ঈদযাত্রায় বকশিসের নামে ৮৩২ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া আদায়
Published: 26th, March 2025 GMT
ঈদযাত্রায় বকশিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বাড়তি ভাড়ায় আদায় করছে গণপরিবহন ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট। শুধু রাজধানী ঢাকা ছাড়তেই দেড় কোটি যাত্রীকে বিশাল অঙ্কের এ টাকা গুনতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার (২৬ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির পক্ষ থেকে এ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
একই সঙ্গে ঈদযাত্রায় বকশিসের নামে এমন লুটপাট বন্ধে যাত্রীদের নিয়ে শক্তিশালী তদারকি টিম গঠনের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব মো.
তিনি আরো বলেন, সরকার বাস-লঞ্চ ও বিভিন্ন গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে চালক, সহকারীর বেতন-ভাতা ও দুই ঈদের বোনাস প্রতিদিনের আদায়কৃত ভাড়ায় ধার্য থাকলেও দেশের কোনো পরিবহনে তা কার্যকর নেই। ফলে এবারের ঈদে ৯৮ শতাংশ গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সড়ক ও নৌপথের পরিবহন মালিকদের নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় মনিটরিং ভিজিল্যান্স টিম থাকলেও এসব টিমে যাত্রী প্রতিনিধি না রাখায় যাত্রীর স্বার্থ কেউ দেখছেন না।
সংগঠনের মহাসচিব বলেন, এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি যাত্রী নৌ-পথে পরিবহন হবে। ঢাকার সদরঘাট ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরসহ বিভিন্ন ঘাট দিয়ে ২০০টি ছোট-বড় নৌযানে প্রায় ৪০ লাখ যাত্রী দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। যাত্রীপ্রতি গড়ে ৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত শ্রেণিভেদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গড়ে যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া আদায় হলে ঈদের আগে এসব যাত্রীদের কাছ থেকে ৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, প্যাডেলচালিত রিকশা ঈদ বকশিসের নামে যাত্রীপ্রতি গড়ে ২০ টাকা হারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় ৮ লাখ ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, প্যাডেলচালিত রিকশায় ৮ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। এসব যানবাহনে যাত্রীদের ১৬০ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। লেগুনা, দুরস্ত, দিগন্ত নানান নামে পরিচিত রাজধানীতে চলাচলকারী ৭ হাজার হিউম্যান হলারে ঈদের আগে প্রায় ৮০ লাখ ট্রিপ যাত্রীকে ঈদ বকশিসের নামে গড়ে প্রায় ২০ টাকা ভাড়া বাড়তি দিতে হবে। সেই হিসাবে ঢাকার হিউম্যান হলারেই কেবল ১৬ কোটি টাকার বেশি বাড়তি ভাড়া আদায় হবে।
‘‘প্রাইভেট কার, জিপ ও মাইক্রো বাস ২০ হাজার, যেখানে ৬০ হাজার ট্রিপে গড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা হারে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সেই হিসাবে এ পরিবহন ব্যবহারকারী যাত্রীদের ২১ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।’’
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার রুটে বাস-মিনিবাসে ৩০ লাখ ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াতে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৩০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সেই হিসাবে দূরপাল্লার রুটে বাস-মিনিবাসের যাত্রীদের ৯০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে।
‘‘প্রতি বছর ঈদে ঢাকা মহানগরীতে চলাচলকারী সিটি বাস সার্ভিসগুলো ঈদের ২ দিন আগে থেকে যে কোনো গন্তব্যে গেলে ঈদ বকশিসের নামে ৫০ টাকা হারে যাত্রীর মাথাপিছু ভাড়া আদায় করে থাকে। এবারও ঈদের আগের দুদিনে ঢাকার ৩ হাজার সিটি বাসে ৪০ লাখ ট্রিপ যাত্রীর কাছ থেকে গড়ে মাথাপিছু ৩০ টাকা হারে বাড়তি নিলে এ খাতে ১২ কোটি টাকা যাত্রীদের বাড়তি গুনতে হবে।’’
পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ঈদে ট্রেনের ছাদে যাত্রী পরিবহন ঠেকাতে নানান ব্যবস্থা গ্রহণের পরও বিপুলসংখ্যক নিম্নআয়ের লোকজন কম খরচে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে যাত্রী হিসেবে ভ্রমণ করে থাকে। এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ৮০ হাজার যাত্রী ট্রেনের ছাদে করে বাড়ি যাবে। তাদের প্রত্যেককে গড়ে কমপক্ষে ১০০ টাকা হারে ৮০ লাখ টাকা রেলে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হবে। খাবার গাড়ি, ইঞ্জিন, দুই বগির মাঝে, কোচের ভেতরে বিনাটিকিটে যাতায়াত করবে আরও প্রায় আড়াই লাখ যাত্রী। ট্রেনে কর্মরত টিটিই, গার্ড, সরকারি-বেসরকারি স্টুয়ার্ড, বেসরকারি ক্যান্টিন অপারেটরের লোকজন, ট্রেনে দায়িত্বরত জিআরপি, এনআরবি ও স্টেশনে দায়িত্বরত টিকিট চেকারদের যাত্রী প্রতি গড়ে ৩০০ টাকা হারে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে।
মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আকাশপথে সরকারি-বেসরকারি উড়োজাহাজে ঈদের ১০ দিন আগে থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মহোৎসব চলছে। কোনো কোনো পথে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে। এ ঈদে কমপক্ষে এক লাখ যাত্রী অভ্যন্তরীণ রুটে আকাশপথ ব্যবহারে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বাড়তি ভাড়া নিলে ৩৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ঢাকা শহরে অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ও ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদযাত্রায় কেবল ৮৩২ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বেশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে। আন্তঃজেলাসহ সারাদেশে সব মহানগর হিসাবে আনলে তা আরও ১০ গুন বাড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আহমদ, অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, মোহাম্মদ আরিফ প্রমুখ।
ঢাকা/মামুন/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বকশ স র ন ম গণপর বহন ঈদয ত র য় পর বহন স গঠন সরক র গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল নির্মাণ আর কতদূর
জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিংয়ের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০৩৬ সালে ২০ ফুট দীর্ঘ ৫৬ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডল করতে হবে চট্টগ্রাম বন্দরকে। প্রতি বছর ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এমন পূর্বাভাস তাদের। ক্রমবর্ধমান সমুদ্রবাণিজ্য সামাল দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ রয়েছে তাদের প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষায়। জাহাজ ও কনটেইনারজট দূর করে বন্দরকে আরও গতিশীল করতে কর্ণফুলীর মোহনায় বে-টার্মিনাল নামে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয় সংস্থাটি। এ পরামর্শ মেনে ২০১৬ সালে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করে বন্দর। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের ৭ বছর পরও শুরু হয়নি প্রকল্পের মূল কাজ। নির্মাণ হয়নি কোনো স্থাপনা। অথচ ২০২৬ সালের মধ্যে কার্যক্রমে যাওয়ার কথা ছিল সম্ভাবনাময় টার্মিনালটির।
ভূমি অধিগ্রহণ, বিনিয়োগকারী বাছাই, নকশা সংশোধন, অর্থায়নসহ নানা জটিলতায় বার বার পিছিয়েছে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। অথচ ৯০৭ একর জমির ওপর ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এ টার্মিনাল নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ত তিনগুণ। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়ত। কারণ, এখনকার জেটিতে শুধু দিনের জোয়ারের সময় গড়ে ৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতা এবং সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ নোঙ্গর করতে পারে। আবার শীত মৌসুমে এ গভীরতার জাহাজও জেটিতে ভিড়তে পারে না। নতুন টার্মিনাল মোহনার কাছাকাছি স্থানে হওয়ায় সেখানে দিন-রাত জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ থাকত। আবার বর্তমানের চেয়ে বেশি গভীরতা ও দৈর্ঘ্যের জাহাজও পেত সরাসরি নোঙ্গরের সুযোগ। ২০১৬ সালে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ আশা করেছিল, ২০২১ সালের মধ্যে ১৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং ১২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করতে পারবে। বন্দরের সে আশা পূরণ হয়নি। এখনও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়নি মূল প্রকল্প।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘নানা কারণে অনেক দেরি হয়েছে। একনেক-পূর্ববর্তী অনুমোদন হয়ে গেছে। এখন একনেকে অনুমোদনের জন্য উঠবে প্রকল্পটি। এজন্য তাদের কাছে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। তারা সেগুলো দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) একনেকে অনুমোদন হওয়ার পরপরই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের ঋণচুক্তি হবে। এরপর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবেন তারা। শিগগির মূল কাজ শুরু করতে পারবে চট্টগ্রাম বন্দর।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, বে-টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রকল্প। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দরের সক্ষমতা আরও তিনগুণ বাড়বে। তিনি উল্লেখ করেন, নানা জটিলতায় এর কাজ পিছিয়ে গেছে। একনেকে পাস হলে বে-টার্মিনালের মূল কাজ খুব দ্রুত শুরু করা উচিত বলে মনে করেন শিপিং খাতের এই নেতা।
একনেকে উঠছে আগামীকাল
নানা জটিলতা কাটিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামীকাল রোববার একনেকে উঠতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প। একনেকে অনুমোদন পেলে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৬৫ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি সই করবে বাংলাদেশ। নতুন টার্মিনালে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার অপেক্ষায় আছে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড। সব জটিলতা নিরসন করে এরই মধ্যে প্রি-একনেক অনুমোদন হয়ে গেছে প্রকল্পের। এখন ডিপিপি অনুমোদনের জন্য উঠবে একনেকে।
