Samakal:
2025-04-15@18:03:35 GMT

প্রেরণাদাত্রী সন্‌জীদা খাতুন

Published: 25th, March 2025 GMT

প্রেরণাদাত্রী সন্‌জীদা খাতুন

বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গণের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সঙ্গীতজ্ঞ ও ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সন্‌জীদা খাতুন মারা গেছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল সমকালের অনলাইনে সন্‌জীদা খাতুনকে নিয়ে লিখেছিলেন আনিসুজ্জামান ও শামসুজ্জামান খান। লেখাটি আবার প্রকাশ করা হলো।-

এক আলোকিত বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে সকল মানুষের অন্তরে সঙ্গীত-সাহিত্য-শিল্পরুচির আলোকশিখা প্রজ্বালনের সাধনায় নিরন্তর ব্রতী রয়েছেন আপনি। ব্যক্তিগত শৈল্পিক সিদ্ধি অর্জনে গভীর অভিনিবেশে নিমগ্ন থেকেও সমাজের মুক্তি চেতনার দায় প্রতিনিয়ত তাড়িত করেছে আপনাকে। বাইরের দিক থেকে প্রত্যক্ষ প্রেরণায় ছিলেন বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সংগঠক, পরিসংখ্যানবিদ, দার্শনিক পিতা, রবীন্দ্রনাথের সাহচর্য এবং নজরুলের স্নেহধন্য, কাজী মোতাহার হোসেন। অন্তরের গহিনে আরেক প্রেরণাদাত্রী ছিলেন মুক্তমনা মাতা সাজেদা বেগম, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে যিনি অন্তঃপুর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন রাজপথে, কন্যার সঙ্গে একই কাতারে। আর জীবনব্যাপী যে মাভৈঃবাণী বুকে নিয়ে বিরুদ্ধ স্রোতের অভিযাত্রী হয়েছেন আপনি সেই সুর-ছন্দ-কথা অন্তরে গেঁথে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 'দেশকে আপনার জ্ঞানে বুদ্ধিতে প্রেমে কর্মে সৃষ্টি' করতে পারলেই প্রতিভাত হতে পারে 'স্বদেশ', রবীন্দ্রনাথের এই উপলব্ধির সার্থক প্রকাশ আমরা দেখি আপনার মধ্যে। আপনি সন্‌জীদা খাতুন জাতির সৃজনশক্তির মেধাবী প্রতিভূ, বাঙালি সংস্কৃতি ভুবনের অনন্য ব্যক্তিত্ব, কতভাবেই না ঋদ্ধ করে চলেছেন বাঙালির জীবন-সাধনা।

কৈশোর-উত্তীর্ণ কাল থেকে শুরু হয়েছে আপনার মুক্তি অভিযাত্রা। সাতচল্লিশের দেশভাগে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলায়, তা পীড়িত করেছিল আপনার কিশোরী মনকে। ভাষা আন্দোলনকালে নিজ কর্তব্য নির্ধারণে আপনার মধ্যে তাই কোনো দ্বিধা ছিল না। রাজপথের সংগ্রামের পাশাপাশি সংগ্রামী মানুষদের সঙ্গে আপনার এমন এক আত্মিক বন্ধন গড়ে ওঠে, যা জীবনব্যাপী লালন করেছেন আপনি। পাকিস্তানি আমলের বিপুল বাধানিষেধ উপেক্ষা করে শান্তিনিকেতনে পড়তে যাওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার আপনাকে আরেক বিরল অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ করেছিল।

অধ্যয়নের পাশাপাশি কণ্ঠে গান তুলে নিয়েছিলেন আপনি আত্যন্তিক ভেতর প্রেরণায়, সে প্রয়াস শান্তিনিকেতনে পেয়েছিল গভীরতর আত্মপ্রকাশ। দেশে ফিরে অধ্যাপনা হয়েছিল আপনার জীবিকার অবলম্বন এবং গান হয়ে উঠল প্রাণের বাঙ্‌ময় প্রকাশ। সাহিত্য ও সঙ্গীতের অধ্যয়ন ও অনুশীলন, সেইসঙ্গে বৃহত্তর জীবনের সঙ্গে সংযোগ আপনার ব্যক্তিত্বের গড়নে যে বিশিষ্টতা যুক্ত করেছিল, তার সার্থক প্রকাশ ঘটে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকীকে ঘিরে পূর্ব বাংলার বাঙালি জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জাগরণে। শতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানমালা হয়ে পড়ে সাংস্কৃতিক জাগরণ চেতনার এক নব্য প্রকাশ এবং তার মধ্যমণি হয়ে উঠলেন আপনি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠা পায় 'ছায়ানট' সংগঠন, সঙ্গীতে দীক্ষাদানের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় সুরস্পর্শে জাতীয় সাংস্কৃতিক জাগৃতির কাঙ্ক্ষিত প্রয়াস। 'ছায়ানট' হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলায় আধুনিক বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের কেন্দ্র, আমাদের সংস্কৃতি ও সঙ্গীতচর্চার ব্যতিক্রমী পীঠস্থান। সঙ্গীত শিক্ষাদানে নিষ্ঠা, দক্ষতা, আকুলতা নিয়ে আপনি ও সতীর্থমণ্ডলী বাঙালিত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সুরচর্চায় নিবেদিত নবীন-নবীনাদের বিশাল গোষ্ঠী তৈরি করতে সক্ষম হন। 'ছায়ানটে'র উদ্যোগে রমনার বটমূলে বাংলা নববর্ষবরণের প্রভাতি অনুষ্ঠানের সূচনা সামন্তবাদী পাকিস্তানি সাংস্কৃতিক অমানিশা ঘুচিয়ে এক নতুন প্রভাতের আবাহন ঘটাল, যা উদ্বেলিত ও আলোড়িত করল পূর্ব বাংলার নবজাগ্রত বাঙালি সমাজকে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক গণসংগ্রামের সমান্তরালে, বলতে গেলে রবীন্দ্রনাথের হাতে হাত রেখে, পূর্ব বাংলার বাঙালি পৌঁছে গেল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এবং কণ্ঠে গান নিয়ে আপনি এবং আপনার দীক্ষাপ্রাপ্ত সঙ্গীত দল ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই সংগ্রামে।

স্বাধীন বাংলাদেশের পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর যাত্রাপথে নানা বাধাবিঘ্ন-বঞ্চনা উপেক্ষা করে আপনি সঙ্গীতের মাধ্যমে চিত্তের জাগরণ প্রয়াসে কেবল অটল ও একাগ্র থাকেননি, আরও কতভাবেই না সৃষ্টিশীল কাজের অনন্য সব উদাহরণ তৈরি করে বিস্তার ঘটিয়েছেন সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক পরিসরের। অধ্যাপনা ও অধ্যয়নের যুগল-সাধনায় আপনি উচ্চ শিখর স্পর্শ করেছেন, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ বিশ্নেষণে জুগিয়েছেন নতুন মাত্রা, ধ্বনি ও কবিতার সম্মিলন বিচারে আপনার উপলব্ধি সৃষ্টিরস অনুধাবনে নববিস্তার ঘটিয়েছে। আপনার রচনাদি বাংলা সাহিত্যে ব্যতিক্রমী সংযোজন হিসেবে কীর্তিত হয়েছে। সেইসঙ্গে চলেছে সঙ্গীতের দীক্ষাদানে আপনার নিরলস সাধনা, 'ছায়ানটে'র বৃত্ত ছাপিয়ে যা দেশব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে 'জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ'-এর সুবাদে, আপনি ছুটে চলেছেন দেশব্যাপী চারণের মতো সঙ্গীতসুধারস বিতরণের ব্রত নিয়ে।

সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দে বহমান আপনার কর্মময় জীবন জাতির সামনে অনন্য উদাহরণ মেলে ধরেছে। নিজেকে পরমভাবে উৎসর্গ করেছেন সুরস্পর্শে মানুষের অন্তর আলোকিত করবার কাজে। আপনার সেই সঙ্গীত-সাধনা স্নিগ্ধ ও গভীর, কোমল ও কঠোর; সর্বোপরি তা নিবেদিত মানবের কল্যাণে, দেশের হিতসাধনে। এমন ব্যক্তিত্বের ছায়াতলে সমবেত আমরা সবাই অন্তরের নিবিড়তম শ্রদ্ধার অঞ্জলি নিবেদন করি আপনার প্রতি, দেশজুড়ে সঙ্গীত-সংস্কৃতির বিস্তারে আপনার কর্মধারায় স্নাত জাতির পক্ষ থেকে পঁচাশিতম জন্মবার্ষিকীতে প্রদান করি ভালোবাসার অর্ঘ্য। আপনি বাঙালি সংস্কৃতির সম্পদ, শিল্পের সুষমা ও শক্তির প্রকাশক, সঙ্গীতে নিহিত সর্বজনীন কল্যাণবোধ আপনি সবার হৃদয়ে সঞ্চারিত করে চলেছেন।

আপনার মঙ্গল হোক, আপনি শতায়ু হোন, আপনি সুরের স্পর্শে, সংস্কৃতি শক্তিতে, মানবিকতার প্রত্যয়ে যে স্বদেশ মূর্ত করে তুলেছেন, তা জাগ্রত হোক সর্বজনের হৃদয়ে। পঁচাশিতম জন্মবর্ষপূর্তিতে আপনার কাছ থেকে নতুনভাবে দীক্ষা নিয়ে বলবান হবে আলোর পথে আমাদের অভিযাত্রা। সেই যাত্রাপথের আনন্দগান আমরা শুনি আপনার কণ্ঠে, আপনাকে পাই অপরিমেয় অব্যাহত প্রেরণাদাত্রী হিসেবে, আপনার প্রতি রইল আমাদের অশেষ শ্রদ্ধা ও বিনম্র অভিবাদন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ য় নট আপন র ম আপন র ক স পর শ ন আপন

এছাড়াও পড়ুন:

