ডিএসসিসির রাজস্বে ভাটা, আদায় বাড়াতে ঈদের পর অভিযান
Published: 25th, March 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে দেশত্যাগ করেছেন নগরের মেয়র ও কাউন্সিলর। জনপ্রতিনিধিদের স্থলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমলাদের। নিয়ম না মেনে নগর ভবনে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলি আর পদোন্নতি যেন থামছে না। আবার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও নগরভবনে কর্মকর্তাদের রুমে রুমে এসে এখনও বিশৃঙ্খলা করছেন। এসবের মধ্যে রাজধানীর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) রাজস্ব আদায় তলানিতে। তাই রাজস্ব আদায় বাড়াতে আসন্ন ঈদুল ফিতরের পরে নগরীতে লিফলেট বিতরণ আর বকেয়া আদায় করতে জোরদার অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি।
এবার বকেয়া আদায় করতে ক্রোকি পরোয়ানা জারি করে বাসা বা স্থাপনার আসবাবপত্র জব্দ করে নিলামে বিক্রয়ের মাধ্যমে বকেয়া পৌর কর, কর্পোরেশনের মালিকানাধীন দোকানের ভাড়া ও ট্রেড লাইসেন্স ফি সমন্বয় করা হবে।
ডিএসসিসির রাজস্ব আয়ের খাতওয়ারী দাবি ও আদায়ের বিবরণী থেকে সূত্রে জানা যায়, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা, আদায় করেছে ৫৪৬ কোটি টাকা। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা, জানুয়ারিতে এ পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৪৯৮ কোটি টাকা। এই অর্থবছরে গত অর্থবছরের তুলনায় ৪৮ কোটি টাকা আদায় কম।
করপোরেশন সূত্রে আরও জানা যায়, করপোরেশন রাজস্ব আদায় বাড়াতে ঈদুল ফিতরের পরে লিফলেট বিতরণ এবং বকেয়া আদায়ে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
করপোরেশনের লিফলেটে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন একটি স্ব-শাসিত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান নগরবাসী কর্তৃক প্রদেয় পৌরকর, দোকান ভাড়া, ট্রেড লাইসেন্স এবং অন্যান্য ফি-এর মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে।
এতে বলা হয়েছে, করদাতাগণ কর্তৃক প্রদেয় কর বকেয়া থাকলে নগরের উন্নয়নসহ দৈনন্দিন পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হয়। এ লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সকল ধরনের বকেয়া ও হাল কর আদায়ে অভিযান জোরদার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এতে বকেয়া কর আদায়ের জন্য ক্রোকি পরোয়ানা জারি করে বাসা বা স্থাপনার আসবাবপত্র জব্দ করে নিলামে বিক্রয়ের মাধ্যমে বকেয়া পৌরকর, করপোরেশনের মালিকানাধীন দোকানের ভাড়া ও ট্রেড লাইসেন্স ফি সমন্বয় করা হবে। তাই, নগরবাসীকে দ্রুত বকেয়া ও হাল সনের পৌরকর, দোকান ভাড়া ও ট্রেড লাইসেন্স ফি পরিশোধ করে নগর উন্নয়নে সহযোগিতা করার আহ্বান জানায় করপোরেশন।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড এসস স কর কর মকর ত ড এসস স ল ফল ট র বক য় প রকর
এছাড়াও পড়ুন:
গত বছর ইলিশ আহরণ কমেছে ৪২ হাজার টন
দেশে এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে ইলিশ আহরণ বাড়ার পর গত বছর কমেছে। সম্প্রতি মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইলিশ আহরণ ৪২ হাজার টন কমেছে।
মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ইলিশ আহরণ হয় ৫ লাখ ৭১ হাজার টন। গত অর্থবছরে ইলিশ আহরণের পরিমাণ ৫ লাখ ২৯ হাজার টন। সে হিসাবে ইলিশ আহরণ ৪২ হাজার টন কম হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ২০১৪ সালে ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। ২০১৬ সালে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার টন। পরের তিন বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টনে। ২০১৭-১৮ সালে ইলিশ আহরণ ৫ লাখ ১৭ হাজার থেকে ক্রমশ বেড়ে ২০২১-২২ সালে এসে ৫ লাখ ৬৬ হাজার টনে উন্নীত হয়েছিল।
