বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় আট মাসের মাথায় প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনে যাচ্ছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে তাঁর চীন যাওয়ার মধ্য দিয়ে একটা বার্তা দিচ্ছে বাংলাদেশ। এই সফরে সাত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্রসচিব মো.

জসীম উদ্দিন তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন। প্রধান উপদেষ্টার চীনে দ্বিপক্ষীয় সফর এবং থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে প্রত্যাশা এবং বার্তার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা বহুমাত্রিক। চীন আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। আমাদের অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী। চীনের সঙ্গে জনগণের পরিসরে যে সহযোগিতা, তা বাড়ছে। আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে চলেছি। সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রের মধ্যে স্বাস্থ্য অন্যতম।’

গত বছরের জুলাইতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন গিয়েছিলেন। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে দুই সফরের তুলনা করার বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু চীন। সেই বন্ধুত্বকে বাংলাদেশ ধারণ করে। চীনের দিক থেকে একই ধরনের সেন্টিমেন্ট (ভাবাবেগ) আছে। প্রধান উপদেষ্টা তাঁর প্রথম সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিকে একটা বার্তা দেওয়া হচ্ছে।  

এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক এজেন্ডাভিত্তিক নয়। শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করবেন। তবে আমাদের ও চীনের দিক থেকে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনার বিষয়ে আগ্রহ আছে। সেই পানি ব্যবস্থাপনার আওতায় তিস্তার প্রকল্প নিয়ে কথা বলারও একটা সুযোগ আছে।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতির বিষয়ে চীনের একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমাদের অবস্থানটা তাদের জানাতে পারি। দুই পক্ষের অবস্থানের ভিত্তিতে আমরা কীভাবে এগিয়ে যেতে পারি, প্রত্যাবাসনের জন্য তা নিয়ে আলোচনা হবে।’

স্বাস্থ্য খাতে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরের পর দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বেশ বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রথম দলটি চীনের কুনমিংয়ে গেছে। তারা চীনের স্বাস্থ্যসেবায় সন্তুষ্ট। কুনমিংয়ে চারটি হাসপাতালকে বাংলাদেশের রোগীদের জন্য নির্বাচিত করেছে। স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার আরও দু-একটি দিক রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশে চীনের একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা। এ বিষয়ে জোর দিতে শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা হবে।

পররাষ্ট্রসচিব জানান, এই সফরের সময়ে বেশ কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ে সহায়তা, গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে সহায়তা। এর মধ্যে কতগুলো ঘোষণা আসতে পারে, তার মধ্যে থাকতে পারে ঋণ ঘোষণা, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলসংক্রান্ত ঘোষণা, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়। এই ঘোষণাগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

জসীম উদ্দিন বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছরের পূর্তি এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা একটা তালিকা তৈরি করেছি, যাতে করে যথাযথভাবে উদ্‌যাপন করতে পারি। শীর্ষ পর্যায়ে যখন দুই নেতা বসবেন, তাঁরা আলোচনা করবেন। কোনো বড় ঘোষণা এলে আপনারা এই সফরের পরে জানতে পারবেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রসচ ব পরর ষ ট র উপদ ষ ট র প রথম দ সহয গ ত আম দ র ই সফর সফর র

এছাড়াও পড়ুন:

শতবর্ষী ঐতিহ্যে চুনারুঘাটের বৈশাখী মেলা, কৃষিপণ্যের বাহারে মুখর পীরের বাজার

শত বছরের ঐতিহ্য নিয়ে চুনারুঘাট উপজেলার পীরের বাজারে শুরু হয়েছে বৃহৎ বৈশাখী মেলা, স্থানীয়ভাবে যা 'বান্নি' নামে পরিচিত। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এই মেলাটি চুনারুঘাটসহ সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলা হিসেবে পরিচিত।

মঙ্গলবার সকাল থেকে মেলা শুরু হয় এবং মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকছে কৃষিপণ্যের বিশাল সমাহার। মেলায় পাওয়া যাচ্ছে লাঙল, জোয়াল, দা, কাঁচি, মই, মাছ ধরার সরঞ্জামসহ অসংখ্য কৃষি উপকরণ। মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা, হস্তশিল্প ও মনিহারি পণ্যেরও ছিলো চোখধাঁধানো উপস্থিতি।

স্থানীয় দোকানিরা জানান, প্রতিবছর বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে এই মেলায় অংশগ্রহণ করেন। শুধু হবিগঞ্জ নয়, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী এমনকি উত্তরবঙ্গ থেকেও বিক্রেতারা অংশ নিয়েছেন এ ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে।

চুনারুঘাট পৌরসভার সাবেক মেয়র নাজিম উদ্দিন সামছু বলেন, এই মেলা মূলত কৃষকদের জন্য। এখান থেকে প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য সংগ্রহ করতেন তারা।

তবে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারের ফলে কৃষিকাজে ব্যবহৃত অনেক সরঞ্জামের প্রয়োজন কমে যাওয়ায় মেলার জৌলুস কিছুটা কমেছে বলে মনে করেন অনেকে। সেইসঙ্গে আশপাশে ঘরবাড়ি গড়ে ওঠায় মেলার পরিসরও সীমিত হয়েছে।

স্থানীয় ইউএনও মোহাম্মদ রবিন মিয়া জানান, মেলায় অংশ নিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসছেন। মেলা চলাকালীন নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে পুলিশ বাহিনী, নিশ্চিত করেন চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, শত বছর আগে এই মেলা শুরু হয়েছিল ছোট পরিসরে পূজা আয়োজনের মাধ্যমে। পরে তা বৃহৎ মেলায় রূপ নেয়।

এখনও অনেকেই শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করতে এই মেলায় আসেন, স্মৃতিচারণ করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। মেলায় পরিবেশিত হচ্ছে গ্রামবাংলার আবহমান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।

চুনারুঘাটের এই বৈশাখী মেলা শুধু একটি উৎসব নয়, বরং এটি এ অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কৃষিভিত্তিক জীবনের প্রতিচ্ছবি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