আর মাত্র কয়েকদিন পর পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে কর্মের শহর গাজীপুর ছাড়তে শুরু করেছেন নগরবাসী। 

বুধবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে গাজীপুরের দুই মহাসড়কে বেড়েছে যাত্রীর চাপ। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও যানজট সৃষ্টি হয়নি। স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরতে পারায় খুশি ঘরমুখো মানুষ।

শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে ২১৭৬টি নিবন্ধিত কলকারখানা রয়েছে। এরমধ্যে ১১৫৪টি পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করেন লাখ লাখ কর্মী। ইতোমধ্যে অনেক কারখানা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। যানজট থেকে রেহাই পেথে তাই আগেভাগেই বাড়িতে ফিরছন মানুষ। তবে প্রতিবারের মতোই পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।

আরো পড়ুন:

থ্রি-হুইলার হাইওয়েতে উঠলেই অবৈধ হবে: অতিরিক্ত আইজি

ময়মনসিংহে কাভার্ডভ্যান চাপায় প্রাণ গেল স্বামী-স্ত্রীর

রাজধানীর প্রবেশমুখ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় যাত্রীদের ভিড় করছেন বাড়ি ফিরতে। অনেকেই কাঙ্ক্ষিত গাড়ির জন্য সেখানে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সবার যাত্রা নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ করতে জেলা, মহানগর ও ট্রাফিক বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

পরিবহন মালিক ও শিল্প কারখানা সূত্র জানা গেছে, অল্প কিছু কারখানা ছুটি হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে পর্যায়ক্রমে শিল্প কারখানাগুলো ছুটি হবে। এরপর কিছু কারখানা শুক্রবার এবং বাকি কারখানা ছুটি হবে শনিবার। মূলত বৃহস্পতিবার থেকেই দুই মহাসড়কে যাত্রীদের চাপ কয়েকগুণ বাড়বে। 

উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ খ্যাত চন্দ্রা ত্রিমোড় গিয়ে দেখা যায়, আগের থেকে কয়েকগুণ যাত্রীর চাপ বেড়েছে। তাদের প্রত্যেকের হাতেই একাধিক ব্যাগ ছিল। কারো কারো মাথায় ছিল বস্তা। লম্বা ছুটি পাওয়ায় পরিবার-পরিজনকে অনেকেই আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন বাড়িতে। ঘরমুখো মানুষদের বাসের হেলপারের সঙ্গে দর কষাকষি করে পছন্দের গাড়িতে বাড়ির পথে রওনা হতে দেখা যায়। 

সিরাজগঞ্জের চৌহালী থানার ওমর ফারুক বলেন, “একটি ফুড কোম্পানির মার্কেটিং কাজ করি। আটদিন ছুটি দিয়েছে কোম্পানি। এ কারণে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। মহাসড়কে কোনো ভোগান্তি নেই। আশা করছি, আরামেই বাড়িতে পৌঁছাতে পারব।” 

পাবনার সাথিয়া এলাকার রিনা খাতুন বলেন, “আমার হাজবেন্ডের ছুটি শুরু শুক্রবার থেকে। আগামীতে সড়কে যানজট হবে এমন আশঙ্কায় আজকে আমাদের তিনি বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সন্তানদের নিয়ে আমি আজকে বাড়ি যাচ্ছি, তিনি শুক্রবারে ডিউটি শেষ করে বাড়ি আসবেন। আজ মানুষের ভিড় কম তবে, বিকেলে বাড়বে।” 

নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশের ওসি রইচ উদ্দিন বলেন, “যানজট যেনো না হয় এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজ কিছুটা যাত্রীর চাপ বেড়েছে। আগামীকাল থেকে যাত্রীর চাপ পুরোদমে শুরু হবে।” 

