সন্‌জীদা খাতুন নেই। সন্‌জীদা আপার কথা ভাবতে বসে সেই ষাটের দশকের অনেক কথা, অনেক স্মৃতি মনে ভিড় করে আসছে।

১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ঢাকায় যে গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক জাগরণের সূচনা ঘটেছিল, সেটাই পরে ষাটের দশকজুড়ে বহু বিস্তৃত হয়ে দেশে অবিশ্বাস্য এক গণজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। এর পেছনে জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা ছিল বিরাট। সে সময়ের প্রধান ছাত্রসংগঠনগুলোও যৌথভাবে এক শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। এর সবকিছুই শেষ পর্যন্ত দেশের মানুষের এক ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হতে সব প্রস্তুতিতে বিপুলভাবে সহায়তা করেছিল।

এসব আন্দোলনের পাশাপাশি বাঙালির আত্মানুসন্ধান ও সংস্কৃতির জন্য সংগ্রামও অব্যাহত ছিল। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালির সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ের এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সে সময় একাধিক কমিটি করে অনেকগুলো অনুষ্ঠান হলেও কেন্দ্রীয়ভাবে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকীর বড় অনুষ্ঠান হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে।

এর পরপরই সংগঠক ও শিল্পীরা সবাই মিলে জয়দেবপুরে গিয়েছিলেন আনন্দ-উত্সব করতে। সেখানেই বিকেলের আসরে মোখলেসুর রহমান (সিধু মিয়া) প্রস্তাব করলেন, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সবাই একমত হলে নতুন সংগঠনের প্রস্তাব গৃহীত হলো। সুফিয়া কামাল সভাপতি ও ফরিদা হাসান সাধারণ সম্পাদক। কমিটিতে আরও ছিলেন মোখলেসুর রহমান, সায়েদুল হাসান, শামসুন্নাহার রহমান, ওয়াহিদুল হক, আহমেদুর রহমান, দেবদাস চক্রবর্তী, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক প্রমুখ। কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সন্‌জীদা খাতুনের নামটি প্রস্তাব করা হলেও তিনি কমিটিতে থাকেননি। তিনি তখন সরকারি কলেজে চাকরি করতেন। নবগঠিত কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকেই সংগঠনের নাম ঠিক হয়েছিল—ছায়ানট।

সন্‌জীদা খাতুন আজীবন ছিলেন যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মুখ। কলেজে পড়ার সময় থেকেই পড়াশোনা, আবৃত্তি ও অভিনয়ের পাশাপাশি গানের চর্চা করেছেন। পাশাপাশি কিছু সাংগঠনিক কাজেও যুক্ত হয়েছেন।

শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। মুকুল ফৌজে কাজ করেছেন, আবার ছেড়েও দিয়েছেন। তাঁর প্রথম গানের গুরু ছিলেন সোহরাব হোসেন। তাঁর কাছে তিনি শিখেছিলেন নজরুলসংগীত, আধুনিক বাংলা গান ও পল্লিগীতি। পরে রবীন্দ্রসংগীত শিখেছেন প্রখ্যাত শিল্পী হুসনে বানু খানমের কাছে। এরপর শৈলজারঞ্জন মজুমদার, আবদুল আহাদ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেনসহ আরও অনেকের কাছে শিখেছেন রবীন্দ্রসংগীত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তাঁর রবীন্দ্রসাহিত্য ও সংগীতের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, অনার্সের পর শান্তিনিকেতনে যাবেন, বিশ্বভারতীতে এমএ পড়বেন। হয়েছিল তা-ই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই সন্‌জীদা খাতুন সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। একুশে ফেব্রুয়ারির দুপুরে বাসায় ফিরে ছাত্রহত্যার খবর পেয়েছিলেন। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি সবকিছু বন্ধ, সকালে বাসা থেকে বের হয়ে নানা খোঁজখবর নিয়ে বিকেলে মাকে নিয়ে রওনা দিলেন অভয় দাশ লেনের এক বাসার উদ্দেশে নারীদের প্রতিবাদ সভায় যোগ দিতে। সেই ভয়াল পরিবেশে দূরপথ হেঁটে গেলেন সে বাসার চত্বরে। সেখানে গিয়ে দেখেন বেগম সুফিয়া কামাল, বেগম দৌলতুন্নেসা, নূরজাহান মুরশিদ প্রমুখ উপস্থিত। কিন্তু সেদিন সে পরিস্থিতিতে কেউ সভার সভাপতি হতে চাননি। শেষ পর্যন্ত সন্‌জীদা আপার মা সাজেদা খাতুনকে সভাপতির আসনে বসিয়ে দেওয়া হলো। মা গুটিসুটি হয়ে বসে থাকলেন। অন্যরা বক্তৃতা করলেন।

