‘দেশ যেদিন স্বাধীন হলো, সেদিনই ছিল সত্যিকার ঈদের মতো’
Published: 26th, March 2025 GMT
যত দূর মনে পড়ে, ১৯৭১–এ রোজা শুরু হয় অক্টোবরে। তখনো প্রাণ হাতে নিয়ে দিগ্বিদিক দৌড়াচ্ছি। ঢাকার রায়েরবাজারের বাড়ি ছেড়েছি ২৬ মার্চ সূর্য ওঠার আগেই। আমার তিন সন্তানের সবাই তখন ছোট। বড় ছেলের বয়স ছয়, মেজ ছেলের বয়স চার আর মেয়ের বয়স এক বছর। একটা মাঝারি মাপের ঝুড়ি জোগাড় করে তাতে জমানো কিছু টাকা, স্বর্ণালংকার নিয়ে ওপরে বাচ্চাদের খাবার আর দুধের কৌটা নিলাম। এক কোলে শিশুকন্যা আরেক হাতে সেই ঝুড়ি। স্বামী আজিজুল হক সামলালেন বড় দুজনকে। নিমতলা থেকে নৌকা নিয়ে বুড়িগঙ্গা দিয়ে কেরানীগঞ্জের বরিশুর পৌঁছাই। ভয়ে সেখান থেকে হেঁটে চলে যাই আবদুল্লাহপুর। সেখানকার হাইস্কুলে আশ্রয় নিই। রাত হতেই দেখি, অনেক মানুষ আসতে শুরু করেছে। এত মানুষ দেখে কেউ কেউ বলল, যেখানে মানুষ বেশি দেখবে, সেখানেই বোমা ফেলবে। এই ভয়ে সেখান থেকে পরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়লাম আমরা। পরে অবশ্য রেডিওতে শুনেছিলাম, ওই স্কুলে সত্যিই বোমা ফেলেছিল পাকিস্তানি মিলিটারিরা।
লৌহজং, রাজারহাট, শিরখাড়া ইত্যাদি বেশ কয়েকটি জায়গায় এক দিন–দুই দিন করে আশ্রয় নিলাম। কিছু পথ লঞ্চ ও নৌকায় চড়ে আর মাইলের পর মাইল হেঁটে সাতবাড়িয়ায় পৌঁছাই। সেখানে ছয় মাসের মতো ছিলাম। এরপর সেখানেও মিলিটারির উৎপাত শুরু হলে চলে যাই ঘোষগ্রাম, সেখান থেকে হেঁটে পৌঁছাই বাপের বাড়ি উতরাইলে। রোজা শুরুর সময়টায় সেখানেই ছিলাম।
আরও পড়ুনপাকিস্তানি এক সেনা ডেকে বলেছিল, ‘ঈদ মোবারক নেহি বোলগে?’ ৫ ঘণ্টা আগেচাকরিসূত্রে আব্বা ফরিদপুরে বাড়ি করেছিলেন। উতরাইলেও যুদ্ধ শুরু হলে ফরিদপুর চলে যাই। সেখানেও বেশি দিন থাকতে পারিনি। চলে যাই গেরদায় নানার বাড়িতে। যুদ্ধ বন্ধের খবর পেয়ে আবার ফরিদপুরে ফিরে আসি। রোজা রোজার মতো চলছিল, বলা যায় না। হাটবাজারের খবর নেই। জিনিসপত্রের চড়া দাম। আশপাশের বাড়ির সবাই সুযোগ হলেই বেশি বেশি রান্না চড়াতেন। একে অপরকে খাবার দিতেন। পথিকদের খাওয়াতেন কেউ কেউ। সে সময় হঠাৎ হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হলে ঘর, খাবার সব ফেলেই দৌড়ে পালাতে হতো। শেষ দিকে এতটাই কাহিল হয়ে গিয়েছিলাম যে মিলিটারি আসার খবরে দৌড়ে না পালিয়ে বাচ্চাদের বুকে নিয়ে ঘরের ভেতরেই থাকতাম। সে সময় ভাবতাম, ওরা এলে বলব, সবাইকে একসঙ্গে মেরে ফেলো।
দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন আগেই ছিল ঈদের দিন। ঈদ বলতে বাড়ির ছেলেরা সবাই একসঙ্গে নামাজে গেল। আর আমরা মেয়েরা মিলে বাড়িতেই ঈদের নামাজ আদায় করলাম। নতুন কাপড়ের তো প্রশ্নই ওঠে না। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিনের খাবারের মতো ভাত-তরকারি খেয়েই বাকি দিনটা কাটল। সেমাই বা বিশেষ কোনো খাবার সেদিন রান্না হয়নি বাড়িতে। ঈদের আনন্দ বলে কিছুই ছিল না, চারদিকে ছিল শুধু আতঙ্ক।
ঈদের আনন্দ পুষিয়ে দিয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর দিনটি। সেই আনন্দ কেন, তা আর কারও অজানা নয়।
অনুলিখন: আবৃতি আহমেদ
আরও পড়ুনকে ছিলেন মধুদা১২ ডিসেম্বর ২০২২.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আংটি পরে জর্জিনা লিখলেন ‘আমিন’, তবে কি বিয়ে করছেন রোনালদো
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং জর্জিনা রদ্রিগুয়েজ একসঙ্গে বাবা ও মা হয়েছেন। এই জুটির একসঙ্গে দুটি সন্তান আছে। তারা হলো- আলানা মার্টিন ও বেলা এসমেরেল্ডা। তবে দীর্ঘদিন প্রেম করার পরও আনুষ্ঠানিক বিয়ে করেননি তারা। পাঁচ সন্তানের বাবা রোনালদো এবার বিয়েটা করেই ফেলবেন কিনা এমন প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়া ফেলেছে।
কারণ তার আর্জেন্টাইন সঙ্গী জর্জিনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। তাতে তার বাঁ-হাতের দ্বিতীয় আঙুলে আংটি পরা আছে। বাগদান হলেই মূলত ওই আঙুলে আংটি পরতে দেখা যায়।
জর্জিনা ওই ছবি পোস্ট করে আরবি হরফে ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘এবং বদনজর থেকে আমাদের দূরে রাখুন, আমিন।’ তার এই ক্যাপশন আরও বেশি সাড়া ফেলেছে। এর আগে রোনালদো দ্রুতই বিয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। একে একে দুই মিলিয়ে দিতে তাই সময় নেননি ভক্তরা।
রোনালদো কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘জর্জিনাকে আমি বিয়ে করছি, এটা ১০০০ ভাগ নিশ্চিত। হয়তো সেটা এক বছরে, ছয় মাসে কিংবা এক মাসেও হতে পারে। এটা ঘটবেই।’ তবে সম্প্রতি রোনালদো ও জর্জিনা জুটি হুমকির মুখে পড়েছেন। এই বার্তা সে কারণেও হতে পারে।
রোনালদোর বিয়ের গুঞ্জনের মধ্যে তাই ভিন্ন খবরও সামনে এসেছে। অন্য সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে, বিয়ে নয় রোনালদোর নজর আপাতত এক হাজার গোলের দিকে। যে সংখ্যা থেকে এখনো তিনি ৬৭ গোল পিছিয়ে। রোনালদো এবং জর্জিনা প্রায় ১০ বছর ধরে প্রেম করছেন। ২০১৬ সালে তাদের প্রেমের পর থেকে একসঙ্গে থাকছেনও।