নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভুইগড় এলাকায় রূপায়ণ টাউন জামে মসজিদে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বাদ আছর ফতুল্লার ভূইগড় রূপায়ণ টাউন এলাকার সাধারণ মুসল্লিদের উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংঘর্ষের ঘটনায় দু’পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। নবগঠিত মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজকে প্রধান আসামী করে চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে অভিযোগ দায়ের করেন। 

অন্যদিকে, রাজ বাদী হয়ে জহিরুল ইসলামকে প্রধান আসামী করে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং সাত-আটজনকে অজ্ঞাত আসামি করে পাল্টা অভিযোগ দেন।

সংঘর্ষের সূত্রপাত-

স্থানীয় মুসল্লি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, মসজিদের দীর্ঘদিনের খতিব মাওলানা জামাল উদ্দিনকে অপসারণের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। জামাল উদ্দিন ১৪ বছর ধরে মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তিনি পাঁচ মাস ধরে মসজিদে অনুপস্থিত ছিলেন। গত ১৪ মার্চ তিনি আকস্মিকভাবে ফিরে এসে নামাজ পড়াতে গেলে মুসল্লিদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

নতুন কমিটি মুসল্লিদের আপত্তির ভিত্তিতে জামাল উদ্দিনকে সসম্মানে অপসারণের সিদ্ধান্ত জানালে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এরপর বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতে জামাল উদ্দিন তার অনুসারীদের নিয়ে সেহেরির অজুহাতে মসজিদে অবস্থান নেন। এ সময় কমিটির পক্ষ থেকে তাকে অপসারণের বিষয়ে লিখিত নোটিশ দেওয়া হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়।

সংঘর্ষ ও অভিযোগ-

সংঘর্ষ চলাকালে নবগঠিত কমিটির উপদেষ্টা জহিরুল ইসলামকে কাঠের সুতোর ও প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে মারধর করেন ও রাজ তার সহযোগীরা। তার সহকর্মী মুবিন বাইরে গিয়ে সাহায্য চাইলে স্থানীয় আবু সাঈদ পাটোয়ারী রাসেল এগিয়ে আসেন, তবে তাকেও হামলার শিকার হতে হয়। পরবর্তীতে নিরাপত্তাকর্মীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং হামলাকারীরা মসজিদ ত্যাগ করে।

মুসল্লিদের অভিযোগ, জামাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কৃষকলীগ নেতা নাজিম চেয়ারম্যানের আশ্রয়ে থেকে খতিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার অপসারণ যখন নিশ্চিত হয়, তখনই তিনি পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন। মুসল্লিদের দাবি, জামাল উদ্দিনকে মসজিদ থেকে সরাতে চাওয়ায় আজমেরী ওসমানের ক্যাডার রাজ ও তার সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন এবং সংঘর্ষ বাঁধিয়ে মসজিদের নতুন কমিটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেন। এছাড়াও খতিব জামাল উদ্দিন মুসল্লিদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা ও তার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার জন্য এই সংঘর্ষকে উস্কিয়ে দেন।

ভিডিও ভাইরাল ও সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন-

সংঘর্ষের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও মুসল্লিদের অভিযোগ, ভিডিওর খণ্ডিত অংশ দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তারা দাবি করেন, রাজ ও তার সহযোগীরা সংঘর্ষের পর আহত হওয়ার নাটক সাজিয়ে থানায় মিথ্যা মামলা করেছেন। এমনকি, তার মেডিকেল সার্টিফিকেটে উল্লেখ রয়েছে যে হাত ভাঙেনি, বরং সামান্য চোট লেগেছে।

সুষ্ঠু তদন্তের দাবি-

নতুন মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করা হয়েছে। তারা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক  দাবি জানিয়েছেন। সাধারণ মুসল্লিরাও মসজিদে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স ঘর ষ র কম ট র মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

