রাজশাহীতে গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে রাজশাহী মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার প্রয়াত আবদুল মান্নানকে আসামি করা হয়েছে। গত রোববার নগরের বোয়ালিয়া থানায় আবদুল আলীম দুলাল নামের এক তরুণ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলার ১ নম্বর আসামি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বাদশার ছেলে রুয়েট কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান দীপনকে। আবদুল মান্নান মামলার ৫৮ নম্বর আসামি। এতে ১২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী আবদুল আলীম (২২) নগরের রাজপাড়া থানার মোল্লাপাড়া মহল্লার মুশারফ হোসেনের ছেলে। আলীম জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কর্মী। আর তাঁর ভাই শফিকুল ইসলাম জামায়াতে ইসলামীর কর্মী। এজাহারে বলা হয়েছে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আবদুল আলীম নগরের আলুপট্টি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। তাঁর বাড়ি রাজশাহী নগরের রানীনগর এলাকায়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। গত ১৭ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরদিন রাজশাহীর টিকাপাড়া গোরস্তানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।

মৃত ব্যক্তিকে আসামি করার ব্যাপারে জানতে বাদী আবদুল আলীমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় ফোন ধরেন তাঁর বড় ভাই শফিকুল ইসলাম। শফিকুল বলেন, তিনি জামায়াতে ইসলামীর কর্মী। আর তাঁর ভাই আবদুল আলীম শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সমর্থক। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার সময় আলীম গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। সংগঠনের তদারকিতে মামলা করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তিকে আসামি করার ব্যাপারে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মুরব্বিরা সবকিছু করেছেন। কোনো বিষয়ে কথা বলার থাকলে মহানগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন সরকারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’

যোগাযোগ করা হলে জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, ‘মামলা সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। আমাকে আগে খোঁজ নিতে হবে। আগে খোঁজ নিই, তারপরে এ বিষয়ে বলতে পারব।’

এ সম্পর্কে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ‘আসামির তালিকায় মৃত ব্যক্তি আছেন কি না, তা আমার জানা নেই। এটা খোঁজ নিতে হবে। যদি এ রকম হয় তাহলে আমরা যাচাই করব। মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের সময় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’

রাজশাহী মহানগর জামায়াতের মিডিয়া ও প্রেস সেক্রেটারি ইমন আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি জামায়াতের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে হয়নি। বিষয়টি তাঁরও আর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান মারা গেছেন, সেটি তিনিও জানেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ম ন ন ন আবদ ল আল ম নগর র হ নগর ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় দুজনের মৃত্যু, মদ পানের কারণেই কিনা খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসক

বগুড়ায় অতিরিক্ত মদপানে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে আরও দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শুক্রবার রাতে তাদের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দীন।

নিহতরা হলেন, বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া হাজী পাড়ার মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের পালক ছেলে আওরঙ্গজেব চিনতু (৩৫) ও ঠনঠনিয়া বটতলা এলাকার আবু তালেবের ছেলে রাসেল (৩০)।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরা হচ্ছেন, ঠনঠনিয়া বটতলার মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে পিলু (৫৬) এবং একই এলাকার জয়দেব দাসের ছেলে সনি দাস (৩০)। 

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পিলু জানান, গত ২৭ মার্চ বিকেলে শহর থেকে প্লাস্টিকের বোতলে মদ কিনে আনেন রাসেল। ওই দিন বিকেলেই চারজন একসঙ্গে মদ পান করেন। রাতেই সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশের ভয়ে হাসপাতালে ভর্তির সময় তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বলে ভর্তি হন।

বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সাইফুর শাহীন বলেন, পিলু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। ডায়রিয়া এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে শ্বাসকষ্ট ও পেটে ব্যথা থাকায় তাকে মেডিসিন বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি এখনও শঙ্কামুক্ত না। মদ পান করে অসুস্থ কি না তা পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে।

চিনতুর পরিবারের একজন জানান, চিনতু ও রাসেল অনেক আগে থেকেই মদ পান করতেন। মদ পান করে অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তাদের মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে চিনতু কাউকে না জানিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। বিকেল ৫টার পর অসুস্থবোধ করলে তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চিনতু মারা যান। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার পর রাসেল মারা যান।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, চিনতু ও রাসেল মারা যাওয়ার তথ্য আমাদের কাছে নেই। সম্ভবত তারা রাস্তাতেই মারা গিয়েছিলেন। আর সনি নামে একজন ভর্তি আছেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। তবে তার কি ধরনের সমস্যা রয়েছে তা এখনও বলা যাচ্ছে না।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দিন বলেন, ‘অতিরিক্ত মদপানে’ দুজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। মারা যাওয়া দুজনের পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে কোনও তথ্য দেননি। বিকেল ৩টার মধ্যে দুজনের মরদেহ পরিবারের পক্ষ থেকে দাফন করা হয়েছে।

ওসি আরও বলেন, হাসপাতাল থেকে এই দুজনের মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশকে অবহিত না করায় আপাতত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