সরকার ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে বে-টার্মিনাল নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। একই বছরে জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালট্যান্ট প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে। এরপর ২০১৭ সালে পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও মাস্টারপ্ল্যান তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ২০২১ সালে কুনহুয়া নামে কোরিয়ান কোম্পানিকে আবার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং মাস্টারপ্ল্যান তৈরির জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় চলে যায় জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে। একপর্যায়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে ৫০০ একর জায়গা প্রতীকী মূল্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের স্বার্থে বিগত সরকারের আমলে ৩ হাজার কোটি টাকা মূল্যের জায়গা মাত্র ৩ কোটি টাকায় দেওয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সর্ববৃহৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয় ২০১৮ সালে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরের ১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এরই অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছিল প্রকল্প স্থান। প্রকল্প এলাকায় থাকা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ বাবদ বন্দর থেকে ৩৬৪ কোটি টাকা পাওয়ার পর জমি বুঝিয়ে দেয় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন।
কী থাকবে নতুন টার্মিনালে
৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বে-টার্মিনালের তিনটি অংশের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব জেটি দেড় হাজার মিটার। সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের জন্য প্রস্তাবিত জেটির দৈর্ঘ্য হচ্ছে এক হাজার ২২৫ মিটার করে। চট্টগ্রাম বন্দরে শুধু জোয়ারের সময় জাহাজ আসা-যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে থাকবে না এমন বাধা। ব্রেক ওয়াটার সুবিধা থাকায় ভাটার সময়েও ১৪ মিটার গভীরতার যে কোনো আকৃতির জাহাজ সহজে নোঙর করার সুবিধা পাবে বে-টার্মিনালে।
বছরে ৫০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতার বন্দর এখন বছরে হ্যান্ডল করছে ৩০ থেকে ৩২ লাখ কনটেইনার। ১২ কোটি টন কার্গো পণ্যও হ্যান্ডল করছে। বে-টার্মিনাল হলে সক্ষমতা আরও তিনগুণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি কনটেইনার টার্মিনাল ও একটি মাল্টিপারপাস। প্রতিটি টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত থাকবে রাস্তা, রেললাইন, ড্রেনেজ সিস্টেম ও অন্যান্য লজিস্টিক সুবিধা। এসব অবকাঠামোকে কেন্দ্র করে বাড়বে বন্দরের সক্ষমতা।
১৪ হাজার ৯০৮ কোটি টাকার প্রকল্প
বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১৪ হাজার ৯০৮ কোটি টাকার সহায়ক প্রকল্প অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। বে-টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় একটি ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল নির্মাণ করা হবে। এছাড়া কমন ফ্যাসিলিটিজ, সংযোগ সড়ক, রেলপথ, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ স্থাপন, টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ রাস্তা এবং একটি সার্ভিস জেটি নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ২০৩১ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে তার আগেই তিনটি টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হবে।
কোন খাতে খরচ হবে কত টাকা
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্রেকওয়াটার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেলের জন্য ১ হাজার ৯৭৯ কোটি এবং রেল, সড়ক সংযোগসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামোতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া নেভিগেশনে সহায়ক যন্ত্রপাতি স্থাপনে সম্ভাব্য খরচ ৫৭ কোটি টাকা।
স্বাক্ষর হয়েছে সমঝোতা স্মারক
তিনটি টার্মিনালের মধ্যে দুটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ব্যবস্থায় নির্মিত হবে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে পিপিপি কর্তৃপক্ষ এবং এন্টারপ্রাইজ অব সিঙ্গাপুরের মধ্যে টার্মিনাল ১-এর জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে টার্মিনাল-২ নির্মাণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আরেকটি এমওইউ স্বাক্ষর হয়। এছাড়া একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের একটি এমওইউ সই হয়েছে গত বছরের মে মাসে। প্রকল্পের জন্য মোট ৮৫ কোটি ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণের প্রয়োজন হবে বলে ধারণা করা হয়েছে। অতিরিক্ত ঋণও বিশ্বব্যাংক দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্পটি নিয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে।