রমনা পার্কের বধ্যভূমি
দৈনিক বাংলা
৮ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২

ক্ষয়ে যাওয়া পোষাক দেখে কি
তাদের সনাক্ত করা যাবে?
। হাসিনা আশরাফ।

রমনা পার্কের উত্তর পূর্ব কোণটা কি পাক সামরিক চক্রের কোন বধ্যভূমি সমাধিস্থল? রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রমনা পার্কের উত্তর কোণটার যেদিকে ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট হাউসের সীমানা শুরু হয়েছে, তার থেকে কিছুটা ভেতরের দিকেই এটি অবস্থিত। পুরো জায়গাটাই প্রায় জুড়ে রয়েছে বেগুনী বর্ণের বোগেন ভিলা বা বাগান বিলাসের রঙিন কুঞ্জ।
এই ঝোপটির নীচে বড় বড় কয়েকটি গর্তে এবং পাশের উঁচু স্থানে ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে নরকংকালের অস্থি এবং মাথার খুলি। মাটির সাথে সমান হয়ে ছড়িয়ে আছে, হঠাৎ দেখলে বোঝা যায় না। জায়গাটা যে সত্যিকার কতখানি বিস্তৃত বার থেকে তা আজ বোঝার উপায় নেই। তবে এখানকার অনেকেই জানিয়েছে যে, পশুরা অসংখ্য মানুষকে ট্রাকে করে প্রেসিডেন্ট হাউসের মধ্যে নিয়ে হত্যা করার পর গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতো।
বৃষ্টির পানিতে গর্তগুলো যখন ভরে যায় তখন পানির সাথে সাথে কতকগুলো আধপচা লাশ এবং সঙ্গে অসংখ্য স্কুল, কলেজের বই ভেসে উঠতো। এসব লাশের মধ্যে কয়েকটি লাশের লম্বা চুল এবং দেহের গঠন দেখে মহিলা বলে চেনা গিয়েছিল। রমনা পার্কের নিভৃত এই প্রান্তে কোন হতভাগা ভাইবোনদের সমাধিস্থল যে রচিত হয়েছিল কংকালের অস্তি আর ভগ্ন খুলির মাঝে, আজ তা জানা যাবে না।
তবে প্রশ্ন জাগে মনে, এরা কি সেই হতভাগা পুলিশ ভাইদের কেউ, যারা অসহযোগ আন্দোলনের সময় দস্যু ইয়াহিয়াকে পাহারা দেবার জন্য প্রেসিডেন্ট হাউসে নিযুক্ত হয়েছিল? প্রশ্ন জাগে মনে, এরা কি সেই ছাত্র ভাইদের কেউ, যারা শুধু দেশপ্রেমের শপথ নিয়ে জীবন্ত আত্মার তাগিদে শূন্য হাতে রুখে দাঁড়িয়েছিল জল্লাদ পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে?

 

