মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার পুরো ভাষণ রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় দেশবাসী, শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাইকে জানাই আমার সালাম। আসসালামু আলাইকুম।

আজ ২৫শে মার্চ, মানব সভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কিত এক হত্যাযজ্ঞের দিন। ১৯৭১ সালের আজকের রাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরপরাধ, নিরস্ত্র, ঘুমন্ত বাঙালির ওপর নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে। ২৫ শে মার্চ থেকেই এ দেশের মানুষ সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ৯ মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন:

ইতিহাসের পাতায় ২৫ মার্চ ১৯৭১

ঢাকা বাদে ৬৩ জেলায় স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ: প্রেস উইং

মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের; যাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ শহীদ ও দুই লাখ নির্যাতিত নারীর আত্মত্যাগ পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্ম দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের এই বীরদের প্রতি আমার সালাম।

সেই সঙ্গে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত হাজারো শহীদ ও আহত, যারা বৈষম্য, শোষণ, নির্যাতন এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের প্রতি সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে আমি সশ্রদ্ধ সালাম জানাচ্ছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ এনে দিয়েছে, সে সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে চাই।

প্রিয় দেশবাসী,
পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা উপলক্ষে আপনাদের সবাইকে আমার আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে, সকলকে জানাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের অগ্রিম শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক। এবারের ঈদ স্মরণীয়ভাবে আনন্দদায়ক হোক এই কামনা করছি।

বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জোর ব্যবস্থা নিয়েছে। রমজান ও ঈদে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জিনিসপত্রের দামের লাগাম টেনে ধরা, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এই রমজানে যাতে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে না যায় এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ যেন বিঘ্নিত না হয় সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।

রমজান মাসজুড়ে সরবরাহ চেইনের প্রতিবন্ধকতা কঠোরভাবে প্রতিহত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। দেশের সব জায়গা থেকে খবর এসেছে যে, এই রমজানে দ্রব্যমূল্য আগের তুলনায় কমেছে; জনগণ স্বস্তি পেয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে এই প্রচেষ্টা চলমান থাকবে।

প্রিয় দেশবাসী, 
গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনা যে ভয়াবহ লুটপাট কায়েম করেছিল; আপনারা সেটার ভুক্তভোগী ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে তারা পালিয়ে যাবার সময় এক লন্ডভন্ড অর্থনীতি রেখে গেছে। এই পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেবার পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, ক্রমান্বয়ে অর্থনীতির অপরাপর সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করছে। এ সরকারের সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৯.

৩২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগামী জুন মাসের মধ্যে এটি ৮ শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে আশা করছি।

দেশের ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ রেকর্ড গড়েছে, প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে আড়াই বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা আমাদের দেশের অর্থনীতি গড়ার বীর সৈনিক। তাদের জন্য প্রক্রিয়াগত যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলো সহজ করে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। তারা যেন ভোগান্তির শিকার না হন, দূতাবাস যেন ঠিকমতো কাজ করে, এটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আগামী নির্বাচনে যেন তাদের ভোটাধিকার দিতে পারি সেজন্য কাজ করছি।

পলাতক সরকারের আমলে চর দখলের মতো দেশের ব্যাংকগুলি দখল করে নেওয়া হয়েছিল। আমানতকারীর টাকাকে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত টাকায় রূপান্তরিত করে ফেলেছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম কাজ ছিল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনা, আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষা করে নিয়মশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা, হিসাবপত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা স্থাপন করা।

ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থা প্রতিষ্ঠা করা গেছে। এর ফলে অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জনগুলির মধ্যে এটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গত সরকারের লুটপাটের মহোৎসবে গত ১৫ বছরে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে-এটা আমরা জানি। কত রকমভাবে পাচার হয়েছে তাও জানার বিষয়। অভিনব একেকটা পদ্ধতি ছিল। পাচারের একটা পদ্ধতি সবাইকে হতভম্ব করে দিয়েছে। এই পাচার হয়েছে-বিদেশে অধ্যয়নরত সন্তানের কাছে টাকা পাঠানোর নামে। তিনি সন্তানের লেখাপড়ার জন্য এক সেমিস্টারের অর্থাৎ তিন মাসের খরচ বাবদ অফিসিয়াল ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠিয়েছেন তিন কোটি ৩৩ লাখ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। পাচারের এর চাইতে বেশি তাক লাগানো পন্থা আর কী আছে তার কোনো সীমা আছে বলে আমার মনে হয় না। আইন, নিয়ম, নীতির জায়গায় যখন হরিলুট প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এমন সবকিছুই সম্ভব।এই অর্থ পাচারকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।

প্রিয় দেশবাসী, 
অন্তর্বর্তী সরকার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের বর্তমান ব্যবস্থায় বিনিয়োগের বিষয়ে খুবই আগ্রহী। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে দেশে নতুন নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আপনারা দেখতে পাবেন।

সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশে রপ্তানি ১৩ শতাংশ বেড়েছে। জানুয়ারিতে ৭ শতাংশ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং বেড়েছে।বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে লাইসেন্সিং রিকোয়ারমেন্টস, প্রত্যাবাসন আইনসহ বিনিয়োগকারীদের যে সাধারণ সমস্যাগুলি রয়েছে সেগুলো সমাধানে কাজ শুরু করেছে। 

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আগামী মাসে ঢাকায় চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন করছে, বিশ্বখ্যাত অনেক বিনিয়োগকারী এতে অংশ নেবেন। ইতোমধ্যেই ডিপি ওয়ার্ল্ড, সিঙ্গাপুর পিএসএ, এপি মোলার মারস্ক কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে পৃথিবীর সকল সরকার আমাদের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা শুরু হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের বার্ষিক বৈঠকে। আপনাদের মনে আছে বিশ্বের সরকার প্রধানরা কীভাবে আমাদের সঙ্গে আগ্রহ নিয়ে দেখা করতে এগিয়ে এসেছে। তারপর থেকে যেকোনো সম্মেলনে গিয়েছি, দেখেছি আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের আগ্রহ কীভাবে ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

জানুয়ারি মাসে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে গিয়েছিলাম। এই সম্মেলনে ৪৭টি পৃথক ইভেন্টে আমার অংশগ্রহণ করতে হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান, মন্ত্রী, বিশ্ব বাণিজ্যের নায়করা, জাতিসংঘের মহাসচিব, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা আমাদের পাশে থাকার জন্য আন্তরিক আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

সম্প্রতি আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিলাম। তারা বিগত সরকারের সময় আমাদের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা সে দেশের ভিসার দরজা খোলার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন তাদের দিক থেকে সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ভিসার দরজা উন্মুক্ত করবেন। আমি আশা করছি সেটা দ্রুতই উন্মুক্ত হবে।

আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আমাদের দেশে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার জন্য একটি শিল্পাঞ্চল করার প্রস্তাব দিয়েছি। তারা এই বিষয়ে আগ্রহ জানিয়েছে। শিল্প অঞ্চলে দুটি কাজ দিয়ে তারা শুরু করবে। এজন্য কথাবার্তা শুরু হয়েছে।

প্রথমে মুসলিম বিশ্বে সরবরাহের জন্য একটি হালাল গোশত প্রক্রিয়াজাত করার কারখানা করবে।এরপর মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কারখানা স্থাপন করবে। তারা আমাদের নতুন সামুদ্রিক বন্দর পরিচালনা করার জন্যও আগ্রহ জানিয়েছে।

প্রিয় দেশবাসী,
বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আমরা আসিয়ানের সদস্য হিসেবে যোগদান করার বিষয়ে আগ্রহের কথা জানিয়েছি। এ বছরের শুরু থেকে মালয়েশিয়া আসিয়ানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। মালয়েশিয়ার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি আমাদের আবেদনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, আমাকে মালয়েশিয়া সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি। 

মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিসংঘের সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছে। আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে যাবার ব্যাপারে যে সমস্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল সবগুলো সমাধানের জন্য আন্তরিকভাবে তারা কাজ করছে।

আগামীকাল চারদিনের সফরে আমি চীন যাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আমার বৈঠক হবে। চীনের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সিইওদের সঙ্গেও বৈঠক করব।

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ চাইনিজ সোলার প্যানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লংজি বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের আগ্রহ জানিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করছি।

এছাড়া প্রযুক্তিগত সহায়তা, মেডিকেল সহায়তা, স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হবে। তারা আমাদের দেশ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানি করতে চায়। এটা খুব দ্রুতই শুরু হবে। এই সফরের মধ্য দিয়ে আমাদের দু’দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হবে।

আমি বরাবরই বলে এসেছি, আমরা মহা সৌভাগ্যবান এক জাতি, পৃথিবীর মানচিত্রে আমাদের অবস্থানের কারণে।বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান-দক্ষিণ এশিয়ার এই চারটি দেশ মিলে একটি যৌথ অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারলে চার দেশই লাভবান হবে। নেপাল ও ভূটান আমাদের জলবিদ্যুৎ দিতে অত্যন্ত আগ্রহী, আমরাও নিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে এর কোনো বিকল্প নেই।

আমাদের রয়েছে এক বিস্তীর্ণ মহাসাগর। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে আমাদের সামনে বিরাট অর্থনৈতিক সুযোগ এনে দিয়েছে। কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ উপকূল ভূমি। এই দীর্ঘ উপকূলজুড়ে বিরামহীনভাবে অনেকগুলি আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক মানের সমুদ্র বন্দর, শিল্প কারখানা, রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা স্থাপন করা গেলে পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভবিষ্যৎ দ্রুত পরিবর্তন সম্ভব।

নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আনতে পারলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমবে। বর্তমানে বিশ্ববাসী পরিবেশ রক্ষায় সচেতন। তারা এটাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পরিবেশবান্ধব বিকল্প পাওয়া গেলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরো বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করা যাবে।

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ যথাসময়ে শেষ করার বিষয়ে আমরা জোর দিয়েছি। রোসাটমের মহাপরিচালক আমাকে বলেছেন, শিগগির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে।

আমাদের পণ্য, পৃথিবীর পণ্য। এই পণ্য নেপালে যাবে, ভুটানে যাবে, ভারতের সেভেন সিস্টার্সে যাবে। প্রতিবেশীদের পণ্য আমাদের এখানে আসবে, সারা পৃথিবীর কাছে পৌঁছে যাবে, এভাবেই এটি একটি লাভজনক অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। আর এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের সবচাইতে বড় সমস্যা সীমাহীন দুর্নীতি। স্বৈরাচারী সরকার এই দুর্নীতিকে বিশ্বের শীর্ষ স্থানে নিয়ে গেছে। দুর্নীতির ফলে শুধু যে সবকিছুতে অবিশ্বাস্য রকম ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই না, এর ফলে সরকার ও জনগণের সকল আয়োজন বিকৃত হয়ে যায়। সরকারের লক্ষ্য, নীতিমালা, প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন, সরকারি কর্মকর্তাদের দায়দায়িত্ব যা কিছু কাগজে লেখা থাকে তার সবকিছু অর্থহীন হয়ে যায়। দেশ চলে অলিখিত আয়োজনে। সরকারকে চলতে হয়, ব্যবসায়ীকে চলতে হয়, শিল্পপতিকে চলতে হয়, বিনিয়োগকারীকে চলতে হয়, দেশের সকল নাগরিককে এই অলিখিত নিয়মে চলতে হয়।

নাগরিককে এই অদৃশ্য জগতের সঙ্গে মোকাবিলা করে টিকে থাকার বিদ্যায় পারদর্শী হবার সাধনা করতে হয়। দৈনন্দিন জীবনে টিকে থাকা এবং সাফল্য অর্জনের জন্য একটা নতুন ভাষা আয়ত্ত করতে হয়। চারদিকে কী শব্দ বলা হচ্ছে, কাগজে কী লেখা হচ্ছে-তা মনে মনে দ্রুত অনুবাদ করে তার মর্মার্থ বুঝে নিতে হয়, তা নাহলে দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। সবচেয়ে বড় মুশকিল হলো এর কোনো অভিধান নেই। কারণ ব্যক্তি বিশেষে, স্থান বিশেষে, পরিস্থিতি বিশেষে এর অর্থ ক্রমাগতভাবে পাল্টে যায়।

পুরো বিশ্ব বুঝে গেছে, আমরা জাতি হিসেবে সততার পরিচয় বহন করি না। এটা শুধু জাতীয় কলঙ্কের বিষয় নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এটা আত্মঘাতী বিষয়। দেশবাসীর মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চায় আমরা দুর্নীতিমুক্ত হই, কারণ তারা আমাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চায়।দুর্নীতিমুক্ত হতে না পারলে ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুই চলবে না। দুর্নীতি থেকে মুক্ত হওয়া ছাড়া বাংলাদেশের কোনো গতি নেই।

অন্তর্বর্তী সরকার সকল কাজ দুর্নীতিমুক্ত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে। এই সরকারের মেয়াদকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার চেষ্টার পাশাপাশি আগামী দিনেও দেশের নাগরিককে যেন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পুষ্ট দুর্নীতি থেকে মুক্ত রাখতে পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

দুর্নীতি ও হয়রানি রোধে আমরা একটা বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সরকারের সঙ্গে দৈনন্দিন, মাসিক বা বার্ষিক রুটিন কাজের জন্য যেন কোনো নাগরিককে সশরীরে কোনো সরকারি অফিসে উপস্থিত হতে না হয়। দুর্নীতি প্রতিরোধের অংশ হিসেবে সরকারি সব অফিসে ই-ফাইলিং চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ই-ফাইলিং ব্যবস্থা চালু হলে দুর্নীতি কমে আসবে। এতে করে কোন অফিসের কোন ডেস্কে কোন ফাইল আটকে আছে তা সহজেই জানা যাবে। সরকারি যতগুলো কার্যক্রমে অনলাইন সেবা চালু করা সম্ভব সবখানেই এসেবা চালুর বিষয়ে সরকার কাজ করছে। সরকারি বিভিন্ন সেবা পেতে অসহায় নাগরিকের টুঁটি চেপে ধরে অবিশ্বাস্য পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। টাকার লেনদেন ও ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয় সেটা থেকে নাগরিকদের বাঁচানোর জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।

