বেতন-ভাতা নিয়ে হয়রানি বন্ধের দাবি ঢাবি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের
Published: 26th, March 2025 GMT
শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ইসলামী ছাত্র আন্দোলন।
বুধবার (২৬ মার্চ) এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি শ্রমিকরা। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে শিল্প, কৃষি, নির্মাণ, গার্মেন্টস, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে উন্নতি সম্ভব হচ্ছে। অথচ প্রতি বছরই দেখা যায়, শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, মালিকপক্ষ তাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করছে। সময়মতো পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না এবং কোথাও কোথাও আন্দোলন করলেই দমন-পীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আরো পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা দিবস পালিত
ভর্তি পরীক্ষা: ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটে ৯৪ শতাংশই ফেল
তারা আরো বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ কোনো সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে না। শ্রমিক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। শ্রমিকের অধিকার আদায়ই রাষ্ট্রের উন্নতির পথ। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। অথচ যাদের ঘামে-রক্তে এই উন্নয়ন, তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে—এটি চরম দ্বিচারিতা।
নেতৃবৃন্দ সরকার ও প্রশাসনের ব্যর্থতা স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে বলেন, রাষ্ট্র যদি শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে না পারে, তবে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। কেবল ভাষণ ও প্রতিশ্রুতিতে শ্রমিকদের জীবন চলে না। তাদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি শুধু শ্রমিকদের সমস্যা নয়, এটি জাতীয় সংকট, যা মোকাবিলা করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। যদি শ্রমিকদের প্রতি এই অন্যায় চলতে থাকলে জনগণ আর চুপ থাকবে না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা আদায় করা শুধু একটি অর্থনৈতিক ইস্যু নয়, এটি ন্যায়বিচারের প্রশ্নও বটে। শ্রমিকরা কারো কাছ থেকে কোনো দয়া চান না, তারা তাদের ন্যায্য অধিকার চান। শ্রমিকরা যদি ন্যায্য অধিকার না পান, তাহলে সারাদেশে শ্রমিক আন্দোলন আরো বেগবান হবে, আর এর দায় মালিকপক্ষ ও রাষ্ট্রকে নিতে হবে। আমরা শ্রমিকদের পাশে আছি, থাকব। তাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজনে আরো বড় আন্দোলনের ঘোষণা আসবে।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গাইবান্ধায় সাংবাদিককে দাপট দেখালেন শিক্ষিকা
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের সাহাবাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার অশালীন আচরণের শিকার হয়েছেন স্থানীয় একজন সাংবাদিক।
বুধবার ((২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে এক ফাঁকে প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার মিলির কাছে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা। তখন মেজাজ হারান; সাংবাদিকদের ‘তুই, তোকারি’ করে লাঞ্চিত করার হুমকি দিতে থাকেন তিনি।
এই ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাতে দেখা যায় শিক্ষিকা মিলির মুখোমুখি ছিলেন সাংবাদিক মামুনুর রশীদ। এক পর্যায়ে মামুনুর রশীদকে হুমকি দিতে দেখা যায়; তাকে জুতা পেটা করার হুমকি দেওয়া হয়।
রাইজিংবিডি ডটকমের হাতে আসা ভিডিওতে অন্য সাংবাদিকদের দেখা যায়নি। তবে শিক্ষিকা মিলি শুধু মামুনুর রশীদের দিকেই নন, তাদের কাছাকাছি আরো কয়েকজনের উদ্দেশে অশালীন বাক্য ছুড়ছিলেন।
মামুনুর রশীদের দাবি, “নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন তিনি। এক পর্যায়ে গালিগালাজসহ পায়ের স্যান্ডেল খুলে মারাপিট করার হুমকিও দেন তিনি।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষিকা মিলি বলছেন, তুই এখান থেকে যা, তোকে আমি স্যান্ডেল খুল মারব। যদি ভালো চাস এখান থেকে যা। অপমান আরো করব আমি। স্যান্ডেল খুলে মারব।”
তখন মামুনুর রশীদ বলেন, আপনি আমাকে মের দেখান দেখি। মারেন, হিট মি।”
শিক্ষিকা মিলি বলেন, “লেট মি, তুই এখান থেকে যা।”
এরপর স্কুল ভবনের প্রবেশ গেটের গ্রিলের ওপার থেকে মামুনুর রশীদকে আবার অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন ফাতেম আক্তার মিলি। তিনি বলেন, তোর মতো মামুনের স্যান্ডেল দিয়ে মুখ ফাঁটাব আমি।”
তখন মামুন বলেন, আপনি যদি আমার একটা চুল ছিড়তে পারেন, তাহলে… আপনার মতো ফাতেমাকে আমি গুনি না; আপনি তো মহিলা বলে বেঁচে গেলেন।”
মামুনুর রশীদ দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার সাংবাদিক। ঘটনার পর কোনো আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে মামুনুর রশীদ বলেন, “আমি এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করব।”
অভিভাবক ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মামুনুর রশীদ বলছেন, তার কাছে অভিযোগ রয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর খোঁজ ছিল না প্রধান শিক্ষিকা মিলির। এমন কী ১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারিতে পতাকা উত্তোলন করেননি তিনি।
মামুনুর রশীদের বলছেন, সাহাবাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিলি সুন্দরগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের শ্যালিকা। তার দুলাভাইয়ের দাপটে চলতেন তিনি। অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু মন্ডল বলেন, একজন সাংবাদিকের সঙ্গে এত নোংরা ভাষায় কথা বলাটা দুঃখজনক। আমি সামনে থেকে যা দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে, উনি কোনোভাবেই শিক্ষক হওয়ার যোগ্য না।
নুরুজ্জামান নামে আরেক অবিভাবক বলেন, এই প্রধান শিক্ষকের প্রতিষ্ঠানে আমার বাবা নৈশপ্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চাকরি শেষের দিকে এলে এনআইডি কার্ডে বয়সের ভুল ধরে বেতন বন্ধ করে দেন।
“আমার বাবা আব্দুর রহমান মারা গেছেন চার বছর হলো অথচ এখনো তিনি (প্রধান শিক্ষিকা) বেতন উত্তোলনে কোনো ব্যবস্থাই নেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও সুরাহা হয়নি,” অভিযোগ নুরুজ্জামানের।
ঘটনার ভিডিও হাতে আসার পর প্রধান শিক্ষিকা মিলির বক্তব্য নিতে মোবাইল ফোনে কলা দিলে তিনি তা কেটে দেন। ফলে তার বক্তব্য নিতে পারেনি রাইজিংবিডি ডটকম।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, “গণমাধ্যম কর্মীর সঙ্গে এমন আচরণ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অবশ্যই তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ব্যাখ্যা চাইব। আর তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আছে, সেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
ঢাকা/লুমেন/রাসেল