গাজার আরও ২৩ জনের মৃত্যু, নতুন করে বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ
Published: 25th, March 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজার আরও হাজার হাজার বাসিন্দাকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। উপত্যকাটিতে চলমান নৃশংস হামলার মধ্যেই আজ মঙ্গলবার উত্তরে সীমান্তবর্তী সব এলাকার ফিলিস্তিনিদের চলে যেতে বলা হয়। ইসরায়েলের ভাষ্য, ওই এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে রকেট ছোড়া হয়েছে।
যেসব এলাকার বাসিন্দাদের চলে যেতে বলা হয়েছে, সেগুলো হলো গাজা নগরীর জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া, বেইত হানুন ও শেজাইয়া এলাকা। জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দের ইসরায়েল বলেছে, ‘নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আপনাদের দক্ষিণে পরিচিত আশ্রয়শিবিরগুলোতে চলে যেতে হবে।’ দক্ষিণে খান ইউনিস ও রাফা এলাকা থেকেও ফিলিস্তিনিদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি ভেঙে ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবার হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, তখন থেকে গতকাল পর্যন্ত ইসরায়েলে হামলায় প্রায় ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এর মধ্যে আজ এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৩ জন। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় এখন আর কোনো এলাকা নিরাপদ নয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। সেদিন ইসরায়েল থেকে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে জিম্মি করে তারা। ওই হামলার পরপরই গাজায় নৃশংসতা শুরু করে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় এখনো বন্দী থাকা ৫৯ জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ দিতেই নতুন করে হামলা শুরু করেছে তারা।
এদিকে গাজায় ১৭ মাসের বেশি সময় ধরে চলা হামলায় গতকাল পর্যন্ত ৫০ হাজার ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০৪ জন। এই নৃশংসতার মধ্যে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছে হামাস। তবে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
পৃথক হামলায় দুই সাংবাদিক নিহত
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় পৃথক ইসরায়েলি হামলায় দুজন গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন আল-জাজিরার সাংবাদিক। তাঁর নাম হোসাম শাবাত। বয়স ২৩ বছর। তিনি আল-জাজিরা মুবাশ্বেরে কর্মরত ছিলেন। গত সোমবার গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন তিনি।প্রত্যক্ষদর্শীরা আল-জাজিরাকে জানান, বেইত লাহিয়ার পূর্বাংশে হোসাম শাবাতকে বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা হয়।
গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজ্জুম বলেন, এর আগেও অন্য একটি ইসরায়েলি হামলায় হোসাম শাবাত আহত হয়েছিলেন। তা-ও গাজায় সংবাদ প্রতিবেদন করা অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি। তারেক বলেন, কোনো ধরনের পূর্বসতর্কতা ছাড়াই হোসামের গাড়িকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গতকাল সোমবার দিনের শুরুতে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস এলাকায় আরেকটি ইসরায়েলি হামলায় মোহাম্মদ মানসুর নামের আরেক সাংবাদিক নিহত হন। তিনি ‘প্যালেস্টাইন টুডে’ নামের একটি সংবাদমাধ্যমে কর্মরত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন-রুশ আলোচনা চলবে, মস্কোয় অবিশ্বাস কিয়েভের
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি কার্যকরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সর্বশেষ বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। বৈঠকটি সোমবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয়। শিগগির যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে। উভয় দেশের কর্মকর্তারা বলছেন, আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা মনে করেন, আলোচনার ধারাবাহিকতায় ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই আলোচনায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। বৈঠকে কৃষ্ণসাগরে একটি ‘সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি’ নিশ্চিত করার বিষয়েও আলোচনা হয় বলে জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
বৈঠকে রুশ মধ্যস্থতাকারীদের প্রধান গ্রিগোরি কারাসিন এএফপিকে গতকাল মঙ্গলবার ওই তথ্য জানান। বৈঠকে তিনি রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তাঁর বক্তব্য, বৈঠকে গভীর ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছাতে এখনও সময় লাগবে। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাব। জাতিসংঘসহ আরও দেশ এই আলোচনায় যুক্ত হবে। হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র জানিয়েছে, শান্তি প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপে অগ্রগতি হচ্ছে ও শিগগির একটি ‘ইতিবাচক ঘোষণা’ আশা করা হচ্ছে।
এদিকে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে সৌদিতে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল গতকালও বৈঠক করেছে। তবে যুদ্ধবিরতির আলোচনা নিয়ে রাশিয়াকে বিশ্বাস করতে চাইছে না ইউক্রেন। দেশটির রাষ্ট্রপতির চিফ অব স্টাফের উপদেষ্টা সের্হি লেশচেঙ্কো দাবি করেছেন, নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার হাতে ভেটো ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মস্কো নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। ফলে শান্তি আলোচনা শেষমেশ অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। এর আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মস্কো শান্তি আলোচনায় জাতিসংঘকে যুক্ত করতে চায়।
এর মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়া ১৩৯টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে ও ইস্কান্দার-এম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে বহু অবকাঠামোর ক্ষতি ও ৮৮ জন আহত হয়েছে। শতাধিক ড্রোন ভূপাতিত করার দাবিও করেছে কিয়েভ। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মস্কো একদিকে নৃশংস হামলা অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে ফাঁপা বক্তব্য বাদ দিয়ে মস্কোকে অবশ্যই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে সোমবার রাতে রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণাধীন লুহানস্কে গোলাবর্ষণ করে ইউক্রেন। এই হামলায় তিন রুশ সাংবাদিকসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। এই হামলার কড়া সমালোচনা করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ সাংবাদিক হত্যার নিন্দা জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়া। তবে জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দেয় মস্কো। বিবিসি, রয়টার্স ও আলজাজিরার খবর।