মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞায় কেউ হবেন মুক্তিযোদ্ধা, কেউ সহযোগী
Published: 26th, March 2025 GMT
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁরা দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে রণাঙ্গনে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন এবং যাঁরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন, শুধু তাঁরাই ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার’ স্বীকৃতি পাবেন। এর বাইরে যাঁরা দেশে-বিদেশে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন, বিশ্বজনমত তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন, তাঁরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন সংশোধন করে নতুন যে অধ্যাদেশ হতে যাচ্ছে, তাতে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় এ পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এর আগে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছিল ২০২২ সালে। সর্বশেষ সংজ্ঞায় মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁরা যুদ্ধ করেছিলেন এবং যাঁরা বিশেষ অবদান রেখেছিলেন, তাঁদের সবাইকে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা পরিবর্তন আনার দাবি উঠে বিভিন্ন মহল থেকে। এরপর বিষয়টি নিয়ে তাঁরা খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক এবং বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রায় সবাই বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন আর যাঁরা বিভিন্ন উপায়ে অবদান রেখেছেন, তাঁরা একই কাতারে থাকতে পারেন না। যে কারণে সবার মতামত নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হচ্ছে।
তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একাধিক গবেষক প্রথম আলোকে বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন করেছিল। এখন আবার নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী শ্রেণি করাও ঠিক হচ্ছে না। এটি সম্মানজনক হবে না। ভবিষ্যতে এ নিয়ে সংকট ও তিক্ততা আরও বাড়বে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক আফসান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। কখনো রাজনৈতিক কারণে, কখনো সুবিধার কারণে এসব পরিবর্তন হয়। মুক্তিযুদ্ধে নানা ধরনের মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন, বিভিন্নভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তবে রাজনৈতিক কারণে সব সরকারই মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনেছে। এটি এখন আবার হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কারা হবেনখসড়া অধ্যাদেশে নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা দেশের ভেতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আল–বদর, আল শামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এ রূপ সব বেসামরিক নাগরিক (ওই সময়ে যাঁদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল) বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন। এর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী, মুক্তিবাহিনী, বিএলএফ ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্ট (ইপিআর), নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স ও আনসার সদস্যরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।
সংজ্ঞায় বেসামরিক নাগরিক বলতে তিনটি শ্রেণির কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীর মাধ্যমে নির্যাতিত সব নারী (বীরাঙ্গনা)। তৃতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সহকারী। এই তিন শ্রেণির সবাই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন।
কারা হবেন মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীখসড়া অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী নামে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। সহযোগীদের সম্পর্কে বলা আছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা দেশের ভেতরে বা প্রবাসে অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করতে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনে বাংলাদেশের যেসব নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছিলেন, তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর মর্যাদা পাবেন।
