অফিস আদেশ ছাড়াই নির্বাহী পরিচালকের (ইডি) চেয়ার দখলের দুই দিন পরই চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরের চিঠি পেলেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান। গতকাল মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এক অফিস আদেশে তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দেন।

এ আদেশে বলা হয়েছে, ‘জাহাঙ্গীর আলম খানের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং যেহেতু সরকার জনস্বার্থে তাঁকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা প্রয়োজন মর্মে বিবেচনা করে, সেহেতু সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮–এর ধারা ৪৫ ও সরকারি চাকরি (সংশোধন) আইন, ২০১৩–এর উপধারা ২ (গ)–তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাঁকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো।’ জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও এই অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম খান বিএমডিএর সেচ শাখার প্রধান ছিলেন। গত রোববার কোনো অফিস আদেশ ছাড়াই তিনি বিএমডিএর ইডির পদ ‘দখল’ করেন। ওই পদে ছিলেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম। বদলি আদেশ পাওয়ার পরও দায়িত্ব হস্তান্তরে দেরি করায় তাঁকে রীতিমতো জোর করেই অফিস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

সরকার বিভিন্ন সময় প্রশাসনিক এ পদে বিএমডিএর বাইরের কর্মকর্তাদের পদায়ন করে থাকে। গত বছরের জুলাইয়ে শফিকুল ইসলামকে বিএমডিএর ইডি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছিল। পরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ শাখার প্রজ্ঞাপনে তাঁকে রাজশাহীতে অবস্থিত বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়।

তবে রেশম উন্নয়ন বোর্ডে না গিয়ে শফিকুল ইসলাম এক মাস ধরে বিএমডিএতেই ছিলেন। এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেন। গত রোববার দুপুরেও তিনি তাঁর কার্যালয়ে ছিলেন। তখন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও সেচ শাখার প্রধান জাহাঙ্গীর আলম খানসহ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর দপ্তরে যান। তাঁরা রোববারের মধ্যেই দপ্তর ছেড়ে রেশম বোর্ডে যাওয়ার জন্য শফিকুল ইসলামকে চাপ দেন। এ সময় উভয়ের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। তখন দু-একজন শফিকুলকে চেয়ার থেকে তোলার জন্যও এগিয়ে যান। এ অবস্থায় শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব ছাড়তে রাজি হন।

পরে একটি চিঠি প্রস্তুত করা হয়। এ চিঠিতে শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব ছাড়লেন এবং জাহাঙ্গীর আলম খান দায়িত্ব গ্রহণ করলেন বলে স্বাক্ষর করেন। এভাবে আরও দুজন জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে টপকে কোনো অফিস আদেশ ছাড়াই ইডির চেয়ারে বসে যান জাহাঙ্গীর আলম খান।

রোববার দুপুরে ইডির দপ্তরে গিয়ে জাহাঙ্গীর আলম খানকে ওই চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। তখন তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। তবে অফিস আদেশ জারি হয়নি। এটা হয়ে যাবে।’

বাধ্যতামূলক অবসরের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম খান গতকাল রাতে বলেন, ‘আমিও এ রকম একটা চিঠি দেখতেছি।’ এটা কি বাধ্যতামূলক অবসরের চিঠি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখে তা–ই তো মনে হচ্ছে।’

বিএমডিএ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ইডি হিসেবে ছিলেন একজন অতিরিক্ত সচিব। এটা সরকারি পোস্ট, শফিকুল ইসলামকে জোর করে বের করে সেই পোস্টকে অসম্মান করা কোনো অবস্থায় সমীচিন হয়নি। এ ধরনের ঘটনার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে বিএমডিএতে আরও খারাপ ধরনের দৃষ্টান্ত হতো। বাধ্যতামূলক অবসরের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা যথাযোগ্য হয়েছে। বিএমডিএর জন্য এটা শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম খ ন ব এমড এ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক ডিআইজি আবদুল বাতেন ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আবদুল বাতেন ও তাঁর স্ত্রী নূর জাহান আক্তারের নামে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আবদুল বাতেনের বিরুদ্ধে ২ কোটি ২৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৪৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। তাঁর সাতটি ব্যাংক হিসাবে ১৩ কোটি ২২ লাখ ২৭ হাজার ৫১১ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

মো. আক্তার হোসেন বলেন, আবদুল বাতেনের স্ত্রীর বিরুদ্ধে ৮৫ লাখ ৪১ হাজার ৮০৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর চারটি ব্যাংক হিসাবে ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৭০২ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই মামলায় নূর জাহানের সঙ্গে আবদুল বাতেনকেও আসামি করা হয়েছে।

এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি আবদুল বাতেনের স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর আবদুল বাতেনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহত আবু সাঈদের এলাকা রংপুরে তিনি কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ১৩ আগস্ট রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুনআবু সাঈদ হত্যা: বাধ্যতামূলক অবসরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা১৩ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমরা ছুটি চাই...
  • ‘দুইবার বিশ্বকাপ জিতলেই জাতীয় দল থেকে অবসর নেব’
  • চেয়ার দখল করে চাকরি হারালেন প্রকৌশলী, ২ কর্মকর্তা বরখাস্ত
  • ইডির চেয়ার দখল করে চাকরি হারালেন বিএমডিএ প্রকৌশলী
  • সাবেক ডিআইজি আবদুল বাতেন ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা
  • শিলিংয়ে লড়াইটা মূলত হামজা বনাম ছেত্রী