রূপায়ণ টাউন জামে মসজিদে দুই পক্ষের সংঘর্ষ: তদন্ত ও বিচার দাবি মুসল্লিদের

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভুইগড় এলাকায় রূপায়ণ টাউন জামে মসজিদে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বাদ আছর ফতুল্লার ভূইগড় রূপায়ণ টাউন এলাকার সাধারণ মুসল্লিদের উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংঘর্ষের ঘটনায় দু’পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। নবগঠিত মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজকে প্রধান আসামী করে চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে অভিযোগ দায়ের করেন। 

অন্যদিকে, রাজ বাদী হয়ে জহিরুল ইসলামকে প্রধান আসামী করে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং সাত-আটজনকে অজ্ঞাত আসামি করে পাল্টা অভিযোগ দেন।

সংঘর্ষের সূত্রপাত-

স্থানীয় মুসল্লি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, মসজিদের দীর্ঘদিনের খতিব মাওলানা জামাল উদ্দিনকে অপসারণের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। জামাল উদ্দিন ১৪ বছর ধরে মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তিনি পাঁচ মাস ধরে মসজিদে অনুপস্থিত ছিলেন। গত ১৪ মার্চ তিনি আকস্মিকভাবে ফিরে এসে নামাজ পড়াতে গেলে মুসল্লিদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

নতুন কমিটি মুসল্লিদের আপত্তির ভিত্তিতে জামাল উদ্দিনকে সসম্মানে অপসারণের সিদ্ধান্ত জানালে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এরপর বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতে জামাল উদ্দিন তার অনুসারীদের নিয়ে সেহেরির অজুহাতে মসজিদে অবস্থান নেন। এ সময় কমিটির পক্ষ থেকে তাকে অপসারণের বিষয়ে লিখিত নোটিশ দেওয়া হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়।

সংঘর্ষ ও অভিযোগ-

সংঘর্ষ চলাকালে নবগঠিত কমিটির উপদেষ্টা জহিরুল ইসলামকে কাঠের সুতোর ও প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে মারধর করেন ও রাজ তার সহযোগীরা। তার সহকর্মী মুবিন বাইরে গিয়ে সাহায্য চাইলে স্থানীয় আবু সাঈদ পাটোয়ারী রাসেল এগিয়ে আসেন, তবে তাকেও হামলার শিকার হতে হয়। পরবর্তীতে নিরাপত্তাকর্মীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং হামলাকারীরা মসজিদ ত্যাগ করে।

মুসল্লিদের অভিযোগ, জামাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কৃষকলীগ নেতা নাজিম চেয়ারম্যানের আশ্রয়ে থেকে খতিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার অপসারণ যখন নিশ্চিত হয়, তখনই তিনি পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন। মুসল্লিদের দাবি, জামাল উদ্দিনকে মসজিদ থেকে সরাতে চাওয়ায় আজমেরী ওসমানের ক্যাডার রাজ ও তার সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন এবং সংঘর্ষ বাঁধিয়ে মসজিদের নতুন কমিটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেন। এছাড়াও খতিব জামাল উদ্দিন মুসল্লিদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা ও তার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার জন্য এই সংঘর্ষকে উস্কিয়ে দেন।

ভিডিও ভাইরাল ও সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন-

সংঘর্ষের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও মুসল্লিদের অভিযোগ, ভিডিওর খণ্ডিত অংশ দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তারা দাবি করেন, রাজ ও তার সহযোগীরা সংঘর্ষের পর আহত হওয়ার নাটক সাজিয়ে থানায় মিথ্যা মামলা করেছেন। এমনকি, তার মেডিকেল সার্টিফিকেটে উল্লেখ রয়েছে যে হাত ভাঙেনি, বরং সামান্য চোট লেগেছে।

সুষ্ঠু তদন্তের দাবি-

নতুন মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করা হয়েছে। তারা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক  দাবি জানিয়েছেন। সাধারণ মুসল্লিরাও মসজিদে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আম্বরশাহ মসজিদ কমিটিতে বিএনপি জামায়াত এনসিপি