সেদিন সন্‌জীদা খাতুন প্রথম বক্তৃতা করলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘একুশ আমাকে ভাষা দিয়েছে।’

সংস্কৃতিই তাঁর সংগ্রামক্ষেত্র

সন্‌জীদা খাতুনের সঙ্গে পরিচয় বা যোগাযোগের প্রথম স্মৃতি আমার মনে নেই। তবে আমরা সে সময় ছায়ানটের প্রায় সব অনুষ্ঠানেই যেতাম। সেসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই সন্‌জীদা আপার সঙ্গে পরিচয় ও কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল।

নানা কাজের সূত্রে সে সময়ের কিছু বামপন্থী নেতা–কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল সন্‌জীদা খাতুনের। স্বল্প সময়ের জন্য কারও কারও গোপন আস্তানা ছিল তাঁর বাসা। সেই পঞ্চাশের দশকের কোনো এক সময় আত্মগোপনে থাকা কমিউনিস্ট নেতা অনিল মুখার্জি তাঁদের বাসায় থেকেছেন। সে সময়ের আত্মগোপনে থাকা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা খোকা রায়ের স্ত্রী যুঁইফুল রায়—কখনো আয়েশা বা কখনো রাবেয়া পরিচয় ছিল—তাঁর কাছে আসা-যাওয়া করতেন। একদিন তিনি এসে পল্টন ময়দানে শুধু নারীদের নিয়ে সভা করার জন্য সন্‌জীদা আপাকে কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানালেন। ইতিমধ্যে বিএ অনার্স পাস করে সন্‌জীদা আপা শান্তিনিকেতনে পড়তে যাবেন স্থির করে ফেলেছেন। এ সময় যুঁইফুল রায় এসে সন্‌জীদা আপাকে বললেন, ‘ওখানে গিয়ে কী করবে? পার্টির সদস্যপদ নাও। এখানেই কাজ করো।’

সন্‌জীদা আপা এ কথা শুনে চমকে উঠে বললেন, ‘সেটা আমি পারব না।’ আরও বললেন, তিনি গান ছাড়তে পারবেন না। নিজের বিচার-বিবেচনা বাদ দিয়ে পার্টির নির্দেশ মেনে চলা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। পরে সন্‌জীদা আপা তাঁর আত্মজীবনী সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দেতে লিখেছেন, ‘রাজনীতি আমার ক্ষেত্র নয়, সাংস্কৃতিক আন্দোলনই আমার আসল কাজের ক্ষেত্র। বিশেষ করে বাংলাদেশ বা বাঙালি সাংস্কৃতিক স্বাধিকার সংরক্ষণ আমার উপযুক্ত কাজের ক্ষেত্র।’ তিনি সেই নিজস্ব কাজের ধারা থেকে কখনো বিচ্যুত হননি।

ছায়ানট শুধু নয়, তাঁর সুদীর্ঘ যাত্রাপথে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, ব্রতচারী সমিতি, নালন্দা বিদ্যালয় বা কণ্ঠশীলনের মতো সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন সন্‌জীদা আপা। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরের বাংলাদেশে নানা উত্থান-পতনের মধ্যে সব প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সামনে ছিলেন তিনি।

যাত্রা শুরুর দিন

সেদিন সকালের কথা কোনো দিন ভুলিনি। দিনটি ছিল ১৯৬৭ সালের ১৫ এপ্রিল, বাংলা সনের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ। ছায়ানট রমনার বটমূলে প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছিল নববর্ষের অনুষ্ঠান। সে অনুষ্ঠান নিয়ে আমাদের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেশ উত্সাহ তৈরি হয়েছিল। আমরা ৩১/১ হোসেনি দালান রোডের কার্যালয়ে সারা রাত জেগে ও আশপাশ থেকে কিছু ফুল, কিছু গাছের পাতা-ডালসহ কিছু বেলুন নিয়ে এক–দেড় শ ছাত্র মিছিল করে ছায়ানটের প্রথম পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলাম। সামনে ছিল ব্যানার—‘এসো হে বৈশাখ/ এসো এসো’। দর্শক-শ্রোতারা হাততালি দিয়ে আমাদের অভিনন্দিত করেছিলেন।