ইলিশ আহরণ কমার কারণ সম্পর্কে চাঁদপুরে অবস্থিত মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু কাওসার দিদার বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত বছর জেলেরা অন্য সময়ের মতো নদী ও সাগরে যেতে পারেননি। ইলিশের প্রধান তিনটি মাইগ্রেশন পয়েন্ট মেঘনা-তেঁতুলিয়া, পায়রা-বিষখালী ও সুন্দরবন অঞ্চলে নাব্যতার সংকট প্রকট। ফলে ইলিশের চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ইলিশ আহরণের একটি সীমা আছে, কিন্তু বাংলাদেশ সেই সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। সেই ফলাফলও স্পষ্ট হয়েছে, ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
তবে আশার কথা শুনিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। তিনি বলেন, জুন-জুলাই মাসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। কিছু সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জাটকা সংরক্ষণে অভিযান চালানো হলেও জেলেরা নানা পদ্ধতিতে নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ শিকার করেন। জনবল কম থাকায় শত শত কিলোমিটার নদী ও মোহনা পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না।
ইলিশের জীবনচক্র বিষয়ে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে। এসব ডিম পোনায় পরিণত হয়। তারপর জাটকায় (২৫ সেন্টিমিটারের ছোট ইলিশ) পরিণত হয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নদীতেই বিচরণ করে। এই সময়টায় যদি জাটকা রক্ষা না করা যায়, তাহলে ইলিশ উৎপাদন কমে যাবে। এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না। একটি জাটকার বড় ইলিশে (কমপক্ষে ৫০০ গ্রাম) পরিণত হতে এক বছরের বেশি সময় লাগে। এ জন্য জেলেকে কমপক্ষে দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে বড় ইলিশের জন্য। আর বড় ইলিশ পেতে হলে অবশ্যই অবৈধ জাল ধ্বংস করতে হবে, অভয়াশ্রমকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে হবে।
ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, নদ–নদীর গভীরতা হ্রাস, দূষণসহ নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। ইলিশ সংবেদনশীল মাছ। বাসস্থান পরিবর্তন হলে ঘন ঘন গতিপথও পরিবর্তন করে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রাবনাবাদ নদ ও বরগুনার পায়রা-বিষখালী-বলেশ্বর মোহনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ইলিশের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রগুলো ঘিরে শিল্পায়ন হয়েছে। এসব বিষয় ইলিশকে পথ পরিবর্তনে বাধ্য করছে, যার প্রভাব পড়েছে ইলিশ উৎপাদনে। এ ছাড়া জাটকা সুরক্ষায় কয়েক বছর ধরে উদাসীনতা ছিল বলে মনে করেন তিনি।
ইলিশ আহরণ ও প্রজননের বিষয়গুলো বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, নদীর স্রোত, গভীরতা, জলস্ফীতি, খাদ্য ও পানির গুণগত মানের সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০০১ সাল থেকে দেশে ইলিশ আহরণের পরিমাণ কমতে শুরু করেছিল। ওই বছর ২ লাখ ২০ হাজার ৫৯৩ টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছিল। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তা সোয়া ৩ লাখ টনের ওপরে ওঠেনি।
ইলিশ আহরণ আবার বাড়াতে হলে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সাগরমোহনায় ছোট ফাঁসজালের অবাধ ব্যবহার ও বাণিজ্যিক ট্রলারের ব্যবহার কমাতে হবে। ইলিশ রক্ষায় ব্যবস্থাপনা কাঠামোকে ঢেলে সাজানো ও নিবিড় গবেষণা দরকার।