Prothomalo:
2025-03-29@05:45:10 GMT

মুজিববাহিনীর সত্য–মিথ্যা

Published: 26th, March 2025 GMT

১৯৬৯ সালের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডনে যান। ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’য় আটক থাকা অবস্থায় তাঁর মামলা পরিচালনার জন্য যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাঙালিরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁরা বিখ্যাত আইনজীবী টমাস উইলিয়ামকে শেখ মুজিবের কৌঁসুলি হিসেবে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন। লন্ডনে শেখ মুজিবের একটা ‘ইন্ডিয়া কানেকশন’ হয়। সেখানে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর কর্মকর্তা ফণীন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর। সংশ্লিষ্ট মহলে তিনি নাথবাবু নামে পরিচিত। তাঁদের মধ্যে আসন্ন রাজনৈতিক পালাবদলের সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল।

শেখ মুজিব ঢাকায় ফিরে এসে তাঁর আস্থাভাজন চার যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদকে একসঙ্গে কাজ করতে এবং প্রস্তুতি নিতে বলেন। তিনি তাঁর দল আওয়ামী লীগের চেয়েও এই চারজন তরুণের ওপর নির্ভর করতেন বেশি। মুজিবের প্রতি তাঁদের প্রশ্নাতীত আনুগত্য ছিল।

এ সময় বিএলএফ (বেঙ্গল লিবারেশন ফোর্স) নামটির উদ্ভব। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে সিরাজুল আলম খানকে কেন্দ্র করে ১৯৬০–এর দশকে একটা ‘নিউক্লিয়াস’ কাজ করত। তাঁরা একটা ফোরাম তৈরি করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’। যদিও এর কোনো দালিলিক সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। এরপর তৈরি হলো বিএলএফ। সিরাজুল আলম খানের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘আমাদের রাজনৈতিক সংগঠন হলো স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ এবং সামরিক সংগঠন হলো বিএলএফ।’

তোফায়েল আহমেদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিএলএফের জন্ম ১৯৬৯ সালের শেষে অথবা ১৯৭০ সালের শুরুর দিকে। ওই সময় বাঙালি জাতীয়তাবাদী স্লোগানগুলো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে উচ্চারিত হতো, ‘জাগো জাগো/ বাঙালি জাগো’, ‘পাঞ্জাব না বাংলা/ বাংলা বাংলা’, ‘পিন্ডি না ঢাকা/ ঢাকা ঢাকা/, ‘তোমার আমার ঠিকানা/ পদ্মা মেঘনা যমুনা’। এরপর এল আরও দুটো স্লোগান, ‘জয় বাংলা’ এবং ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো/ বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ দেশে তখন জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের একতলায় মেয়েদের কমনরুমের সামনের করিডরের দেয়ালে ছোট করে কেউ লিখে দিয়েছিল, ‘বিএলএফে যোগ দিন’।

১৯৭০ সালের মাঝামাঝি ছাত্রলীগের বাছাই করা একদল কর্মীর অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যাওয়ার কথা। শেখ মুজিব নিজেই এর আয়োজন করেছিলেন। কলকাতা থেকে যোগাযোগ করতেন ‘র’-এর অপারেটিভ চিত্তরঞ্জন সুতার। তাঁর বাড়ি পিরোজপুর জেলায়। কলকাতার ভবানীপুরে একটা তিনতলা বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল ‘র’। সুতার এই বাড়িতে সপরিবার থাকতেন। মুজিবের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হতো সিরাজগঞ্জের তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা এবং একসময় ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু হেনার মাধ্যমে।

শেখ মুজিব ভেবেছিলেন, ইয়াহিয়া নির্বাচন দেবেন না। দেশ স্বাধীন করার জন্য ছাত্রলীগের কর্মীদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের চিন্তাভাবনা হচ্ছিল। ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে একটি ব্যাচের বাছাই প্রক্রিয়াধীন ছিল। ১৯৭০ সালের আগস্টে মুজিবের মনে এই প্রতীতি জন্মে যে নির্বাচন হবে। তখন প্রশিক্ষণ স্থগিত করা হয়। বলা হয়, এখন এটার আর দরকার নেই।

১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ এবং ১৭ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একচেটিয়া জয় পায়। ১৯৭১ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই সংবিধান প্রশ্নে অচলাবস্থা দেখা দেয়। মুজিবের মনে আশঙ্কা, সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি হবে না।

