বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের আশঙ্কায় চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। তবে তা ভেঙে বিএনপির একাংশের ৩০০-৪০০ নেতা-কর্মী মিছিল করে শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়েছেন। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা শহীদ মিনারে ফুল দেন।

১৪৪ ধারা ভেঙে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়া নেতা-কর্মীরা মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনের অনুসারী। উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব গাজী নিজাম উদ্দিন ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে তাঁরা ফুল দিতে যান।

উপজেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দলের দুটি অংশের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কায় আজ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে আজ সকাল ৮টা থেকে আগামীকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত শহীদ মিনার এলাকায় ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৪ ধারা জারি থাকবে বলে জানানো হয়।

জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন যে আশঙ্কা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করেছে, তা একেবারে অমূলক। উপজেলা বিএনপির যে কমিটির লোকজনের জন্য শহীদ মিনার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, তাদের শহীদ মিনারে এসে ফুল দেওয়ার শক্তি বা সাহস নেই। স্বাধীনতা দিবস আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়ানো একটি দিন। তাই এ দিনে স্বাধীনতা দিবসের মহান শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার ফুল দিয়ে আমরা শ্রদ্ধা জানিয়েছি।’

উপজেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনীতি কোনো চর দখল নয়। মিরসরাই উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে উপজেলা প্রশাসন যে ১৪৪ ধারা জারি করে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা তা ভঙ্গ করিনি। যারা শক্তি প্রদর্শন করে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল-সমাবেশ করেছে, প্রশাসন নিশ্চয়ই তাদের বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’

জানতে চাইলে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, ‘শহীদ মিনার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন। সেই আলোকে আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব’।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির যে পক্ষ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শহীদ মিনার এলাকায় জমায়েত ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

১৮ মার্চ বিএনপির চট্টগ্রাম জেলা পুনর্গঠন কমিটির সিদ্ধান্তে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৪ মার্চ মিরসরাই উপজেলা, বারিয়ারহাট ও মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার। উপজেলা বিএনপির কমিটিতে আবদুল আওয়াল চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও আজিজুর রহমান চৌধুরীকে সদস্যসচিব মনোনীত করা হয়। ঘোষিত এ কমিটির বিরোধিতা করে ২৫ মার্চ দুপুরে মিরসরাই উপজেলা সদরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে উপজেলা বিএনপির একটি অংশ। মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনের অনুসারীদের করা সেই ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ২৬ মার্চ সকালে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন তাঁরা। সেখানে নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতা-কর্মীরা এলে তাঁদের প্রতিহত করা হবে। এই পরিস্থিতিতে সংঘাতের শঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে, আজ সকাল থেকে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দুপক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম রসর ই উপজ ল সদস যসচ ব ব এনপ র য ১৪৪ ধ র দ র কর কম ট র ক কম ট আশঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারের ভূমিকম্পে ‘৩৩৪ আণবিক বোমার’ শক্তি: ‘আমাদের উদ্ধারে কেউ আসেনি’

মিয়ানমারে গত শুক্রবারের শক্তিশালী ভূমিকম্প নতুন করে দুর্দশা বয়ে এনেছে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের আগে থেকেই নানা বিপত্তিতে ছিল দেশটি। সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে চলছে গৃহযুদ্ধ। সামরিক জান্তা ক্ষমতায় বসার পর বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন মিয়ানমার।

মিয়ানমারে ২০২১ সালে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসে সামরিক জান্তা। এরপর থেকেই দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে গণতন্ত্রপন্থী যোদ্ধা এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। এতে করে দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থার বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবারের ভূমিকম্পে মিয়ানমারে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার প্রকৃত চিত্রটা পাওয়া কঠিন।

মিয়ানমারের সামরিক সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের কারণে শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এমনকি প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যাটা জানতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।

চলুন দেখে নেওয়া যাক এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের ভূমিকম্প নিয়ে কী জানা গেল—

ঐতিহাসিক এক শহরে সবচেয়ে ক্ষয়ক্ষতি

ভূমিকম্পে মিয়ানমারের ঐতিহাসিক শহর মান্দালয় শহরে ধ্বংসযজ্ঞের বিভিন্ন চিত্র শনিবার সামনে এসেছে। এই শহরে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে মান্দালয় সবচেয়ে কাছের শহর।

বৌদ্ধ মঠ এবং মিয়ানমারের রাজবংশের সুবিশাল প্রাসাদের জন্য মান্দালয় পরিচিত। শহরটির বাসিন্দারা সিএনএনকে বলেছেন, ভূমিকম্পে শহরের ঘরবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, মসজিদ ও মঠ ধসে পড়েছে। ফেটে গেছে বিভিন্ন সড়ক। একজন ভূতাত্ত্বিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবারের ভূমিকম্পের সময় ৩৩৪টি আণবিক বোমার সমান শক্তি নির্গত হয়েছে।

সাবেক আইনজীবী সিএনএনকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে তাঁর স্ত্রীর পরিবারের তিন সদস্য মারা গেছেন। তিনি বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত আমরা তাঁদের মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করতে পারিনি।’

ভূমিকম্পের পর থেকেই আহতদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন মান্দালয়ের বাসিন্দারা। নিখোঁজ বা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া প্রিয়জনের শেষ খবর কী, তা জানতে অপেক্ষা করছেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে এক নারীর সিএনএনের কাছে তুলে ধরেছেন, তাঁর পরিবারের এক সদস্যের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ার কথা।

৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের সময় মান্দালয়ের ওই নারী তাঁর শিশু সন্তানের জন্য দুধ বানাচ্ছিলেন। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্পটি খুবই শক্তিশালী ছিল। দ্রুত সবকিছু ঘটে যায়।’ এতে ওই নারীর বাড়ির একটি দেয়ালের অংশ ভেঙে তাঁর দাদির ওপর পড়ে। তাঁর দুই পা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে।

ভূমিকম্পের পর মান্দালয় শহরের রাস্তায় বেরিয়ে আসেন বাসিন্দারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