সন্জীদা খাতুন দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীল, লড়াকু হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন
Published: 25th, March 2025 GMT
বাংলাদেশের সংস্কৃতির কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ছায়ানট। সন্জীদা খাতুন ছিলেন ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। শোক জানিয়েছে তাঁর একসময়ের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগও। বিভাগটি শোকবার্তায় বলেছে, ‘আর কদিন পরই ৪ এপ্রিল সন্জীদা খাতুন ৯৩ বছরে পা দিতেন। তাঁর জীবনাবসান জাতীয় ক্ষেত্রে এক অপূরণীয় ক্ষতি।
আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। এক সপ্তাহ ধরে তিনি এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া এবং কিডনির রোগে ভুগছিলেন।
ছায়ানট জানিয়েছে, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সন্জীদা খাতুনের মরদেহ রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে নেওয়া হবে।
গানের মানুষ সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠন। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী তাদের শোকবার্তায় বলেছে, ষাটের দশকে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদ আন্দোলনে এবং ছায়ানট প্রতিষ্ঠার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সন্জীদা খাতুন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় গিয়ে শিল্পীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। আজীবন প্রগতিশীল সংস্কৃতিচর্চায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এই গুণী শিল্পী। সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে তাঁর পরিবার ও শোকসন্তপ্ত স্বজনদের সমবেদনা জানিয়েছেন উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে গভীর শোক জানানো হয়েছে। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্জীদা খাতুন আমৃত্যু সমাজ প্রগতির অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশবাসী একজন দক্ষ সংগঠক হারাল।
সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে গভীর শোক জানানো হয়েছে। সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের দেওয়া যৌথ শোকবার্তায় বলা হয়েছে, সংস্কৃতি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুন আমৃত্যু একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে গেছেন। একজন দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীল, সাহসী এবং লড়াকু মানুষ হিসেবে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তাদের শোকবার্তায় লিখেছে, বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উত্থানে ও বিকাশে ষাটের দশকে যে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন ড.
চারণ সংস্কৃতি কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দেওয়া শোকবার্তায় বলা হয়েছে, ‘বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক, বাংলার সাংস্কৃতিক আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র সন্জীদা খাতুন আজীবন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন লালন করেছেন, মানবতার জয়গান গেয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা একজন সাংস্কৃতিক যোদ্ধাকে হারালাম। তাঁর পরিবার ও স্বজনদের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রগত
এছাড়াও পড়ুন:
কাজ শেষ করতে পারেনি স্বাস্থ্যের সংস্কার কমিশন
স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিশন কাজ শেষ করতে পারেনি। তাই কমিশন নির্ধারিত সময় ৩১ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারছে না। কমিশন সরকারের কাছে আরও দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছে।
প্রতিবেদন চূড়ান্ত না হওয়ার কারণ হিসেবে কমিশনের সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানকে প্রধান করে গত বছরের ১৭ নভেম্বর ১২ সদস্যের স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কমিশন কাজ শেষ করতে না পারায় সরকার সময় এক মাস বাড়িয়ে ৩১ মার্চ করে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়।
আরও পড়ুনচিকিৎসকদের জন্য ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসেস’ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করবে সংস্কার কমিশন২৪ মার্চ ২০২৫একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, কমিশন কাজ শেষ করতে পারেনি। একাধিক বিষয় নিয়ে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
একজন সদস্য বলেছেন, কমিশনের সদস্যরা প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশ লিখেছেন ইংরেজিতে। কিন্তু পুরো প্রতিবেদন বাংলায় অনুবাদ করতে হবে, তা সম্পাদনা করতে হবে। দাপ্তরিক ভাষায় অনুবাদ করা, তা সম্পাদনা করা ও অনুবাদ হওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন সদস্যদের পড়তে দেওয়ার পর তাঁদের মতামত নিতে সময় লাগবে।
অসমর্থিত একটি সূত্র বলেছে, একটি দাতা সংস্থার অর্থায়নে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য খাত সংস্কার নিয়ে ঢাকায় গত দুই মাসে বেশ কয়েকটি সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠক করে। এসব সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠক থেকে উঠে আসা সংস্কার প্রস্তাব ও সুপারিশ কমিশনের প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করার কথা আছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি খুব শিগগির নিজস্ব প্রতিবেদন কমিশনকে দেবে।
অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের সংস্কার প্রতিবেদন না পেলে এই আলোচনা বাধাগ্রস্ত হতে পারে—এমন কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক কমিশনের একজন সদস্য।
আজ মঙ্গলবার কমিশনের একাধিক সদস্যের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। একজন সদস্য বলেছেন, কমিশন আগামী ১৫ এপ্রিলের আগে প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে না।
আরেকজন সদস্য বলেছেন, ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটিসহ নানা কারণে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য।
আরও পড়ুনস্বাস্থ্য খাত সংস্কারে কমিশনের কাছে প্রস্তাব জমা দিল বিএনপি০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫কমিশনের প্রধান এ কে আজাদ খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেদনে কমিশনের সব সদস্যের স্বাক্ষর দরকার। কমিশনের কোনো কোনো সদস্য পবিত্র ওমরাহ করতে যাওয়ায় স্বাক্ষর নেওয়া বাকি আছে।
আরও পড়ুনস্বাস্থ্য খাত সংস্কার: চাই সেবার উন্নয়ন, বৈষম্যের নিরসন১৯ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনস্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের আলোচনায় যা উঠে এল২১ ডিসেম্বর ২০২৪