অনলাইনে সেবা পাবার পদ্ধতিটি আরো কীভাবে সহজ করা যায় এ ব্যাপারে আমাদের কাছে পরামর্শ জানিয়ে লিখুন, ই-মেইল করুন। আপনি বা আপনার পরিবারের যে কেউ এই সেবা বাণিজ্যিকভাবে দিতে চাইলে, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে এই সেবা দিতে পারবেন।

বিগত সরকারের আমলে ভিন্নমতকে দমন করার জন্য মিথ্যা মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে আমরা এসব হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছি। গত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় দায়ের করা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলোর মধ্যে সারাদেশে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ২৯৫টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যান্য সব হয়রানিমূলক মামলাও ক্রমান্বয়ে প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

এছাড়া এ পর্যন্ত সাইবার সিকিউরিটি আইনের অধীনে বিচারাধীন স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত ৪১৩টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।এই আইনটি অবিলম্বে বাতিল করে নাগরিক বান্ধব সাইবার সুরক্ষা আইন করা হচ্ছে।

মানুষের ভোগান্তি রোধেও আমরা আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছি। জিডি করার সময় স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য এখন আর থানায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা অনলাইনেই করা যাবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালায় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের হয়রানি লাঘব করা হয়েছে। সংশোধিত বিধিমালার আলোকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকলেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির পাসপোর্টে No Visa Required স্টিকার থাকলে কিংবা জন্মসনদ বা জাতীয় পরিচয় পত্র থাকলেই তিনি বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন।  
সরকারি সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পর বিমানের টিকেট কেনার পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে নিয়ে যাওয়ায় ফলে বিমানের টিকিটের দাম শতকরা ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ কমে গেছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচের প্রবাসী ভাই-বোনেরা এতে করে স্বস্তি পাচ্ছেন। এছাড়া অন্যান্য এয়ারলাইনে টিকিটের দামও কমে গেছে।

নাগরিকদের হয়রানিমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদানের জন্য সরকার ভূমি সেবা ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে ঘরে বসেই জমির খাজনা প্রদান, নামজারি, জমাখারিজ, খতিয়ান বা পরচা সার্টিফাইড কপি ও মৌজা ম্যাপ বা নকশা প্রদানের কার্যক্রম চালু করেছে।

এই পদ্ধতিতে ভোগান্তি, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অবসান হবে। বর্তমানে সারাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে এই কার্যক্রম চালু হয়েছে। এগুলোকে ক্রমান্বয়ে আরো জনবান্ধব করে স্থায়ী রূপ দেওয়া হবে।

এর লক্ষ্য হবে ক্রমাগতভাবে এ সব দায়িত্ব সরকারের হাত থেকে নিয়ে সেবাদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ছেড়ে দেওয়া। গ্রামের স্কুল-কলেজ পাশ করা ছেলে-মেয়েরা, গৃহিণীরা ঘরে বসে সারা দেশে এই সেবা দান করবে এবং অনেকে তাদের কৃতিত্বের জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে পড়বে।তারা সারা দেশের গ্রাহকদের সেবা নিজের গ্রাম থেকেই প্রদান করবে।

রাজস্ব সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর জায়গায় দুটি পৃথক বিভাগ করা হচ্ছে। একটি হলো নীতি প্রণয়ন বিভাগ বা জাতীয় রাজস্ব নীতি বোর্ড, অন্যটি বাস্তবায়ন বিভাগ বা জাতীয় রাজস্ব সংগ্রহ বিভাগ।

এর ফলে সরকারের পছন্দের ব্যক্তিরা হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার আর সুযোগ পাবে না। আমি আশা করি পরবর্তীতে যারা সরকারে আসবেন তারাও এই নীতি বহাল রাখবেন। 

এখনকার যুগ হলো প্রযুক্তির যুগ। সৃজনশীলতার যুগ। আমাদের দেশে ১৭ কোটি নারী-পুরুষ, তার মধ্যে তরুণরা হলো বিপুলভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাংলাদেশ মানবসম্পদের দিক থেকে অষ্টম বৃহত্তম দেশ। একযোগে এ তরুণরা সৃজনশীলতার প্রকাশের সুযোগ পেলে বন্যার স্রোতের মতো আমাদের দেশ দ্রুতবেগে পৃথিবীর বাজারের মধ্যস্থানে চলে যাবে।এই বিপুল তরুণ গোষ্ঠীর সামনে থেকে পথের বাধা সরিয়ে দেওয়াই হলো আমাদের সরকারের প্রধান লক্ষ্য। প্রযুক্তি আমাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করছে। আমরা দ্রুতবেগে এ সুযোগ গ্রহণ করার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছি। এমনভাবে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করার কাজে নিয়োজিত হয়েছি যাতে নাগরিকের আঙ্গুলের ইশারায় সরকার তার সেবা নাগরিকের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে হাজির করে। তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সে-সেবা দিতে চাই প্রযুক্তির  মাধ্যমে, সরকারি অফিসের মাধ্যমে নয়। 

ইতোমধ্যে পাসপোর্ট পেতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নিয়ম আমরা বাতিল করে দিয়েছি। এর ফলে বর্তমানে নাগরিকরা আগের চেয়ে সহজভাবে পাসপোর্ট সেবা পাচ্ছেন। পুলিশ রিপোর্ট প্রাপ্তির নিয়ম বাতিল করার পর এ পর্যন্ত ৭০ হাজার নতুন পাসপোর্ট, যা বহুকাল ধরে পুলিশ রিপোর্ট আসার অপেক্ষায় আটকে ছিল, তা দ্রুত আবেদনকারীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

পাসপোর্ট প্রাপ্তি সহজ করার জন্য আমরা পুরানো পদ্ধতি বাতিল করে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট প্রচলন শুরু করেছি। এর ফলে দ্রুত পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

দেশের অভ্যন্তরে ই-পাসপোর্ট হোম ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আগামীতে সকলেই ঘরে বসে পাসপোর্ট পাবেন এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। পাসপোর্ট দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা অত্যন্ত উৎসাহ সহকারে  দ্রুত এসব পরিবর্তন আনার ব্যাপারে এগিয়ে আসছেন দেখে মনটা আনন্দে ভরে যায়।

প্রিয় দেশবাসী, 
হজ মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে গভীর আধ্যাত্মিক সফরগুলোর মধ্যে প্রধান। সারা জীবন এর জন্য তারা অপেক্ষা করেন। পবিত্র হজ পালনে বাংলাদেশের হাজিরা প্রায়ই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন-ভাষাগত বাধা, স্বাস্থ্যঝুঁকি, অতিরিক্ত ভিড়, প্রশাসনিক জটিলতা এবং লজিস্টিক সমস্যাসহ নানা অসুবিধা। হজের অভিজ্ঞতাকে মসৃণ ও নিরাপদ করতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে, যা সম্মানিত হাজিদের যাত্রার আগে, যাত্রা চলাকালীন সময়ে এবং ফিরে আসার পরেও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। এই অ্যাপটি বাংলা ভাষায় রিয়েল-টাইম নির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করবে, সরকার-সমর্থিত বিশেষ ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশের স্থানীয় মুদ্রায় আর্থিক লেনদেন নিশ্চিত করবে, লাগেজ যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য লাগেজ ট্র্যাকিং এর ব্যবস্থা থাকবে।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হজযাত্রীরা প্রত্যেক দিন ওই দিনের করণীয় ও যাতায়াতের বিস্তারিত বিবরণ জানতে পারবেন, যেদিন যে দোয়া পড়তে হবে সেটা স্মরণ করিয়ে দেবে, যেসব পবিত্র স্থানে যাবেন সেসবের ছবিসহ ইতিহাস বর্ণনা করবে। হাজীদের মনে কোনো প্রশ্ন জাগলে কল সেন্টারে ফোন করে সে প্রশ্নের উত্তর পাবেন। শরীর খারাপ লাগলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবে। সম্মানিত হাজীদের কোনো পরামর্শ থাকলে সেটা পরামর্শ পৃষ্ঠায় লিখে দিতে পারবেন।

ভ্রমণের দৈনন্দিন ঝামেলা যেন হজের মূল লক্ষ্যকে পরাজিত করতে না পারে তার জন্য সকল ব্যবস্থা এতে রাখা থাকবে।

প্রিয় দেশবাসী,
আপনারা শুনেছেন আমি স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের স্পেস এক্স ও টেসলার মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে ফোনে আলাপ করে বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানিয়েছি। সে অনুসারে, কোম্পানির প্রতিনিধিরা এখন বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরুর আয়োজন করছে। তাদের সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

স্টারলিংকের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট বাংলাদেশের ডিজিটাল জগতে একটি বিপ্লব আনবে। স্টারলিংক সেবা চালু হলে দেশের প্রতিটি গ্রাম, দ্বীপাঞ্চল, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল অতি উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবার আওতায় চলে আসবে। স্টারলিংক চালু হলে ভবিষ্যতে কোনো সরকার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে মানুষকে আর তথ্যবন্দী করার কোনো সুযোগ পাবে না। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে বিশ্বমানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে। আমাদের নতুন প্রজন্ম দেশের যেকোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলেই থাকুক না কেন তারা বিশ্ব নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

সরকার ‘যুব উদ্যোক্তা নীতি ২০২৫ প্রণয়ন’ করেছে। এর লক্ষ্য হবে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত অগ্রগতির মূল চালক হিসেবে তরুণ ও তরুণীদের ক্ষমতায়ন করা। এ নীতি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উপায় হিসেবে সফল উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়ক হবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তরুণ উদ্যোক্তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

প্রিয় দেশবাসী, 
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে আমি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলিতে গিয়েছি। ক্যাম্পে অবস্থানরত ১ লাখ রোহিঙ্গা শিশু, কিশোর, নারী, পুরুষ সবার সঙ্গে একসঙ্গে ইফতার করেছি।

আমাদের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি পৃথক অধিবেশ আয়োজন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মালয়েশিয়া ও ফিনল্যান্ড যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজক হতে এগিয়ে এসেছে। এর পাশাপাশি, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী জুলি বিশপকে এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় মুখ্য ভূমিকা পালনের জন্য আমি আহ্বান জানিয়েছি। তিনি আমার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশ সফরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও তরুণদের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সবাই জাতিসংঘের মহাসচিবকে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন।

আপনারা জানেন, পতিত স্বৈরাচারের নিপীড়নের বর্ণনা উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের রিপোর্টে। গত জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগ যে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে এর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তারা।

এই রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে, শেখ হাসিনা নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে।বিগত সরকার, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী গোষ্ঠী ও সংগঠন একত্রিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু। বিক্ষোভের সম্মুখসারিতে থাকার কারণে, আমাদের জুলাই-কন্যারা নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, এমনকি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

জাতিসংঘের রিপোর্ট পড়ে সবার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। কী ভয়াবহতা! কীভাবে একজন প্রধানমন্ত্রী নিজ দেশের নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার পর লাশ লুকিয়ে ফেলার নির্দেশ দিতে পারে! ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য তিনি পৃথিবীর সকল নিষ্ঠুরতা ছাড়িয়ে গেছেন-এটাই জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের এই রিপোর্টকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিবেদনে যে সুপারিশ করা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার সে সুপারিশগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।

আপনাদেরকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, যারা গণহত্যায় জড়িত ছিল, যারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, যারা ইতোমধ্যে হত্যাকারী হিসেবে বিশ্বের কাছে স্বীকৃত তাদের বিচার এদেশের মাটিতে হবেই।

প্রিয় দেশবাসী,
আপনারা জানেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবের যেন এক মহোৎসব চলছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একের পর এক মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। অভিনব সব প্রক্রিয়ায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এক ছবির সঙ্গে অন্য ছবি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে, ঘটনা একটা ছবি আরেকটা এরকম ফটোকার্ড বানিয়ে, অন্য দেশের ঘটনাকে এ দেশের ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় করে ফেলছে। যতই নির্বাচন কাছে আসবে এর রূপ আরও ভয়ংকর হতে থাকবে। কারা এর পেছনে আছে, কেন আছে তা আপনাদের সবারই জানা আছে।

আমরা এই গুজব ও মিথ্যা তথ্যের প্রচারণা রোধ করতে জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছি। জাতিসংঘ মহাসচিব এর মোকাবিলায় আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়ে গেছেন।

দেশবাসীকে আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম পর্ব সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। প্রথম পর্বের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো। সবসময় মনে রাখতে হবে আমরা কিন্তু যুদ্ধাবস্থায় আছি। “গুজব” হলো এই জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পরাজিত শক্তির মস্ত বড় হাতিয়ার। গুজব দেখলেই গুজবের সূত্রের সন্ধান করতে থাকবেন। গুজবকে অবহেলা করবেন না। বহু অভিজ্ঞ সমর বিশারদ এই গুজবের পেছনে দিনরাত কাজ করছে, সীমাহীন অর্থ এর পেছনে নিয়োজিত আছে। এর মূল লক্ষ্য জুলাই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করা। আমরা তাকে ব্যর্থ হতে দিবো না।

আমাদের সামগ্রিক ঐক্য পলাতক শক্তির গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। তারা এই ঐক্য ভাঙতে চায়। তাদের অভিনব কৌশল আপনি টেরই পাবেন না। আপনি বুঝতেই পারছেন না কখন তাদের খেলায় আপনি পুতুল হয়ে গেছেন।

আমাদের সচেতনতা এবং সামগ্রিক ঐক্য দিয়েই এই গুজবকে রুখতে হবে। পলাতক অপশক্তির ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিতে হবে।

প্রিয় দেশবাসী,
আপনারা জানেন ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে। ৬টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনসহ ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো খুবই ইতিবাচকভাবে সংস্কারকাজে সাড়া দিয়েছে, তাদের মতামত তুলে ধরছেন। কোন রাজনৈতিক দল কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে একমত হয়েছে, কোনটিতে দ্বিমত হয়েছে-সেসব তারা জানাচ্ছেন। এটা আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত সুখকর বিষয় যে, প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে মত দিচ্ছেন।

ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়ার কাজ এখন চলমান আছে। কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে যে সকল বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলি একমত হবে সেগুলি চিহ্নিত করা এবং তার একটা তালিকা প্রস্তুত করা। যেসকল দল এতে একমত হয়েছে তাদের স্বাক্ষর নেওয়া। এই তালিকাটিই হবে জুলাই চার্টার বা জুলাই সনদ।

আমাদের দায়িত্ব, জাতির সামনে পুরো প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা এবং প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচনের আয়োজন করা।

নির্বাচনের ব্যাপারে আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

আমরা চাই, আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। এজন্য নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনায় নির্বাচনের জন্য তৈরি হতে শুরু করবে বলে আশা করছি।

প্রিয় নাগরিকবৃন্দ, 
আমাদের দেশের নারীরা দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে বহু বছর ধরে অনেক বাধা পেরিয়ে একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও এ দেশের নারীরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক বৈষম্যের শিকার।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে তার মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল সবচাইতে বেশি। গণ-অভ্যুত্থানে নারীরা দুঃসাহসিক ভূমিকা রেখেছে। পুরোনোকে দূরে ঠেলে দিয়ে নতুনের ভিত্তি স্থাপনের প্রতিজ্ঞা নিয়েছে। তারা ব্যাপক সংস্কারের কথা বলেছে। সর্বত্র নারীদের ভূমিকা আরও জোরালো করার কথা বলেছে।

আমি মনে করি, জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের প্রেক্ষিত বদলে দিয়েছে। জুলাইয়ের পর নারীদের অবস্থান ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন হবে সেটাই আমরা চাই। আমরা বাংলাদেশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে চাই। আর এই নতুন ভাবনায় নারীদের অবস্থান উচ্চতম পর্যায়ে অগ্রাধিকার পাক সেটাই আমরা চাই।

পরিবারের সকল সদস্য, পাড়া-প্রতিবেশী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুল-আপনারা আপনাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছেলে শিশু ও মেয়ে শিশুর মধ্যে যেন কোনো বৈষম্য না সৃষ্টি না হয় তা নিশ্চিত করুন।আসুন,নতুন বাংলাদেশে সবাই মিলে শিশুদের জন্য সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারীরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দেশে বিরাজমান বৈষম্যগুলো চিহ্নিত করে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও বৈষম্য নিরসনে আমাদের প্রত্যেককে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা, নারীকে খাটো করে রাখার প্রবৃত্তি যারা ধারণ করে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। আধুনিক প্রযুক্তি সকল প্রকার বাধা ভেঙে দেয়ার মহাশক্তি আমাদেরকে দিয়েছে। সে বাধা যত শক্তই হোক, যত উঁচুই হোক। সকল দূরত্ব ঘোচানোর জন্য প্রযুক্তিকে অবশ্যই যেন আমরা ব্যবহার করতে আরম্ভ করি।

নারীদের সুরক্ষায় পুলিশ হটলাইন নম্বর চালু করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে শর্ট-কোড চালু করা হচ্ছে। কল-টেকার হিসেবে শতভাগ নারী কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে; যেন নির্দ্বিধায় কথা বলা যায়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন হয়েছে। এসব মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে আনা হয়েছে, বিচার বিলম্বে বাধা দুর করা হচ্ছে। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ডিএনএ ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। খুব দ্রুতই বিশেষ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নতুন অনেক বিচারক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ভিকটিম শিশুরা যাতে দ্রুত বিচার পায় সেজন্য আলাদাভাবে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের বিধান রাখা হচ্ছে।

দেশের সবার মতো আমিও অত্যন্ত আনন্দিত যে এবার নারী ফুটবল টিম দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। দেশজুড়ে আয়োজিত ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ এ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৭ লাখ ৪০ হাজার মেয়েরা প্রায় তিন হাজার খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করেছে। উৎসবে দেশের সুবিধাবঞ্চিত ও সুবিধাপ্রাপ্ত অঞ্চল, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং ২১টি নৃগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীসহ সকলের সার্বজনীন অংশগ্রহণ ছিল।

এ উৎসবের অন্যতম লক্ষ্য ছিলো তরুণদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা, সহযোগিতার নীতি প্রচার এবং তাদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা যাতে করে তারা আত্মনির্ভর হতে পারে, দেশের সম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠতে পারে। আমরা তারুণ্যের এই উৎসব সারা বছর জুড়ে উদযাপন করার ঘোষণা দিয়েছি। এ উৎসবে আমরা গ্রাম উপজেলা শহর বন্দর সকল এলাকার আবাল বৃদ্ধ বণিতাকে এবং স্কুল কলেজ মাদ্রাসা সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের সবাইকে নানা প্রকারের সৃজনশীল কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রতিটি এলাকায় এই উৎসবে যোগদান করতে মেয়েদের যেন বিশেষভাবে উৎসাহিত করা যায় সেজন্য সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি। কোথায় এটা কীভাবে উদযাপিত হচ্ছে সে ব্যাপারে জানার জন্য আমি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করলাম। বিভিন্ন পর্যায়ে দেশের সেরা গ্রাম, সেরা উপজেলা সেরা শহর, সেরা প্রতিষ্ঠান, সেরাব ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত থাকবো।

নারী অধিকারের পাশাপাশি একইরকম গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখতে হবে সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার। সমতল ও পাহাড়ের জাতিগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার। কারো কোনো নাগরিক অধিকারকে অবহেলা করলেই এ জাতির জন্য মহাসংকট সৃষ্টি করবে। নাগরিক হিসেবে আমরা কেউ যেন অন্য নাগরিকের অধিকার হরণের দায়ে অভিযুক্ত হতে না পারি সে ব্যাপারে আমাদের নিশ্চিত থাকতে হবে। তাহলেই সত্যিকার নতুন বাংলাদেশ জন্মলাভ করবে।

সবাইকে আবারও আমার সালাম জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি। 
আসসালামু আলাইকুম। 
সবাইকে আবারও স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন জানাচ্ছি। 
পবিত্র মাহে রমজানে মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি আমাদের ওপর বর্ষিত হোক। এবারের শবে কদরের পবিত্র রজনীতে মহান আল্লাহ যেন তাঁর সকল বান্দার মোনাজাত কবুল করেন তা প্রার্থনা করছি।

একইসঙ্গে পবিত্র ঈদে সকলকে জানাই ঈদ মোবারক। ঈদে পরিবার পরিজন নিয়ে নির্বিঘ্নে ও আনন্দ সহকারে নিজ নিজ বাড়ি যাবেন। আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করবেন। গরিব পরিবারের খোঁজ খবর নিবেন, তাদের ভবিষ্যৎ ভালো করার জন্য চিন্তা ভাবনা করবেন, আপনার সন্তানদের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেবেন-এই কামনা করছি। ঈদের জামাতে দলমত নির্বিশেষে সবাই যেন পরাজিত শক্তির সকল প্ররোচনা সত্ত্বেও সুদৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকেন সেজন্য আল্লাহর কাছে মোনাজাত করবেন এই আহ্বান জানাচ্ছি।

সকলের জীবন সার্থক হোক, আনন্দময় হোক।
মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। 
আল্লাহ হাফেজ।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ধ নত সরক র সরক র দ য় ত ব র জন য আমর ন শ চ ত কর আম দ র দ শ র প রস ত ব র জন য এক ত ব গ রহণ সরক র র প গত সরক র প রস ত ত ন র জন য র পর থ ক আম দ র জ দ র জন য আম দ র প আম দ র স ত র জন য র জন য স র র জন য আম দ র ন ব ত ল কর দ নন দ ন স ব ধ নত অবস থ ন র র সময় হয়র ন ম দ ন করব ত সরক র ব যবস থ আপন দ র ক জ করছ সরবর হ র হয় ছ নত ন ব পর ব র হ র কর হয় ছ ল স জন য ক জ কর আল ল হ ত কর র মন ত র অন য ন ন কর র কর র ক জ ত কর প রব ন ত হয় ছ র নত ন পর ব শ ন ত কর আনন দ ত করত করব ন সহয গ আওয় ম র ওপর র সকল রমজ ন ত করব সমস য র অবস আপন র স মরণ

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীনতা দিবসে গুগলের ডুডল

আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের পথে ইতিহাসখচিত এ দিনকে উদযাপন করতে গুগল তাদের হোম পেজে বিশেষ ডুডল প্রকাশ করেছে। গুগল সার্চ বক্সের ওপর থাকা এই ডুডল সেজেছে বাংলাদেশের পতাকার রঙে। চারপাশে লাল রং আবৃত ডুডলটির ভেতরে নীল আকাশের মাঝে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে সগৌরবে। পতাকার নিচেই রয়েছে গুগলের নাম। বুধবার রাত ১২টা পর থেকে এ ডুডল দেখা যাচ্ছে।

ডুডলের ওপর ট্যাপ করলে লেখা উঠছে ‘বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্স ডে ২০২৫’। এতে ক্লিক করার পর স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস ও সংশ্লিষ্ট ইতিহাসসংবলিত ওয়েবসাইটগুলো প্রদর্শন করছে।

২০১৩ সালে প্রথমবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের সম্মানে ডুডল তৈরি করে গুগল। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