রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে সফলভাবে স্থাপিত হলো টার্বাইন
Published: 25th, March 2025 GMT
নির্মাণাধীন পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে টার্বাইন স্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ও চূড়ান্ত ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। এই ধাপে টার্বাইন সেটটিকে বারিং গিয়ারের ওপর নির্ভুলভাবে বসানো হয়েছে। স্থাপন পরবর্তী পরীক্ষাকালে টার্বাইনের শ্যাফট ধীর গতিতে ঘোরানো হয়।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিকেলে রসাটম প্রকৌশল শাখা এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্টার্টআপ এবং শাটডাউনের সময় টার্বাইন রোটরের যথাযথ এলাইনমেন্ট ও ভারসাম্য নিশ্চিত করে এই বারিং গিয়ার। যা নিরাপত্তা এবং দক্ষ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জরুরি। পরীক্ষাকালে বিশেষজ্ঞরা টার্বাইন সেটের সংযোজনের উচ্চমান এবং নিখুঁত এলাইনমেন্টের ব্যাপারে নিশ্চিত হন।
বাংলাদেশ প্রকল্পের জন্য এতমস্ত্রয় এক্সপোর্টের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলেক্সি দেইরী বলেন, “রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের টার্বাইন স্থাপনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যা স্টার্টআপের পূর্বে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বারিং গিয়ারের ওপর টার্বাইন সেটের স্থাপন এবং কনট্রোল পরীক্ষার মাধ্যমে যন্ত্রপাতির সংযোজনের উচ্চমান এবং এগুলোর নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করা গেছে।”
উল্লেখ্য, পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটিতে প্রতিটি ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি পাওয়ার ইউনিট থাকছে। ইউনিটগুলোতে স্থাপিত হয়েছে ৩+ প্রজন্মের ভিভিইআর রিয়্যাক্টর। যত শিগগির সম্ভব জ্বালানী লোডিং এবং তৎপরবর্তী স্টার্টআপের জন্য প্রথম ইউনিটের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে।
রূপপুর প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার এবং কনট্রাকটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে রসাটম প্রকৌশল শাখা।
ঢাকা/শাহীন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রথম ইউন ট ট র ব ইন স প রকল প র র পপ র প র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
তামিম রক্ষা পেলেন, আমাদের করণীয় কী
বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল খেলার মাঠে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারকা এই ক্রিকেটারের জন্য হেলিকপ্টার আনা হলো। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছিল। নিকটস্থ কেপিজে ফজিলাতুন্নেছা বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কার্ডিয়াক টিম তাঁকে দ্রুত চিকিৎসা দিয়ে পরবর্তী সময়ে হার্টে দুটি রিং পরায়।
আমি নিজে চিকিৎসক। বর্ণনা থেকে বুঝলাম, তামিম ইকবাল ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁকে যে চিকিৎসাটি প্রদান করা হয়েছে, চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় তাকে বলা হয় প্রাইমারি পিসিআই। এতে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুততম সময়ে বিশেষায়িত ক্যাথল্যাবে নিয়ে গিয়ে অ্যানজিওগ্রাম করে কালপ্রিট ভ্যাসেল, মানে আক্রান্ত রক্তনালিতে রিং বা স্টেন্ট পরিয়ে দেওয়া হয়।
উন্নত বিশ্বের এ চিকিৎসাটি এখন বাংলাদেশে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হচ্ছে। এই প্রাইমারি পিসিআইয়ের মাঝখানে তামিম ইকবালকে লম্বা সময় সিপিআর, মানে বুকে চাপ দিয়ে হার্টের কার্যকারিতা চালু করার চিকিৎসাসহ ডিসি শক দিয়ে তাঁর বন্ধ হয়ে যাওয়া হার্টকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি যে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ক্রিকেট তারকা। তবে তিনি এখনো সংকটমুক্ত নন।