১৮ ফেব্রুয়ারি মুজিব তাঁর ধানমন্ডির বাড়িতে ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের চার সদস্য—সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং চার যুবনেতা—মনি, সিরাজ, রাজ্জাক ও তোফায়েল। হাইকমান্ডের অপর সদস্য খন্দকার মোশতাক আহমদ উপস্থিত ছিলেন না কিংবা তাঁকে ডাকা হয়নি। শেখ মুজিব কাগজে একটি ঠিকানা দেখিয়ে তাঁদের মুখস্থ করান। এরপর কাগজটি কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি উপস্থিত সবাইকে বলেন, দরকার পড়লে তাঁরা যেন ওই ঠিকানায় যোগাযোগ করেন। ঠিকানাটি হলো—সানি ভিলা, ২১ রাজেন্দ্রপ্রসাদ রোড, নর্দার্ন পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা। পাকিস্তানের রাজনীতির হাওয়া দেখে মুজিব কয়েকটি ‘অপশনের’ কথা ভেবে রেখেছিলেন। এটি ছিল তার একটি।

শেখ মুজিবুর রহমান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ধানমন্ডিতে র‌্যাব পরিচয় দুর্ধর্ষ ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৬

রাজধানীর ধানমন্ডিতে র‌্যাব পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি করা হয়েছে। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও নগদ টাকাসহ ডাকাতদলের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টার থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

গ্রেপ্তার ছয় জন হলো— ফরহাদ বীন মোশারফ, ইয়াছিন হাসান, মোবাশ্বের আহাম্মেদ, ওয়াকিল মাহমুদ, আবদুল্লাহ এবং সুমন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ‘RAB’ লেখাসম্বলিত কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের ‘RAB’ লেখাসম্বলিত ক্যাপ, একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি লোহার তৈরী ছেনি, একটি পুরাতন লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ এবং নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে।

ধানমন্ডি থানা সূত্রে জানা গেছে, ধানমন্ডিতে এম এ হান্নান আজাদের ‘অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ধানমন্ডি শাখার গলিতে নিজ বাড়ির নিচতলা, তৃতীয় তলা ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিং নামীয় প্রতিষ্ঠানের অফিস আছে। এছাড়া, ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালট্যান্সি অফিস এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে এম এ হান্নান আজাদের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট আছে। বুধবার (২৬ শে মার্চ) ভোরে  তিনটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকারে করে ডাকাতরা দলবদ্ধভাবে ওই বাসার সামনে এসে ফটকে দায়িত্ব পালনরত নিরাপত্তাকর্মীদের বলে যে, তারা র‌্যাবের লোক, তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। তারা বাড়িতে অভিযান চালাবে বলে তাড়াতাড়ি গেট খুলতে বলে। তাদের কয়েকজনের গায়ে ‘RAB’ লেখাসম্বলিত কটি ছিল। নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। তখন ডাকাতরা নিরাপত্তাকর্মীদের গালাগালি করতে থাকে এবং গেট না খুললে হত্যার হুমকি দেয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন গেটের ওপর দিয়ে উঠে জোর করে গেট খুলে ফেলে। এরপর তারা সবাই জোর করে বাড়ির ভেতরে ঢুকে নিরাপত্তাকর্মী, বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ও গাড়িচালককে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর তারা নিচতলার অফিসের গেট ভেঙে পিয়নকে মারধর করে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। 

এরপর ডাকাতরা তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে ফেলে। গেট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিন জন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসেন। ডাকাতরা তখন তাদের আটকে মারধর করে অফিসের চাবি ও বাসার চাবি দিতে বলে। ডাকাতরা জোর করে চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে এবং অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে ও অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তাদের আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক ২.৫ ভরি স্বর্ণ (যার দাম ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা) লুট করে। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নিয়ে গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করে। তখন ধানমন্ডি থানার একটি টহল টিম ওই বাড়ির সামনে হাজির হয়ে ডাকাতদের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করে। এ সময় ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা ছেনি ও রেঞ্জ  দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। তখন আশেপাশে থাকা লোকজনের সহায়তায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। 

এ ঘটনায় ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও মালিকের ভাগ্নে তৌহিদুল ইসলামের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার ছয় জনসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১২ জনকে আসামি করে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

ঢাকা/এমআর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আশ্রয় নিয়ে খেয়ে দেয়ে ৪ শিশুসহ চম্পট, পরে ওই নারীকে আটক
  • অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন থেকে শিডিউল মেসেজ পাঠাবেন যেভাবে
  • লন্ডনে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবেন খালেদা জিয়া
  • উয়েফা, ফিফা ও লা লিগা কর্তৃপক্ষকে ধুয়ে দিলেন কুন্দে
  • হামজার চোট ও চেইন রিঅ্যাকশন
  • নিখোঁজের দুই দিন পর সেপটিক ট্যাংক থেকে স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার
  • ঈদের ছুটিতে ক্রিকেটাঙ্গন
  • রংপুর মেডিকেলে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, ‘রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস’ চেয়ে শিক্ষার্থীদের বিবৃতি
  • ধানমন্ডিতে র‌্যাব পরিচয় দুর্ধর্ষ ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৬
  • তাজউদ্দীন আহমদের স্বহস্তে লেখা মুক্তিযুদ্ধের অজানা দলিল: আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সারসংক্ষেপ