রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হচ্ছে না। অধিকাংশ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে কিংবা নির্ধারিত সময়ের ৩ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন আজ বুধবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব না হওয়ায় যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। ফলে যাত্রীরা সন্তুষ্টি জানিয়েছেন।
যাত্রীরা বলছেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত সময় মেনে যেভাবে ট্রেন ছাড়ছে, ঈদযাত্রার বাকি দিনগুলোতে এই পরিস্থিতি বজায় রাখলে এবার লোকজন স্বাচ্ছন্দ্যেই বাড়ি যেতে পারবেন।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আজ ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মোট ১৬টি ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে মাত্র একটি ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হয়েছে। ট্রেনটি হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী তিতাস কমিউটার। এটির দেরি হয়েছে ৪৫ মিনিট। ট্রেনটি কমলাপুর পৌঁছাতে দেরি হওয়ার কারণে ছাড়তেও দেরি হয়েছে।
শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, প্রতিদিন মোট ৬৯টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে ৪৩টি ট্রেন আন্তনগর। ট্রেন ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে শোভন ও সুলভ শ্রেণির কোচে মোট আসনের ২৫ শতাংশ দাঁড়িয়ে যাত্রার টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ঈদযাত্রায় বিশেষ ট্রেন থাকবে।
আজ সকাল পৌনে ৯টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি। সে সময় ট্রেনের ভেতরে যাত্রীরা নিজেদের আসনে বসে ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষা করছিলেন। ট্রেনের নন-এসি বগিগুলোতে দাঁড়ানো যাত্রী দেখা গেছে।
রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ৯টা ১০ মিনিট। আর ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায় ৯টা ১৩ মিনিটে।
ছাড়ার আগে কথা হয় ট্রেনের যাত্রী আবু সুফিয়ানের সঙ্গে। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। সুফিয়ান বলেন, ঝামেলা ছাড়াই নির্দিষ্ট আসনে বসতে পেরেছেন। এখন শুধু ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষা। ট্রেন ছাড়লেই ঈদের আনন্দ শুরু হয়ে যাবে।
এরপর নারায়ণগঞ্জ কমিউটার, জামালপুর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ও অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোকে উল্লেখযোগ্য বিলম্ব ছাড়াই কমলাপুর ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। ট্রেনগুলো ছাড়ে সকাল সোয়া ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে। এর মধ্যে কোনোটি নির্দিষ্ট সময়ে, কোনোটি আবার নির্দিষ্ট সময়ের ৩ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়।
বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার নির্ধারিত সময় বেলা দেড়টা। এ ট্রেনের যাত্রী সোলায়মান হোসেন সকাল সাড়ে ১০টার সময়ই স্টেশনে পৌঁছেছেন বলে জানালেন। বেলা ১১টার দিকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল দেখেছি ট্রেন ছাড়তে দেরি হচ্ছে না। তাই আগেভাগেই স্টেশনে চলে এসেছি, যাতে কোনোভাবেই ট্রেন মিস না হয়।’
ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে কমলাপুর রেলস্টেশনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রেলের কর্মীরা যাত্রীদের টিকিট যাচাই করে স্টেশনে ঢোকাচ্ছেন। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ায় প্ল্যাটফর্মেও যাত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ধ র ত সময় ঈদয ত র ট র নট
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যতিক্রমী একাডেমিক ক্যালেন্ডারে সেশনজট মুক্ত খুবি
ভর্তি পরীক্ষা তুমুল প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শুরু হয় স্বপ্নের পথচলা। কিন্তু সেই স্বপ্ন সেশনজটের কবলে পড়ে অনেক সময়ই রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে। সেশনজট শুধু একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনেই বিঘ্ন ঘটায় না, বরং এর প্রভাব পড়ে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও আর্থ-সামাজিক জীবনেও।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষা জীবন শেষ না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী কর্মজীবনে প্রবেশ করতে দেরি করে ফেলেন। ফলে বাড়ে মানসিক চাপ, আর্থিক অসন্তোষ, এমনকি আত্মহননের মতো চূড়ান্ত পরিণতির দিকেও ঠেলে দেয় অনেককে।
তবে এ বাস্তবতায় এক ভিন্নচিত্র খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি)। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে সেশনজটে নাকাল, সেখানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সময়মতো শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের কাছে এক স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান।
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যেখানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একাডেমিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক করতে পারেনি, সেখানে খুবি নির্ধারিত সময়ে মধ্যেই তার একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সব কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এর পেছনে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সুপরিকল্পিত ও বাস্তবভিত্তিক কেন্দ্রীয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার।
আরো পড়ুন:
খুবিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু বৃহস্পতিবার
হল না খোলায় ক্যাম্পাসে অবস্থানের ঘোষণা কুয়েট শিক্ষার্থীদের
প্রতিটি ডিসিপ্লিন সে ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে নির্ধারিত সময়েই ক্লাস, পরীক্ষা সম্পন্ন করছে। এই পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল একাডেমিক ক্যালেন্ডার শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার জন্যও একটি রোল মডেল হয়ে উঠেছে।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ছাত্র রাজনীতির কারণে একাডেমিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। সেখানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। এই নীতিমালাও একাডেমিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রিন্ট মেকিং ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী খাইরুন নাহার বলেন, “বাংলাদেশে সময় নষ্ট করাটা যেন শিক্ষা জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বুঝেছি, সময়ের মধ্যে থেকে স্নাতক শেষ করাও সম্ভব। এটা আমার জীবনের গতি বদলে দিয়েছে।”
বাংলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমার পরিবার সবসময় ভেবেছে আমি কত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটাব। কিন্তু এখানে এসে দেখেছি সময়মতোই সব শেষ হয়। পরিবারের দুশ্চিন্তাও কমেছে।”
সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মালাচেং রাখাইন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার আগে সেশনজট নিয়ে অনেক ভয় ছিল। কিন্তু এখানে এসে বুঝেছি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার বাস্তবেই কার্যকর।”
বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী তান্না তাবরিজ জিমহা বলেন, “আমরা নির্দিষ্ট সময়েই সব কোর্স শেষ করতে পারি। এতে করে স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্যও বাড়তি সময় পাওয়া যায়, যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব কম হয়।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এসএম মাহবুবুর রহমান বলেন, “খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে একাডেমিক ক্যালেন্ডার পরিচালনা করে। কোনো ডিসিপ্লিন আলাদা করে নিজের মতো করে সময় নির্ধারণ করতে পারে না। ফলে সার্বিক একাডেমিক কার্যক্রমে সুশৃঙ্খলতা বজায় থাকে।”
তিনি বলেন, “আমরা শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য সেশনজটমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে চেয়েছি। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পারে এবং কর্মজীবনে দ্রুত প্রবেশ করতে পারে। এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে সমাজ ও পরিবারেও।”
ঢাকা/হাসিব/মেহেদী