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম আশরাফুল আলম বলেন, “মহানগরীর টঙ্গীর চেরাগ আলী, কলেজ গেইট, ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যানজট নিরসনে ৩৫০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন মহাসড়কে। ঈদযাত্রা শুরু হলে বিআরটি লেনটি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দিকে একমুখী যানবাহন চলাচল করবে। ফলে ঢাকা থেকে যানবাহনগুলো সহজেই বের হয়ে যেতে পারবে।”

এদিকে, বুধবার দুপুরে চন্দ্রায় এসে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি দেলোয়ার হোসেন মিয়া বলেছেন, “চার হাজারের অধিক পুলিশ সদস্য, ৮২০টি টহল দল, ৩০০টির অধিক চেকপোস্টের মাধ্যমে মোটরসাইকেল পেট্রোলিং, ড্রোন মনিটরিং ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে মহাসড়কে শৃঙ্খলা বিধান করা হবে।”

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন ঈদ উৎসব ঈদ য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

স্থানীয় বাজারে মুরগি জবাই ও বিক্রিতে অবহেলা, টাইফয়েডের ঝুঁকি

স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ মাংস প্রাপ্তি মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। তবে দেশের অধিকাংশ স্থানীয় পোল্ট্রি বাজারে এখনো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই করা হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি।

সম্প্রতি বাংলাশে কৃষি বিশ্বব্যিালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক ময়মনসিংহ সদরের স্থানীয় বাজারগুলোতে সাধারণভাবে জবাইকৃত মুরগির মাংসে টাইফয়েড (সালমোনেলা) ও ডায়রিয়া (ইকোলাই) রোগের জীবাণু পেয়েছেন। এছাড়াও বেশিরভাগ দোকান মালিক (৯৬.১৫ শতাংশ) অসুস্থ মুরগি আলাদা রাখা বা মেরে ফেলার পরিবর্তে বিক্রি করে দেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

ময়মনসিংহ সদর ও এর আশেপাশের পোল্ট্রি মুরগির বাজারগুলোর অবস্থা পর্যেবক্ষণ, বায়োসিকিউরিটি ও পোল্ট্রি জবাইকরণ সম্পর্কে বিক্রেতাদের মনোভাব যাচাইকরণ এবং সেখানে বিক্রয়কৃত মাংসের গুণগতমান যাচাইয়ের জন্য বাকৃবির পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেনের নেতৃত্বে গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়। গবেষণাটি ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ শাখা উদ্যোগে আয়োজিত ‘১৩তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার-২০২৫’ এ উপস্থাপন করা হয়। 

ওই গবেষণায় দেখা গেছে, স্থানীয় বাজারে সাধারণভাবে জবাইকৃত মাংসে ক্ষতিকর ইকোলাই ও সালমোনেলা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উপস্থিতি রয়েছে, যেখানে স্বাভাবিক অবস্থায় মাংসে এগুলো থাকার কথা না। এসব মাংসের নমুনায় সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ লগারিদম ৪.০২ থেকে ৫.৫৯ সিএফইউ/গ্রাম এবং ইকোলাই  ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ লগারিদম ৪.০১ থেকে ৫.৯৪ সিএফইউ/গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাজারের নমুনায় মোট কার্যকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণও (টিভিসি) বেশি ছিল।

অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, গবেষণায় ময়মনসিংহ সদরের চরপাড়া বাজার, মিন্টু কলেজ বাজার, মেছুয়া বাজার, নতুন বাজার, সানকিপাড়া বাজার, কেওয়াটখালী  বাজার, শেষমোড় বাজার, সুতিয়াখালী বাজার, ভাবখালী বাজার, কে আর মার্কেট, শম্ভুগঞ্জ বাজার এবং গাছতলাসহ ১২টি স্থানীয় বাজারের পোল্ট্রি দোকানের তথ্য নেওয়া হয়। একটি সুনির্ষ্টি প্রশ্নাবলীর তালিকা অনুসরণ করে এ ১২টি বাজারের ২৪টি পোল্ট্রি দোকানের কর্মীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল।

