এস আলম দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
Published: 26th, March 2025 GMT
এক হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে আলাদা মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান মামলা দুটি করেন। পরে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দুটি করা হয়েছে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ২৪ আগস্ট ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের অবৈধ সম্পদের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
মামলায় সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে ভোগদখল করে আসছেন তিনি। এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান একজন পাবলিক সার্ভেন্ট। আয়কর নথি অনুযায়ী করবর্ষ ২০১০-১২ এর রিটার্ন দাখিলের আগ পর্যন্ত তাঁর আগের সঞ্চয় ছিল ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার ৭ টাকা।
২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত অতীত সঞ্চয়সহ সাইফুল ইসলামের গ্রহণযোগ্য আয় ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৫ টাকা। এ সময় তাঁর মোট ব্যয় ৯৭ কোটি ৩২ লাখ ৭ হাজার ৯৪০ টাকা।
অনুসন্ধানে দুদক দেখতে পেয়েছে, সাইফুল আলম ৯৫৫ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্যয়সহ তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ১ হাজার ৩৯৯ টাকা। গ্রহণযোগ্য আয় বাদ দিলে তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা।
অন্যদিকে, সাইফুল আলমের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ, তিনি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ফারজানার স্থাবর-অস্থাবর, ব্যয়সহ মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৫৯ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৩ টাকা। তাঁর অতীত সঞ্চয়সহ গ্রহণযোগ্য আয় ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। বাকি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার সম্পদের বৈধ কোনো উৎস নেই, যা তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর নামে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্পদ রয়েছে। সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আয়কর নথিতে তা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এ সম্পদকে পাচার বলছে দুদক। বিদেশে সম্পদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার ওপর নির্ভর করে মামলার তদন্তে তা যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বটগাছ প্রতীক ফেরত চায় খেলাফত আন্দোলনের কাশেমী অংশ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বটগাছ প্রতীক ফেরত পেতে নির্বাচন কমিশনে দরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের এক অংশের সভাপতি আবু জাফর কাশেমী।
আদালতের রায় তারা পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। তারা হেরে গেছে। এখন বটগাছ প্রতীক আমাদের প্রাপ্য। আমরা এটা নির্বাচন কমিশনকে জানানোর জন্য দরখাস্ত করেছি।”
রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসিরউদ্দিনসহ আরেক কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য দেন তিনি।
“আমরা চাই, আগামী নির্বাচনে যেন আমরা বটগাছ প্রতীকে নির্বাচন করতে পারি,” প্রত্যাশা করছেন আবু জাফর কাশেমী।
তিনি বলেন, “আমাদের খেলাফত আন্দোলনের যে আরেক অংশ রয়েছে, তারা বিগত দিনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতীকটা ব্যবহার করেছে। আমরা আগে নির্বাচন করি নাই। এখন যেহেতু আমরা নির্বাচন করব, সেহেতু প্রতীকটা আমরা চাচ্ছি; আমাদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য।”
খেলাফত আন্দোলনের আরেক অংশের প্রধান আতাউল্লাহ হাফেজ্জী ‘বটগাছ’ প্রতীকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন।
আবু জাফর কাশেমী বলেন, “আমরা আজকে এসেছি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় করতে। নির্বাচন কখন হবে, কীভাবে হবে, এটা নিয়ে বিতর্ক চলছে। নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, আগে সংস্কার হতে হবে। প্রত্যেক জায়গায় স্বৈরাচারী সরকারের কর্মকর্তারা রয়েছেন, পতিত দলের সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন। সংস্কার ছাড়া গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। এবং নির্বাচন যেন একটি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সময়ের মধ্যে হয়।”
দ্বিতীয় এজেন্ডা কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আগে জাতীয় নির্বাচন হবে নাকি স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হবে; যদি আগে জাতীয় নির্বাচন হয়, যে দল ক্ষমতায় আসবে, মেয়র থেকে মেম্বর পদ পর্যন্ত তাদের দলীয় লোক ছাড়া অন্য কারো নির্বাচন করার সুযোগ নেই। সেজন্য আমরা চাচ্ছি, আগে স্থানীয সরকারের নির্বাচন হবে, পরে জাতীয় নির্বাচন হবে।”
“তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এবং যোগ্য লোক দেশের সেবা করার সুযোগ পাবে,” মনে করছেন আবু জাফর কাশেমী।
খেলাফত আন্দোলন বৈষম্যের শিকার বলে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “আমরা বিগত সরকারের নির্বাচন বয়কট করেছি। বয়কট করার কারণে আমরা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমি চার মাস জেল খেটেছি। আমাদের মহাসচিব ৩২ মাস জেল খেটেছেন। আমাদের নেতাকর্মীরা সারা দেশে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।”
তারা বিদেশেও সফর করেছিলাম জানিয়ে আবু জাফর কাশেমী বলেন, “চায়না আমাদের পাঁচটি দলের সঙ্গে দাওয়াত দিয়েছিল। সেখানে আমাদের আলোচনা হয়েছিল। আমরা চাই, ইসলামী দলগুলো যেন একটি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারে ঐক্যবদ্ধভাবে। আলোচনা হইতেছে। বিভিন্ন দলের সঙ্গে আমরা বারবার বসতেছি। একটি নির্বাচনি এলাকায় আমাদের একটি প্রতীক থাকবে। যার যেখানে গ্রহণযোগ্যতা আছে, যেন সে পাস করে আসতে পারে।”
অভিন্ন প্রতীকে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে যে কোনো আসনে একক প্রার্থী দিয়ে তাকে পাস করিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা অনেক দূর আগাইছি। সবাই চায়, আমরা যেন ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করি। যার যে মত, সে অবস্থায় থাকবে কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা সবাই একমত।”
‘‘আমরা এখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি দেশ গঠনে’’ এমন দাবি করে আবু জাফর কাশেমী বলেন, “যেহেতু পতিত স্বৈরাচার দেশ থেকে পালিয়ে গেছে, সেহেতু এখন সময় এসেছে, দেশটাকে নতুন করে গড়ার। সেজন্য আমাদের যত দ্বন্দ্ব আছে, আমরা সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে দেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ইনশাআল্লাহ, সমস্ত ইসলামী দল আমরা একসঙ্গে হব, এটাই আমাদের প্রচেষ্টা। আমরা অনেক দূর এগেয়েছি। আমাদের মিল হয়ে গেছে। এখন শুধু ঘোষণাটা বাকি।”
ঢাকা/হাসান/রাসেল