রংপুর জেলাটাই যেন বধ্যভূমি

তারিখ
দৈনিক বাংলা
১৯ জানুয়ারী, ১৯৭২

রংপুর জেলাটাই যেন বধ্যভূমি: শিক্ষক শ্রমিক ছাত্র কিষান-কিষানির অতলান্ত
সেই রক্তস্রোত
‘আবার গোলযোগ হলে আমাদের পালানোর জায়গা আছে। ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেবো, বেঁচে যাবো। ভাই, আপনারা যাবেন কোথায়? আপনাদের যে আর কোন পথ রইলো না।’ প্রিয় মুসলিম সহকর্মীদের জন্য অকৃত্রিম সমবেদনায় সহকারী অধ্যাপক রেজাউল হককে এই কথাগুলো বলেছিলেন বরিশাল জেলার অধিবাসী অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধিকারী। ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে। আইয়ুবের যোগ্যতর উত্তরসূরি রক্তপিপাসু নয়া সামরিক শাসক ইয়াহিয়ার সামরিক শাসন জারীকে কেন্দ্র করেই তাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল।
কিন্তু না। অধ্যাপক অধিকারী পালাতে পারেননি। বাঁচাতেও পারেননি তার প্রাণ। তার এই তাৎপর্যবহ মন্তব্যের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সৌভাগ্যক্রমে অধ্যাপক রেজাউল হক আজও বেঁচে আছেন। ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চ ইয়াহিয়ার জল্লাদ বাহিনীর আক্রমণ শুরুর পর অধ্যাপক অধিকারী পালিয়েছিলেন। গাইবান্ধা মহকুমার সুন্দরগঞ্জে গিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় অপর সহকর্মী অধ্যাপক আবুল কাশেমকে বলেছেন, টাকা-পয়সা নেওয়ার জন্য কেউ যদি মেরে ফেলে তাদের হাতে মরতেও রাজী আছি। কিন্তু বর্বর খানসেনাদের হাতে নয়। বেতন নেয়ার জন্য রংপুরে এসেছিলেন। কিন্তু বেতন নিয়ে আর ফিরে যেতে পারেননি।
১৯৭১ সালের ৩০শে এপ্রিল। রপুর কারমাইকেল কলেজের ২ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে দমদমার পুলের নীচে তার অপর তিন সহকর্মী রসায়নের লেকচারার কুমিল্লার শ্রী কালিচাঁদ রায় ও তার পিতা, দর্শনের লেকচারার বরিশালের শ্রী শুনেল বরণ চক্রবর্তী ও গণিতের লেকচারার বরিশালের শ্রী চিত্তরঞ্জন রায়ের সাথে খুনি পাক সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারান।
 বাড়ী গিয়েও রেহাই নেই
রংপুর কারমাইকেল কলেজের উর্দু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শাহ মোহাম্মদ সোলায়মান দিনাজপুরে তার গ্রামের বাড়ীতে গিয়েছিলেন। গ্রামের বাড়ী থেকেই সেনাবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তাঁর আর কোন খোঁজখবর পাওয়া যায়নি।
তিনি কাজে যোগ দিতে পারেননি
রসায়নের লেকচারার কুড়িগ্রাম মহকুমার নাগেশ্বরীর অধিবাসী জনাব আব্দুর রহমান মে মাসের শেষদিকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু তার কাজে যোগ দেওয়া আর হয়নি। তখন হয়ত এ দু’জন অধ্যাপককে হত্যা করেছে। খান সেনাদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত হয়েছেন রংপুর শহরের বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক নেতা জনাব ইয়াকুব মাহফুজ আলী।
 


মৃতের মিছিলে জীবন্ত

      -দৈনিক পূর্বদেশ, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২

মৃতের মিছিলে জীবন্ত সুরেস। আত্মরক্ষার জন্য আশ্রয় নিতে গিয়েও সবাই মৃত্যুর কোলে আত্মসমর্পণ করলেন; মৃত্যুকে ফাঁকি দিতে পারলেন না। কিন্তু শুধু বেঁচে রয়েছেন তিনি। বেঁচে রয়েছেন তিনি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের জীবন্ত সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে। পরিমল বললেন, সুরেসের কাঁধের মাংস উড়ে গেছে মেশিনগানের শক্তিশালী গুলিতে। অবিরাম ধারায় ঝরছিল; ক্ষতস্থানে গায়ের জোরে চেপে ধরেও তিনি রক্ত বন্ধ করতে পারছিলেন না। নিজের শরীরের উষ্ণ রক্তে তিনি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন।
নিজের গায়ের টকটকে তাজা রক্ত অবিরাম ধারায় ঝরছে তো ঝরছেই। কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না তার রক্তপাত, রক্তের বেগ কমছে না। ব্যাণ্ডেজ করা দরকার কিন্তু ব্যাণ্ডেজ করবেন কী দিয়ে? পরনের লুংগি আর গায়ের গেঞ্জি ছাড়া তো আর কিছুই নেই। লুংগি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে লুংগির ছেঁড়া টুকরো দিয়েই তিনি তৈরী করলেন ব্যান্ডেজ। ছাদের উপর সারিবদ্ধ তরুণদের মৃতদেহ। প্রহরীর মত তিনি জেগে আছেন একা। রক্তের স্রোত। হলের ছাদ লাল রক্তে ভেসে গেছে। চারিদিক নীরব নিঝুম। শুধু গোলাগুলির শব্দ ও মানুষের আর্তকান্না ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। পরিমল বলেই চলেছেনঃ মৃত্যুর পাশে বসে থাকার উপর তার ধিককার আসছিলো, আবার কখনো তার চোখের সামনে ভেসে উঠত ভীড় জমানো ফেলে আসা স্বপ্ন রঙ্গিন মধুময় হাজারো দিনের স্মৃতি। আছড়ে আছড়ে কেঁদে সেসব স্মৃতি ফরিয়াদ জানাত। স্মৃতির মিছিলে সুরেস হারিয়ে ফেলতেন। হলের ছাদের উপর পানির ট্যাঙ্ক। হঠাৎ তার চেতনার উদয় হল। সুরেস আর দেরী না করে পানির ট্যাঙ্কে ঢুকলেন। ২৬শে মার্চ পুরোদিন ও সারারাত তিনি পানির ট্যাঙ্কেই কাটালেন আত্মগোপন করে। ২৭ তারিখ পানির ট্যাঙ্কে তার থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। ২৭ তারিখে ভোরের দিকে হাতে প্রাণ নিয়ে তিনি ভয়ে ভয়ে নামলেন ছাদ থেকে।
এগিয়ে গেলেন জগন্নাথ হলের উত্তর পার্শ্বের রাস্তার দিকে। সুরেস ভয়ে সোজা হননি। হামাগুড়ি দিয়ে এগুচ্ছিলেন। পরিমল গুহ তখন কারফিউ তুলে নেবার পর ষ্টাফ কোয়ার্টার থেকে এদিকের রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। সুরেসকে পরিমলের দেখা হওয়ায় সুরেস প্রাণ ফিরে পেলেন। পরিমল গুহ পরে সুরেসকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দিয়ে আসেন। পরিমল ছাদের নারকীয় হত্যালীলার কাহিনী সুরেসের কাছ থেকে শুনেছেন।          [বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র অষ্টম খণ্ড থেকে]