তিনি আরো জানান, এসব বাজারে সাধারণভাবে জবাইকৃত এবং প্রসেসিং ইউনিটের পদ্ধতি অনুসরণ করে পোল্ট্রি ফার্মে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জবাইকৃত মোট ২৬টি মাংসের (উরু এবং বুকের মাংস) নমুনা এবং দুইটি পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। নমুনাগুলো বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল।

গবেষণায় উঠে আসা স্থানীয় বাজারের মুরগির দোকানগুলোর অবস্থা সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, “গবেষণার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৮৪.৬২ শতাংশ দোকানে মুরগি রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই, ৯২ শতাংশ দোকানে ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই এবং ৪৬.১৫ শতাংশ দোকানে পর্যাপ্ত আলো ছিল না। এছাড়াও, ৩০.৭৭ শতাংশ দোকানে মাংস কাটার জায়গা অস্বাস্থ্যকর ছিল এবং পরিকল্পিত বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল না। এ রকম পরিস্থিতি ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি এবং দূষণের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে।”

স্বাস্থ্যকর মাংস প্রাপ্তির বিষয়ে অধ্যাপক ইলিয়াস বলেন, “বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারগুলোর অধিকাংশ পোল্ট্রি দোকানে অপর্যাপ্ত জায়গায় পাখিগুলোকে রাখা হয় এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই করা হয়, যা অত্যন্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও নানা রোগ বিস্তারের কারণ হতে পারে। এটা সমাধানে স্থানীয় বাজারগুলোতে ক্ষুদ্র প্রসেসিং ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে ক্রেতাদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাংস পৌছে দেওয়া সম্ভব।” 

তিনি বলেন, “ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বাজারগুলোতে ক্ষুদ্র প্রসেসিং ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা গেলে তা নিরাপদ মাংস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি স্থানীয় পোল্ট্রি দোকানগুলো আরো লাভজনকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে। আর প্রসেসিং ইউনিটের মাংসে কোনো সালমোনেলা বা কলিফর্ম সনাক্ত করা যায়নি, যা ইঙ্গিত করে যে প্রসেসিং ইউনিট থেকে পাওয়া মাংস খাওয়ার জন্য নিরাপদ।”

তিনি আরো বলেন, “প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারের পোল্ট্রি দোকানীদের ক্ষুদ্র প্রসেসিং ইউনিট স্থাপনে উৎসাহিত করতে হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পোল্ট্রি মুরগি বিক্রি বন্ধ করতে হবে। বাজার থেকে মাংস কেনার সময় ক্রেতাদের সতর্ক হতে হবে। ক্রেতা ও বিক্রেতাকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জবাই করা মাংসের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করার জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।”

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে ৬ লাখ মুসল্লি সমাগমের আশা
  • ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে দেশের ৪ অঞ্চল, ফায়ার সার্ভিসের ৯ সতর্কবার্তা
  • ভূমিকম্প মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের ৯ সতর্কবার্তা, ঝুঁকিতে ৪ অঞ্চল
  • ভূমিকম্প মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের ৯ সতর্কবার্তা
  • গাজীপুরে ৬৬ ভাগ কারখানা ছুটি, মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট 
  • ময়মনসিংহে বহুতল ভবন থেকে ‘লাফিয়ে পড়া’ তরুণীর পরিচয় মিলেছে
  • ময়মনসিংহে বহুতল ভবন থেকে পড়ে তরুণী নিহত
  • ময়মনসিংহে ভোগান্তিবিহীন ঈদযাত্রা, কোনো সড়কে যানজট নেই
  • ময়মনসিংহে বহুতল ভবন থেকে ‘লাফিয়ে পড়ে’ তরুণীর মৃত্যু
  • স্থানীয় বাজারে মুরগি জবাই ও বিক্রিতে অবহেলা, টাইফয়েডের ঝুঁকি