Samakal:
2025-03-26@07:06:50 GMT

জেলে পরিবারে নেই ঈদের আমেজ

Published: 25th, March 2025 GMT

জেলে পরিবারে নেই ঈদের আমেজ

বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। গেল অমাবস্যার গোনে গভীর সাগরে মাছ ধরতে জাল ফেলে খালি হাতে উপকূলে ফিরেছেন দুবলার চরকেন্দ্রিক জেলেরা। মাছের অভাবে খাঁ খাঁ করছে সাগর পারের বিভিন্ন জেলেপল্লির শুঁটকির চাতালগুলো।
চলতি মৌসুমের মধ্যে জেলেদের মাছ ধরার বাকি সময় আছে আগামী পূর্ণিমার গোন। এই গোনে মাছ পাওয়া গেলেও পুরো মৌসুমের সংকট কীভাবে পূরণ করবেন, তা নিয়ে হা-হুতাশ করছেন মৎস্যজীবীরা। সাগরে মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে সামনের ঈদ উৎসব পালন করবেন কীভাবে আর দেনা পরিশোধ করবেন কীভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলেরা। তাদের পরিবারে নেই কোনো ঈদের আমেজ। 
সুন্দরবনের দুবলার চরের জেলে ও বন বিভাগের তথ্যমতে, দুবলার চর এলাকায় গত নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে ৫ মাসব্যাপী সাগরে শীতকালীন মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ মৌসুম। আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই মৌসুম। মৎস্য আহরণকালে জেলে ও মৎস্যজীবীরা নৌকা ও ট্রলারে করে সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণের পর তা সুন্দরবনের বিভিন্ন চরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকেন। এ সময় সুন্দরবন উপকূলের হাজারো জেলে ও মৎস্যজীবীরা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরিতে জড়ো হন। 
সাগর থেকে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি তৈরিকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের পুরো উপকূল এলাকায় জেলে ও মৎস্যজীবীরা বিভিন্ন কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন। কিন্তু এবারের মৌসুমের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। জেলে ও মৎস্যজীবীদের মনে শান্তি নেই। বিরাজ করছে হতাশা। মৌসুমের শুরু থেকেই সাগরে মাছ সংকটে বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। সর্বশেষ পূর্ণিমার গোনেও মাছের তেমন দেখা পাননি তারা। 
গেল গোনে সাগরের সুন্দরবন উপকূলে পশ্চিমা বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে জেলেরা ট্রলার ও জাল নিয়ে গভীর সাগরে যেতে পারেননি। কেউ কেউ প্রতিকূল বাতাস উপেক্ষা করে সাগরে গিয়ে জাল ফেললেও তেমন মাছ পাননি। ট্রলারের তেল খরচও ওঠেনি।
দুবলার চরের মোংলা রামপাল মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির শেখ জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি সাগরের মাছ ব্যবসায় জড়িত। বর্তমানের মতো মাছের সংকট কখনোই দেখেননি। তিনি বলেন, পশ্চিমা বাতাসের কারণে কোনো মাছ পড়ছে না। বাতাসের তীব্রতায় জেলেরা সাগরের গভীরে যেতে পারেনি। 
সাগরের অধিকাংশ জেলে ও মৎস্যজীবীর একই অবস্থা বলে দাবি করেছেন জাকির শেখ। তিনি বলেন, সামনে ঈদ। কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া পরিবার-পরিজনও তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এ অবস্থায় ঈদ উদযাপন দূরের কথা, লগ্নির টাকা লুভাবে পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাই নগরের কামাল হোসেন দুবলারচরের আলোর কোলের মৎস্যজীবী। তিনি জানান, তাঁর তিনটি ট্রলারে মৌসুমে প্রতি লাখে ২৫ হাজার টাকা করে দাদনে ৫০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে সাগরে এসেছেন। এবার মৌসুম শেষ হতে চললেও আয় করেছেন সব মিলিয়ে ২০ লাখ টাকার মতো। লাভ দূরের কথা, পুঁজির অর্ধেকও এখন পর্যন্ত তোলা যায়নি। এ অবস্থায় তিনি বাড়ি ফিরে কীভাবে তা পরিশোধ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
কথা হয় সাগরের মৎস্যজীবীদের সংগঠন দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, শক্তিশালী পশ্চিমা বাতাসের কারণে গেল গোনে সাগরে মাছ ধরা পড়েনি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সাগরে মাছের সংকট বেশি দেখা গেছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন চরের মাছ শুঁকানোর চাতাল ও মাচা খাঁ খাঁ করছে। এ অবস্থায় অনেক মৎস্যজীবীর বাড়িতে ফিরে কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করাও কষ্টকর হয়ে যাবে।
এবারের মৌসুমে সাগরে মাছের অপর্যাপ্ততার কথা স্বীকার করেছেন বন বিভাগের দুবলা জেলেপল্লি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার খলিলুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, প্রাকৃতিক কারণে সাগরে মাছ সংকট থাকায় বন বিভাগের এ মৌসুমে রাজস্ব আয়ে ঘাটতির শঙ্কা রয়েছে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র পর ব র অবস থ করব ন উপক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বন বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে হবে

