আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, “অনেকে বলেন যে একাত্তর এবং চব্বিশ কি এক? না, অবশ্যই এক না। একাত্তর ছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম, আর চব্বিশ হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতার অর্জনকে পুনঃস্থাপন করার সংগ্রাম।”

বুধবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “অদ্ভুত একটা মিল আছে। সেটা হচ্ছে, এখানেও গণহত্যা হয়েছে এবং গণহত্যার প্রেক্ষিতে আপামর জনসাধারণ রাজপথে নেমে এসেছে এবং তারই ভিত্তিতে বাংলাদেশ নতুন করে জন্ম নিয়েছে এবং নতুন একটা প্রত্যাশার সামনে আমরা এসেছি। এখন বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ এবং প্রত্যাশার চাপ আমাদের সামনে আছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের আপাতত যেই চ্যালেঞ্জটা সামনে আছে—দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, তারপর আসছে একটা বিচার ব্যবস্থা করা—যারা এই খুন, গুম করেছে তাদের বিচার করা। তৃতীয়ত, আমরা যেই সংস্কারের স্বপ্ন দেখেছি, সংস্কার করে রাষ্ট্রটাকে একটা নতুন জায়গায় নিয়ে যাওয়া। এবং সবশেষে, একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। আমরা মনে করি, এই চারটি কাজ যদি আমরা করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ একটা রাইট ডিরেকশনে দাঁড়াবে এবং আগামী দিনে আমরা আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন, আমাদের চব্বিশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারব।”

মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “নতুন করে একটা প্রত্যাশা, নতুন করে একটা শপথ নেই। আমাদের স্বাধীনতা দিবসটা আমাদের জন্য সেরকম। আমাদের দেশটা যখন জন্ম নিয়েছিল একটা শিশুর আকারে, তখন আমাদের যেই প্রত্যাশা ছিল, বড় হতে হতে অনেক প্রত্যাশার স্বপ্ন আমাদের মিস হয়েছে, অনেক স্বপ্ন আমরা না পাওয়ার বেদনায় ডুবে গেছি। এমনকি এই না পাওয়ার বেদনার অনেক জমতে জমতে আমরা নব্বইয়ে একটা গণঅভ্যুত্থান করেছিলাম।” 

তিনি বলেন, “সর্বশেষ দীর্ঘ ১৫ থেকে ১৬ বছরের একটা অন্ধকার যুগ পেরিয়ে চব্বিশের ৫ আগস্ট আমরা আরেকটা নতুন প্রেক্ষাপট পেয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “সত্তরের নির্বাচন নিয়ে যেই ষড়যন্ত্র হয়েছিল, বিজয়ী হওয়ার পরও বাংলার মানুষকে ক্ষমতায় বসতে দেওয়া হয়নি এবং এরপর ২৫ মার্চ যেই গণহত্যা চালানো হয়েছে, তার একটা ব্যাকল্যাশ হয়েছে ২৬শে মার্চ, এবং ৯ মাসের দীর্ঘ একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।”

এসময় তার সঙ্গে এবি পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/সাব্বির/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র স স ব ধ নত

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন মামলায় গতি পুরোনোতে স্থবির

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও তদন্ত কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। ফলে এসব মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দেড় শতাধিক আসামি বিনা বিচারে কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। 

অন্যদিকে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধের মামলার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ এখন পর্যন্ত ৩৪১টি অভিযোগ পেয়েছে। তদন্ত সংস্থা জড়িত তিন শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪০ মামলার তদন্ত করছে। 

অবশ্য জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পাশাপাশি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের বিচারও চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, কারাগারে বন্দি লোকগুলো তো ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রাখেন। অযথা একটা লোককে দীর্ঘদিন বিনা বিচারে কারাগারে কেন আটকে রাখা হবে। তাদের ‘অ্যাকুইটাল’ (বিচারে খালাস) দিয়ে দিতে পারেন ট্রাইব্যুনাল।

জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত না জেনে কিছু বলা যাবে না। তবে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে। 

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতাকারীদের বিচার করতে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ বছরে ৫৫ মামলার রায়ে আসামি ছিলেন ১৬৯ জন। যার মধ্যে রায় হওয়ার আগেই মারা যান ১৮ জন; তাদের মধ্যে কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ১৬ জন, পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন দু’জন। আসামির মধ্যে দু’জন খালাস পেয়েছেন। যার মধ্যে একজন শিশু বিবেচনায়। বাকি সাজাপ্রাপ্ত আসামি ১৪৯ জন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন ১০৬ জন। আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন ২৫ জন, যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছেন ১২ জন এবং সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন ছয়জন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ৯টি মামলা। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে শীর্ষ পর্যায়ের ৭ আসামির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে কার্যকর হয়েছে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড।  

গত বছর রাজনৈতিক পালাবদলের পর গত ১৪ অক্টোবর পুনর্গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। যেখানে পুরোদমে শুরু হয়েছে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ দেড় শতাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।  

এদিকে নতুন মামলার ভারে স্থবির হয়ে যায় একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের পুরোনো মামলা। প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের আগে ১১৩ জন সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা বিচারাধীন ও তদন্ত সংস্থায় ২৫ মামলা তদন্তাধীন ছিল। অনুসন্ধানের অপেক্ষায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের চার হাজার অভিযোগ। গত বছর ৩০ মার্চ পর্যন্ত ৬০ সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিভিন্ন কারাগারে আটক ছিলেন।  

এদের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের বিচারে ৪৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ছয়জনের বিচার ছিল চলমান। যাদের অধিকাংশ জামায়াত ইসলামীর নেতা। গণঅভ্যুত্থানের পর পাঁচজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে একজনের বিচার চলমান। 

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৫৩টি আপিল চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। বেশ কয়েক বছর ধরে এসব আপিলের শুনানি হচ্ছে না। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া এটিএম আজহারুল ইসলামের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন আগামী ৮ মে সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় আছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শহীদ হোসাম শাবাতের সাহস
  • অর্থ ফেরত ও গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ঢাকার
  • গিরিশৃঙ্গে জাফর সাদেকের হাতে উড়ল ফিলিস্তিনের পতাকা
  • সম্পদ ফেরত ও গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ঢাকার
  • একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে আলোচনা
  • নতুন মামলায় গতি পুরোনোতে স্থবির