১৯৬৩ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ছায়ানট বিদ্যায়তনে (ফুলার রোডের উদয়ন স্কুলে) নববর্ষের অনুষ্ঠান হয়েছে নিয়মিত। প্রথমবারের সেই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ছায়ানট বিদ্যায়তনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর (১৯৬৭ সাল থেকে) শুধু একাত্তর সাল বাদ দিয়ে রমনার বটমূলে নববর্ষের বড় অনুষ্ঠান সফলভাবে করে চলেছে ছায়ানট। এ এক বিস্ময়কর ঘটনা। ২০০১ সালে নববর্ষের প্রভাতের এই অনুষ্ঠানে বড় রকমের বোমা হামলা হলেও ছায়ানট বা সন্‌জীদা খাতুন এই অনুষ্ঠান থেকে সরে আসেননি; বরং আরও ভালোবেসে আমৃত্যু এই অনুষ্ঠান করে গেছেন। এই বিশাল সফলতার সামনে প্রথমে আছেন সন্‌জীদা খাতুন, যিনি অক্লান্ত এই মহৎ উদ্যোগে সর্বদা সক্রিয় থেকেছেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

সেদিন সন্‌জীদা খাতুন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ না করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে এ কথাও সত্য, ষাটের দশকজুড়ে ছায়ানট বা অন্যান্য সাংস্কৃতিক কাজে সে সময় বামপন্থী ছাত্র, বুদ্ধিজীবী বা রাজনৈতিক কর্মীদের তিনি তাঁর পাশে পেয়েছেন। তিনিও তাঁদের প্রশ্রয় দিয়েছেন। তাঁর বই, গান এবং সব সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক ধারাকে প্রভাবিত করেছে, শক্তিশালী করেছে। সে জন্য বাংলাদেশ সব সময় কৃতজ্ঞ থাকবে সন্‌জীদা খাতুনের কাছে।

সাংস্কৃতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতীক

ষাটের দশকজুড়েই আমরা বাম ধারার ছাত্ররাজনীতি ও সংস্কৃতি সংসদের সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিবিড়ভাবে ঘনিষ্ঠ ছিলাম। সন্‌জীদা খাতুন আর ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে যে আমাদের আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের যোগাযোগ আছে, তা আমাদের জানা ছিল। সে জন্য ছায়ানটের নানা কার্যক্রম এবং এই সংগঠনের প্রতি আকর্ষণ ও সমর্থনও সহজাত ছিল। আসলে সেই দিনগুলোতে ছায়ানট বাঙালিদের সাংস্কৃতিক আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

মনে পড়ে, সন্‌জীদা আপার আজিমপুরের ফ্ল্যাটে কত কাজে গিয়েছি। আমাদের নেতৃস্থানীয় কর্মীদের গোপন বৈঠকও হয়েছে সে বাসায়। সেই দিনগুলোতে সন্‌জীদা খাতুনকে আমরা মিনু আপা বলতাম।

ছায়ানট একটি অব্যাহত সাংস্কৃতিক আন্দোলন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক চর্চারও একটি কেন্দ্র। ছায়ানট মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আমাদের সবাইকে, দেশের মানুষকে সঞ্জীবিত করে এসেছে। বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মানবিক বাংলাদেশ গঠনের কাজে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা রেখেছে।

৯১ বছর ধরে সন্‌জীদা খাতুন বাংলাদেশ বা বাঙালি সাংস্কৃতিক স্বাধিকার সংরক্ষণের কাজ করে গেছেন—এককভাবে, একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে। কথায়, গানে, লেখায়, সংগঠনে, আয়োজনে ও আন্দোলনে তিনি আমাদের সামনে ছিলেন সারাক্ষণ।

তিনি শারীরিকভাবে নেই; কিন্তু তিনি থেকে গেছেন আমাদের সঙ্গে, থাকবেন সব সময়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ই অন ষ ঠ ন নববর ষ র আম দ র স স গঠন র র রহম ন র প রথম হয় ছ ল প রস ত র জন ত কর ছ ল ক জ কর সময় র