এবার শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড সতর্ক হওয়ার জরুরি বার্তাই দিচ্ছে। কেননা গত ২৩ বছরে ২৬ বার আগুন লেগেছে বাংলাদেশের মহাপ্রাণ সুন্দরবনে। এসব অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি হয়েছে কয়েক শ একর বনভূমির। গত বছর মে মাসের অগ্নিকাণ্ডে প্রায় পাঁচ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি এলাকায় শনিবার সকালে আগুনের ধোঁয়া দেখে বন বিভাগকে খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুপুর থেকে বন বিভাগ, সিপিজি, ভিটিআরটি, টাইগার টিমের শত শত লোকজন কাজ শুরু করেন। বিকেলের মধ্যে ফায়ারলাইন কাটা শেষ করে বন বিভাগ। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম গেলেও পানির উৎস দূরে থাকায় আগুন নেভানোর কাজ শুরু হতে রাত ৯টা বেজে যায়। বনকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে রোববার সকালে পার্শ্ববর্তী আরেকটি এলাকায় আগুন দেখা যায়। 

অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটাও হয়তো জানা যাবে। কিন্তু এত আলোচনা, এত সতর্কবার্তার পরও সুন্দরবনে কেন বারবার এমন অগ্নিকাণ্ড? কেন প্রতিবারই আগুন লাগে লোকালয়-সংলগ্ন বনের পূর্বাংশে। অংশটি ভোলা নদীর তীরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে পড়েছে।

গত ২৩ বছরে সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডগুলোর অন্তত ১৫টির ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অসাবধানতাবশত বনজীবীদের ফেলে যাওয়া আগুনের’ বিষয়টি। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞরা বন বিভাগের এই ভাষ্যের সঙ্গে একমত নন। তাঁরা মনে করেন, বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার সুবিধার জন্য একটি চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন দিয়ে বনের সর্বনাশ করে চলেছে।

আমরা মনে করি, সুন্দরবনের একই অঞ্চলে বারবার আগুন লাগার পেছনে অতি মুনাফালোভী একটি চক্রের হাত রয়েছে। কেননা বনে কিছু জায়গায় আগুন দিয়ে শ্বাসমূল পরিষ্কার করতে পারলে বর্ষায় মাছ ধরা সুবিধা। ফলে এ ক্ষেত্রে বন বিভাগের যেমন সক্ষমতার ঘাটতি আছে, আবার উদাসীনতাও আছে।

ভূপ্রাকৃতিক কারণেই সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটার সুযোগ খুবই কম। মানবসৃষ্ট কারণ, বিশেষ করে অতি মুনাফালোভী চক্রের কারণে বনটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। সুন্দরবনের সুরক্ষায় সরকারকে অবশ্যই বন বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের হাতেও বনের আগুন নিয়ন্ত্রণে উন্নত প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা দেওয়া প্রয়োজন। সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে অবশ্যই বন বিভাগের সদস্যদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগুনে পুড়েছে সুন্দরবনের ২৫ নম্বর কম্পার্টমেন্টের প্রায় আট একর বনভূমি
  • সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড: তদন্তে পৃথক কমিটি গঠন
  • থেমে থেমে জ্বলছে সুন্দরবনের আগুন
  • সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, পুরোপুরি নেভাতে জোয়ারের পানির জন্য অপেক্ষা
  • সুন্দরবনের আগুন নেভাতে জোয়ারের অপেক্ষা
  • সুন্দরবনে তীব্রতা কমছে আগুনের, পানি সংকট
  • সুন্দরবনে জোভান-তটিনীর অ্যাডভেঞ্চার!
  • সুন্দরবনে আগুনের প্রকোপ কমছে, ভোগাচ্ছে পানির সংকট
  • বন বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে হবে