কৃষ্ণসাগরে সংঘাত বন্ধে সম্মত রাশিয়া-ইউক্রেন
Published: 26th, March 2025 GMT
কৃষ্ণসাগরে সংঘাত বন্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেন সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। সৌদি আরবে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত আসে। খবর সিএনএনর।
হোয়াইট হাউস দুটি পৃথক বিবৃতিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তির রূপরেখা দিয়েছে। দুটি বিবৃতিতেই বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দেশ কৃষ্ণসাগরে নিরাপদ নৌযান চলাচল নিশ্চিত, বল প্রয়োগ বন্ধ এবং সামরিক উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক জাহাজের ব্যবহার রোধ করতে সম্মত হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে সামরিক শক্তি ব্যবহার বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, চুক্তিটি এত বিস্তারিত নয় এবং এটি প্রথম পদক্ষেপ।
তবে মস্কো তাৎক্ষণিক এই বিবৃতির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এর আগে গত সোমবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সর্বশেষ বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানায় রাশিয়া। বৈঠক শেষে উভয় দেশের কর্মকর্তারা জানান, আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
তারা মনে করেন, আলোচনার ধারাবাহিকতায় ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ আলোচনায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। বৈঠকে রুশ মধ্যস্থতাকারীদের প্রধান গ্রিগোরি কারাসিন বলেন, বৈঠকে গভীর ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছাতে এখনও সময় লাগবে। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাব। জাতিসংঘসহ আরও দেশ এ আলোচনায় যুক্ত হবে।
এদিকে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে সৌদিতে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল গতকালও বৈঠক করেছে। তবে যুদ্ধবিরতির আলোচনা নিয়ে রাশিয়াকে বিশ্বাস করতে চাইছে না ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফের উপদেষ্টা সের্হি লেশচেঙ্কো দাবি করেছেন, নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার হাতে ভেটো ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মস্কো নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। ফলে শান্তি আলোচনা শেষমেশ অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। এর আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মস্কো শান্তি আলোচনায় জাতিসংঘকে যুক্ত করতে চায়। এর মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অব্যাহত রয়েছে।
ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়া ১৩৯টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে ও ইস্কান্দার-এম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে বহু অবকাঠামোর ক্ষতি ও ৮৮ জন আহত হয়েছে। শতাধিক ড্রোন ভূপাতিত করার দাবিও করেছে কিয়েভ। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মস্কো একদিকে নৃশংস হামলা অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে ফাঁপা বক্তব্য বাদ দিয়ে মস্কোকে অবশ্যই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে সোমবার রাতে রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণাধীন লুহানস্কে গোলাবর্ষণ করে ইউক্রেন। এই হামলায় তিন রুশ সাংবাদিকসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ হামলার কড়া সমালোচনা করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ সাংবাদিক হত্যার নিন্দা জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা নিয়ে ট্রাম্পের ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়া।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে এসি ল্যান্ডের পোস্ট, তোপের মুখে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে পোস্ট দেওয়ার জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিরাজুম মুনীরা কায়ছানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে তাঁকে সরাইল থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাঁকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যোগদান করতে বলা হয়েছে। এর আগে ওই পোস্টকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন ওই কর্মকর্তা। এরপর পুলিশি প্রহরায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
গত বছরের ২০ অক্টোবর সরাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন সিরাজুম মুনীরা কায়ছান। আজ সকালে ফেসবুকে ‘এসি ল্যান্ড সরাইল’ নামের সরকারি আইডি থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মম গণহত্যা চালায়। সেদিন রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ স্বাধীন। এরপর শুরু আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়। কিন্তু এর ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ২৬ মার্চেই। তাই এই দিনটি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, সংগ্রামের চেতনা এবং আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল।’
ওই পোস্ট দেওয়ার কিছুক্ষণ পর সকাল পৌনে আটটার দিকে তিনি সরাইলের অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে বিএনপির নেতাদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরে পুলিশি পাহারায় অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। মাঠ থেকে ফিরে তিনি আগের পোস্টটি মুছে দিয়ে নতুন আরেকটি পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘ফেসবুক আইডিটি সাময়িক সময়ের জন্য হ্যাকড হয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে পুনরুদ্ধার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিতর্কিত স্ক্রিনশট ছড়ানো হচ্ছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনভিপ্রেত।’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিছুল ইসলাম ঠাকুর প্রথম আলোকে বলেন, সহকারী কমিশনার দায়িত্বশীল পদে থেকে এমনটি করতে পারেন না। তিনি ফেসবুকে আপত্তিকর কথা লিখেছেন। তাঁরা তাঁর বিচার ও প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। শুনেছেন তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁরা ওই কর্মকর্তার বিচার চান।
জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার সিরাজুম মুনীরা কায়ছান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আইডিটা অনেক আগেই খোলা হয়েছে। এটি আজকে হ্যাকড হয়েছিল। আমার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি পোস্টটি ডিলিট করে দিয়েছি। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছি।’
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, তাঁকে (সহকারী কমিশনার) দুপুরে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যোগদান করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত তিনি কোনো লিখিত পাননি। তবে মুঠোফোনে বিষয়গুলো জেনেছেন।