ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর এই প্রথম উপত্যকায় হামাসবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে গাজার ক্ষমতা থেকে হামাসের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

মাস্ক পরা হামাস যোদ্ধাদের বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে দেখা যায়। অনেক বিক্ষোভকারীর ওপর তারা হামলা চালায়। এ সময় হামাস যোদ্ধাদের কারও হাতে অস্ত্র এবং কারও হাতে লাঠি ছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, গাজার উত্তরাঞ্চলীয় বিত লাহিয়ায় তরুণ বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁদের হামাসের সমালোচনা করে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। অনেকে স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘চলে যাও’, ‘চলে যাও’, ‘চলে যাও’, ‘হামাস চলে যাও’।

হামাসপন্থী গ্রুপ অবশ্য তাদের পক্ষেই কথা বলছে। তারা এই বিক্ষোভকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। উল্টো তারা অভিযোগ তুলে বলছে, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ‘বিশ্বাসঘাতক’। ওই বিক্ষোভের ব্যাপারে হামাসের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানোর এক দিন পর উত্তর গাজায় এই বিক্ষোভ হয়েছে। ওই হামলার পর ইসরায়েলি বাহিনী বিত লাহিয়া ছেড়ে যেতে সেখানকার বাসিন্দাদের নির্দেশ দিয়েছে। এরপরই সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

দুই মাস অস্ত্রবিরতির পর সম্প্রতি আবার গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। তাঁদের অভিযোগ, যুদ্ধবিরতির সময় আরও বৃদ্ধি করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাব হামাস প্রত্যাখ্যান করায় এই হামলা শুরু করা হয়েছে। তবে হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছে, যুদ্ধবিরতির শুরুতে যে চুক্তি হয়েছিল ইসরায়েল সেটা পুরোপুরি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। জানুয়ারিতে করা সেই চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির পর দ্বিতীয় ধাপের স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে দুই পক্ষকে আলোচনায় বসার কথা।

১৮ মার্চ নতুন করে গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলা শুরুর পর কয়েক শ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নতুন করে ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।

বিত লাহিয়ায় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মোহাম্মদ দিয়াব বলেন, ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় তাঁর পুরো বাড়িয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। এক বছর আগে ইসরায়েলের বিমান হামলায় তিনি ভাইকে হারিয়েছেন।

দিয়াব বলেন, ‘আমরা কারও জন্য, কোনো পার্টির এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বা বিদেশি রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার জন্য মরতে চাই না।’

বিত লাহিয়ার এই বাসিন্দা বলেন, ‘হামাসকে অবশ্যই ক্ষমতা ছাড়তে হবে এবং দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কথা শুনতে হবে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উঠে আসা কণ্ঠ তাদের শুনতে হবে। এটিই হচ্ছে সবচেয়ে সত্য কণ্ঠস্বর।’

ভিডিও ফুটেজ থেকে আরও দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘হামাসের শাসন নিপাত যাক, মুসলিম ব্রাদারহুডের শাসন নিপাত যাক।’

২০০৭ সাল থেকে গাজায় হামাস এককভাবে শাসন করে আসছে। ওই বছর নির্বাচনে ফাতাহকে হারিয়ে তারা এককভাবে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়। সেখানে ফাতাহর রাজনীতিও অনেকটা শেষ হয়ে যায়।

গাজায় নৃশংস ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর হামাসের বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়তে থাকে। রাজপথ ও অনলাইনে সেই সমালোচনা চলছে। তবে এখনো গাজায় হামাসের পক্ষে প্রচুর সমর্থন রয়েছে। অবশ্য তাদের জনসমর্থন কতটা কমেছে, সেটা নিখুঁতভাবে জানার সুযোগ নেই।

ইসরায়েলের নৃশংস হামলা শুরুর আগে হামাসের বিরোধী একটা পক্ষ ছিল। তবে প্রতিহিংসার ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতেন না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কারখানাতেই শ্রমিকের ‘আত্মহত্যা’

গাজীপুরে একটি কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দিয়ে কারখানাতেই এক শ্রমিক বিষাক্ত কেমিক্যাল পানে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় রাতের পালার কাজ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। 

মারা যাওয়া মো. ইদ্রিস আলী (২৩) উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সপরিবার ভাড়া বাসায় থেকে মনট্রিমস্‌ লিমিটেড কারখানার কার্টন সেকশনে কাজ করতেন।

শ্রমিকরা জানান, এক বছর হয়ে গেলেও ইদ্রিস আলীর চাকরি এখনো স্থায়ী করা হয়নি। স্থায়ী করার বিষয়ে তিনি যখনই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেছেন, তখনই তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এ ছাড়া তিনি নানা বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হতাশার মধ্যে ছিলেন। গতকাল রাতের পালার কাজ চলাকালে কোনো এক সময় ইদ্রিস আলী কারখানার কেমিক্যাল পান করেন। পরে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ইদ্রিস আলী মৃত্যুর আগে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, এক বছর ধরে তিনি চাকরি করছেন। কিছু মানুষ আসার তিন মাস, ছয় মাসের মধ্যে স্থায়ী হচ্ছেন, কিন্তু তার চাকরি স্থায়ী করা হচ্ছে না। কারখানার দুজন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে তিনি আরও লেখেন, ‘ওরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। তারা মনে করে, ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির তৈরি। আমি আজকে সুইসাইড করব।’

নিহত শ্রমিকের স্ত্রী হাসি আক্তার বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে। এখন তাকে নিয়ে হাসপাতালে রয়েছি। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না। 

মনট্রিমস্‌ লিমিটেড কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, কারখানার একজন শ্রমিক বিষ জাতীয় কিছু খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কেন বা কি কারণে জানতে চাইলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।

কালিয়াকৈর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোঃ যোবায়ের বলেন, কারখানার ইদ্রিস আলী নামের এক শ্রমিক কারখানার ভেতরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিষাক্ত কিছু খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কেন আত্মহত্যা করেছে তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