‘যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে
স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি
এসো স্বদেশ ব্রতের মহা দীক্ষালোভী
সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণচুমি’
গানের এই চরণগুলো ভেসে আসছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে। এই গান শুনে মনে প্রশ্ন জাগে, মোহিনী চৌধুরীর কথাগুলো আজ কেন শহীদ মিনারে।
একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা যায়, মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়েছে। ২৫ মার্চ কালরাতের শহীদদের স্মরণে গান গাইছেন একদল শিল্পী। গানটি শেষ হতে না হতেই আবারও তাঁরা গেয়ে উঠলেন—
‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল’
সে সময় তাঁদের চেহারায় মোমবাতির আভা। সেই চেহারায় ফুটে উঠছে নানা দাবি। গোবিন্দ হালদারের গানের কথায় যেন সেই দাবিগুলোই তুলে ধরছিলেন—
‘আর দেরি নয় উড়াও নিশান
রক্তে বাজুক প্রলয় বিষাণ
বিদ্যুৎ গতি হউক অভিযান
ছিঁড়ে ফেলো সব শত্রু জাল, শত্রু জাল’
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘ভুলি নাই ভুলি নাই মৃত্যুমিছিল: জেনোসাইড একাত্তর দায়বদ্ধতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মোমবাতি প্রজ্বালন শেষে এভাবেই সব প্রজন্মের কাছে একাত্তরের গণহত্যার ইতিহাস তুলে ধরেন শিল্পীরা। স্মরণ করেছেন কালরাতের শহীদদের।
মোমবাতি প্রজ্বালন ও শহীদ স্মরণের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মোমবাতি প্রজ্বালনের আগে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে আজকের এই আয়োজন করেছি। একই সঙ্গে ২৫ মার্চ কালরাতের নির্মম গণহত্যা আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃতি লাভের দাবি জানাচ্ছি।’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রজন ম ম মব ত স মরণ
এছাড়াও পড়ুন:
গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে আইনের আওতায় আনতে হবে: রংপুরে জোনায়েদ সাকি
জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার দায়ে কেবল আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী নেতারা নন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তবে এখন পর্যন্ত তার কোনো উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
আজ রোববার সন্ধ্যায় রংপুরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর ও জেলা জনসংহতি আন্দোলন আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে জোনায়েদ সাকি এ কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সাত মাস পেরিয়ে গেছে। এখনো বিচারপ্রক্রিয়া দৃশ্যমান নয়। বিচারপ্রক্রিয়ার দৃশ্যমান মানুষ দেখতে চায়। আমরা পরিষ্কারভাবে দাবি তুলেছিলাম, কেবল আওয়ামী লীগ নেতারা নন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের এই হত্যাকাণ্ডের দায় কতটা, সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে। আমরা এখন পর্যন্ত তার উদ্যোগ দেখিনি। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই বিচার করতে হবে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করতে হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতারা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে সরাসরি হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই শেখ হাসিনাসহ যাঁরাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের রাজনীতিক সহযোগীরাসহ প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এটা বাংলাদেশের মানুষের দাবি।
দেশে নানা ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘আজ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীসহ অনেককেই নানাভাবে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ ধরনের অস্থিতিশীলতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। সেই কারণে আমরা সব রাজনীতির পক্ষ ও সব ব্যক্তিবর্গ অন্তর্বর্তী সরকারের আছে আহ্বান জানাই, যাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। অস্থিতিশীলতা কোনোভাবেই আমাদের মঙ্গল আনবে না।’ যারা অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে তাদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান তিনি।
অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছেন উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, মানুষ আশা করেছে জুলাই শহীদেরা জাতীয় বীরের মর্যাদা পাবেন। কিছু কিছু পদক্ষেপ আমরা দেখেছি। কিন্তু মানুষের যে কাঙ্ক্ষিত আশা, শহীদের মর্যাদা তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
গণসংহতি আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক আবদুর জব্বারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক তৌহিদুর রহমান, জেএসডির জেলা সভাপতি আমিন উদ্দিন, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের ন্যায়পাল রায়হান কবীর, ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ, গণ অধিকার পরিষদের রংপুর জেলা কমিটির সাবেক সদস্যসচিব আশিকুর রহমান প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাওসার জামান। সভা সঞ্চালনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় পরিষদ সদস্য প্রত্যয়ী মিজান।