গরীব-পথশিশুদের ডাক্তার হিসেবেই পরিচিত ছিলেন দন্ত চিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুল। চিকিৎসা না পেয়ে কেউ তার কাছ থেকে ফিরে যেতেন না। মানুষের সেবা করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। সেই মানুষটাকে হারিয়ে অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি। প্লে-পড়ুয়া কন্যা আওন, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছেলে সামি; সহপাঠী বন্ধু-বান্ধবরা বাবাকে পেলেও, পায় না তারা। তার মায়ের আক্ষেপ, ‘‘সবার বাবা আছে, ওদের নেই। ২/৩ বছর হয়ে গেছে বলে তাকে হারানোর কষ্ট কমে গেছে, বিষয়টা এমন না। যতদিন বাঁচব, কষ্টটা বয়ে নিয়ে বাঁচতে হবে।’’

তিন বছর আগে ২০২২ সালের ২৭ মার্চ ভোরে মিরপুরে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে খুন হন দন্ত চিকিৎসক বুলবুল। এ ঘটনায় তার স্ত্রী শাম্মী আক্তার মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে মিরপুর থানা পুলিশ। এরপর মামলার তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়। ওই বছরের অক্টোবর মাসে ডিবি পুলিশ ৫ ছিনতাইকারীকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ২০২৩ সালের ২৫ মে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু হয়। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার ১৩তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ কুদরত-এ-এলাহীর আদালতে বিচারাধীন। 
সর্বশেষ গত ২৬ জানুয়ারি মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ছিল। তবে ওইদিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। আদালত আগামী ১৬ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।

মামলা সম্পর্কে ডা.

বুলবুলের স্ত্রী শাম্মী আক্তার বলেন, ‘‘মামলাটি চলমান প্রক্রিয়ায় আছে। সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। আরো সাক্ষী বাকি আছে। সেগুলো শেষ হলে মেবি আদালত রায় দেবেন।’’

এক প্রশ্নের জবাবে শাম্মী আক্তার বলেন, ‘‘বাচ্চাদের নিয়ে বাবার বাসায় দিনাজপুরে আছি। চাহিদামত চাকরি পাচ্ছি না। সরকারি চাকরির বয়স তো শেষ। বাচ্চাদের নিয়েই আছি। সবার দোয়া চাই। ছেলে ক্লাস ফোরে আর মেয়ে প্লেতে পড়ছে।’’

বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বলতে চাচ্ছি না। এগুলো দিয়ে কী হবে? কী অবস্থায় আছি না আছি এটা জেনে লাভ কী?’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে শাম্মী আক্তার বলেন, ‘‘সন্তানেরা তো বাবার কথা বলবেই। বাবা ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কে আছে আপন। সবার বাবা আছে, ওদের নেই। এর মত কষ্টদায়ক আর কী হতে পারে। সেটা আমরা বুঝতেছি। আমার হাজব্যান্ড নেই, বাচ্চাদের বাবা নেই। আমরা প্রতিনিয়ত এটা ফেস করতেছি। ২/৩ বছর হয়ে গেছে বলে কষ্ট কমে গেছে, বিষয়টা এমন না। যতদিন বাঁচব, কষ্টটা বয়ে নিয়ে বাঁচতে হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের বিচার হোক। সবার কাছে আমাদের জন্য দোয়া চাই। বছর ঘুরে মৃত্যুবার্ষিকী আসলে ২/১ জন ফোন করে নিউজের জন্য। এর বাইরে কে কী করবে? রাষ্ট্র কি আমাদের দায়িত্ব নেবে, বাচ্চাদের দায়িত্ব নেবে? যাদের জন্য আমাদের জীবনটাই শেষ হয়ে গেল, জীবনটাই পাল্টে গেল, তাদের সাজা চাই। সর্বোচ্চ সাজা চাই।’’

মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। ৫ জনের সাক্ষ্য হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার শেষ করার চেষ্টা করব। ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সর্বোচ্চ সহায়তা থাকবে আমাদের।’’

২০২২ সালের ২৭ মার্চ ভোর ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশে মিরপুরের বাসা হতে বের হয়ে শ্যাওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার জন্য রিকশায় রওনা হন বুলবুল। ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে মিরপুর মডেল থানার পশ্চিম কাজীপাড়ার নাভানা ফার্নিচার শোরুমের সামনে মেইন রাস্তার ওপর পৌঁছালে মামলার আসামি রিপন ও রাসেল রিকশার গতিরোধ করে বুলবুল আহমেদকে যা যা আছে দিয়ে দিতে বলে। না দিলে সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখান। বুলবুল আহমেদ মোবাইল ফোন দিতে না চাওয়ায় রিপন তার উরুতে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করেন এবং মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যান। বুলবুল আহমেদ গুরুতর জখম অবস্থায় রাস্তায় পড়ে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী শাম্মী আক্তার অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামিকে করে মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন পাঁচ ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। 

