পৃথিবীতে যেসব দেশ সাম্রাজ্যবাদীর দখল থেকে লড়াই করে, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেসব দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস কতখানি মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ, সেটা যদি সে দেশের নাগরিক বিশেষ করে শিশু ও তরুণ প্রজন্ম অনুধাবন করতে না পারে, তার চেয়ে হতাশাজনক আর কিছু হতে পারে না। দেশকে এগিয়ে যেতে সঠিক ইতিহাস থাকা জরুরি।
দেশের নাগরিকদের মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় বা সম্প্রদায়গত যতই বিভেদ-বৈষম্য-মতবিরোধ থাকুক; অন্ততপক্ষে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ, নির্বিবাদ শ্রদ্ধাবোধ এবং মতৈক্য থাকতে হবে। এটিই শক্তিশালী জাতি গঠনের প্রধান শর্ত। যথার্থ দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে প্রজন্মের শিক্ষাস্তরভেদে পাঠ্যপুস্তকে স্থান দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে সামান্যতম ভুল-ভ্রান্তি, স্বজনপ্রীতি, ব্যক্তিবিদ্বেষ অথবা অবজ্ঞা সমগ্র জাতি এবং রাষ্ট্রকে বিতর্কিত ও কলুষিত করবে। এ কারণে জাতির ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস অত্যন্ত সতর্কতা ও গুরুত্বের সঙ্গে লেখার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বা স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে জনগণের মধ্যে নানা মত ও বিভেদ বিদ্যমান। যে কারণে স্বাধীনতার পর আমাদের স্বনির্ভর হতে বারবার বাধাগ্রস্ত হতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে; ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে সজ্ঞানে। সজ্ঞানে স্বাধীনতার সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর বাসভবনে এবং জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এমন হত্যাকাণ্ড বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ও কলঙ্কজনক। রাজনৈতিকভাবে এসব ঐতিহাসিক ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা হচ্ছে মনগড়া তথ্য দিয়ে। এমনকি তাদের অবদান অস্বীকার করার মতো ধৃষ্টতাও দেখানো হচ্ছে।
মানুষ মাত্রই ভুলভ্রান্তি থাকে। কর্ম ও নেতৃত্বে ভুল থাকতেই পারে। মানজজীবনে এটা যথাস্বীকৃত। তাই বলে হত্যা করতে হবে– এমন বিধান কোথাও নেই। বিশেষ করে স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াকু বীর বা রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করা কোনো আন্দোলনের মাধ্যমে বা বিনাবিচারে, তা কোনোভাবেই যথার্থ কাজ নয়। মহান স্বাধীনতার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় ঐক্য না থাকার কারণে প্রজন্ম বিপথগামী হয়; অদৃষ্টবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অর্ধশতকে স্বাধীন বাংলাদেশে তা-ই হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য লাগাতার সংগ্রাম, রক্তঢালা লড়াই, শ্রমসাধ্য নেতৃত্ব এবং শেষমেশ যুদ্ধক্ষেত্রে যাদের যতখানি অবদান তার ততখানি মূল্যায়ন নিয়ে আজও বিতর্ক চলমান। সেই সঙ্গে চলছে স্বজনপ্রীতি, দলীয় স্বার্থ, অবজ্ঞা-অবহেলা, প্রতারণা, যা সভ্য দেশে চিন্তাই করা যায় না।
একটি জাতির ইতিহাস, তার স্বাধীনতার ইতিহাস কোনোভাবেই অবজ্ঞা-অবহেলার বিষয় নয়। তার প্রমাণ পাওয়া যায় এশিয়ার একাধিক দেশে যেমন ভারত, জাপান, চীন, দুই কোরিয়া, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান প্রভৃতি। এসব দেশে ঐতিহাসিক ঘটনা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে নানাবিধ সমস্যা থাকার কারণে সত্যিকার ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়নি, বরং সজ্ঞানে ভুলভ্রান্তি সাজিয়ে ইতিহাস লিখিত হয়েছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে ভুল ইতিহাস শেখানো হচ্ছে। এমনকি একাধিক দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব দেশের অবদান রয়েছে অথবা দেশ গঠনে সার্বিক বিনিয়োগ ও সহযোগিতা রয়েছে, সেসব সজ্ঞানে অস্বীকার করা হয়েছে। ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভুলভ্রান্তি শিখে বড় হচ্ছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভক্তি ও সহমর্মিতা জলাঞ্জলি দিচ্ছে। এমনকি তারা জানতেই পারছে না, তার দেশের সত্যিকারের ইতিহাস কতখানি সঠিক, যৌক্তিক ও প্রামাণিক! সুতরাং এতে জাতিগত ঐক্যেই শুধু ফাটল নেই; আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও দুর্বল হয়ে থাকতে হয়। এখন রাষ্ট্রের সঠিক ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে সর্বাগ্রে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সর্বজনের স্বীকৃতি ও নিরঙ্কুশ ঐক্য স্থাপন জরুরি।
প্রবীর বিকাশ সরকার: শিশুসাহিত্যিক ও গবেষক
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র স ব ধ নত প রজন ম সব দ শ
এছাড়াও পড়ুন:
৪ ওভারে আর্চারের ৭৬ রান, এমনকিছু আগে দেখেনি আইপিএল
টি-টোয়েন্টিতে বোলারদের তুলোধুনা হওয়া তো আর নতুন কোনো গল্প নয়। আইপিএলের মতো টুর্নামেন্টে কে কোনো দিন ‘ধরা’ খেয়ে যান, কে বলতে পারে! সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে আজ যেমন খেলেন জফরা আর্চার। আইপিএলে রান বিলানোর রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন তিনি।
আজ রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ২০ ওভার ৬ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান করেছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ৪ ওভার বল করে কোনো উইকেট না পাওয়া আর্চার একাই দিয়েছেন ৭৬ রান।
এত দিন আইপিএলের ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ডটি ছিল মোহিত শর্মার। গুজরাট লায়নসের এই বোলার গত আসরেই ৪ ওভার ৭৩ রান দিয়েছিলেন, তাঁকে এবার ছাড়িয়ে গেছেন আর্চার। তালিকার তিন নম্বরে থাকা ঘটনাটা অবশ্য একটু পুরোনোই— ২০১৮ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ৭০ রান দিয়েছিলেন বিশাল থাম্পি।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আসেন আর্চার। ট্রাভিস হেড ও ঈশান কিষানের সামনে ওই ওভারেই ২৩ রান দেন তিনি। এরপর আবার ১১তম ওভারে বোলিংয়ে এসে তুলনামূলক ভালো করেন আর্চার, এই ওভারে দেন ১১ রান। এক ওভার পর এসে ২২ রান দেন তিনি। ১৮তম ওভারে নিজের কোটার শেষ ওভারে এসে তিনি হজম করেন ২৩ রান।
আর্চারকে এমন তুলোধুনা করার দিনেও অবশ্য দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়তে পারেনি হায়দরাবাদ। নিজেদেরই গড়া গত বছরের ২৮৭ রানের চেয়ে এবার এক রান পিছিয়ে ছিল তারা।