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য় র জন য জ বন ত প র নন

এছাড়াও পড়ুন:

একাত্তরই জাতির পথনির্দেশক

মুক্তিযুদ্ধ জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। এটি পূর্বাপর কোনো ঘটনার সঙ্গে তুলনীয় নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, সব আমলেই মুক্তিযুদ্ধের গৌরবদীপ্ত ইতিহাসের বয়ানগুলো পক্ষপাতদুষ্ট। যখন যে দল ক্ষমতায় গেছে, তখন তাদের মতো করে মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়েছে। 

স্বাধীনতার পর বেতার-টেলিভিশন খুললে মনে হতো, মুক্তিযুদ্ধ যেন আওয়ামী লীগের একার যুদ্ধ ছিল। তখন বেতার-টেলিভিশন-রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অন্য দল ও ব্যক্তির ভূমিকা স্থান পেত না। অথচ অন্যান্য দলও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ছিল। ন্যাপ (ভাসানী), ন্যাপ (মোজাফ্‌ফর), কমিউনিস্ট পার্টি (মণি সিংহ) ও মনোরঞ্জন ধরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় কংগ্রেস মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ, মণি সিংহ ও মনোরঞ্জন ধর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। এর বাইরে সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টিসহ আরও বেশ কিছু বাম সংগঠন মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের মধ্যে একটি র‍্যাডিক্যাল ধারা ছিল, যারা স্বাধীনতা-উত্তর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কছেদ করে নতুন দল জাসদ গড়ল; তখন তাদের অবদানও উল্লেখ করা হতো না। তাজউদ্দীন আহমদ যেদিন মুজিব মন্ত্রিসভা থেকে মন্ত্রিত্ব হারালেন, সেদিনই  মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা মুছে গেল!
একাত্তরে বাঙালি অফিসার ও সিপাহিরা সেনা ছাউনি থেকে অস্ত্র হাতে বেরিয়ে এসে প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা করেছিল। তারাই ছিল রণাঙ্গনের মূল শক্তি। স্বাধীনতা-উত্তর তাদের কথাও বেতার-টেলিভিশন বা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে শোনা যেত না।  

একাত্তরের যুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের মুখে সৈনিক-ছাত্র-জনতা অস্ত্র তুলে ধরেছিল। কৃষকের পর্ণ কুটির পরিণত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের দুর্গে। লাখ লাখ নরনারী-শিশু প্রাণ দিয়েছিল; অগণিত নারী ধর্ষণের নির্মম শিকার হয়েছিল; এক কোটি লোক উদ্বাস্তু হয়ে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল; অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর সংখ্যার কেউ হিসাব রাখেনি। তবে আন্দাজ করা যায়, ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারীদের চেয়ে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর সংখ্যা দুই/তিন গুণ। জনগণের এই গৌরবময় ভূমিকা সব আমলেই উপেক্ষিত। 
পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক শাসনামলে অবস্থা বদলে গেল। বেতার-টেলিভিশন-রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের কথা ঘটা করেই প্রচার হতে লাগল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ যে রাজনৈতিক যুদ্ধ; দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামের ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র সংগ্রামে রূপ নিয়েছিল– সেই ইতিহাস চাপা পড়ে গেল। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ কারও নাম উচ্চারিত হতো না। উচ্চারিত হতো না মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কথাও। মনে হতো, মুক্তিযুদ্ধ ছিল যেন কেবলই সামরিক যুদ্ধ।