সহযোগীদের জন্য পাঁচটি শ্রেণি ঠিক করা হয়েছে। প্রথমত, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং যেসব বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত, মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তৃতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) বা এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য), যাঁরা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক। পঞ্চমত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।
যদিও এই পাঁচ শ্রেণির ব্যক্তিরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছেন। জামুকা আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি হলে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হবেন।
বিদ্যমান জামুকা আইনে যেসব জায়গায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লেখা রয়েছে, অধ্যাদেশে তা বাদ দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ শব্দের পরিবর্তে ‘লক্ষ্য’ শব্দটি যুক্ত করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ বলতে জামুকা আইনে এখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। নতুন অধ্যাদেশে এই লাইনসহ কিছু শব্দ বাদ পড়ছে। এর পরিবর্তে লেখা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আল–বদর, আল–শামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ।’
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১১ বার বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও মানদণ্ড বদলানো হয়েছে। এর মধ্যে শুধু সংজ্ঞা বদলানো হয়েছে পাঁচবার। অধ্যাদেশ জারি হলে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও মানদণ্ড বদলাবে ১২ বার। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে সাতবার।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা, ভাতা প্রদানসহ অন্যান্য তথ্য ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) নামের একটি সফটওয়্যারে হালনাগাদ করে থাকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এমআইএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০। এর মধ্যে মাসিক ভাতা পান ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৪ জন। তবে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী করা হলে স্বাভাবিকভাবেই বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কমে যাবে। সেটি কমে কত হবে, তা নিশ্চিত করতে পারেনি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম ২৩ মার্চ তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত যাঁরা রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, কেবল তাঁরাই বীর মু্ক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন। যাঁরা নানা আঙিকে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, কেউ কূটনৈতিক সহযোগিতা করেছেন, কেউ গান গেয়েছেন, তাঁরা হবেন মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী।’
ফারুক–ই–আজম বলেন, জামুকার সংশোধিত অধ্যাদেশ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। তারা কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, সেগুলো সংশোধন করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারে (মুজিবনগর সরকার) যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রথমে তাঁদের মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী করার চিন্তা ছিল। এখন এটি সংশোধন করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাখসড়া অধ্যাদেশে নতুন একটি ধারা (১৪) যুক্ত করা হয়েছে। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়টি রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ অর্থ ‘১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের পক্ষে মুজিবনগর সরকার কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত বাংলাদেশের জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতকল্পে যে চেতনা’।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধের পর কোনো বিতর্কের বিষয় ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার আদি রূপে ফেরার একটা প্রয়াস দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার পরিধি যেভাবে বাড়িয়েছিল, তাতে প্রবাসীরাও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পাওয়া শুরু করেছিলেন। এর রাশ টেনে ধরতে চাইছে এই সরকার।
