সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সনজীদা খাতুনের মরদেহ ছায়ানট প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে মরদেহ পৌঁছালে শ্রদ্ধা জানান তার সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও শিল্পীরা। পরিবার সূত্র জানিয়েছে, ছায়ানটে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে মরদেহ নেওয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

এদিন সন্‌জীদা খাতুনকে শেষবারের মতো দেখতে সকাল থেকেই ছায়ানট ভবনে আসতে শুরু করেন সঙ্গীতপ্রেমীসহ নানা অঙ্গনের মানুষ। এ সময় রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ পরিবেশন করেন শিক্ষার্থীরা। ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরে উঠে সন্‌জীদা খাতুনের মরদেহ রাখার বেদী।

প্রসঙ্গত, বাঙালি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সভাপতি সন‌্জীদা খাতুন গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের মেয়ে সন‌্জীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। সন‌্জীদা খাতুন পড়াশোনা করেছেন কামরুন্নেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করে ১৯৭৮ সালে সেখান থেকেই পিএইচডি করেন। দীর্ঘদিন অধ্যাপনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে তিনি অবসর নেন।

সন্‌জীদা খাতুনের লেখার একটি বড় অংশ জুড়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ব্যাপক পরিসরে জনমানসে কবিগুরুকে পৌঁছে দেওয়ার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় শুদ্ধ সংগীতের চর্চার পাশাপাশি বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় ছিলেন সন্‌জীদা খাতুন, তখন সহযোদ্ধাদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘মিনু আপা’ নামে।

গত শতকের ষাটের দশকের শুরুর দিকে বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি নিবেদিত প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সন্‌জীদা খাতুন। তার তত্ত্বাবধানে ছায়ানট এখন বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান, যা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্যের প্রসারে কাজ করছে। ছায়ানটের পাশাপাশি জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। প্রচলিত ধারার বাইরে ভিন্নধর্মী শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নালন্দার সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। এশিয়াটিক সোসাইটির সাম্মানিক ফেলোও ছিলেন তিনি।

একাধারে শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সংগীতজ্ঞ ও শিক্ষক সন্‌জীদা খাতুন ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কারে (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) ভূষিত সন্‌জীদা ১৬টি বই লিখেছেন। ‘সাংস্কৃতিক মুক্তিসংগ্রাম’ বইটি তার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, বাঙালির সাংস্কৃতিক সংগ্রামের প্রামাণ্য ইতিবৃত্ত এবং মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক তার একান্ত ভাবনাগুচ্ছ ধারণ করেছে।

দুই খণ্ডের ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’ ধারণ করেছে সন্‌জীদা খাতুনের রবীন্দ্রযাপন, বাঙালি জীবন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথের অবদান, রবীন্দ্রকবিতা, রবীন্দ্রসংগীত এবং রবীন্দ্রভাবনার দশ দিগন্ত নিয়ে নানা স্বাদের রচনা৷ একই সঙ্গে শান্তিনিকেতন, শিলাইদহ, পতিসরসহ বিভিন্ন রবীন্দ্রতীর্থ নিয়ে লেখকের স্মৃতি ও অবলোকনও স্থান পেয়েছে ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’ এ।

সন্‌জীদা খাতুন রচিত বইয়ের মধ্যে আরো রয়েছে ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ’, ‘রবীন্দ্রনাথের হাতে হাত রেখে’, ‘রবীন্দ্রনাথ: তাঁর আকাশ ভরা কোলে’, ‘রবীন্দ্রনাথ: বিবিধ সন্ধান’, ‘তোমারি ঝরনাতলার নির্জনে’, ‘রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য’, ‘রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথ’, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত: মননে লালনে’, ‘রবীন্দ্র-বিশ্বাসে মানব-অভ্যুদয়’।

রবীন্দ্র বিষয়ক তার সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে আছে ‘রইল তাঁহার বাণী: রইল ভরা সুরে’, ‘গীতবিতান: তথ্য ও ভাবসন্ধান’, ‘সার্ধশততম জন্মবর্ষে রবীন্দ্রনাথ’।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ য় নট রব ন দ র ছ য় নট মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে তারেক রহমানের ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে বন্দর উপজেলা ও থানার অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত এক হাজার মানুষের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। 

শনিবার ( ২৯ মার্চ) সকাল দশটায় বন্দর উপজেলার হাই সাহেবের মোড় ও এগারোটায় বন্দর থানার কবিলের মোড়ে পৃথক পৃথক ভাবে বন্দর থানা ও উপজেলা বিএনপির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। 

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। 

উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মনির সরদার, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ, সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ লিটন, বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি শাহেনশাহ আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক রানা, মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী দিলারা মাসুদ ময়না, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম আপনসহ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