বিগত শতাব্দীর আশির দশকে দেশে নানা কারণে ভারত-বিদ্বেষ বেড়ে গিয়েছিল। এ কারণে হোক বা অন্য কারণে; মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর অবদানকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হতো। এখনও হয়। এটি অর্থহীন। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতের এক শ্রেণির জেনারেল-সাংবাদিক-লেখকের ভূমিকাও অগ্রহণযোগ্য। তারা বিস্মৃত হয়েছেন– ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনী হিসেবে অংশ নিয়েছিল। এসব জেনারেল-সাংবাদিক-লেখক ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ বলছেন। তারা এও বলছেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা ঢাকায় ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। আসলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর (ভারতীয় বাহিনী) সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল; ভারতীয় বাহিনীর কাছে নয়। এ অপতথ্যের প্রতিবাদ জানাতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সর্বদাই উদাসীন।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নানা অপতথ্যের সুযোগ নিয়েছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষাবলম্বন করেছিল। খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট প্রভৃতি অপকর্মে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। তাদের অন্যতম জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে এখনও বহাল তবিয়তে। দলটি কখনও আওয়ামী লীগ, কখনও বিএনপির সঙ্গে মিলে শক্তি সঞ্চয় করেছে। বিভিন্ন সময়ে একাত্তরের অপকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠলেও তারা অতীতে তা আমলে নেয়নি, এখনও নিচ্ছে না। জামায়াত শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিল। সেই সুবাদে নিজেদের এখন দেশপ্রেমিক বলে পরিচয় দিচ্ছে এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ছড়াচ্ছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অপতথ্য-অপপ্রচারে তরুণ প্রজন্মের কোনো কোনো অংশ বিভ্রান্ত। এই বিভ্রান্তির পেছনে শেখ হাসিনার বিগত ১৫ বছরের স্বৈরশাসন বড় ফ্যাক্টর। তিনি মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় ও পারিবারিকীকরণ করেছিলেন। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা তারস্বরে চিৎকার করে যা বলতেন, তার মর্মকথা এই– ‘স্বাধীনতা এনেছেন বঙ্গবন্ধু। আর দেশ চালাবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।’ নির্বাচন, গণতন্ত্র কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনে, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে এবং ২০২৪ সালে ডামি প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করে সরকার গঠন করেছে। এসব অপকর্ম হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের নামে। তাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ক্ষোভ উগরে পড়েছিল বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ম্যুরালের ওপর। মুক্তিযুদ্ধের কিছু স্মারক হয়েছিল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার লক্ষ্যবস্তু। এসব ধ্বংসযজ্ঞের নেপথ্যে হয়তো স্বাধীনতাবিরোধীদের হাত ছিল; সেই সঙ্গে ছিল জন-আক্রোশ। 

এটি দুঃখজনক যে, অন্তর্বর্তী সরকারও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভুল রাজনীতিতে পা দিয়েছে। গত ২২ মার্চ সমকালে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী চারশ রাজনীতিবিদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থাকছে না। তাদের পরিচয় হতে যাচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’। সমকালের ওই  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গত ১০ মার্চ কার্যপত্রে (খসড়াসহ অন্যান্য বিষয়) স্বাক্ষর করেছেন। এখন এটি নাকি চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার না জানার কথা নয়– মুক্তিযুদ্ধ ছিল রাজনৈতিক যুদ্ধ। রাজনৈতিক নেতারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আর অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব দানকারী নেতারা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’। কী হাস্যকর ব্যাপার! 

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ‘স্বাধীনতা পেয়েছি’ বলে বক্তব্য শুনেছি। তখন মনে হয়েছিল, বিষয়টি আবেগতাড়িত। পরে যখন দ্বিতীয় রিপাবলিকের বক্তব্য শুনলাম; দাবি উঠল দ্বিতীয় রিপাবলিকের কথা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য, তখন এটি আবেগের ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রশ্ন জাগে, এর পেছনে অন্য কোনো রাজনীতি আছে কিনা!

