পাবনায় ‘অভিভাবকহীন’ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরটি জিইয়ে রেখেছেন কেসমত আলী
Published: 26th, March 2025 GMT
জনমানবের দেখা নেই। ময়লা–আবর্জনায় চারপাশ ঠাসা। ফোয়ারার জন্য তৈরি কৃত্রিম জলাশয়ে শেওলা জমেছে। কক্ষগুলো সব তালাবদ্ধ। ভেতরেও স্তূপ করে রাখা হয়েছে বইসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। আসবাবগুলো প্যাকেটবন্দী।
পাবনা জেলা সদরের দাপুনিয়া ইউনিয়নের মাধপুরে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর এভাবেই অনাদর–অবহেলায় পড়ে আছে। কেসমত আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে এটির দেখভাল করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় ২০২০ সালে জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। তবে গত পাঁচ বছরেও হস্তান্তর না করায় জাদুঘরটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।
নিজ উদ্যোগে কমপ্লেক্সের দেখাশোনা করেন পাশের বাসিন্দা কিসমত আলী। গতকাল পাবনা সদরের মাধপুরে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বালু লুটপাটে ঝুঁকিতে সেতু
বহু দেনদরবার, আন্দোলন, মানববন্ধন করতে হয়েছিল বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বাঙ্গালী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য। সেই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে খুলে দেওয়া হয় আড়িয়াঘাট ও মধুপুরের মধ্যে সংযোগকারী সেতুটি। এতে যোগাযোগ হয় সহজ। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন আশপাশের ৩৫ গ্রামের মানুষ। তাদের সেই স্বস্তি হাওয়া হয়ে গেছে স্থানীয় একটি বালুদস্যু চক্রের কারণে। প্রভাবশালী এ চক্রটি সেতুর কাছ থেকে লুটে নিচ্ছে বালু। ভয়ে প্রতিবাদেরও সাহস পাচ্ছেন না এলাকার লোকজন।
এলাকাবাসী জানায়, বছরের পর বছর আশপাশের ৩৫ গ্রামের মানুষকে বাঙ্গালী নদী পারাপার করতে নৌকা ব্যবহার করতে হতো। তাদের নানা আন্দোলনের পর ২০২০ সালে আড়িয়াঘাট এলাকায় সেতু নির্মাণের জন্য ৫১ কোটি ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় ৩৬ মিটার চওড়া ও ২৯৮ দশমিক ৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণকাজ। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মঈন লিমিটেড অ্যান্ড ডন এন্টারপ্রাইজ ২০২৩ সালের আগস্টে কাজ শেষ করে। ওই বছরের ১৯ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় সেতুটি।
সেতু উদ্বোধনের বছরখানেক পরই বাঙ্গালী নদীতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু তোলা শুরু করে একটি চক্র। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনহাদুজ্জামান লিটনের অনুসারী। ওই ব্যক্তিরা বালুর পাশাপাশি মাটিও কেটে নিয়ে যায়। ৫ আগস্টের পর তারা পালিয়ে গেলে ওই ব্যবসা দখলে নেন বিএনপি সমর্থক কিছু লোক। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রশাসন আগেও নীরব ছিল, এখনও মুখে কুলুপ এঁটেছে।
সূত্র জানায়, সেতুটির পূর্ব পাশে মধুপুর, পশ্চিম পাশে আড়িয়াঘাট। দিনে অন্তত ৫০টি ট্রাক-ট্রলিতে করে বালু নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে তৈরি আরও অন্তত ৩০০ যানবাহনও এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য, বাঙ্গালী নদীটি শুকনো মৌসুমে নিরীহ মনে হলেও বর্ষা মৌসুমে খরস্রোতা হয়ে ওঠে। এভাবে মাটি-বালু লুটের কারণে আসন্ন বর্ষায় তীরের ঘরবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে।
মধুপুরের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তাঁর ভাষ্য, ওই সেতু নির্মাণের জন্য আশপাশের এলাকার মানুষ অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কত দলের নেতার কাছে ধর্না দিয়েছেন। অবশেষে সেতুটি নির্মিত হলেও বালু দস্যুদের কারণে এটি রক্ষা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আগে বালু তুলেছে আওয়ামী লীগের লোকেরা, এখন তুলছে বিএনপির লোকেরা। তাদের বিষয়ে প্রশাসন নিশ্চুপ।
বালু-মাটি লুটের বিষয়ে কথা হয় আড়িয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম ও চকনন্দন এলাকার শাহীন আলমের সঙ্গে। এই দুই বিএনপি কর্মীরই মাটি-বালুর ব্যবসা। তারা বাঙ্গালী নদী থেকে বালু-মাটি তোলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘শুধু আমরা নই, বালু তোলায় আরও কয়েকজন জড়িত আছে।’
মধুপুর এলাকার বালু ব্যবসায়ী আব্দুল মোমিনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। তিনিও বিএনপি সমর্থক। আব্দুল মোমিনের দাবি, ‘ব্রিজের নিচ থেকে বালু তোলায় প্রায় ২১ জন ব্যক্তি জড়িত।’ তারা প্রতি ট্রলি বালু দুই হাজার থেকে ২৫০০ টাকায়, প্রতি ট্রাক বালু চার হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
ঝুঁকিতে তীর সংরক্ষণ বাঁধ
বাঙ্গালী নদীর ভাঙন থেকে তীর রক্ষায় ২০২০ সালে ডান তীরে (আড়িয়াঘাটের পাশে) পাঁচ দশমিক ২২ কিলোমিটার সংরক্ষণ কাজ করা হয়। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খরচ হয় ১৪৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এতে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায় উপজেলার নামাজখালী, রানীরপাড়া, রংরারপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, হলিদাবগা, পোড়াপাইকর এলাকা। সাম্প্রতিক সময়ে বালু উত্তোলনের কারণে এসব এলাকার বাড়িঘর, আবাদি জমি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
বালু উত্তোলনের বিষয়ে কথা হয় সোনাতলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক লিপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিএনপির কারা বালু তুলছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। তথ্য সংগ্রহের পর দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানাবেন।
সোনাতলার ইউএনও স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, আড়িয়াঘাট এলাকায় সেতুর নিচ থেকে বালু তোলার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। শিগগির সেখানে অভিযান চালাবেন।
এই সেতুর নিচ থেকে বালু-মাটি তোলা হলে তা ধসে পড়তে পারে বলে জানান বগুড়া সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহম্মেদ। তিনি বলেন, সেতুটি রক্ষা করতে হলে অবশ্যই বালু তোলা ও মাটি কাটা বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন।