছে শেয়ারবাজারে।

শেয়ারবাজারের অতীত প্রবণতা
দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অতীতের রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলেছিল। বিশেষত ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সরকার বদল হলে শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। অবশ্য ওই দুই উত্থানের পর দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধসও নেমেছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালনের সময় বিবেচনায় নিলে এবারের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে ২০০৭ সালের এক-এগারো রাজনৈতিক পালাবদলে কিছুটা মিল রয়েছে। ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগের অভিজ্ঞতা কিছুটা সহায়তা করতে পারে।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হঠাৎ করে শেয়ারবাজারে উত্থান শুরু হয়। তবে অচিরেই তার ওপর লাগাম পড়ে। এর পর ক্রমে শেয়ারদর বেড়েছিল, অর্থাৎ শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়েছিল।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দিন ডিএসইর সাধারণ সূচক ছিল ১৫৮২ পয়েন্ট। এর পর হঠাৎ শেয়ারদরে উত্থানে মাত্র তিন সপ্তাহে ৫ ফেব্রুয়ারি সূচকটি ১৮৮৩ পয়েন্ট ছাড়িয়েছিল। পরের দেড় মাসে শেয়ারের দরপতনে সূচক ১৭০০ পয়েন্টের নিচে নামে। ওই বছরের এপ্রিলের শেষ থেকে উত্থান শুরু হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। এ সময় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগও বাড়ে। 
২০০৭ ও ২০০৮ সালের শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, সে সময়কার সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় যেখানে শেয়ারবাজার সূচক ১৬০০ পয়েন্টের নিচে ছিল, এর দেড় বছর পর তা ৩১০০ পয়েন্ট পার করে। তবে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার পর তা কমে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের সময় সূচক নেমে আসে ২৫০০ পয়েন্টে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ কৌশল
বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণে এটি স্পষ্ট যে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে শেয়ারবাজারে বড় পরিবর্তন দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীরা সাধারণত স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন। সরকার তার অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে দেখে বিনিয়োগকারীরা ধীরে হলেও সাড়া দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। কয়েক মাস আগেও যেখানে একদিনে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হতো, কত কয়েক সপ্তাহে তা বেড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ওঠানামা করতে দেখা যাচ্ছে। 
শেয়ারবাজারে ভালো মুনাফা করার অন্যতম প্রধান উপায় হলো, অতীতের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করা। কৌশলী বিনিয়োগকারীরা বিশেষ প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজারের পরিবর্তন দেখে নিজের বিনিয়োগ কৌশল ঠিক করেন। 

মৌলিক বিশ্লেষণে গুরুত্ব
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে মুনাফা বের করার জন্য কৌশলী হওয়ার পাশাপাশি মৌলিক বিনিয়োগ জ্ঞান থাকাও জরুরি। শেয়ার কেনার আগে যে কোম্পানির শেয়ার কিনতে যাচ্ছেন, তার ধারাবাহিক মুনাফা, কম ঋণবিশিষ্ট কোম্পানি, সুশাসন এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার সক্ষমতা কত, তা যাচাই করা প্রয়োজন। অতীতে দেখা গেছে, জল্পনা-কল্পনার ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই গুজবের ভিত্তিতে বিনিয়োগ না করে, দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ নিয়ে বিনিয়োগ করা উচিত। শুধু একটি নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগ না করে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। পোর্টফোলিওতে নিম্নলিখিত উপাদানগুলোর ভারসাম্য রাখা উচিত।

সরকারের নীতিমালার দিকে নজর রাখুন
সরকারের নেওয়া নীতিমালা এ খাতের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। যেমন– ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, বাণিজ্য ও রপ্তানিনীতির পরিবর্তন, করনীতি ও বিনিয়োগবান্ধব আইন, শেয়ারবাজারের জন্য নতুন বিধিনিষেধ ইত্যাদি। এই নীতিগুলোর পরিবর্তন বাজারের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে।
বাংলাদেশের শেয়ারবাজার বর্তমানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত ধৈর্য ধরে সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। গুজবে কান না দিয়ে, 
দীর্ঘমেয়াদি লাভজনক বিনিয়োগ কৌশল গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের করণীয়