গবেষক সাজ্জাদুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের যেভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আগের সরকার নিয়েছিল, তা অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু এবার যেভাবে তাঁদের সহযোগীর কাতারে নামিয়ে আনা হচ্ছে, তাতে বিতর্ক আরও বাড়বে। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধ বলা হয়, তাই নানা ধরনের সহযোগীদের আলাদা করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়টা সুবিবেচনা প্রসূত হবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ক ত য দ ধ র সহয গ ম ক ত য দ ধ র সময় দখলদ র প ক স ত ন অবদ ন র খ ছ প রথম আল ক ১৯৭১ স ল র য দ ধ কর ছ কর ছ ল ন র জন ত ক স ব ধ নত র ব ষয়ট র সরক র সরক র র র রহম ন র সদস য ক ত কর কর ছ ন য সব ব হয় ছ ল মন ত র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
দুবলার চরের রাসমেলা ঐতিহ্যের সাম্প্রতিক রূপ
দুবলার চর বাংলাদেশের সুন্দরবনের অভ্যন্তরে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার মায়ায় জেগে ওঠা আশ্চর্য একটি দ্বীপভূমি। এর প্রধান পরিচয় হচ্ছে, এটি প্রাণবৈচিত্র্যে ভরপুর সুন্দরবনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্র। নানান কিংবদন্তির সূত্র ধরে প্রতিবছরের কার্তিক মাসে (সাধারণত নভেম্বরে) বার্ষিক রাসমেলা এবং পুণ্যস্নানের জন্য এই চরে অনেক পুণ্যার্থী ও পর্যটকের আগমন ঘটে। কিংবদন্তি অনুসারে অনেকে বিশ্বাস করেন, দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণ এই দ্বীপে রাধার অষ্টসখীর সঙ্গে রাসলীলা করেছিলেন। আবার অনেকে মনে করেন, ১৯২৩ সালে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রবর্তক হরিচাঁদ ঠাকুরের একজন বনবাসী ভক্ত পাগল হরিভজন (১৮২৯-১৯২৩) সর্বমানব ও সর্বজীবের মিলনের আকাঙ্ক্ষায় এই দ্বীপে প্রথম রাসমেলার আয়োজন করেছিলেন। মূলত তার পর থেকেই দুবলার চরে রাসমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সেই হিসাবে ২০২৪ সালে দুবলার চরের রাসমেলা শতবর্ষ অতিক্রম করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভাবনগর ফাউন্ডেশন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইউনেস্কো ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সহযোগিতায় ২০২৪ সালে দুবলার চরে অনুষ্ঠিত রাসমেলা ও পুণ্যস্নানের সামগ্রিক তথ্য সংগ্রহে অংশগ্রহণ করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর বিকেল ৪টায় দুবলার চর পৌঁছাই। সেখানে সন্ধ্যা ৭টায় ‘রাস উৎসব উদযাপন কমিটি’র সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। মতবিনিময়কালে জানা যায়, আলোরকোল, দুবলার চর, সুন্দরবনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাঙ্গলিক পূজা এবং রাসের পুণ্যস্নান ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে খুলনা ও বাগেরহাট জেলার হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিবছরের মতো রাসমেলা ২০২৪ উদযাপনে তিনটি স্লোগান নির্ধারণ করা হয়– ১. ‘ওরে নীল যমুনার জল, কোথায় আমার কৃষ্ণ ঘন শ্যাম’; ২. ‘সাঁতার আর সমুদ্রস্নানে লক্ষ প্রাণের মিলন মেলা এবং ৩. ‘দরবেশ গাজী-কালুর পুণ্যভূমি, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুণ্যস্নান, সবাই মিলে প্রাণের মিলন মেলা।’ ‘রাস উৎসব উদযাপন’-এর পরিকল্পনা হিসেবে গত ১৫ নভেম্বর শুক্রবার রাতে মূলত রাধাকৃষ্ণ পূজা অর্চনার জন্য নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া ১৬ নভেম্বর শনিবার ভোরে সমুদ্রতীরে পুণ্যস্নানের জন্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সুন্দরবনের অভ্যন্তরে আলোরকোল, দুবলার চর রাসমেলার স্থানটি যেহেতু দুর্গম সমুদ্রের মধ্যে একটি দ্বীপে অনুষ্ঠিত হয়, সেহেতু সেখানে ভক্ত, পুণ্যার্থী, পর্যটক, গবেষকদের আগমন ঘটতে থাকে দু-এক দিন আগে থেকে। দর্শনার্থীদের কাছে খাবার থেকে শুরু করে লোকশিল্পের বিভিন্ন উপাদান ও পূজার উপকরণ বিক্রি করার লক্ষ্যে রাসমেলা প্রাঙ্গণের বিস্তীর্ণ এলাকায় খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা থেকে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের লোকশিল্পকর্মের অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে বসেন। দোকানগুলোতে মাটি, কাঠ, ধাতব, প্লাস্টিক, কাপড়, কাগজ, শঙ্খ প্রভৃতি দিয়ে নির্মিত পুতুল, গহনা, দৈনন্দিন ব্যবহারের সামগ্রী প্রদর্শন ও বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের পূজার উপকরণ, যেমন– মোমবাতি, আগরবাতি, ধূপ, প্রসাদের জন্য বাতাসা, খাগড়া, ছাঁচখাজা, ডাব, নারকেল, কলা প্রভৃতি বিক্রি করা হয়। ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যার পর থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে ঐতিহ্যগত কারুশিল্পের পাশাপাশি লোকজ খাদ্যের বিচিত্র সমাহার প্রত্যক্ষ করা যায়।
