একাত্তর ও চব্বিশ সমান যারা বলে, তারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি
Published: 25th, March 2025 GMT
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব। স্বাধীনতা দিবস, অন্তর্বর্তী আমলের রাজনীতি, আগামী নির্বাচন ঘিরে সন্দেহসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সহকারী সম্পাদক এহ্সান মাহমুদ
সমকাল : এবারের স্বাধীনতা দিবসকে কীভাবে দেখছেন? দীর্ঘ আওয়ামী শাসনের পরে বিএনপি মহাসচিব হিসেবে এবারের স্বাধীনতা দিবসটি কীভাবে মূল্যায়ন করেবন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : স্বাধীনতা দিবস বরাবরই আমাদের কাছে একটি গৌরব ও তাৎপর্যময় দিন। ২৬ মার্চ হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুর দিন। স্বাধীনতা ঘোষণার দিন। আমরা যে বঞ্চনার শিকার হয়েছি, তার বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর দিন। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমানসহ আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ, যারা আমাদের স্বাধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ছিলেন, আমাদের ছাত্রজীবনে যাদের পেয়েছি, সেইসব লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় আমরা একাত্তরে এসে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছি। আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। মানুষ সাহস পেয়েছে। যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। একটা বিষয় আমার সব সময়ই মনে থাকে যে, একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তান এখনও ক্ষমা চায়নি। কিছু কিছু মানুষ ও কিছু কিছু দল বোঝানোর চেষ্টা করছে, ১৯৭১ সালে কোনো ঘটনাই ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের যে আন্দোলন, লাখ লাখ মানুষের যে আত্মত্যাগ, ৯ মাস ধরে বাড়িঘর ছেড়ে কোটি কোটি মানুষ যে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, সেই অবস্থা যেন আমরা ভুলে যাচ্ছি। যারা সরাসরি সহযোগিতা করেছে, সরাসরি হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করেছে তারা এখন গলা উঁচিয়ে কথা বলছে। এটা আমরা কিন্তু খেয়াল করছি। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় এবং ইতিহাস চেতনা সম্পর্কে যারা সচেতন, তারা প্রত্যেকেই স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। এবারের স্বাধীনতা দিবসে আমরা দেশকে গণতান্ত্রিক, জনগণের জন্য কল্যাণ রাষ্ট্র বিনির্মাণ করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হব।
সমকাল : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে অনেকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইছেন। এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : একাত্তর ও চব্বিশ সমান– এটা মূলত তারা বলেন, যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেনি। উল্টো একাত্তরে হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করেছেন। তাদের কেউ কেউ এখন গলা উঁচিয়ে বলার চেষ্টা করছে যে ’৭১ সালে কিছু হয়নি। কিছু কিছু দল বোঝানোর চেষ্টা করছে, মুক্তিযুদ্ধ কোনো ঘটনাই ছিল না। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। হত্যা করেছে লাখো নিরীহ মানুষ। সেই সময়ে যিনি পূর্ব পাকিস্তানের নেতা ছিলেন, তিনি তখন আত্মসমর্পণ করেছিলেন। বাঙালি দিশেহারা ছিল। সে সময়ে একজন অখ্যাত মেজর বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করার ডাক দিয়েছিলেন। সবাই সাহস নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দেশ স্বাধীন হয়েছিল। আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশ। বিপরীতে চব্বিশ হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়াই। দেশকে স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদমুক্ত করার লড়াই। তাই একাত্তর ও চব্বিশকে তুলনা করার কোনো সুযোগ নেই। দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
একাত্তরে শেখ মুজিব অন্য কারও চিন্তা না করে নিজে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। আবার চব্বিশে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন। নিজ দলের নেতাকর্মীকে নিয়ে কোনো ভাবনা দেখা যায়নি। এটাই এদের চরিত্র। জনগণ যখন ক্ষেপে ওঠে, তখন ওরা এভাবে কর্মীদের অরক্ষিত রেখে পালিয়ে যায়। সাধারণ মানুষের কথা এরা কখনও ভাবে না। এবারও তা-ই করেছে শেখ হাসিনা। জনতার বিক্ষোভে ভারতে পালিয়ে গেছে। এখন ভারতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য দিনরাত অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।
সমকাল : আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করা হচ্ছে– এমন অভিযোগের কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : একটা কথা সবার বিশ্বাস রাখা দরকার, যারা নিজের দেশের মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের বিচার অবশ্যই হতে হবে। বিচারের আগে কীভাবে ফিরে আসবে, এটা আমার বোধগম্য নয়। তবে আমরা এই কথা বলে আসছি যে, কোন পার্টি নিষিদ্ধ হবে, কোন পার্টি কাজ করবে, কোন পার্টি কাজ করবে না তার সিদ্ধান্ত আমরা নেব না। জনগণ এর সিদ্ধান্ত নেবে। জনগণ নির্ধারণ করবে কোনো পার্টি থাকবে কি থাকবে না, কোনো পার্টি নির্বাচন করবে কি করবে না। জনগণকে এই সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে।
সমকাল : সম্প্রতি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বাংলাদেশের সেনাবাহিনী নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এ বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেশ আলোচনা-সমালোচনা শোনা গেল। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই…
