সি–পুতিনের মধ্যে শত্রুতা বাঁধাতে গিয়ে উল্টো বিপদে ট্রাম্প!
Published: 26th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যখন আলোচনা শুরু করেছেন, তখন তিনি আবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গেও একটি বৈঠকের আয়োজন চলছে।
আমেরিকার কৌশল হচ্ছে পুতিন ও সিয়ের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করা, যাতে এই দুই নেতা একে অন্যের প্রতিপক্ষ হয়ে যান। এই কৌশলের লক্ষ্য হচ্ছে রাশিয়াকে চীনের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের দাবির কাছে বেইজিংকে নতি স্বীকার করানো।
মার্কিন এই কৌশল সফল হবে কি না, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে এরই মধ্যে এটি রাশিয়ার পূর্ব ও পশ্চিম দিকের মার্কিন মিত্রদের একটা ধাক্কা দিতে শুরু করেছে।
কোনো কোনো মার্কিন মিত্র আরও জোরালো মৈত্রীর আওয়াজ তুলছেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যাতে আরও দৃঢ় অবস্থান নেয়, সেই দাবি তারা জানিয়েছে। কোনো মিত্র আবার যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই জোটগুলো পুনর্গঠনের কথা বলেছে।
একদা আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা আশা করতেন যে তারা বাণিজ্যের মাধ্যমে পুতিনকে সুপথে ফেরাতে পারবেন; কিন্তু এই নীতি ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়।
এখন অবশ্য মার্কিন নেতারা বিনা মূল্যে পুতিনের কাছে নতি স্বীকার করতে চাইছেন। এখানে প্রশ্নগুলো হলো—এরপর কী? কেন? কী ঘটতে চলেছে?
এই প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে আমাদের কিছুটা পেছনে ফিরে যেতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া—এই তিনের মধ্যে খেলাটা শুরু হয়েছিল ১৭ বছর আগে।
২০০৮ সালের ৪ আগস্ট বেইজিং অলিম্পিকের উদ্বোধনের সময় একবারে সামনের সারিতে চীনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে পাশে বসিয়েছিলেন। পুতিন পেছনের সারিতে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন। চীন বিশ্বকে নতুন জি-২ (গ্রুপ অব-২) দেখাতে চেয়েছিল; কিন্তু রাশিয়ার ছিল ভিন্ন পরিকল্পনা।
প্রায় একই সময়ে রাশিয়ার সেনারা জর্জিয়া আক্রমণ করেছিলেন এবং ওসেটিয়া অঞ্চল দখল করে নিয়েছিলেন। ১২ আগস্ট তড়িঘড়ি করে একটা যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল।
রাশিয়া জর্জিয়া আক্রমণ শুরু করলে পশ্চিমে প্রাথম দিকে একটা আলোড়ন উঠলেও শিগগিরই ইস্যুটি চাপা পড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বে এ ঘটনাকে ছোট আগ্রাসন কিংবা খুচরা পাপ বিবেচনায় উপেক্ষা করেছিল। জর্জিয়া থেকে ওসেটিয়া বিচ্ছিন্ন করতে রাশিয়ার মাত্র পাঁচ দিন সময় লেগেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টত রাশিয়ার প্রতি এর পদক্ষেপে মিত্রদের প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটিকে খাটো করে দেখেছে। এই পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের মধ্যে রাশিয়া অথবা চীন যে ফাটল তৈরি করতে পারে সেটাও ট্রাম্প প্রশাসন বিবেচনায় নেয়নি।২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলে নিতে একটু বেশি সময় লেগেছিল। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সেনাবাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে ক্রিমিয়ায় প্রবেশ করে এবং দ্রুততার সঙ্গে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ১৮ মার্চ একটি গণভোটের মাধ্যমে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশীভূত করা হয়।
এবারেও যুক্তরাষ্ট্র প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই রাশিয়া যা করার তা করে নেয়। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের এবং সম্ভবত পুতিনেরও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল।
২০১০ সাল থেকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের। ওবামা তার ‘পাইভট টু এশিয়া’ (এশিয়ায় নোঙর গাড়া) নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চীনকে চেপে ধরতে রাশিয়ায় খুঁটি গাড়তে চেয়েছিলেন। রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিজেদের দাম বাড়াতে আগ্রহী ছিল।
এটিই সম্ভবত সিরিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিল। পুতিন দামেস্কে আসাদ সরকারকে সহায়তা দিতে শুরু করেছিল। রাশিয়া এ সময় ইরানকেও পৃষ্ঠপোষকতা দিতে শুরু করেছিল। ইরান তারও আগে দামেস্কে আসাদ সরকারের পক্ষে স্থানীয় দায়েশ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সেনা ও গোলাবারুদ পাঠিয়েছিল।