মামলার আসামিরা হলেন— মো. রায়হান ওরফে সোহেল আপন, রাসেল হোসেন হাওলাদার, আরিয়ান খান হৃদয়, সোলায়মান ও রিপন।
এরা সবাই কারাগারে আছেন।

এদিকে চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আহমেদ মাহী বুলবুল একজন দন্ত চিকিৎসক ও প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ছিলেন। ঠিকাদারি কাজের জন্য নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশে ২০২২ সালের ২৭ মার্চ ভোর ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে বাসা থেকে বের হয়ে রিকশায় শ্যাওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে রওনা হন। পশ্চিম কাজীপাড়ার নাভানা ফার্নিচার শোরুমের সামনে প্রধান সড়কের ওপর পৌঁছালে আসামি রিপন ও রাসেল রিকশাটির গতিরোধ করে তার কাছে যা যা আছে তা দিয়ে দিতে বলে চিকিৎসক বুলবুলকে। না দিলে সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখায়। বুলবুল মোবাইল ফোন দিতে না চাওয়ায় রিপন তার ঊরুতে আঘাত করে জখম করে মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় বুলবুল গুরুতর জখম অবস্থায় রাস্তায় পড়ে যান। ছিনতাইকারীরা চিকিৎসক বুলবুলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন ১৫০০ টাকায় বিক্রি করে। পরে তা পাঁচ ছিনতাইকারী ভাগ করে নেয়।

মামলা সম্পর্কে জানতে আসামিপক্ষের তিন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা মামলা ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

ঢাকা/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক ষ য গ রহণ চ ক ৎসক আম দ র র জন য অবস থ আহম দ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

জি কে শামীমের দুর্নীতি মামলায় রায় আজ

অবৈধ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় আলোচিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের রায়ের দিন আজ ধার্য রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলমের আদালত এ রায় ঘোষণা করবেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী বেলাল হোসেন এ তথ্য জানান।

গত ২০ মার্চ দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের এ তারিখ ঠিক করেন।

এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য ছিলো। মামলায় জি কে শামীমের মা পলাতক ছিলেন। পরে তিনি আত্মসমর্পণ কর। জামিন নেন। এরপর জি কে শামীমের আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পুনরায় জেরা করার আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলাটি রায় থেকে উত্তোলন করে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য করা হয়। এরপর তদন্ত কর্মকর্তাকে, আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি, সাফাই সাক্ষ্য এবং যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আবার রায়ের তারিখ ধার্য করা হলো।

২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় -১ এর উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। 

২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলার সময় ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিকেতনের বাসা থেকে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ভবন থেকে নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই, আটটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানানো হয় অভিযান শেষে।

গ্রেপ্তারের সময় র‌্যাব সদরদপ্তর, সচিবালয়ে ও কয়েকটি হাসপাতালের নতুন ভবনসহ অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সের হাতে ছিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। পরে সেগুলোর কার্যাদেশ বাতিল হয়। জব্দ করা হয় তার ১৯৪টি ব্যাংক হিসাব।

অভিযনের পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলা করেন র‌্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার মিজানুর রহমান।

২০২৩ সালের ১৭ জুলাই মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় জি কে শামীমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। বাকি সাত আসামিকে (জিকে শামীমের দেহরক্ষী) ৪ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জি কে শামীম ও তার ৭ দেহরক্ষীকে অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলাম।

ঢাকা/মামুন/ইভা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাড়ছে আমদানিনির্ভর কৃষিপণ্যের উৎপাদন
  • যৌন নিপীড়ন মামলায় খালাস পেলেন আলভেস
  • অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাচন ৩ মে, জনপ্রিয়তায় বাম-ডানপন্থিরা সমানে সমান
  • অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণ নির্বাচন ৩ মে, জনপ্রিয়তায় বাম-ডানপন্থিরা সমানে সমান
  • ‘দুইবার বিশ্বকাপ জিতলেই জাতীয় দল থেকে অবসর নেব’
  • ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর ও দুর্নীতির মামলায় জি কে শামীমের সাড়ে ৫ বছরের কারাদণ্ড
  • ছুটি ছাড়াই বিদেশে অবস্থান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে অব্যাহতি
  • বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশি টাকা পাবে ক্লাব বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন
  • জি কে শামীমের দুর্নীতি মামলায় রায় আজ
  • চবির দুই শিক্ষককে অব্যাহতি