১৪ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে আমরা রাসমন্দিরে গিয়ে সাতক্ষীরা থেকে আসা ভাস্কর সুকান্ত কুমার সানার শিল্প-সৌকর্য প্রত্যক্ষ করি। সুকান্ত কুমার সানা দীর্ঘদিন ধরে দুবলার চর রাসমেলার মন্দিরে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি স্থাপন করে থাকেন। একজন প্রতিভাবান ভাস্কর হিসেবে তিনি এবার রাসমন্দিরে ঝুলন্ত রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি স্থাপন করেছেন। ভাবনগর ফাউন্ডেশনের গবেষক দল সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ভাস্কর সুকান্ত কুমার সানার কাছ থেকে বনবিবিসহ রাধাকৃষ্ণ, গঙ্গা দেবী, শিব প্রভৃতি দেবদেবীর মূর্তি স্থাপন এবং মুসলিম পৌরাণিক পীর গাজী ও কালুর ভাস্কর্য স্থাপনের ঐতিহ্যগত জ্ঞান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। পরে তাঁর কাছ থেকে প্রাপ্ত ঐতিহ্যগত জ্ঞান রাসমেলায় আসা দর্শনার্থীদের মাঝে আলোচনার মাধ্যমে প্রচার করে। ভাস্কর সুকান্ত কুমার সানার অভিজ্ঞতার আলোকে দর্শনার্থীদের জানানো হয়, ‘সুন্দরবনকেন্দ্রিক পৌরাণিক দেবী বনবিবি। বনবিবি মূলত সুন্দরবনের যত পশু-পাখি, জীবজন্তু, বৃক্ষ প্রভৃতির রক্ষাকর্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি সুন্দরবনে আসা পেশাজীবী মানুষ তথা জেলে, মধু আহরণকারীদের রক্ষাকারী হিসেবে কল্পিত। সুন্দরবন এলাকার হিন্দু-মুসলিমসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ বনবিবিকে মান্য করে থাকেন। বনবিবির পাশাপাশি সমান মর্যাদায় সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ মুসলিম পৌরাণিক পীর গাজী-কালুকে মান্য করে থাকেন। তাই সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ যে কোনো ধরনের মন্দির স্থাপনের সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যান্য দেব-দেবীর পাশাপাশি বনবিবি এবং গাজী-কালুর মূর্তি স্থাপন করে থাকেন। দুবলার চরে রাসমেলার মন্দির স্থাপনের শুরু থেকেই বনবিবি এবং গাজী-কালুর মূর্তি স্থাপনের সমান্তরালে রাধা-কৃষ্ণ ও অন্যান্য দেব-দেবীর মূর্তি স্থাপন করা হয়। এই মন্দিরে হিন্দু-মুসলিম সব সম্প্রদায়ের মানুষ সমান আবেগে ভক্তি নিবেদন করে থাকেন।’
রাসমেলা ২০২৪ উদযাপন কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ভিত্তিতে ভাবনগর ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক দল ১৫ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত রাসমেলা প্রাঙ্গণ পরিচ্ছন্ন করে। এ ক্ষেত্রে মেলা প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব ধরনের পলিথিন প্যাকেট, কোকা-কোলা ও পানির প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা এবং অন্যান্য বর্জ্য অপসারণ করা হয়।
১৫ নভেম্বর দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও ফরিদপুর জেলা থেকে আসা মতুয়া ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্ত-অনুসারী গ্রামবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। এই মতবিনিময়ের মাধ্যমে রাসমেলা ২০২৪-এ অংশগ্রহণের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে নানা ধরনের তথ্য আহরিত হয়। একই সঙ্গে রাসমেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণ সম্পর্কে যেমন নিশ্চিত হওয়া যায়, তেমনি রাসমেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ঐতিহ্য রক্ষায় তাদের নিবেদনের কথা জানা যায়।
রাসমেলা ২০২৪ উদযাপন কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের অনুমতির ভিত্তিতে ভাবনগর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১৫ নভেম্বর বিকেল ৪টায় রাসমেলার প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত পুথি পাঠের পুনর্জাগরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, দুবলার চর রাসমেলায় অতীতে পুথি পাঠের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি প্রচলিত ছিল। কিন্তু প্রায় ২০-২৫ বছর রাসমেলায় কাউকে পুথি পাঠ করতে দেখা যায়নি। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভাবনগর ফাউন্ডেশন রাসমেলার প্রধান মন্দিরের সামনে পুথি পাঠের আসর আয়োজন করে। এই আয়োজনে গোপালগঞ্জের বিখ্যাত পুথিপাঠক নির্মলেন্দু দাস পুথি পাঠ করেন। তিনি স্বরূপেন্দু সরকার রচিত ‘পাগল হরিভজন’ শীর্ষক পুথির নির্বাচিত অংশ পাঠ করে শোনান। এই পুথি পাঠের ঐতিহ্যের সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে রাসমেলায় আসা শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে যুবক-যুবতী এবং বয়স্ক নর-নারী সম্পৃক্ত হন। পুথি পাঠের ভক্তিরসের স্থানগুলোতে অংশগ্রহণকারী নারী ভক্তরা উলুধ্বনি দেন। কেউবা শঙ্খ বাজান। এই সময় কারও কারও চোখ থেকে প্রেম-ভক্তির অশ্রু ঝরে পড়ে। পুথি পাঠ শেষে বিকেল ৫টায় মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে মেলার মাঠে বাগেরহাট থেকে আসা ‘গুরুগৃহ মতুয়া মন্দির ও মতুয়া ভক্তবৃন্দ’ কর্তৃক ইউনেস্কো, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও ভাবনগর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে উদযাপিত সূক্ষ্ম সনাতন মতুয়া সম্প্রদায়ের শুভ রাসমেলা ২০২৪ উপলক্ষে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। এতে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোর প্রভৃতি জেলা থেকে আসা মতুয়া, হিন্দু, মুসলিম প্রভৃতি সম্প্রদায়ের শতাধিক ভক্ত অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী নর-নারী ভক্তের শিঙা, শঙ্খ, কাঁসি, ঢোল, একতারা, দোতারা, করতাল বাদনে এবং ‘জয় হরি বোল’ ধ্বনিতে পুরো মেলার মাঠ মুখরিত হয়ে ওঠে। শোভাযাত্রায় সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অংশগ্রহণ করেন বন বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তা এবং টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। ১৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বাংলাদেশের মতুয়া সম্প্রদায়ের নর-নারীর অংশগ্রহণে যথাক্রমে একটি কর্মশালা এবং গ্রামসভা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় ইউনেস্কো কনভেনশন ২০০৩ ফর দ্য শেফগার্ডিং অব ইন্টেনজিবল কালচারাল হেরিটেজের আলোকে রাসমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির তথ্য সংগ্রহ ও ইনভেন্টরিকরণের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অন্যদিকে গ্রামসভায় অংশগ্রহণকারীরা রাসমেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে কীভাবে ঐতিহ্য সংরক্ষিত হয়, সে সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করেন। সেই সঙ্গে তারা রাসমেলা প্রাঙ্গণে নারীদের অবস্থান এবং পুণ্যস্নান-পরবর্তীকালে পোশাক পরিবর্তনের জন্য স্থায়ী ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দুবলার চর রাসমেলার সঙ্গে ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির সম্পর্ক রয়েছে। যেমন– রাসপূজার সময় মন্দির প্রাঙ্গণে ঐতিহ্যগত বাদ্যযন্ত্র শঙ্খ, শিঙা, কাঁসি, করতাল, মৃদঙ্গ, ঢোল বাজানো হয়। একই সঙ্গে পূজার মন্ত্র, শ্লোক, নাম সংকীর্তন, নৃত্য, আরতি প্রভৃতি ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি চর্চিত হতে দেখা যায়। এ ছাড়া কৃত্যাচার হিসেবে মোমবাতি, আগরবাতি প্রজ্বালন করে মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত দেবদেবীর প্রতি ভক্তি নিবেদন করা হয়। প্রসাদ হিসেবে অনেক ভক্ত ফল, মিষ্টান্ন প্রভৃতি মন্দিরে সমর্পণ করেন। অনেক ভক্ত মন্দিরে ভক্তি নিবেদনের পর মন্দির থেকেও প্রসাদ গ্রহণ করেন। এমনকি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ভক্তরা মন্দিরে পশু-পাখি সমর্পণের মাধ্যমে মানত শোধ করেন।
১৬ নভেম্বর ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দুবলার চর সমুদ্রসৈকতে রাস উৎসব উপলক্ষে পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়। ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা জেলার হিন্দু ও মতুয়া সম্প্রদায়ের ভক্তরা সমুদ্রকূলে ফল, মিষ্টান্ন, ফুল প্রভৃতি প্রসাদ নিয়ে বসে আগরবাতি ও মোমবাতি জ্বালিয়ে সমুদ্রকে মা-গঙ্গা কল্পনা করে ভক্তি নিবেদন করেন। ভক্তি নিবেদন শেষে সমুদ্রজলে নেমে স্নান শেষে সূর্য প্রণামের মাধ্যমে পুণ্যস্নান সম্পন্ন করেন। এ সময় একদল জাপানি পর্যটককে পুণ্যস্নান প্রত্যক্ষ করতে দেখা যায়। তারা মূলত পুণ্যস্নানের ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করেছিলেন।
রাসমেলা ও পুণ্যস্নানের প্রতিটি স্তরে প্রধানত সূক্ষ্ম সনাতন মতুয়া ও বিভিন্ন বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ প্রত্যক্ষ করা গেছে। তবে রাস উৎসব উদযাপন কমিটির নেতৃত্বে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এ ছাড়া রাসমেলার দর্শনার্থী হিসেবেও মুসলিম সম্প্রদায়ের বেশ কিছু লোকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণে খাবার ও কুটিরশিল্পের দোকান দিয়েও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ রাসমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার জানান দিয়েছেন। আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য, রাসমেলায় আসা অধিকাংশ নৌকা, ট্রলার, লঞ্চ, জাহাজ প্রভৃতির মাঝি, চালক ও বাবুর্চি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। এ ক্ষেত্রে দুবলার চর রাসমেলা ও পুণ্যস্নান প্রকৃত অর্থে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের একটি মিলনক্ষেত্র। v