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : দেশের সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে, যেটি আমরা মেনে নেব না। কারণ, সেনাবাহিনী দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ায়। সেনাবাহিনীকে যারা বিতর্কিত করতে চায়, তারা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যেন বিপন্ন হয়, আমরা যেন আবার অরক্ষিত হয়ে পড়ি সে জন্য এই কূটপরিকল্পনা নিয়ে একটি গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী যারা দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে জাতির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তাদের আবার বিতর্কিত করার হীন প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। অত্যন্ত সুনিপুণভাবে একটি নতুন চক্রান্ত শুরু হয়েছে। চক্রান্ত হচ্ছে বাংলাদেশকে আবার অস্থিতিশীল করার, আবার বিপদে নিমজ্জিত করার জন্য। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাদেরও বিতর্কিত করে ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করে ফেলা হচ্ছে। এ বিষয়ে দেশবাসীর সজাগ থাকতে হবে।
সমকাল : নির্বাচন ও সংস্কারকে মুখোমুখি করার কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন বিশ্লেষকের বক্তব্যে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : বাংলাদেশের মৌলিক সংস্কার বিএনপির হাত দিয়েই শুরু হয়েছে। সবার আগেই ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। আমরা অনেকেই অনেক কিছু ভুলে যাই। একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ’১৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাষ্ট্র সংস্কারের ২০৩০ ভিশন দিয়েছেন। তাই সংস্কার কোনো নতুন বিষয় নয়। আমরা সংস্কারের প্রস্তাবনায় মতামত দিয়েছি। আমরা বলেছি, নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনটা হওয়ার প্রধানত দুইটা কারণ। একটি হচ্ছে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে নিয়ে আসা, আরেকটা হলো গভর্ন্যান্স (সুশাসন) চালু করা।
সমকাল: ধন্যবাদ আপনাকে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : সমকালকেও ধন্যবাদ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র ফখর ল ইসল ম আলমগ র র স ব ধ নত আম দ র ত কর র র জন য র র জন ব এনপ সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা আলমের সঙ্গে প্রথম এই আইন ব্যবহার হচ্ছে না: প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী বলেছেন, ‘মেঘনা আলমের সঙ্গে প্রথম এই আইনটি ব্যবহার হচ্ছে তা নয়।’ তিনি বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি আদালতে গেছে। বিচারাধীন বিষয়ে কথা বলা ঠিক হবে না।’
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন খোদা বখস চৌধুরী। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনমডেল মেঘনা আলমের আটকাদেশ কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট১৩ এপ্রিল ২০২৫সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই এক সাংবাদিক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জানতে চান গত ৯ এপ্রিল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হলো কেন। জবাব দিতে গিয়ে খোদা বখস চৌধুরী বলেন, ‘আপনার প্রশ্ন শুনে মনে হচ্ছে সরকার একটা বেআইনি কাজ করে ফেলেছে। এই আইন যে ব্যবহার হচ্ছে না, তা নয়। তাঁরা আদালতে গেছেন। আদালত আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে। আমরা আদালতকে জবাব দেব।’
এরপর আরেক সাংবাদিক খোদা বখস চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মেঘনা আলমের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়াটা সঠিক হয়নি বলে আইন উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন। তখন খোদা বখস চৌধুরী বলেন, ‘আইন উপদেষ্টা কোন প্রেক্ষিতে এই কথাটি বলেছেন আমরা জানি না।তিনি আমাদের কাছে এ বিষয়ে কিছু জানতেও চাননি। এখন বিষয়টি আদালতে চলে গেছে।’
আরেক সাংবাদিক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ১০ এপ্রিল সুনামগঞ্জে আপনি একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, জনগণ এই সরকারকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায়, কোন প্রেক্ষিতে তিনি এ কথাটি বলেছিলেন। জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি তো বলিনি সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চায়। এটা জনগণ বলেছে। সরকার তো বলে দিয়েছে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমি রাজনীতিবিদ নই। আমার এই কথা বলার প্রশ্নই উঠে না।’
আরও পড়ুনমেঘনা আলম যে প্রক্রিয়ায় আটক, তা সঠিক হয়নি: আসিফ নজরুল১৩ এপ্রিল ২০২৫ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশের পদগুলোতে যাবে, আসবে এটাই নিয়ম। মেঘনা আলমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁকে সরানো হয়নি। উনি হয়তো অসুস্থ আছেন সে জন্য তাঁকে সরানো হয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ৮ মাস পেরিয়ে গেল পুলিশ এখনো দায়িত্ব পালন করছে না, জনগণের অভিযোগ নিচ্ছে না এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খোদা বখস চৌধুরী বলেন, পুলিশ অভিযোগ নেয় না, এটা আজকের অভিযোগ নয়। বহু পুরোনো। অন্তর্বর্তী সরকার দুটো বিষয় অনলাইনে করতে যাচ্ছে। এক, জেনারেল ডায়েরি বা জিডি, দুই, এফআইআর বা অভিযোগ পত্র। প্রথমে দুটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে জিডি নেওয়া শুরু হবে। পরে এফআইআর নেওয়া শুরু হবে। ধীরে ধীরে একটা স্থায়ী সমাধান হবে।
আরও পড়ুনমডেল মেঘনা আলমকে ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ রাখার কারণ হিসেবে যা বলল পুলিশ১১ এপ্রিল ২০২৫জুলাই আন্দোলনে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের মধ্যে ধরছেন চুনোপুঁটিদের, রাঘব বোয়ালদের ধরছেন না- এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রাঘব বোয়ালদের কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। তাদের জালে আসতে হবে। রাঘব বোয়ালরা জালে আসার পর যদি ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন আপনারা অভিযোগ করতে পারেন।
আরও পড়ুনমডেল মেঘনাকে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা এমএসএফের১২ এপ্রিল ২০২৫