শিবালয়ে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার
Published: 26th, March 2025 GMT
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ মামলায় হৃদয় হোসেন (২৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার আরুয়া ইউনিয়নের নিজ বাড়ি থেকে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার হৃদয় আরুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালজানা এলাকার আজিজ খানের ছেলে। তিনি পেশায় অটোবাইক চালক।
নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্রীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে তাঁকে জাতীয় মানসিক হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার সময় হৃদয় রাস্তাঘাটে ওই স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতেন ও কুপ্রস্তাব দিতেন। ১৩ মার্চ রাতে ওই স্কুলছাত্রী ঘরের বাহিরে টয়লেটে যায়। এ সময় হৃদয় স্কুলছাত্রীকে চেতনানাশক ওষুধ ছিটিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যান। এর পর সাভারের নবীনগর এলাকার একটি ভাড়াবাসায় স্কুলছাত্রীকে আটকে রাখেন এবং টানা ছয়দিন তাকে ধর্ষণ করেন। পর্যাপ্ত খাবারের অভাব ও ধর্ষণের ফলে এক পর্যায়ে স্কুলছাত্রীর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। ১৯ মার্চে গোপনে সংকটাপন্ন অবস্থায় ওই স্কুলছাত্রীকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে চলে আসেন হৃদয়।
স্কুলছাত্রীর ভাই জানান, হৃদয় তাঁর বোনকে বাড়িতে দিয়ে যাওয়ার পর প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরপর শিবালয় থেকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু সদর হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসক তাকে জাতীয় মানসিক হাসপাতালে রেফার করেন। এ ঘটনায় শিবালয় থানা পুলিশকে জানানো হলে তারা আদালতে মামলা করতে পরামর্শ দেন। পরে ২৩ মার্চ মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে মিস পিটিশন মামলা করা হয়।
এ বিষয়ে শিবালয় থানার ওসি কামাল হোসেন জানান, আদালতে মামলার পর আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়েছে দারিদ্র্যের হার কমেছে খাদ্য নিরাপত্তা
দেশে দারিদ্র্যের হার এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আগের চেয়ে বেড়েছে। গত বছর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) পরিচালিত এক ধারণা জরিপ বা পারসেপশন সার্ভেতে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার বিআইডিএসের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বিআইডিএসের ধারণা জরিপে এ হার হয়েছে ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ। যদিও বিবিএসের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ দেশব্যাপী অনেক বড় নমুনার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। আর বিআইডিএস পাঁচটি জেলার ওপর ধারণা জরিপ করেছে। বিআইডিএস বলেছে, তাদের জরিপটি খানা আয় ও ব্যয় জরিপের সঙ্গে তুলনা করার জন্য নয়। তবে ধারণা জরিপে এটি ফুটে উঠেছে যে, দুই বছর আগের চেয়ে দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সহায়তায় জরিপটি পরিচালিত হয়। ঢাকা, বান্দরবান, খুলনা, রংপুর ও সিলেট জেলা জরিপের জন্য নির্ধারণ করা হয়। মোট ৩ হাজার ১৫০টি খানা বা পরিবারের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে শহরের খানা ১ হাজার ৯৯০টি এবং গ্রামীণ খানা ১ হাজার ১১৬টি। সবচেয়ে বেশি ৭৫০টি খানা ঢাকার।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডব্লিউএফপির অফিসার ইনচার্জ সিসেমানি পারসেসমেন্ট। জরিপের ফল তুলে ধরেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনূস। বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন এবং ড. মোহাম্মদ ইউনূস যৌথভাবে জরিপ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। ড. মোহাম্মদ ইউনূস বলেন, বর্তমানে মানুষের অবস্থা যে আরও খারাপ হয়েছে, তা জরিপে উঠে এসেছে এবং বাস্তবতার সঙ্গে যার মিল রয়েছে।
বিবিএসের জরিপে ২০২২ সালে গ্রামে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। বিআইডিএসের জরিপে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বিবিএসের জরিপে শহরে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বিআইডিএসের জরিপে এসেছে ২০ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
বিবিএসের জরিপে ঢাকা জেলায় ২০২২ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। বিআইডিএসের জরিপে ২০২৪ সালে যা বেড়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। খুলনা জেলায় দারিদ্র্যের হার ২০২২ সালে বিবিএসের জরিপে ছিল ১০ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৪ সালে বিআইডিএসের জরিপে যা দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০২২ সালে বিবিএসের জরিপে সিলেট শহরে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৬ শতাংশ। বিআইডিএসের ধারণা জরিপে যা ২০২৪ সালে হয়েছে ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। রংপুর জেলায় বিবিএসের ২০২২ সালের জরিপে দারিদ্র্যের হার ছিল ২১ শতাংশ। ২০২৪ সালে বিআইডিএসের জরিপে যা হয়েছে ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বান্দরবান জেলায় ২০২২ সালে বিবিএসের জরিপে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৫ শতাংশ। বিআইডিএসের জরিপে যা হয়েছে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে ২০২২ সালে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগত ৩৮ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে ড. এ কে এনামুল হক বলেন, বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে বিআইডিএসের জরিপটি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের নীতিনির্ধারণে এসব তথ্য ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন– রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া, দেশে বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রাজনৈতিক কারণ ইত্যাদি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিসেমানি পারসেসমেন্ট বলেন, এটি বিবিএসের সঙ্গে তুলনা না করলেও বর্তমান পরিস্থিতি বোঝাতে বেশ কাজে দেবে। এর ফলে সরকারের যে কোনো নীতিনির্ধারণ অনেক বেশি সঠিক হবে।
জানতে চাইলে এ ধারণা প্রতিবেদনের লেখক এবং বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনূস সমকালকে বলেন, তাদের জরিপটা খানা আয় ও ব্যয়ের মতো নয়। তারা পাঁচটি জেলায় একটি ধারণা জরিপ করেছেন। তাতে দেখা গেছে, সার্বিকভাবে দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মূলত ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দারিদ্র্য এবং বৈষম্য কতটা বাড়ল কিংবা কমলো, তা পর্যালোচনা করেছেন তারা। এতে দেখা গেছে, আগের তুলনায় ২০২৪ সালে দারিদ্র্যের হার বেশি। বিশেষ করে রাজধানীতে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। এ জন্য তিনি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ওপর চাপের অভিঘাতকে দায়ী করেন।