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষের শোভাযাত্রার সঙ্গে নেই চারুকলার ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা (২০১৭-১৮ সেশন) আজ বুধবার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ বিষয়ে স্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছেন। এবারের বৈশাখের আয়োজনের সঙ্গে তাঁদের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই বলে উল্লেখ করেছেন। তবে চারুকলা অনুষদের ডিন বলেছেন, উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে একটি গ্রুপ বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এ বছর ছাত্র–শিক্ষক সবার সম্মিলনে এই শোভাযাত্রা আয়োজন করা হচ্ছে।

২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মূলত বৈশাখ প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট ব্যাচের তত্ত্বাবধায়নে এবং সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যৌথ প্রয়াসে আয়োজিত হয়ে থাকে। যে আয়োজনের সম্পূর্ণ অর্থ অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। চারুকলার রীতি অনুযায়ী যা এ বছর আমাদের ব্যাচের দায়িত্ব হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবারের আয়োজন একেবারেই চারুকলা অনুষদের পূর্বাপর রীতির ব্যতিক্রমীভাবে কোনোরকম শিক্ষার্থীদের সম্মতি ও সম্পৃক্ততা ছাড়া শুধু শিক্ষকদের সিদ্ধান্তে করা হচ্ছে, যা আমাদের বিশ্বাস ও ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ ছাড়া এবার একাডেমিকভাবে বৈশাখ আয়োজন করার এই সিদ্ধান্ত অনুষদে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, ছাত্রপ্রতিনিধি কারও সঙ্গে কোনোরকম পূর্ব–আলোচনা ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট ছাত্র-শিক্ষক গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় খুবই অতর্কিতভাবে নেওয়া হয়েছে।’

শিক্ষার্থীরা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, শোভাযাত্রার জন্য বানানো স্ট্রাকচারের ডিজাইন ও আইডিয়া (কাঠামোর নকশা ও ভাবনা) সম্পূর্ণ শিক্ষকদের দেওয়া, চারুকলার আপামর সাধারণ শিক্ষার্থী এর সঙ্গে কোনোভাবেই সংযুক্ত ও অবগত নন। শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে স্ট্রাকচার তৈরি সম্পর্কেও তাঁরা অবগত ছিলেন না এবং কারও ব্যক্তিগত মতাদর্শে আঘাত দেওয়ার পক্ষেও তাঁরা নন।

এবারের বৈশাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বৈশাখ, বিবৃতিতে এমনটি উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ‘এ আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের “চাটুকারিতাপূর্ণ” মনোভাবের কারণে আমরা শিক্ষকদের আয়োজন করা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা ও শোভাযাত্রা সমর্থন করছি না।’

এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম শেখ আজ প্রথম আলোকে বলেন, শুরুর দিকে এই শোভাযাত্রা চারুকলার ছাত্র–শিক্ষক সবার অংশগ্রহণে আয়োজন করা হতো। তবে ২০০৫ সালের দিকে এসে এটি একটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ওপর দেওয়া হয়। তবে এটি যেহেতু একটি একাডেমিক কাজের অংশ, তাই শুধু শিক্ষার্থীরা নন, বরং সুষ্ঠু জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে যেন কোনো ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়, সে জন্য এ বছর ছাত্র–শিক্ষক সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই শোভাযাত্রা আয়োজন করা হচ্ছে।

আরও পড়ুননববর্ষের শোভাযাত্রায় থাকছে না আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিফ’৫ ঘণ্টা আগে

উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি পক্ষ এই আয়োজনকে বিতর্কিত করা চেষ্টা করছে মন্তব্য করে অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে আছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ বছরের এই শোভাযাত্রা আয়োজন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তবে রাজনৈতিক কারণে কেউ কেউ এটাকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈশাখী মেলা আয়োজন করবে জবি প্রশাসন
  • মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্জনের ঘোষণা ঢাবির চারুকলা শিক্ষার্থীদের
  • নববর্ষের শোভাযাত্রার সঙ্গে নেই চারুকলার ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা
  • নববর্ষের শোভাযাত্রায় থাকবে না আবু সাঈদের ভাস্কর্য
  • নববর্ষের শোভাযাত্রায় থাকছে না আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিফ’
  • নববর্ষের শোভাযাত্রায় থাকছে না আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিভ’