শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিচহ্যাচারির শেয়ারের সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষকে এই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিএসইসির পক্ষ থেকে এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে।

ডিএসইতে গত তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৩৪ টাকা বা সোয়া ৩৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে গত এক মাসেই বেড়েছে ১২ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনের দিক থেকেও শীর্ষ ২০ কোম্পানির তালিকায় ছিল এটি। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া কোম্পানিটির এই মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক মনে করছে বিএসইসি। এ কারণে মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ডিএসইকে।

বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিচহ্যাচারির শেয়ারের দাম ও লেনদেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে, যা সন্দেহজনক। এ অবস্থায় শেয়ারবাজারের সব ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী, লেনদেনের জন্য অনুমোদিত প্রতিনিধি ও কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি শেয়ারবাজারের স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি বিধিমালা যথাযথভাবে পরিপালন করে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের জন্য ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত করে বিএসইসিতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বিএসইসি উপপরিচালক শহীদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এদিকে ঢাকার বাজারে আজ বিচহ্যাচারির প্রতিটি শেয়ারের দাম আড়াই টাকা বা ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২১ টাকা ৪০ পয়সায়। এদিন কোম্পানিটির প্রায় ৯ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল এটি। ছয় মাস আগে গত সেপ্টেম্বরেও কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৮০ টাকার ঘরে। আর এক বছর আগে অর্থাৎ গত বছরের মার্চে এটির শেয়ারের দাম ছিল ৫০ টাকার কাছাকাছি। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এটির শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় সোয়া দুই গুণ হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল নদ ন র তদন ত র ব এসইস

এছাড়াও পড়ুন:

শার্প ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করবে বিএসইসি

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার্থে পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির (পূর্ব নাম আরএন স্পিনিং মিলস লিমিটেড) ছয় বছরের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বেশ কয়েকটি শর্ত নির্ধারণ করে এ লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ফারইস্ট নিটিংয়ের ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়

সূচকের উত্থান, বেড়েছে লেনদেন

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল আজিম এবং মো. আরিফুল ইসলাম।

বিএসইসির জারি করা আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির গত ছয় বছরে এর বাস্তব চিত্র পরীক্ষা করা তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএসইসি। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন কোম্পানির ছয় বছরে কোম্পানির বাস্তব চিত্র বিষয়গুলো পরীক্ষা করা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল আজিম এবং মো. আরিফুল ইসলামকে তদন্ত কমিটিতে রাখ হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের এ আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। একইসঙ্গে কমিশনে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা
২০২০-২০২৪ সাল পর্যন্ত কোম্পানি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষকদের দেওয়া আপত্তি বা বিরূপ মতামত বিশ্লেষণ করে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

গঠিত তদন্ত কমিটি কোম্পানির চলমান উদ্বেগ সম্পর্কিত বাস্তব অনিশ্চয়তাগুলো নির্ধারণ করবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একত্রীকরণ বা উল্লেখযোগ্য অন্যান্য লেনদেন থেকে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা কোনো অযৌক্তিক সুবিধা নিয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করা। সেই সাথে ছয় বছরে কোম্পানির বাস্তব চিত্র বিষয়গুলো পরীক্ষা করা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় তদন্ত করে দেখবে গঠিত কমিটি।

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন, ২০২৪ হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে (০.১৯) টাকা। আগের হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.৪৫) টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১০.০৭ টাকা।

সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর,২০২৪) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৩০ টাকা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০১ টাকা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ০.২৯ টাকা বা ২৯০০ শতাংশ বেড়েছে।

অন্যদিকে, অর্ধবার্ষিক বা ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২৪) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.৪৪ টাকা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০৩ টাকা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ০.৪১ টাকা বা ১৩৬৬.৬৭ শতাংশ বেড়েছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ শেষে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ১০.৪১ টাকা।

ব্যবসায়িক পরিস্থিতি
শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি ঋণে জর্জরিত একটি প্রতিষ্ঠান। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কোম্পানির মোট ২৭৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে, যা কোম্পানির পরিশোধিত মুলধনের ৯০ শতাংশের চেয়ে বেশি। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটি ১১ লাখ টাকা ও স্বল্প মেয়াদি ঋণ ২২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আর কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১ লাখ টাকা। দীর্ঘ পাঁচ বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেয়ারহোল্ডারদের ১ শতাংশ নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়েছে। বর্তমানে কোম্পানির লেনদেন হচ্ছে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি নতুন নামে লেনদেন শুরু করে। এর আগে কোম্পানির নাম ছিল আরএন স্পিনিং মিলস লিমিটেড। কোম্পানিটি ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৩০৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩০ কোটি ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ১০৯টি। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩০.৫৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৩.৯৬ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৫.৪৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান
  • এক হাজার কোটি টাকা ব্যাংকঋণ নিলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক
  • স্টক এক্সচেঞ্জ ‘না’ করলে আইপিও অনুমোদন নয়
  • আইপিওর খসড়া সুপারিশ জমা দিয়েছে পুঁজিবাজার টাস্কফোর্সের
  • শার্প ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করবে বিএসইসি
  • সূচকের উত্থান, বেড়েছে লেনদেন
  • প্যারামাউন্ট সোলারের শেয়ার কিনবে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল
  • ডিএসই ও সিএসইতে নতুন ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু
  • পুঁজিবাজারে সূচকের পতনে সপ্তাহ শুরু