মুক্তিযুদ্ধের ফসল ১৯৭২ সালের সংবিধান। এর মানে এই নয় যে, সংবিধানটি একশ ভাগ নির্ভুল। তা ছাড়া স্বাধীনতার ৫৩ বছরে সংবিধান অনেক সংশোধনীর কাঁচিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। কিছু অগণতান্ত্রিক বিধি-বিধান যুক্ত হয়েছে, যা গণতন্ত্রের পথে বাধা। তাই বিগত ১৫ বছর এবং তারও আগে থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে দাবি রয়েছে– সংবিধান সংশোধন করতে হবে; সংবিধানের গণতন্ত্রায়ন করতে হবে। বলা বাহুল্য, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দেশ পরিচালনার মূলনীতি বাতিলের দাবি করা হয়নি; কখনও কোনো রাজনীতিকের মনে দেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনের চিন্তাও উদয় হয়নি। অথচ সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে প্রজাতন্ত্রের নাম ‘নাগরিকতন্ত্র’ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার কথা বলা হয়েছে। তবে ওই প্রস্তাব অনুসারে ইংরেজিতে ‘পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ পরিবর্তন হবে না। রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতির (জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা) স্থলে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে প্রস্তাবিত ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্রের’ বিরোধ নেই। বরং সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মধ্যে গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকারের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত।

ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিলের সুপারিশ করা হলেও রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা হয়েছে। প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ ৫.২-এ বলা হয়েছে– ‘বাংলাদেশ একটি বহুত্ববাদী, বহু জাতি, বহু ধর্মী, বহু ভাষী ও বহু সংস্কৃতির দেশ; সেখানে সকল সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে।’ প্রশ্ন হচ্ছে, একটি সম্প্রদায়ের ধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদায় আসীন রেখে সব ধর্মীয় সম্প্রদায়কে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া কি আদৌ সম্ভব?
বলা হচ্ছে, ‘দেশ পরিচালনার এই চার মূলনীতি নাকি আওয়ামী লীগের নীতি। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের উৎখাতের মধ্য দিয়ে চার মূলনীতির প্রতি অনাস্থা প্রকাশিত হয়েছে।’ এই চার মূলনীতির অন্যতম গণতন্ত্র নিয়ে কমিশনের আপত্তি নেই (কমিশন সংবিধানের মূলনীতিতে গণতন্ত্র সন্নিবেশিত রাখার সুপারিশ করেছে)। তাদের যত আপত্তি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে।

১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নকালে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র নিয়ে গণপরিষদের ভেতরের ও বাইরের কোনো দল প্রশ্ন তোলেনি। পাকিস্তানের ২৩ বছর ধরে গণতন্ত্রের সংগ্রাম ছিল। আওয়ামী লীগ, ন্যাপসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব দলের ঘোষণায় ছিল শোষণমুক্তি ও সমাজতন্ত্র। তারই প্রতিফলন ষাটের দশকের সেই হৃদয়মথিত ধ্বনি– কেউ খাবে, কেউ খাবে না/ তা হবে না, তা হবে না; মুক্তির একই মন্ত্র/ সমাজতন্ত্র সমাজতন্ত্র। শুরুতে আওয়ামী লীগ এ ধ্বনি তোলেনি। বামরা তুলেছিল; আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ কর্মীরা কণ্ঠ মিলিয়েছিল। এ দাবি বুকে ধারণ করেই একাত্তরের তরুণ-অরুণেরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল; জীবন উৎসর্গ করেছিল। সেই রক্তে-লেখা জাতীয় দাবি মুছে ফেলা কি এত সহজ!  

বিগত শতাব্দীর চল্লিশ দশকজুড়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত ছিল; রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়েছিল। ১৯৪৭-উত্তর পূর্ব বাংলার হিন্দু-মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রামের কাফেলায় শরিক হয়েছিল। রাজপথে একযোগে আওয়াজ তুলেছিল– ধর্মের নামে শাসন করা চলবে না; ধর্মের নামে শোষণ করা চলবে না। এ ধ্বনির মর্মবাণী অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা। একাত্তরে মানুষের যেমন আরাধ্য ছিল গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র, তেমনি আরাধ্য ছিল অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র; ধর্মরাষ্ট্র নয়। আন্দোলনের ফসল হিসেবেই ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র সংবিধানে এসেছে, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই।