বাংলাদেশে অর্ধশতাধিক কার্ডিয়াক সেন্টার রয়েছে, যেখানে হৃদ্রোগের সব চিকিৎসা ও সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। একসময় একটা অ্যানজিওগ্রাম করার জন্য অন্তত পাশের দেশ ভারতে যেতে হতো।একজন তারকা ক্রিকেটার হওয়ার সুবাদে এবং কেপিজে হাসপাতালে কার্ডিয়াক সুবিধা থাকার কারণে হয়তো তামিম দ্রুততম সময়ে এই উন্নত চিকিৎসা পেয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেন। গর্বের কথা বলি। যে প্রাইমারি পিসিআই চিকিৎসাটি বাংলাদেশে তামিমের ক্ষেত্রে সফলভাবে দেওয়া হয়েছে, ইংল্যান্ড বা আমেরিকার মতো উন্নত দেশে কোনো খেলোয়াড় এ রকম অসুস্থ হলেও সেই একই চিকিৎসা তাঁদের দেওয়া হবে। অর্থাৎ হৃদ্রোগ চিকিৎসায় বাংলাদেশ এখন গর্ব করতে পারে। তামিমের সফল চিকিৎসার এ ঘটনা বাংলাদেশের চিকিৎসার আধুনিকায়নের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন দেবী শেঠি বাংলাদেশে এসে এ দেশের হৃদ্রোগ চিকিৎসার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তামিম ইকবাল একজন ভিআইপি। তাই দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পেয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। একজন সাধারণ মানুষের হার্ট অ্যাটাক হলে তিনি কোথায় যাবেন? কী চিকিৎসা নেবেন? তাঁদের জন্য তো আর হেলিকপ্টার চলে আসবে না।
এ ক্ষেত্রেও ভালো সংবাদ আছে। বাংলাদেশে অর্ধশতাধিক কার্ডিয়াক সেন্টার রয়েছে, যেখানে হৃদ্রোগের সব চিকিৎসা ও সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। একসময় একটা অ্যানজিওগ্রাম করার জন্য অন্তত পাশের দেশ ভারতে যেতে হতো। অথচ আজ বাংলাদেশে অ্যানজিওগ্রাম, অ্যানজিপ্লাস্টি (রিং পরানো), বাইপাস সার্জারি, ভাল্ভ সার্জারি, এমনকি বুক না কেটে মিনিমাল ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি সফলতার সঙ্গে প্রতিদিন সম্পন্ন হচ্ছে।
তবু আকস্মিক মৃত্যু থেমে নেই। এর একমাত্র কারণ ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। হৃদ্রোগে আকস্মিক মৃত্যু বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদ্রোগে মারা যান, যার ৫৪ শতাংশের জন্য উচ্চ রক্তচাপ দায়ী। এ ছাড়া তামাক ব্যবহার ও বায়ুদূষণ হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদ্রোগে মারা যায়, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৩১ শতাংশ। এর মধ্যে তামাকের কারণে হৃদ্রোগে বছরে ১৯ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
বুকে ব্যথা, চোয়ালে ব্যথা, ঘাম হওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা, অবসন্নতার মতো উপসর্গ বা কোনো উপসর্গ ছাড়াই আকস্মিক হার্ট বিকল হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। হার্টের অসুখ নিয়ে অনেক রোগী হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। পথিমধ্যেই মারা যায়। তাহলে এ রকম পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
বুকে ব্যথা হলে গ্যাসের ব্যথা ভেবে কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ে হৃদ্রোগের সব সাপোর্ট আছে, এমন হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে। ঢাকার বাইরে কিছু কিছু বিভাগীয় শহরে ক্যাথল্যাব ও কার্ডিয়াক সার্জারির সুবিধা আছে। বাংলাদেশে বেসরকারি হেলিকপ্টার যৌক্তিক মূল্যে অত্যন্ত সহজলভ্য। মনে রাখতে হবে, হার্টের চিকিৎসায় সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি বুকে ব্যথা নিয়ে সঠিক সময়ে কোনো কার্ডিয়াক হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন, তাহলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি।
তাহলে করণীয় কী? উত্তর একটাই, নিয়মিত হেলথ চেকআপ। আপনার দেহে উপসর্গ থাকুক আর না থাকুক, বছরে কমপক্ষে দুবার হেলথ চেকআপ করতে হবে। এ ছাড়া সুষম খাদ্যাভ্যাস, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস, ওজন কমানো, ধূমপান ও তামাকজাতীয় পণ্য বর্জনের পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। আর দরকার এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড।
ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা