এক ম্যাচ আগে ১৪৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে হারিয়েছিলেন গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়। পরের ম্যাচে করেছিলেন ৬৮ রান। এবার তার ব্যাট থেকে এলো ঝকঝকে ১৪৪ রানের আরেকটি অপরাজিত ইনিংস।

তাতে জিতেছে তার দল গাজী গ্রুপ। গুলশান ক্রিকেট ক্লাবকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে তারা। বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে আগে ব্যাটিং করতে নেমে গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ৮ উইকেটে ২৮১ রান করে। জবাবে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৪৮.

২ ওভারে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে।

লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২১তম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন এনামুল। ১৪২ বলে ১১ চার ও ৩ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় একই ছন্দে ব্যাটিং করে তিন অঙ্কের ল্যান্ডমার্ক ছুঁয়েছেন। লিগে এখন পর্যন্ত ৫৩০ রান তুলে সবার ওপরে তার অবস্থান।

আরো পড়ুন:

তিন সেঞ্চুরির ম্যাচে প্রাইম ব্যাংকের জয়

পারভেজের সেঞ্চুরিতে আবাহনীর জয়রথ ছুটছে

লক্ষ্য তাড়ায় এনামুলকে শুরুতেই সাহায্য করেন ওপেনার সাদিকুর। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ৭ বাউন্ডারিতে ৪০ বলে ৪৫ রান করেন। বাকিরা তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি। শেষ দিকে কেবল তোফায়েল ২৩ রান করেন। বাকিটা ছিল এনামুল-শো।

গুলশানের স্পিনার ইলিয়াস সানী ১০ ওভারে ৫৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু বাকিরা তেমন আলো ছড়াতে পারেননি।

এর আগে গুলশানের হয়ে ফিফটির দেখা পান লিটন কুমার দাশ ও আজিজুল হাকিম। লিটন ৬২ বলে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৮৩ রান করেন। আজিজুল ৭৬ বলে ৫৩ রান করেন ৫ চার ও ১ ছক্কায়। বোলিংয়ের আগে ব্যাটিংয়ে ইলিয়াস ৩৮ রান করেন। আলিফের ব্যাট থেকে আসে ২১ রান। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গুলশান বড় পুঁজি পেলেও এনামুলের দ্যুতি ছড়ানো সেঞ্চুরিতে গাজী গ্রুপ সহজেই জয় পায়।

বল হাতে গাজী গ্রুপের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন সাকলায়েন, আবু হাসিম ও আমিনুল বিপ্লব।

লিগে আট ম্যাচে ষষ্ঠ জয় তাদের। পয়েন্ট টেবিলে দুইয়ে তাদের অবস্থান। অন্যদিকে গুলশানের এটি আট ম্যাচে তৃতীয় পরাজয়।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর ন উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষে মেয়ের জন্ম, ডাক্তার খুশি হয়ে নাম রেখেছেন বৈশাখী

পহেলা বৈশাখে তৃতীয় সন্তান এসেছে চাঁদপুরের শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের পরিবারে। বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালে চাঁদপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাদের ঘরে।

তাদের চরম এক টানাপড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মেয়ের আগমনে বেশ খুশি শাহাদাত-রিনা দম্পতি। সকালে মেয়ের মিষ্টিমুখ দেখে চিকিৎসক এবং নার্স হাসপাতালে নবজাতকের নাম তালিকাভুক্ত করার সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন, ‘আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় বৈশাখী দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’  নবজাতকের মা-বাবা মাথা নেড়ে সায়ও দেন।

তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন, ইচ্ছে করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামটার সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জড়িয়ে রাখতেই পারেন। সেটা আপনাদের বিষয়।

নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় একজন রিকশাচালক। ৮ বছর আগে দুই ছেলে- ৫ম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে সেমিপাকা ছোট্ট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে।

শহরে এসে ভাড়ায় রিকশা চালান শাহাদাত। ৩'শ টাকা রিকশা মালিককে দেন আর এক দেড়-দুইশ টাকায় চলে সংসার।

বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়ে সন্তানটিকে নিয়ে কথা হয় শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা উঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবীসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান হাসপাতালের গেট খুলে দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে নিয়ে যায়। পর পরই ডিউটি ডাক্তার আসেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। তবে চিকিৎসক নার্সরা আমার ভাবীকে বলেন, চিন্তা করবেন না, সব কিছু ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ, উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মা আর গর্ভের সন্তান ভালো আছে।

শাহাদাত হোসেন বলেন, হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে যায়। আর সে সময়ই হাসপাতালের পাশের অফিসার্স ক্লাব থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। ঠিক তখনই গেট খুলে দিয়ে দারোয়ান বলেন ভেতরে আসেন আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বললেন- সকাল সাড়ে আটটায় আপনার মেয়ে জন্ম নিয়েছে। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। আর বাচ্চার ওজন ২ কেজি ৯ শ গ্রাম।

পহেলা বৈশাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনার মেয়েকে কি উপহার দিলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সরল হাসি দিয়ে রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, এই ভোররাতে তারা আমার বউ আর সন্তানের সেবায় একটুও হেলা করেনি। এটাই আমার মতো গরীব বাবার কাছে অনেক বড় উপহার। এর আগেও এই হাসপাতালে দুই-একবার গিয়েছিলাম। তারা তখনও অনেক যত্ন নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ জানান, নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগী রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনরূপ হেলা করিনি আমরা। আর এখানে আগে থেকেই আমরা গর্ভবতী মায়েদের প্রসব এবং অন্যান্য চিকিৎসাগুলো দিয়ে থাকি।

শাহাদাত হোসেন বলেন, গরীব ঘরের মেয়েকে কতদিন নিজের কাছে আগলে রাখতে পারবো আল্লাহই ভালো জানেন। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মনুষ করার।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেচে থাকে সবাই এই দোয়া করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