ভাষা থেকেই ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি, যা ছিল মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম চালিকাশক্তি। তবে তা বহু ধর্ম ও জাতি অধ্যুষিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি করা উচিত কিনা– এ নিয়ে ১৯৭২ সালেই মতদ্বৈধতা ছিল। গণপরিষদ অধিবেশনে জাতীয় পরিচয় বাঙালি করার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা বাঙালি নই। আমাদের বাপ-দাদা কখনও বলেন নাই যে, আমরা বাঙালি।’ তিনি বাংলাদেশি পরিচয়ের কথা তুলে ধরেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল যুক্তিযুক্ত। সুদীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে বাঙালি জাতীয়তাবাদ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল সত্য, তবে একাত্তরে মুক্তিসংগ্রাম কেবল বাঙালির সংগ্রাম থাকেনি। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির পাশাপাশি গারো, সাঁওতাল, মুন্ডা, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, খাসিয়া, মণিপুরিসহ এই জনপদের সব জাতিগোষ্ঠী যোগ দিয়েছিল। তাই একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ‘বাংলাদেশ নেশন’ ধারণাই বিকশিত হয়েছিল। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার সংগত দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়।
পরবর্তী সময়ে রাজনীতিকদের দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন ঘটেছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬.২-এ রয়েছে– ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশি বলিয়া পরিচিত হইবেন।’ এ অনুচ্ছেদে নাগরিক পরিচয়ের সমাধান মিলেছে। সমস্যা হয়ে আছে জাতি হিসেবে বাঙালি– এই একক পরিচয়টি। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি ও আদিবাসী অথবা গারো, সাঁওতাল, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মণিপুরি, খাসিয়া প্রভৃতি জাতির নাম সংযুক্ত করা যেতে পারে। একই সঙ্গে অনুচ্ছেদ ৯-এ জাতীয়তাবাদের ব্যাখ্যায়ও বাঙালির পাশাপাশি আদিবাসীর কথা উল্লেখ করাও সংগত। আদিবাসী জনগোষ্ঠীও অনুরূপ দাবি করে আসছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬.২ ও ৯ সংশোধনের মধ্য দিয়ে এ সমস্যার সুরাহা সম্ভব।

আমি মনে করি, দেশের সাংবিধানিক ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে রাজনীতির আলোচিত ইস্যুর দিকেই নজর দেওয়া প্রয়োজন। সরকার ও সংসদের মেয়াদ চার বছর করা; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা; দুই টার্মের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা; দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা করা; সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি; নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন; বিরোধী দল থেকে সংসদে ডেপুটি স্পিকার, সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান করা ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা সংগত। এসব বিধিবিধান সংযোজন জাতীয় সংসদই করতে পারে। এ জন্য গণপরিষদের প্রয়োজন নেই।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের অগ্রসৈনিক তরুণদের একাংশ সংবিধান বাতিল, নতুন সংবিধান প্রণয়ন, গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে। তাদের দেশপ্রেম নিয়ে কারও প্রশ্ন তোলার অধিকার নেই। তারা জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে দেশপ্রেমের যে পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে, তা অনন্য। এই তরুণ তুর্কিদের নিয়ে আমরা গর্ব করি। তবে একাত্তর তারা দেখেনি; তারা একাত্তরের পরাজিত শক্তির বর্বরোচিত ভূমিকাও প্রত্যক্ষ করেনি। তাই একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসরদের ব্যাপারে তারা যথেষ্ট সতর্ক নয়। এ অপশক্তি একাত্তরের বদলা নিতে; মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন মুছে ফেলতে স্বাধীনতার পর থেকেই তৎপর। ১৯৭২ সালের সংবিধানসহ মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন, সব স্মারক ধ্বংস করা তাদের এজেন্ডা। তাই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান ও চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী তরুণ বীরদের প্রতি আমার মিনতি– ‘তোমরা একাত্তরের ঘাতকদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ো না; একাত্তরের আলোতে পথ চলো। এই পথেই তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।’

যে জাতি তার ইতিহাস-ঐতিহ্য-গৌরব গাথা ধারণ করতে পারে না, সে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন। উজ্জ্বল আলোকিত ভবিষ্যতের জন্য আমাদের বারবার একাত্তরের কাছে ফিরে যেতে হবে; মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা ধারণ করেই পথ চলতে হবে; এর কোনো বিকল্প নেই।

আবু সাঈদ খান: মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক; উপদেষ্টা সম্পাদক, সমকাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একাত্তরই জাতির পথনির্দেশক
  • ‘বিয়ের চাপ দেওয়ায়’ নারীকে খুন, সহকর্মী গ্রেপ্তার