২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সিরিয়ায় বোমারু বিমান পাঠিয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করে রাশিয়া। আসাদবিরোধী বাহিনীর দখলে থাকা শহরগুলোতে ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করেছিল। গত বছর তুরস্ক–সমর্থিত যোদ্ধারা আসাদের বাহিনীকে পরাজিত করার আগ পর্যন্ত দামেস্কে রাশিয়ার শক্তিশালী অবস্থান ছিল।
এই ১০-১৭ বছরের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাবে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখতে পাইনি। একমাত্র উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আমরা দেখেছি ২০২২ সালে। সে সময় ইউক্রেনকে রাশিয়ার অঙ্গীভূত করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
ব্যাপক মাত্রার প্রোপাগান্ডার বিপরীতে ইউক্রেনকে দেওয়া সহযোগিতার পরিমাণ ছিল সীমিত। ইউক্রেনে পশ্চিমারা অস্ত্র দিয়েছে রয়েসয়ে। বৃহত্তর রাজনৈতিক বিবেচনায় এখানে কাজ করেছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, ২০২৩ সাল থেকেই সবার কাছে পরিষ্কার ছিল রাশিয়া তাদের সেনাবাহিনী পুনর্গঠন করছে; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ সেদিকে নজর দেয়নি।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর ২০২৫ সালে এসে ইউরোপ তাদের সামরিক শিল্পকে বাড়ানোর কথা গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করছে। এখন রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত চুক্তির পর ইউরোপের অনেক দেশ তাদের আগের সতর্ক অবস্থান থেকে সরে আসতে চাইতে পারে। দেশগুলো ইউক্রেনকে রাশিয়ার গভীরে হামলা করার জন্য উৎসাহিত করতে পারে।
অন্য কথায় ১০ বছর আগের চেয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া কিছু প্রণোদনাও পাচ্ছে। ১০ বছর আগে দেশ দুটি একটি চুক্তিতে পৌঁছতে পারেনি। কিন্তু এখন কেন তাদের মধ্যে চুক্তি দরকার, সেটি পরিষ্কার নয়।
একই সময়ে চীন যে বড় কোনো ছাড় দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা করেনি সেই ইঙ্গিত দেশটির নেতারা দিয়েছেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ২৩ মার্চ ঘোষণা করেন যে বাইরে থেকে যে বড় ধাক্কা আসছে, তা মোকাবিলার জন্য তৈরি চীন। বাইরে থেকে বিনিয়োগকারীরা যাতে আসে তার জন্য আরও উদার হচ্ছে চীন।
সম্ভবত তিনি এই ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন যে ট্রাম্পের সঙ্গে সি চিন পিংয়ের শীর্ষ বৈঠকে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। সি চিন পিং যুক্তরাষ্ট্রের দাবিগুলোর সঙ্গে বিরোধিতা করবেন।
যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টত রাশিয়ার প্রতি এর পদক্ষেপে মিত্রদের প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটিকে খাটো করে দেখেছে। এই পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের মধ্যে রাশিয়া অথবা চীন যে ফাটল তৈরি করতে পারে সেটাও ট্রাম্প প্রশাসন বিবেচনায় নেয়নি।
আমেরিকার সামনে এখন ভিন্নভাবে ভাবার সময় এসেছে।
ফ্রান্সেসকো সিসি, ইতালির লেখক ও কলাম লেখক
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন পদক ষ প কর ছ ল অবস থ ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় বিএনপি ও শ্রমিক লীগ নেতার বিরুদ্ধে স্কুলের জমি দখলের অভি
ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ফতুল্লা আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম হুমায়ুন কবির ও বিএনপি নেতা নাসিম আবেদীনের বিরুদ্ধে।
একদিকে বিদ্যালয়ের জমি দখলের খবরে মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও জাফর সাদিক চৌধুরী।
জমি দখলের খবরে ছুটে আসেন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও ফতুল্লার বিভিন্ন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। এসময় জাফর সাদিক জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের ডেকে বিদ্যালয়ের জমি ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে সদর ইউএনও জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, আমি জমি দখলদার ডেকে তিনদিনের মধ্যে জমির দখল মুক্ত করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।