ছোট রান্নাঘর সাজানোর কৌশল

আজকালকার শহুরে জীবন মানে ছোট বাড়ি, ছোট রান্নাঘর। ছোট রান্নাঘরে কাজ করতে গেলে প্রায়ই মনে হয় রান্নার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এ সংকটে আপনি খুঁজে পেতে পারেন এক স্মার্ট সমাধান এবং সৃজনশীলতা। কিছু সহজ ও কার্যকর কৌশল আপনার ছোট রান্নাঘরকে পরিপাটি রাখতে সাহায্য করবে। 
দেয়ালকে বানান স্টোরেজ স্পেস 
রান্নাঘরের এক কোণে যদি স্টোরেজ বক্স বা ক্যাবিনেট বসানোর সুযোগ না থাকে, তবে দেয়াল হতে পারে আপনার সমাধান। ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ ব্যবহার করে রাখুন ছুরি, কাঁটা চামচ, স্ক্যাবার। এভাবে শুধু জায়গা বাঁচবে না, খাবার তৈরির প্রস্তুতিও হবে আরও সহজ। দেয়ালটি যদি খালি পড়ে থাকে, তাহলে কিছু হুক বা শেলফ বসিয়ে রান্নার সরঞ্জাম, প্লেট বা কাপ সাজিয়ে রাখতে পারেন। যদি আপনার রান্নাঘরের দেয়ালে কাঠ বা মেটাল সুরক্ষা থাকে, তাহলে রান্নাঘরের সজ্জার জন্য শেলফ এবং ছোট বক্সও ব্যবহার করতে পারেন। এতে পুরো কিচেনের ধারণা আরও সৃজনশীল দেখাবে।
মাল্টি-ফাংশনাল ফার্নিচার বেছে নিন
যে কোনো ছোট রান্নাঘরকে কার্যকর এবং ফাংশনাল করা যায় মাল্টি-ফাংশনাল ফার্নিচার দিয়ে। যেমন এক টেবিল যেখানে ড্রয়ার বা সিটের নিচে থাকবে ছোট্ট স্টোরেজ। এতে শুধু রান্নার সময় প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে সুবিধা হবে না, পাশাপাশি আপনার ক্যাবিনেটের জায়গাও বাঁচবে। এ ছাড়া ফোল্ডেবল বা অর্গানাইজেবল ফার্নিচারও উপকারী। যেমন ফোল্ডিং চেয়ার বা টেবিল, যা আপনি পরবর্তী সময়ে দরকার অনুযায়ী খুলে ব্যবহার করতে পারেন।
তাছাড়া টেবিলের নিচে ক্যাবিনেট বা টোকেন স্টোরেজ রাখলে রান্নাঘরের ছোট জায়গায় আপনি আরও বেশি আয়োজন করতে পারবেন।
কনটেইনারের জাদু 
পুরোনো শাড়ি, প্লাস্টিকের কনটেইনার বা অন্য ধরনের বাক্সে ব্যবহারিক কিছু জিনিস রাখা সম্ভব। ছোট রান্নাঘরে সবকিছু গুছিয়ে রাখতে বেশ খানিকটা সাহায্য করবে কনটেইনার বা বাক্সগুলো। ট্রান্সপারেন্ট কনটেইনার ব্যবহারের সুবিধা হলো, এটি দিয়ে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন কোনো মসলা বা রান্নার উপকরণ কোথায় রাখা আছে। এ ছাড়া প্রতিরোধক ব্যাগ বা ভ্যাকুয়াম সিলিং ব্যবহার করলে খাবার দীর্ঘদিন সতেজ থাকে এবং রান্নাঘরের অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কমে যায়।
ওপেন শেলফিং এবং ডিসপ্লে
গোছানো রান্নাঘরেও কিছুটা স্টাইল থাকা প্রয়োজন। রান্নাঘরের ওপেন শেলফে আপনার দৈনন্দিন ব্যবহারের আইটেমগুলো রাখলে শুধু তা দেখতে সুন্দরই হবে না, অল্প জায়গায় প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর যথেষ্ট অ্যাক্সেস পাবেন।
গ্লাস, প্লেট, বাটি, মসলা বা বেকিং আইটেমগুলো সজ্জিত করতে ওপেন শেলফের ব্যবস্থা খুব উপকারী। পাশাপাশি, ওপেন শেলফকে ব্যবহার করে আপনি আপনার রান্নাঘরের ব্যক্তিগত টাচও যোগ করতে পারেন।
ওয়ার্ক ট্রায়াঙ্গল বজায় রাখুন
রান্নাঘরের তিনটি মূল জায়গা কুকিং, ওয়াশিং এবং স্টোরেজ। এ তিনটি যদি একসঙ্গে ঠিকভাবে বসানো যায়, তবে রান্না করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এ ‘ওয়ার্ক ট্রায়াঙ্গল’ কনসেপ্ট অনুসরণ করলে রান্নার জায়গা ও ওয়াশিং অ্যান্ড স্টোরেজের জায়গায় হাঁটার সময় কম হবে এবং সময়ও বাঁচবে।
তাছাড়া যদি রান্নাঘরে স্পেস সীমিত থাকে, তবে কাউন্টারটপ স্পেস ব্যবহার করে এসব কাজের স্থল আরও কার্যকর করতে হবে।
প্রাকৃতিক আলো এবং আয়না ব্যবহার
ছোট রান্নাঘরের জন্য প্রাকৃতিক আলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জানালা দিয়ে আলো প্রবাহিত হোক, এমন ব্যবস্থা করুন। যদি জানালা না থাকে, তবে রান্নাঘরের চারপাশে হালকা রং ও রিফ্লেক্টিভ সারফেস যেমন আয়না বা শাইনিং টাইলস ব্যবহার করুন। এভাবে ছোট জায়গাটি বড় এবং উজ্জ্বল দেখাবে। ছোট রান্নাঘর আরও বেশি পরিপাটি দেখাতে আধুনিক ফ্লোরিং বা লাইটিং ব্যবহার করতে পারেন। রান্নাঘরের আয়না ব্যবহার করার মাধ্যমে জায়গাটাকে দুই গুণ বড় মনে হবে। রান্না শুধু খাবারের ব্যাপার নয়, এটি একটি অনুভূতি, একটি অভিজ্ঞতা। তাই আপনার রান্নাঘরকে যতটা সম্ভব কার্যকর, আনন্দদায়ক এবং স্টাইলিশ করে গড়ে তুলুন। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